রজার বেকন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
→‎ওপাস মাজুস: সম্প্রসারণ
→‎অন্যান্য কাজ: সংশোধন, সম্প্রসারণ, তথ্যসূত্র যোগ/সংশোধন
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{ছোট নিবন্ধ}}
{{তথ্যছক দার্শনিক
{{তথ্যছক দার্শনিক
|alma_mater=[[অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়]]
|alma_mater=[[অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়]]
১৪ নং লাইন: ১৩ নং লাইন:
|region=[[পাশ্চাত্য দর্শন]]}}
|region=[[পাশ্চাত্য দর্শন]]}}


'''রজার বেকন''' ([[১২১৪]] - [[১২৯৪]]) একজন মধ্যযুগীয় ইংরেজ [[দর্শন|দার্শনিক]], যিনি অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকৃতির অধ্যয়নের উপর যথেষ্ট জোর দিয়েছিলেন। তিনি আধুনিক পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের একজন পথিকৃত হিসেবে বিবেচিত। তিনি তাঁর স্বাধীন ইচ্ছাশূন্য ও জাদুবিদ্যা সম্পর্কিত গল্পের জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এজন্য তাকে তাকে প্রারম্ভিক আধুনিক যুগের একজন যাদুকর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যুক্তি ও বিজ্ঞানে [[ফ্রান্সিস বেকন]] যে নবযুগের সূচনা করেন, তার ভিত্তি স্থাপিত হয় তিনশ' বছর পূর্বে রজার বেকনের হাতে।
'''রজার বেকন''' ([[১২১৪]] - [[১২৯৪]]) একজন মধ্যযুগীয় ইংরেজ [[দর্শন|দার্শনিক]], যিনি অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকৃতির অধ্যয়নের উপর যথেষ্ট জোর দিয়েছিলেন।<ref name=":0">{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books?id=IiqeBAAAQBAJ&dq=isbn:9781472112125&hl=en&sa=X&ved=2ahUKEwilh-jnn43vAhUW7HMBHSlEC4IQ6AEwAHoECAAQAg|শিরোনাম=Roger Bacon: The First Scientist|শেষাংশ=Clegg|প্রথমাংশ=Brian|তারিখ=2013-08-29|প্রকাশক=Little, Brown Book Group|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-1-4721-1212-5}}</ref> তিনি আধুনিক পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের একজন পথিকৃত হিসেবে বিবেচিত। তিনি তাঁর স্বাধীন ইচ্ছাশূন্য ও জাদুবিদ্যা সম্পর্কিত গল্পের জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এজন্য তাকে তাকে প্রারম্ভিক আধুনিক যুগের একজন যাদুকর হিসাবে বিবেচনা করা হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://penelope.uchicago.edu/bacon/baconhistory.html|শিরোনাম=ফ্রায়ার বেকনের বিখ্যাত ইতিহাস|ওয়েবসাইট=penelope.uchicago.edu|সংগ্রহের-তারিখ=2021-02-28}}</ref> যুক্তি ও বিজ্ঞানে [[ফ্রান্সিস বেকন]] যে নবযুগের সূচনা করেন, তার ভিত্তি স্থাপিত হয় তিনশ' বছর পূর্বে রজার বেকনের হাতে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.levity.com/alchemy/rbacon.html|শিরোনাম=রসায়ন শাস্ত্রে রজার বেকনের স্থান|ওয়েবসাইট=www.levity.com|সংগ্রহের-তারিখ=2021-02-28}}</ref>


বেকনের অন্যতম প্রধান কাজ, ''ওপাস মাজুস'', যেটি ১২৬৭ সালে রোমের পোপ চতুর্থ ক্লিমেন্ট-এর কাছে পাঠানো হয়েছিল। গানপাউডার বা বারুদ চীনে আবিষ্কৃত হলেও বেকন ইউরোপে প্রথম এর ফরমূলা বা সূত্র রেকর্ড করেছিল।
বেকনের অন্যতম প্রধান কাজ, ''ওপাস মাজুস'', যেটি ১২৬৭ সালে রোমের পোপ চতুর্থ ক্লিমেন্ট-এর কাছে পাঠানো হয়েছিল। গানপাউডার বা বারুদ চীনে আবিষ্কৃত হলেও বেকন ইউরোপে প্রথম এর ফরমূলা বা সূত্র রেকর্ড করেছিল।
২১ নং লাইন: ২০ নং লাইন:
রজার বেকন ১৩ শতকের গোড়ার দিকে [[ইংল্যান্ড|ইংল্যান্ডের]] সমারসেটের ইলচেস্টারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যদিও তার জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তাঁর জন্ম তারিখের একমাত্র উৎস হল ১২৬৭ সালে তাঁর লেখা '<nowiki/>''ওপাস তেরতিয়াম''' এর একটি উদ্ধৃতি যেখানে সে উল্লেখ করেছেন "চল্লিশ বছর কেটে গেছে যখন আমি প্রথম বর্ণমালা শিখেছি"।
রজার বেকন ১৩ শতকের গোড়ার দিকে [[ইংল্যান্ড|ইংল্যান্ডের]] সমারসেটের ইলচেস্টারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যদিও তার জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তাঁর জন্ম তারিখের একমাত্র উৎস হল ১২৬৭ সালে তাঁর লেখা '<nowiki/>''ওপাস তেরতিয়াম''' এর একটি উদ্ধৃতি যেখানে সে উল্লেখ করেছেন "চল্লিশ বছর কেটে গেছে যখন আমি প্রথম বর্ণমালা শিখেছি"।


