মরিয়ম বিনতে ইমরান
এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি পড়তে একটি বিশ্বকোষীয় ভুক্তির চেয়ে গল্পই বেশি মনে হয়। |
এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। |
মরিয়ম বিনতে ইমরান | |
---|---|
অন্য নাম | ইবনাতু ইমরান, উম্মুল মাসিহ, সিদ্দিকা, বাতুল (কুমারী) |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
সন্তান | ইসা ইবনে মরিয়ম |
পিতামাতা |
|
মরিয়ম বিনতে ইমরান (আরবি: مريم بنت عمران) ছিলেন ইসলামের একজন সম্মানিত এবং ধার্মিক নারী। তিনি কুমারী এবং সত্যবাদী ছিলেন। তিনি ঈসার মাতা। যার আলোচনা কুরআনে অনেক জায়গায় এসেছে। এমন কি তার নামে সূরা মারইয়াম অবতীর্ণ করা হয়েছে। কুরআনে তার সতীত্বের সাক্ষ্য দিয়ে তাকে পবিত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকে বিশ্বের মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। আর তাকে একটি প্রভুত্ব অলৌকিক কাজের জন্য বেঁচে নিয়েছেন, যা প্রতিনিধিত্ব করে হযরত ঈসার তার গর্ভে আসা ও পিতা ছাড়া তার জন্ম হওয়াকে।
নবি মুহাম্মদ তার পরিপূর্ণতায় বলেছেন,
অনেক পুরুষই পরিপূর্ণ ছিলেন কিন্তু নারীদের মধ্যে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া এবং মারইয়াম বিনতে ইমরান ছিলেন সম্পূর্ণ। যদিও নারীদের উপর আয়েশা (রা:)-এর শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য সকল খাবারের উপর দইয়ের শ্রেষ্ঠত্বের মত।
জন্ম
[সম্পাদনা]বর্ণিত আছে যে, হান্না বিনতে ফাকুজা ইমরানের স্ত্রী বন্ধ্যা ছিল এবং অক্ষম না হওয়া পর্যন্ত সন্তান প্রসব করেনি। তাই যখন সে একটি গাছের ছায়ায় ছিল, তখন সে একটি পাখিকে দেখল, সে তার ছানাকে খাওয়াচ্ছে। এটা দেখে সন্তানের প্রতি তার স্নেহ জেগে উঠল। সে সন্তানের জন্য কামনা করে বলল, হে প্রভু, আপনার কাছে আমার একটি মানত রয়েছে, যদি আপনি আমাকে একটি পুত্র সন্তান দান করেন, তো আমি শুকরিয়া স্বরূপ তাকে বাইতুল মুকাদ্দাসে দান করে দিব, যাতে সে তার খাদেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক, আমার গর্ভে যে শিশু আছে, তাকে সকল কাজ থেকে মুক্ত রেখে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। সুতরাং আপনি আমার পক্ষ হতে তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি (সব কিছু) শোনেন ও (সকল বিষয়ে) জানেন।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার দোয়া কবুল করলেন। সে গর্ভবতী হলো এবং গর্ভাবস্থায় তার স্বামী ইমরান মারা গেলো।
তাঁর মা'র প্রথম পরীক্ষাটি ছিলো যে, সে আশা করেছিলো, তাকে যদি একটি পুত্র সন্তান দান করা হয়, তাহলে সে তাকে বাইতুল মুকাদ্দাসে খেদমতের জন্য উৎসর্গ করবে, কিন্তু তাকে দান করা হল কন্যা সন্তান। আর কন্যা সন্তান তো পুরুষদের মত মসজিদে খেদমত করতে পারে না। হেনা দুঃখিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলল,
যখন তার কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করল তখন সে (আক্ষেপ করে) বলল, “হে আমার প্রতিপালক, আমি যে কন্যা সন্তান জন্ম দিলাম! অথচ আল্লাহ ভালো করেই জানেন, তার কী সন্তান জন্ম নিয়েছে। আর ‘ছেলে তো মেয়ের মত হয় না'। আমি তার নাম রাখলাম মারয়াম এবং তাকে ও তার বংশধরগণকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে হেফাজতের জন্য আপনার আশ্রয়ে অর্পণ করলাম।
কিন্তু আল্লাহ তায়ালা হান্নার মানত কবুল করেছেন এবং এটিকে একটি বরকতময় মানত হিসেবে গন্য করেছেন। আর পবিত্র কোরআনে এটিকেই বোঝানো হয়েছে:
