মঙ্গল গ্রহে জীবন
বহির্জাগতিক প্রাণ |
---|
সংক্রান্ত একটি ধারাবাহিকের অংশ |
জ্যোতির্জীববিজ্ঞান |
সৌরজগতের বাসযোগ্যতা |
সৌর জগৎ বহির্ভুত জীবন |
মঙ্গল গ্রহের সাথে পৃথিবীর নৈকট্য ও সাদৃশ্য থাকায় মঙ্গল গ্রহে জীবন খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা জ্যোতির্জীববিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়। এখন অব্দি মঙ্গল গ্রহে কোন জীবনের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবশ্য ধারাবাহিকভাবে একাধিক প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে, প্রাচীন কালে এই গ্রহের পৃষ্ঠতলে তরল পানির উপস্থিতি ছিল এবং সেটি হয়তো অণুজীবের বাসযোগ্য ছিল। কিন্তু এতেই নিশ্চিত করে বলা যায় না যে, বর্তমানেও গ্রহটিতে প্রাণ বা জীবনের উপস্থিতি রয়েছে। মঙ্গলের মাটির নিচে বরফ আকারে পানি রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]উনবিংশ শতাব্দী থেকেই বিজ্ঞানীরা মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান শুরু করেছেন। আদিকালের গবেষণা মূলত কল্পনা নির্ভর হলেও বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রভাবে মঙ্গলের মাটি, পাথর এমনকি গ্রহের পরিবেশে বিদ্যমান গ্যাস ইত্যাদির গঠনশৈলীও এই প্রাণের সন্ধান গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে।[১][২] ২০১৬ সালের ২২শে নভেম্বর নাসা গ্রহটির প্লানিটিয়া ইউটোপিয়া অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ্য বরফের সন্ধান পেয়েছে বলে ঘোষণা করে। এতে যে পরিমান পানি পাওয়া গিয়েছে তা প্রায় সুপিরিয়র হ্রদের পানির সমান।[৩][৪][৫]
২০১৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বরে, বিজ্ঞানীরা রিপোর্ট করেন যে কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলে বোরনের সন্ধান পেয়েছে, যা পৃথিবীর জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের মধ্যে একটি। এরপূর্বে পাওয়া পানির সন্ধান মঙ্গলে পূর্বে একদা জীবনের অস্তিত্ব ছিল বলেই সমর্থন করে।[৬][৭]
প্রাথমিক পর্যায়ের অনুমানসমূহ
[সম্পাদনা]১৮৫৪ সালে ৮৫৪ সালে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজের সভ্য উইলিয়াম হিউয়েল মঙ্গল গ্রহে সমুদ্র, মাটি এমনকি প্রাণের সম্ভাবনা আছে বলে তত্ত্ব প্রদান করেন। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে মঙ্গলে প্রাণের ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করার হার হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এই সময়ে একাধিক পর্যবেক্ষক মঙ্গলে খাল পর্যবেক্ষণ করেন। যা পরবর্তীতে অবশ্য দৃষ্টিভ্রম বলে প্রমাণিত হয়। এতদসত্ত্বেও মার্কিন বিজ্ঞানী পার্সিভাল লোওয়েল ১৮৯৫ সালে মঙ্গল গ্রহ ও ১৯০৬ সালে মঙ্গল গ্রহ ও এর খাল নামক বই প্রকাশ করেন।[৮] এই বইয়ে তিনি মঙ্গলে দীর্ঘকাল আগে বিরাজ করা সভ্যতা কর্তৃক এই খালগুলো সৃষ্ট বলে তিনি দাবী করেন।[৯] এই ধারণাই ব্রিটিশ লেখক হারবার্ট জর্জ ওয়েলসকে দ্যা ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস নামক কল্পকাহিনী রচনায় অনুপ্রাণিত করে। এই গল্পে মঙ্গলগ্রহ থেকে আগত ভিনগ্রহবাসীরা নিজেদের গ্রহ দুর্যোগের কবলে পড়ায় পৃথিবী দখলের উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে। পরবর্তীতে উন্নত দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার হলে মঙ্গল গ্রহ নিয়ে প্রচলিত এই খাল তত্ত্ব বাতিল হয়ে যায়।
তরল পানির সন্ধান
[সম্পাদনা]পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে তরল পানির উপস্থিতি মঙ্গল গ্রহে জীবন থাকার জন্য অন্যতম উপাদান। তবে শুধুমাত্র তরল পানির উপস্থিতিই গ্রহটিতে জীবন আছে বলে নিশ্চিত করতে পারে না।[১০] [১১] মঙ্গলের ভূমণ্ডলে তরল পানি অবস্থান করতে পারেনা। সর্বনিম্ন উচ্চতার ভূমিতে তরল পানি মাত্র কয়েক মিনিট অথবা ঘণ্টা থাকতে পারে। তরল পানি ভূপৃষ্ঠে উপস্থিত থাকতে পারেনা। কিন্তু এর পৃষ্ঠে যে ধূলিকণার সাথে অল্প পরিমান যে তুষার কণা তৈরি হয়, সূর্যের তাপে তা বিগলিত হয়ে এই পানি স্বল্প সময়ের জন্য তৈরি হতে পারে।[১২][১৩] এছাড়াও প্রাচীন কালের নিরক্ষীয় অঞ্চলের ভুগর্ভস্থ বরফ ধীরে ধীরে গলে এই তরল পানির উপস্থিতি নিয়ে আসতে পারে।[১৪][১৫][১৬][১৭]