বেকন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ধারনা করা হয় বেকনের আগমনের অল্প সময় আগেই রবার্ট গ্রোসিয়েস্তে চলে গিয়েছিলেন এবং তার কাজ সমকালীন প্রায় সকল তরুণ পণ্ডিতকে প্রভাবিত করেছিল। বেকন অ্যারফোর্ডে [[এরিস্টটল|অ্যারিস্টটলে]]<nowiki/>র বক্তৃতার উপর মাস্টার ডিগ্রী নেন। তবে তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বেকন [[অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়|অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে]] পড়াশোনা করেছেন। ধারনা করা হয় বেকনের আগমনের অল্প সময় আগেই রবার্ট গ্রোসিয়েস্তে চলে গিয়েছিলেন এবং তার কাজ সমকালীন প্রায় সকল তরুণ পণ্ডিতকে প্রভাবিত করেছিল। বেকন অ্যারফোর্ডে [[এরিস্টটল|অ্যারিস্টটলে]]<nowiki/>র বক্তৃতার উপর মাস্টার ডিগ্রী নেন। তবে তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।<ref name=":1">{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books?id=Gy3Vp7TurVUC&pg=PA9&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false|শিরোনাম=Roger Bacon and the Sciences: Commemorative Essays 1996|শেষাংশ=Hackett|প্রথমাংশ=Jeremiah|তারিখ=1997|প্রকাশক=BRILL|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-90-04-10015-2}}</ref>


১২৩৭ বা পরবর্তী দশকের এক পর্যায়ে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি লাতিন ব্যাকরণ, অ্যারিস্টোটালিয়ান যুক্তি, [[পাটীগণিত]] [[জ্যামিতি]], [[জ্যোতির্বিজ্ঞান|জ্যোতির্বিদ্যা]] ও সংগীতের গাণিতিক দিকগুলির উপর শিক্ষাদান করেছিলেন। {{Sfnp|''SEP''|2013}} [[রবার্ট কিলওয়ার্ডবি]], [[আলবার্টাস ম্যাগনাস|আলবার্টস ম্যাগনাস]] এবং স্পেনের পিটার তাঁর অনুষদের সহকর্মী ছিলেন। কর্নিশম্যান [[কর্নওয়ালের রিচার্ড রুফাস|রিচার্ড রুফাস]] ছিলেন পণ্ডিত বিরোধী। ফলে ১২৪৭ সালে বা কিছু পরে তিনি প্যারিস ত্যাগ করেন।
১২৩৭ বা পরবর্তী দশকের এক পর্যায়ে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি লাতিন ব্যাকরণ, অ্যারিস্টোটালিয়ান যুক্তি, [[পাটীগণিত]] [[জ্যামিতি]], [[জ্যোতির্বিজ্ঞান|জ্যোতির্বিদ্যা]] ও সংগীতের গাণিতিক দিকগুলির উপর শিক্ষাদান করেছিলেন। রবার্ট কিলওয়ার্ডবি, আলবার্টস ম্যাগনাস এবং স্পেনের পিটার তাঁর অনুষদের সহকর্মী ছিলেন। কর্নিশম্যান রিচার্ড রুফাস ছিলেন পণ্ডিত বিরোধী। ফলে ১২৪৭ সালে বা কিছু পরে তিনি প্যারিস ত্যাগ করেন।


পরবর্তী দশকে একজন বেসরকারী পণ্ডিত হিসাবে হিসেবে তার অবস্থান অনিশ্চিত হয়ে পরে {{Sfn|Hackett (1997), "Life"}} তবে আনুমানিক ১২৪৮ সালে তিনি সম্ভবত অক্সফোর্ডে ছিলেন যেখানে আদম মার্সের সাথে তার সাক্ষাৎ হয় এবং ১২৫১ সালে দিকে তিনি প্যারিসে অবস্থান করেন। ''ওপাস তেরতিয়াম-''এর একটি উদ্ধৃতিতে উল্লেখ রয়েছে যে তিনি অধ্যয়ন ও গবেষণা থেকে দুই বছর বিছিন্ন ছিলেন। ধারনা করা হয় তিনি [[শাস্ত্রীয় প্রাচীনতার বিজ্ঞানের ইতিহাস|গ্রিক]] এবং আরবিতে আলোকবিদ্যা সম্পর্কিত লেখনী নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করেন।
পরবর্তী দশকে একজন বেসরকারী পণ্ডিত হিসাবে হিসেবে তার অবস্থান অনিশ্চিত হয়ে পরে, তবে আনুমানিক ১২৪৮ সালে তিনি সম্ভবত অক্সফোর্ডে ছিলেন যেখানে আদম মার্সের সাথে তার সাক্ষাৎ হয় এবং ১২৫১ সালে দিকে তিনি প্যারিসে অবস্থান করেন। ''ওপাস তেরতিয়াম-''এর একটি উদ্ধৃতিতে উল্লেখ রয়েছে যে তিনি অধ্যয়ন ও গবেষণা থেকে দুই বছর বিছিন্ন ছিলেন। ধারনা করা হয় তিনি [[গ্রিক ভাষা|গ্রিক]] এবং আরবিতে আলোকবিদ্যা সম্পর্কিত লেখনী নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করেন।<ref name=":2">{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books?id=QjhkAAAAcAAJ&redir_esc=y|শিরোনাম=The Worthies of the United Kingdom; Or Biographical Accounts of the Lives of the Most Illustrious Men, in Arts, Arms, Literature and Science, Connected with Great Britain. With Numerous Portraits, Etc|শেষাংশ=WORTHIES|তারিখ=1828|প্রকাশক=Knight&Lacey|ভাষা=en}}</ref>