সুতরাং তার প্রতিপালক তাকে (মরিয়মকে) উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উৎকৃষ্ট পন্থায় প্রতিপালন করলেন। আর যাকারিয়া তার তত্ত্বাবধায়ক হলো। যখনই যাকারিয়া তার কাছে তার ইবাদতখানায় যেতো, তার কাছে কোনো রিযিক পেতো। সে জিজ্ঞেস করলো, মরিময়, তোমার কাছে এসব জিনিস কোথায় থেকে আসে? সে বলল, এটা আল্লাহর নিকট থেকে। আল্লাহ যাকে চান অপরিমিত রিযিক দান করেন
।[৪]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]ঈসা আ. এর পুনরুত্থিত হওয়ার পাঁচ বছর পরে মরিয়ম আ. মারা যান। তখন তার বয়স তেপান্ন বছর ছিলো। কেউ কেউ বলেছেন, তার কবর দামাস্কে রয়েছে।
হিজরত
[সম্পাদনা]মরিয়ম আ. শিশু ঈসাকে নিয়ে মিশরে চলে যান এবং সেখানে তিনি বেড়ে ওঠেন। কেননা আল্লাহর শত্রু ইহুদিরা তাদের সিংহাসন ও সম্পদের জন্য ভয় পেয়েছিলো। তাই তাদের রাজাগণ নিজেদের সৈন্যদের পাঠিয়েছিলো এই বরকতময় নবজাতককে হত্যা করার জন্য।
নিশ্চয়ই আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে রাসুলগণকে পাঠিয়েছি, আর মরিয়মের পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী দিয়েছি এবং রুহুল কুদসের মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করেছি। অতঃপর এটা কেমন আচরণ যে, যখনই কোনও রাসুল তোমাদের কাছে এমন কোন বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, যা তোমাদের মনের চাহিদা সম্মত নয়, তখনই তোমরা দম্ভ দেখিয়েছো? অতএব কত (নবি)-কে তোমরা মিথ্যাবাদী বলেছ এবং কতজনকে হত্যা করেছো।
আল্লাহ তায়ালার অপর এক আয়াতে এসেছে,
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যে কালাম নাযিল করেছেন তার প্রতি ঈমান আনো, তখন তারা বলে, আমরা তো (কেবল) সেই কালামের উপরই ঈমান রাখবো, যা আমাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে (অর্থাৎ তাওরাত)। আর এছাড়া (অন্যান্য যত আসমানি কিতাব আছে, সে) সব কিছুকে তারা অস্বীকার করে। অথচ তাও সত্য এবং তা তাদের কাছে যে কিতাব আছে, তার সমর্থনও করে। (হে নবি) তুমি তাদের বলে দাও, তোমরা যদি বাস্তবিকই (তাওরাতের উপর) ঈমান রাখতে তবে পূর্বে আল্লাহর নবিগণকে হত্যা করেছিলে কেন?
ফেরেশতা ও জিব্রাইলের অবতরণ
[সম্পাদনা]এই অলৌকিক ঘটনার জন্য মরিয়ম আ. এর প্রস্তুতি। ফেরেশতারা মরিয়মের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। আর এটি হলো আরেকটি চয়ন-নির্বাচন।
যখন ফেরেশতাগণ বলেছিলো, হে মরিয়ম, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে নির্বাচন করেছেন। তোমাকে পবিত্রতা দান করেছেন এবং বিশ্বের সমস্ত নারীর মধ্যে তোমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। হে মরিয়ম, তুমি নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে মশগুল থাকো এবং সিজদা করো ও রুকুকারীদের সাথে রুকুও করো।
জিব্রাইল আ.এর অবতরণের সময় তিনি আল্লাহর এবাদত করছিলেন। যাতে তাকে ঘোষণা করে দেন তার সন্তান ঈসা আ. সম্পর্কে-
তারপর সে তাদের ও নিজের মাঝখানে একটি পর্দা ফেলে দিলো। এ সময় আমি তার কাছে আমার রূহ (অর্থাৎ একজন ফেরেশতা) পাঠালাম, যে তার সামনে এক পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।[৮]
মরিয়ম বলল, আমি তোমার থেকে দয়াময় আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি যদি তুমি আল্লাহকে ভয় কর (তবে এখান থেকে সরে যাও)।
ফেরেশতা বলল, আমি তো তোমার প্রতিপালকের প্রেরিত (ফেরেশতা) আর আমি এসেছি তোমাকে এক পবিত্ৰ পুত্ৰ দান করার জন্য।
মারয়াম বলল, আমার পুত্র হবে কেমন করে, যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি কোনো ব্যভিচারিণী নারী নই?