অভিযান
[সম্পাদনা]মঙ্গল গ্রহে জীবনের সন্ধানে একাধিকবার বিভিন্ন নভোযান পাঠানো হয়েছে। এরমাঝে রয়েছে মাভেন,[১৮] মঙ্গলযান[১৯], ফিনিক্স ও কিউরিওসিটি রোভার[২০]।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Chang, Kenneth (২০১৬-০৯-১২)। "Visions of Life on Mars in Earth's Depths"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।
- ↑ "The Search for Life on Mars"। নাসা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৮।
- ↑ Staff (নভেম্বর ২২, ২০১৬)। "Scalloped Terrain Led to Finding of Buried Ice on Mars"। NASA। নভেম্বর ২৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৩, ২০১৬।
- ↑ "Lake of frozen water the size of New Mexico found on Mars – NASA"। The Register। নভেম্বর ২২, ২০১৬। নভেম্বর ২৩, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৩, ২০১৬।
- ↑ "Mars Ice Deposit Holds as Much Water as Lake Superior"। NASA। নভেম্বর ২২, ২০১৬। নভেম্বর ২৩, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৩, ২০১৬।
- ↑ Daley, Jason। "Mars Surface May Be Too Toxic for Microbial Life"। Smithsonian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।
- ↑ Paoletta, Rae। "Curiosity Has Discovered Something That Raises More Questions About Life on Mars"। Gizmodo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।
- ↑ "Life on Mars? You Read It Here First."। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-১০-০১। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।
- ↑ Wallace, Alfred Russel (১৯০৭)। Is Mars habitable?: a critical examination of Professor Percival Lowell's book "Mars and its canals," with an alternative explanation (English ভাষায়)। London: Macmillan।
- ↑ "Ice Packs and Methane on Mars Suggest Present Life Possible | Space.com"। ২০১৩-০৫-০৩। Archived from the original on ২০১৩-০৫-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।
- ↑ Hays, Linda; ও অন্যান্য (অক্টোবর ২০১৫)। "Astrobiology Strategy 2015" (পিডিএফ)। NASA। ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- ↑ Shiga, David (ডিসেম্বর ৭, ২০০৯)। "Watery niche may foster life on Mars"। New Scientist। অক্টোবর ৭, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Vieru, Tudor (ডিসেম্বর ৭, ২০০৯)। "Greenhouse Effect on Mars May Be Allowing for Life"। Softpedia। জুলাই ৩১, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।[অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
- ↑ Mellon, Michael T. (মে ১০, ২০১১)। "Subsurface Ice at Mars: A review of ice and water in the equatorial regions" (পিডিএফ)। Planetary Protection Subcommittee Meeting। University of Colorado। ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৪ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Britt, Robert Roy (ফেব্রুয়ারি ২২, ২০০৫)। "Ice Packs and Methane on Mars Suggest Present Life Possible"। space.com। মে ৩, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Vieru, Tudor। "Greenhouse Effect on Mars May Be Allowing for Life"। softpedia (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।
- ↑ "Wayback Machine" (পিডিএফ)। ২০১৪-০২-২৮। ২০১৪-০২-২৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।
- ↑ "NASA's Newest Mars Mission Spacecraft Enters Orbit around Red Planet"। NASA/JPL। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।
- ↑ "India Announces Mars Mission One Week After Curiosity Landing"। www.webpronews.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।
- ↑ "ছবি পাঠাচ্ছে কিউরিওসিটি"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৪।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]