[[রবার্ট গ্রোসেটেস্টে|গ্রোসেটেস্টে]] এবং [[অ্যাডাম মার্শ|মার্শের]] মতো ইংরেজ ফ্রান্সিসকান পণ্ডিতদের অনুসরন করে ১২৫৬ বা ১২৫৭ সালের দিকে তিনি প্যারিস বা অক্সফোর্ডে একজন খ্রীষ্টান ভিক্ষু নিজুক্ত হন। ১২৬০ সালের পরে আইনসভায় অনুমোদিত বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা বেকনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করা হয় এবং পূর্বানুমোদন ব্যতীত তার কোন বই বা পত্রপত্রিকায় লিখনি নিষিদ্ধ করা হয়। তাঁর চিন্তাভাবনা, অধ্যয়ন ও গবেষণা সীমাবদ্ধ করার জন্য তাঁকে সম্ভবত অবিরাম দাস্যপূর্ণ কাজে রাখা হয়েছিল। ১২৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এমন পৃষ্ঠপোষকদের অনুসন্ধান করেছিলেন যাঁরা তাকে অক্সফোর্ডে ফিরে আসার অনুমতি এবং প্রয়োজনীয় তহবিল করে দিতে পারেন। বেকন শেষ পর্যন্ত তার কিছু সুপরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে তখনকার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবরগের হস্তক্ষেপ পেতে ইংল্যান্ডের রাজা এবং ব্যারোনিয়াল দলগুলির মধ্যে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ১২৬৩ বা ১২৬৪ সালের দিকে, বেকনের বার্তাবাহক, লাউনের রেমন্ডের দ্বারা প্রচারিত একটি বার্তা সকলকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে, বেকন ইতিমধ্যে বিজ্ঞানের একটি সারসংক্ষেপ সম্পন্ন করেছে।
গ্রোসেটেস্টে এবং মার্শের মতো ইংরেজ ফ্রান্সিসকান পণ্ডিতদের অনুসরন করে ১২৫৬ বা ১২৫৭ সালের দিকে তিনি [[প্যারিস]] বা অক্সফোর্ডে একজন খ্রীষ্টান ভিক্ষু নিজুক্ত হন। ১২৬০ সালের পরে আইনসভায় অনুমোদিত বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা বেকনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করা হয় এবং পূর্বানুমোদন ব্যতীত তার কোন বই বা পত্রপত্রিকায় লিখনি নিষিদ্ধ করা হয়। তাঁর চিন্তাভাবনা, অধ্যয়ন ও গবেষণা সীমাবদ্ধ করার জন্য তাঁকে সম্ভবত অবিরাম দাস্যপূর্ণ কাজে রাখা হয়েছিল। ১২৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এমন পৃষ্ঠপোষকদের অনুসন্ধান করেছিলেন যাঁরা তাকে অক্সফোর্ডে ফিরে আসার অনুমতি এবং প্রয়োজনীয় তহবিল করে দিতে পারেন। বেকন শেষ পর্যন্ত তার কিছু সুপরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে তখনকার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবরগের হস্তক্ষেপ পেতে ইংল্যান্ডের রাজা এবং ব্যারোনিয়াল দলগুলির মধ্যে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ১২৬৩ বা ১২৬৪ সালের দিকে, বেকনের বার্তাবাহক, লাউনের রেমন্ডের দ্বারা প্রচারিত একটি বার্তা সকলকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে, বেকন ইতিমধ্যে বিজ্ঞানের একটি সারসংক্ষেপ সম্পন্ন করেছে।<ref name=":2" />