ফেরেশতা বলল, এভাবেই হবে। তোমার রব বলেছেন, আমার পক্ষে এটা একটা মামুলি কাজ। আমি এটা করব এ জন্য যে তাকে বানাব মানুষের জন্য (আমার কুদরতের) এক নিদর্শন ও আমার নিকট হতে রহমত। এটা সম্পূর্ণরূপে স্থিরীকৃত হয়ে গেছে।
গোত্রের কাছে প্রত্যাবর্তন
[সম্পাদনা]মরিয়ম আ. তাঁর গোত্রের কাছে গেলো। অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হলো। তারা বলল, হে মরিয়ম, তুমি তো এক অদ্ভুত কান্ড করে বসেছো। হে হারুনের বোন, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলো না এবং তোমার মাতাও ছিলো না ব্যভিচারিণী। অতঃপর মরিয়ম ইঙ্গিতে সন্তানকে দেখালো। তারা বললো, এ দোলনার শিশুর সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?[১০]
আল্লাহ তায়ালা স্বীয় শক্তিতে তাকে বলালেন, (শিশুটি) বলল, নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবি বানিয়েছেন। যেখানেই আমি থাকি না কেনো, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আজীবন নামায ও যাকাত আদায় করতে। আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন। আর তিনি আমাকে করেননি উদ্ধৃত, হতভাগ্য। গোত্রের লোকদের চেহারা বিস্মিত হয়েছিলো। মরিয়ম আ. এর নির্দোষতা প্রকাশ পেয়েছিলো। তার কাছে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে গেলে তিনি আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]পৃথিবীর বুকে অভিন্ন এক নারী
[সম্পাদনা]- তিনিই একমাত্র যিনি গর্ভবতী হন এবং কুমারী থাকা অবস্থায় সন্তান প্রসব করেন।আর এটি আল্লাহর পক্ষ হতে বিশ্ববাসীর জন্য তার অলৌকিক ঘটনা। এটি একটি অনুস্মারক মানুষের জন্য প্রথম মানব আদম আ.-এর সৃষ্টি সম্পর্কে ও আল্লাহই স্রষ্টা। ❝আর (তিনি আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন) ইমরান তনয়া মরিয়ম, যে তার সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তার মধ্যে আমার রূহ হতে ফুঁকে দিয়েছিলাম। সে তার প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল; আর সে ছিল অনুগতদের একজন।
- তিনিই একমাত্র যার নামে একটি সুরার নামকরণ করা হয়েছে এবং আল্লাহ তায়ালা কুরআনে তার নাম দিয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি বিশ্বের মহিলাদের সরদারনী।
- ইবনে আব্বাস রা. বলেন যে, রসুল্লাুহ সা. মাটিতে চারটি দাগ টানলেন। তারপর বললেন "তোমরা কি জানো এটা কি?" তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, জান্নাতের শ্রেষ্ঠ মহিলারা হলেন, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ, মরিয়ম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম। " [১২] [১৩] [১৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- ঈসা ইবনে মরিয়ম আ.
- ইমরান
- হান্না
- জাকারিয়া
- এলিজাবেথ
- ইয়াহিয়া
- হান্না বিনতে ফাকুজ মরিয়ম আ. এর মাতা।
- বিশ্বের নারীদের সরদারনী
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বুখারি শরিফ (3411) মুসলিম শরিফ (2431)।
- ↑ القرآن الكريم، سورة آل عمران، الآية 35.
- ↑ القرآن الكريم، سورة آل عمران، الآية 36.
- ↑ القرآن الكريم، سورة آل عمران، الآية 37.
- ↑ القرآن الكريم، سورة البقرة، الآية 87.
- ↑ القرآن الكريم، سورة البقرة، الآية 91.
- ↑ القرآن الكريم، سورة آل عمران، الآية 42-43.
- ↑ القرآن الكريم، سورة مريم، الآية 17.
- ↑ القرآن الكريم، سورة مريم، الآيات 18-21.
- ↑ القرآن الكريم، سورة مريم، الآيات 27-29.
- ↑ القرآن الكريم، سورة التحريم، الآية 12.
- ↑ مسند أحمد.
- ↑ مشكل الآثار، للطحاوي.
- ↑ مستدرك الحاكم بإسناد صحيح.