== উল্লেখযোগ্য কাজ ==
== উল্লেখযোগ্য কাজ ==
মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় দর্শন সাধারণত সেন্ট অগাস্টিনের মতো চার্চ ফাদারদের কর্তৃত্বের উপর ভিত্তি করে বিকশিত হচ্ছিলো। অন্যদিকে প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের রচনায় কেবল লাতিন অনুবাদগুলির মাধ্যমে পরিচিত লাভ করে। রজার বেকন তার লেখনির মাধ্যমে তাঁর সমসাময়িকদের অনুশীলনের বিপরীতে অ্যারিস্টটলের আহ্বানকে সমর্থন করেছিলেন। বেকন ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রেও সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে গৌণ দার্শনিক পার্থক্যের বিষয়ে বিতর্ক না করে ধর্মতত্ত্ববিদদের উচিত বাইবেলের উপর মনোনিবেশ করা এবং এর মূল উৎসগুলির ভাষা পুরোপুরি শেখা। তিনি এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভাষায় দক্ষ ছিলেন এবং তিনি ধর্মগ্রন্থের বেশ কয়েকটি দুর্নীতি এবং গ্রীক দার্শনিকদের রচনাগুলি যে ল্যাটিন পণ্ডিতদের দ্বারা ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল তা তুলে ধরে শোক প্রকাশ করেছিল। তিনি বিজ্ঞানের ধর্মতত্ত্ববিদদের শিক্ষা ("প্রাকৃতিক দর্শন") এবং মধ্যযুগীয় পাঠ্যক্রমের সাথে যুক্ত করার পক্ষেও যুক্তি দিয়েছিলেন।
মধ্যযুগীয় [[ইউরোপীয় ইউনিয়ন|ইউরোপীয়]] দর্শন সাধারণত সেন্ট অগাস্টিনের মতো চার্চ ফাদারদের কর্তৃত্বের উপর ভিত্তি করে বিকশিত হচ্ছিলো। অন্যদিকে প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের রচনায় কেবল লাতিন অনুবাদগুলির মাধ্যমে পরিচিত লাভ করে। রজার বেকন তার লেখনির মাধ্যমে তাঁর সমসাময়িকদের অনুশীলনের বিপরীতে অ্যারিস্টটলের আহ্বানকে সমর্থন করেছিলেন। বেকন ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রেও সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে গৌণ দার্শনিক পার্থক্যের বিষয়ে বিতর্ক না করে ধর্মতত্ত্ববিদদের উচিত বাইবেলের উপর মনোনিবেশ করা এবং এর মূল উৎসগুলির ভাষা পুরোপুরি শেখা। তিনি এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভাষায় দক্ষ ছিলেন এবং তিনি ধর্মগ্রন্থের বেশ কয়েকটি দুর্নীতি এবং গ্রীক দার্শনিকদের রচনাগুলি যে ল্যাটিন পণ্ডিতদের দ্বারা ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল তা তুলে ধরে শোক প্রকাশ করেছিল। তিনি বিজ্ঞানের ধর্মতত্ত্ববিদদের শিক্ষা ("প্রাকৃতিক দর্শন") এবং মধ্যযুগীয় পাঠ্যক্রমের সাথে যুক্ত করার পক্ষেও যুক্তি দিয়েছিলেন।


=== ওপাস মাজুস ===
=== ওপাস মাজুস ===
ওপাস মাজুস রজার বেকনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি পোপ ক্লিমেন্ট চতুর্থের অনুরোধে মধ্যযুগীয় লাতিন ভাষায় লেখা হয়েছিল বেকনের কাজের ব্যাখ্যা করার জন্য। গ্রন্থটি ব্যাকরণ এবং যুক্তিবিদ্যা থেকে শুরু করে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং দর্শনের সমস্ত ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিস্তৃতির উল্লেখ ছিল। বেকন ১২৬৭ সালে পোপের কাছে গ্রন্থটি প্রেরণ করেছিলেন। ওপাস মাজুস সাত ভাগে বিভক্ত:
''<nowiki/>'ওপাস মাজুস'' 'রজার বেকনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি পোপ ক্লিমেন্ট চতুর্থের অনুরোধে মধ্যযুগীয় লাতিন ভাষায় লেখা হয়েছিল বেকনের কাজের ব্যাখ্যা করার জন্য। গ্রন্থটি ব্যাকরণ এবং যুক্তিবিদ্যা থেকে শুরু করে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং দর্শনের সমস্ত ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিস্তৃতির উল্লেখ ছিল।<ref name=":1" /> বেকন ১২৬৭ সালে পোপের কাছে গ্রন্থটি প্রেরণ করেছিলেন। ওপাস মাজুস সাত ভাগে বিভক্ত:


* প্রথম ভাগে রয়েছে প্রকৃত জ্ঞান এবং সত্যের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা।
* প্রথম ভাগে রয়েছে প্রকৃত জ্ঞান এবং সত্যের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা।
৪৪ নং লাইন: ৪৩ নং লাইন:


=== ক্যালেন্ডারিকাল সংস্কার ===
=== ক্যালেন্ডারিকাল সংস্কার ===
ওপাস মাজুসের চতুর্থ অংশে, বেকন পোপ গ্রেগরি দ্বাদশ-এর অধীনে ১৫৮২ সালে প্রবর্তিত পদ্ধতির অনুরূপ একটি ক্যালেন্ডারিকাল সংস্কারের প্রস্তাব করেছিলেন।
ওপাস মাজুসের চতুর্থ অংশে, বেকন পোপ গ্রেগরি দ্বাদশ-এর অধীনে ১৫৮২ সালে প্রবর্তিত পদ্ধতির অনুরূপ একটি ক্যালেন্ডারিকাল সংস্কারের প্রস্তাব করেছিলেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books?id=Gp5-AAAAIAAJ&redir_esc=y|শিরোনাম=Gregorian Reform of the Calendar: Proceedings of the Vatican Conference to Commemorate Its 400th Anniversary, 1582-1982|শেষাংশ=Coyne|প্রথমাংশ=George V.|শেষাংশ২=Hoskin|প্রথমাংশ২=Michael A.|শেষাংশ৩=Pedersen|প্রথমাংশ৩=Olaf|শেষাংশ৪=vaticana|প্রথমাংশ৪=Specola|শেষাংশ৫=scienze|প্রথমাংশ৫=Pontificia Accademia delle|তারিখ=1983|প্রকাশক=Pontificia Academia Scientiarum|ভাষা=en}}</ref>


=== অপটিক্স বা আলোকবিদ্যা ===
=== অপটিক্স বা আলোকবিদ্যা ===
ওপাস মাজুসের পঞ্চম খণ্ডে বেকন আলো, দূরত্ব, অবস্থান, আকার, প্রত্যক্ষ এবং প্রতিফলিত দৃষ্টি, প্রতিসরণ, আয়না এবং লেন্স বিবেচনা করে চোখের দৃষ্টি এবং মস্তিষ্কের এনাটমি সম্পর্কিত আলোচনা করেছেন।
ওপাস মাজুসের পঞ্চম খণ্ডে বেকন আলো, দূরত্ব, অবস্থান, আকার, প্রত্যক্ষ এবং প্রতিফলিত দৃষ্টি, প্রতিসরণ, আয়না এবং লেন্স বিবেচনা করে চোখের দৃষ্টি এবং মস্তিষ্কের এনাটমি সম্পর্কিত আলোচনা করেছেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books?id=mhLVHR5QAQkC&printsec=frontcover&dq=isbn:9780871698629&hl=en&sa=X&ved=2ahUKEwjFu-Kln43vAhVdxTgGHR7SAiwQ6AEwAHoECAIQAg#v=onepage&q&f=false|শিরোনাম=Ptolemy's Theory of Visual Perception: An English Translation of the Optics|শেষাংশ=Ptolemy|শেষাংশ২=Smith|প্রথমাংশ২=A. Mark|তারিখ=1996|প্রকাশক=American Philosophical Society|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-0-87169-862-9}}</ref>


=== গানপাউডার বা বারুদ ===
=== গানপাউডার বা বারুদ ===
ওপাস মাজুসের এবং অপাস টেরটিয়ামের একটি রচনাংশে বর্ণিত বারুদের মিশ্রণকেই ইউরোপের প্রথম গানপাউডার বা বারুদ বিষয়ক ফরমূলা বা সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্রিটিশ রসায়নবিদ পার্টিংটন এবং অন্যান্যরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে সম্ভবত বেকন চীনা পটকাবাজদের কমপক্ষে একটি পটকাবাজি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সম্ভবত তার বন্ধু রুব্রাকের উইলিয়ামের সহায়তায় যিনি এই সময়ের মঙ্গোল সাম্রাজ্য পরিদর্শন করেছিলেন।
ওপাস মাজুসের এবং অপাস টেরটিয়ামের একটি রচনাংশে বর্ণিত বারুদের মিশ্রণকেই ইউরোপের প্রথম গানপাউডার বা বারুদ বিষয়ক ফরমূলা বা সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্রিটিশ রসায়নবিদ পার্টিংটন এবং অন্যান্যরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে সম্ভবত বেকন চীনা পটকাবাজদের কমপক্ষে একটি পটকাবাজি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সম্ভবত তার বন্ধু রুব্রাকের উইলিয়ামের সহায়তায় যিনি এই সময়ের মঙ্গোল সাম্রাজ্য পরিদর্শন করেছিলেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books?id=JEAIzgEACAAJ&dq=isbn:9780521303583&hl=en&sa=X&ved=2ahUKEwiq7aK_n43vAhUgyzgGHSsMA-gQ6AEwAHoECAAQAg|শিরোনাম=Science and Civilisation in China: Volume 5, Chemistry and Chemical Technology, Part 7, Military Technology: The Gunpowder Epic|শেষাংশ=Needham|প্রথমাংশ=Joseph|তারিখ=1987-01-22|প্রকাশক=Cambridge University Press|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-0-521-30358-3}}</ref>


=== ভাষাবিজ্ঞান ===
=== ভাষাবিজ্ঞান ===
বেকনের প্রথম দিকের লেখা সুমমা গ্রাম্যমিতা বা ল্যাটিন ভাষায় "ব্যাকরণের ওভারভিউ" ল্যাটিন ব্যাকরণ এবং গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল ও তাঁর দার্শনিক মতবাদ সংক্রান্ত যুক্তির উপরের লেখা অন্যতম গ্রন্থ । সার্বজনীন ব্যাকরণ প্রকাশের ক্ষেত্রে সুমমা গ্রাম্যমিতার বিশেষ অবদান লক্ষণীয়।
বেকনের প্রথম দিকের লেখা সুমমা গ্রাম্যমিতা বা ল্যাটিন ভাষায় "ব্যাকরণের ওভারভিউ" ল্যাটিন ব্যাকরণ এবং গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল ও তাঁর দার্শনিক মতবাদ সংক্রান্ত যুক্তির উপরের লেখা অন্যতম গ্রন্থ । সার্বজনীন ব্যাকরণ প্রকাশের ক্ষেত্রে সুমমা গ্রাম্যমিতার বিশেষ অবদান লক্ষণীয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books?id=Tp6PhNsz43EC&printsec=frontcover&dq=isbn:9789004160989&hl=en&sa=X&ved=2ahUKEwjQlfHUn43vAhUv4jgGHa-fDNEQ6AEwAHoECAAQAg#v=onepage&q&f=false|শিরোনাম=White Magic, Black Magic in the European Renaissance|শেষাংশ=Zambelli|প্রথমাংশ=Paola|তারিখ=2007|প্রকাশক=BRILL|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-90-04-16098-9}}</ref>


== অন্যান্য কাজ ==
== অন্যান্য কাজ ==
বেকনের তার লেখা '<nowiki/>''ওপাস মাইনাস''<nowiki/>' এবং ''<nowiki/>'ওপাস টার্মিয়ামকে''<nowiki/>' মূলত ওপাস ওপাস মাজুসের সংক্ষিপ্তসার হিসেবে অভিহিত করছেন। এছাড়াও তার লেখা ''<nowiki/>'ট্রাক অন দ্যা মাল্টিপ্লিকেশন অব স্পেসিস'<nowiki/>'', ''<nowiki/>'অন বারনিং লেন্সস'<nowiki/>'', ''<nowiki/>'কম্পেন্দিয়াম অব দ্যা স্টাডি অফ ফিলোসফি'<nowiki/>'', এবং তার শেষ জীবনের লেখা ''<nowiki/>'কম্পেন্দিয়াম অব দ্যা স্টাডি অব থিওলজি''' অন্যতম।<ref name=":0" />

== উত্তরাধিকার ==


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা}}
{{সূত্র তালিকা}}


== টীকা ==
[[বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ দার্শনিক]]
[[বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ দার্শনিক]]
[[বিষয়শ্রেণী:১২১৪-এ জন্ম]]
[[বিষয়শ্রেণী:১২১৪-এ জন্ম]]

১৮:৫৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

রজার বেকন
জন্মআনু. ১২১৯/২০[n ১]
ইলচেস্টার, সোমারসেট, ইংল্যান্ড
মৃত্যুআনু. ১২৯২[২][৩] (আনু. ৭২/৭৩ বছর বয়সে)
জাতীয়তাইংরেজ
অন্যান্য নামডক্টর মীরাবিলিস
মাতৃশিক্ষায়তনঅক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
যুগমধ্যযুগীয় দর্শন
অঞ্চলপাশ্চাত্য দর্শন
উল্লেখযোগ্য অবদান
পরীক্ষা

রজার বেকন (১২১৪ - ১২৯৪) একজন মধ্যযুগীয় ইংরেজ দার্শনিক, যিনি অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকৃতির অধ্যয়নের উপর যথেষ্ট জোর দিয়েছিলেন।[৪] তিনি আধুনিক পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের একজন পথিকৃত হিসেবে বিবেচিত। তিনি তাঁর স্বাধীন ইচ্ছাশূন্য ও জাদুবিদ্যা সম্পর্কিত গল্পের জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এজন্য তাকে তাকে প্রারম্ভিক আধুনিক যুগের একজন যাদুকর হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[৫] যুক্তি ও বিজ্ঞানে ফ্রান্সিস বেকন যে নবযুগের সূচনা করেন, তার ভিত্তি স্থাপিত হয় তিনশ' বছর পূর্বে রজার বেকনের হাতে।[৬]

বেকনের অন্যতম প্রধান কাজ, ওপাস মাজুস, যেটি ১২৬৭ সালে রোমের পোপ চতুর্থ ক্লিমেন্ট-এর কাছে পাঠানো হয়েছিল। গানপাউডার বা বারুদ চীনে আবিষ্কৃত হলেও বেকন ইউরোপে প্রথম এর ফরমূলা বা সূত্র রেকর্ড করেছিল।

জীবনী

রজার বেকন ১৩ শতকের গোড়ার দিকে ইংল্যান্ডের সমারসেটের ইলচেস্টারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যদিও তার জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তাঁর জন্ম তারিখের একমাত্র উৎস হল ১২৬৭ সালে তাঁর লেখা 'ওপাস তেরতিয়াম' এর একটি উদ্ধৃতি যেখানে সে উল্লেখ করেছেন "চল্লিশ বছর কেটে গেছে যখন আমি প্রথম বর্ণমালা শিখেছি"।

বেকন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ধারনা করা হয় বেকনের আগমনের অল্প সময় আগেই রবার্ট গ্রোসিয়েস্তে চলে গিয়েছিলেন এবং তার কাজ সমকালীন প্রায় সকল তরুণ পণ্ডিতকে প্রভাবিত করেছিল। বেকন অ্যারফোর্ডে অ্যারিস্টটলের বক্তৃতার উপর মাস্টার ডিগ্রী নেন। তবে তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[৭]

১২৩৭ বা পরবর্তী দশকের এক পর্যায়ে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি লাতিন ব্যাকরণ, অ্যারিস্টোটালিয়ান যুক্তি, পাটীগণিত জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা ও সংগীতের গাণিতিক দিকগুলির উপর শিক্ষাদান করেছিলেন। রবার্ট কিলওয়ার্ডবি, আলবার্টস ম্যাগনাস এবং স্পেনের পিটার তাঁর অনুষদের সহকর্মী ছিলেন। কর্নিশম্যান রিচার্ড রুফাস ছিলেন পণ্ডিত বিরোধী। ফলে ১২৪৭ সালে বা কিছু পরে তিনি প্যারিস ত্যাগ করেন।

পরবর্তী দশকে একজন বেসরকারী পণ্ডিত হিসাবে হিসেবে তার অবস্থান অনিশ্চিত হয়ে পরে, তবে আনুমানিক ১২৪৮ সালে তিনি সম্ভবত অক্সফোর্ডে ছিলেন যেখানে আদম মার্সের সাথে তার সাক্ষাৎ হয় এবং ১২৫১ সালে দিকে তিনি প্যারিসে অবস্থান করেন। ওপাস তেরতিয়াম-এর একটি উদ্ধৃতিতে উল্লেখ রয়েছে যে তিনি অধ্যয়ন ও গবেষণা থেকে দুই বছর বিছিন্ন ছিলেন। ধারনা করা হয় তিনি গ্রিক এবং আরবিতে আলোকবিদ্যা সম্পর্কিত লেখনী নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করেন।[৮]

গ্রোসেটেস্টে এবং মার্শের মতো ইংরেজ ফ্রান্সিসকান পণ্ডিতদের অনুসরন করে ১২৫৬ বা ১২৫৭ সালের দিকে তিনি প্যারিস বা অক্সফোর্ডে একজন খ্রীষ্টান ভিক্ষু নিজুক্ত হন। ১২৬০ সালের পরে আইনসভায় অনুমোদিত বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা বেকনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করা হয় এবং পূর্বানুমোদন ব্যতীত তার কোন বই বা পত্রপত্রিকায় লিখনি নিষিদ্ধ করা হয়। তাঁর চিন্তাভাবনা, অধ্যয়ন ও গবেষণা সীমাবদ্ধ করার জন্য তাঁকে সম্ভবত অবিরাম দাস্যপূর্ণ কাজে রাখা হয়েছিল। ১২৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এমন পৃষ্ঠপোষকদের অনুসন্ধান করেছিলেন যাঁরা তাকে অক্সফোর্ডে ফিরে আসার অনুমতি এবং প্রয়োজনীয় তহবিল করে দিতে পারেন। বেকন শেষ পর্যন্ত তার কিছু সুপরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে তখনকার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবরগের হস্তক্ষেপ পেতে ইংল্যান্ডের রাজা এবং ব্যারোনিয়াল দলগুলির মধ্যে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ১২৬৩ বা ১২৬৪ সালের দিকে, বেকনের বার্তাবাহক, লাউনের রেমন্ডের দ্বারা প্রচারিত একটি বার্তা সকলকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে, বেকন ইতিমধ্যে বিজ্ঞানের একটি সারসংক্ষেপ সম্পন্ন করেছে।[৮]

উল্লেখযোগ্য কাজ

মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় দর্শন সাধারণত সেন্ট অগাস্টিনের মতো চার্চ ফাদারদের কর্তৃত্বের উপর ভিত্তি করে বিকশিত হচ্ছিলো। অন্যদিকে প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের রচনায় কেবল লাতিন অনুবাদগুলির মাধ্যমে পরিচিত লাভ করে। রজার বেকন তার লেখনির মাধ্যমে তাঁর সমসাময়িকদের অনুশীলনের বিপরীতে অ্যারিস্টটলের আহ্বানকে সমর্থন করেছিলেন। বেকন ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রেও সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে গৌণ দার্শনিক পার্থক্যের বিষয়ে বিতর্ক না করে ধর্মতত্ত্ববিদদের উচিত বাইবেলের উপর মনোনিবেশ করা এবং এর মূল উৎসগুলির ভাষা পুরোপুরি শেখা। তিনি এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভাষায় দক্ষ ছিলেন এবং তিনি ধর্মগ্রন্থের বেশ কয়েকটি দুর্নীতি এবং গ্রীক দার্শনিকদের রচনাগুলি যে ল্যাটিন পণ্ডিতদের দ্বারা ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল তা তুলে ধরে শোক প্রকাশ করেছিল। তিনি বিজ্ঞানের ধর্মতত্ত্ববিদদের শিক্ষা ("প্রাকৃতিক দর্শন") এবং মধ্যযুগীয় পাঠ্যক্রমের সাথে যুক্ত করার পক্ষেও যুক্তি দিয়েছিলেন।

ওপাস মাজুস

'ওপাস মাজুস 'রজার বেকনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি পোপ ক্লিমেন্ট চতুর্থের অনুরোধে মধ্যযুগীয় লাতিন ভাষায় লেখা হয়েছিল বেকনের কাজের ব্যাখ্যা করার জন্য। গ্রন্থটি ব্যাকরণ এবং যুক্তিবিদ্যা থেকে শুরু করে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং দর্শনের সমস্ত ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিস্তৃতির উল্লেখ ছিল।[৭] বেকন ১২৬৭ সালে পোপের কাছে গ্রন্থটি প্রেরণ করেছিলেন। ওপাস মাজুস সাত ভাগে বিভক্ত:

  • প্রথম ভাগে রয়েছে প্রকৃত জ্ঞান এবং সত্যের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা।
  • প্রথম ভাগে রয়েছে দর্শন এবং ধর্মতত্ত্বের মধ্যে সম্পর্কের আলোচনা।
  • তৃতীয় ভাগে রয়েছে বাইবেলের ভাষাগুলি নিয়ে আলোচনা।
  • চতুর্থ খণ্ডে গণিত অধ্যয়নের আলোচনা।
  • পঞ্চম খণ্ডে অপটিক্স বা আলোকবিদ্যা সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ষষ্ঠ খণ্ডে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা, এবং
  • সপ্তম ভাগ নৈতিক দর্শন এবং নীতি বিষয়ক আলোচনা।

ক্যালেন্ডারিকাল সংস্কার

ওপাস মাজুসের চতুর্থ অংশে, বেকন পোপ গ্রেগরি দ্বাদশ-এর অধীনে ১৫৮২ সালে প্রবর্তিত পদ্ধতির অনুরূপ একটি ক্যালেন্ডারিকাল সংস্কারের প্রস্তাব করেছিলেন।[৯]

অপটিক্স বা আলোকবিদ্যা

ওপাস মাজুসের পঞ্চম খণ্ডে বেকন আলো, দূরত্ব, অবস্থান, আকার, প্রত্যক্ষ এবং প্রতিফলিত দৃষ্টি, প্রতিসরণ, আয়না এবং লেন্স বিবেচনা করে চোখের দৃষ্টি এবং মস্তিষ্কের এনাটমি সম্পর্কিত আলোচনা করেছেন।[১০]

গানপাউডার বা বারুদ

ওপাস মাজুসের এবং অপাস টেরটিয়ামের একটি রচনাংশে বর্ণিত বারুদের মিশ্রণকেই ইউরোপের প্রথম গানপাউডার বা বারুদ বিষয়ক ফরমূলা বা সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্রিটিশ রসায়নবিদ পার্টিংটন এবং অন্যান্যরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে সম্ভবত বেকন চীনা পটকাবাজদের কমপক্ষে একটি পটকাবাজি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সম্ভবত তার বন্ধু রুব্রাকের উইলিয়ামের সহায়তায় যিনি এই সময়ের মঙ্গোল সাম্রাজ্য পরিদর্শন করেছিলেন।[১১]

ভাষাবিজ্ঞান

বেকনের প্রথম দিকের লেখা সুমমা গ্রাম্যমিতা বা ল্যাটিন ভাষায় "ব্যাকরণের ওভারভিউ" ল্যাটিন ব্যাকরণ এবং গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল ও তাঁর দার্শনিক মতবাদ সংক্রান্ত যুক্তির উপরের লেখা অন্যতম গ্রন্থ । সার্বজনীন ব্যাকরণ প্রকাশের ক্ষেত্রে সুমমা গ্রাম্যমিতার বিশেষ অবদান লক্ষণীয়।[১২]

অন্যান্য কাজ

বেকনের তার লেখা 'ওপাস মাইনাস' এবং 'ওপাস টার্মিয়ামকে' মূলত ওপাস ওপাস মাজুসের সংক্ষিপ্তসার হিসেবে অভিহিত করছেন। এছাড়াও তার লেখা 'ট্রাক অন দ্যা মাল্টিপ্লিকেশন অব স্পেসিস', 'অন বারনিং লেন্সস', 'কম্পেন্দিয়াম অব দ্যা স্টাডি অফ ফিলোসফি', এবং তার শেষ জীবনের লেখা 'কম্পেন্দিয়াম অব দ্যা স্টাডি অব থিওলজি' অন্যতম।[৪]

তথ্যসূত্র

  1. Complete Dictionary of Scientific Biography। Charles Scribner's Sons। ২০০৮। 
  2. EB (১৮৭৮), p. ২২০.
  3. ODNB (২০০৪).
  4. Clegg, Brian (২০১৩-০৮-২৯)। Roger Bacon: The First Scientist (ইংরেজি ভাষায়)। Little, Brown Book Group। আইএসবিএন 978-1-4721-1212-5 
  5. "ফ্রায়ার বেকনের বিখ্যাত ইতিহাস"penelope.uchicago.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-২৮ 
  6. "রসায়ন শাস্ত্রে রজার বেকনের স্থান"www.levity.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-২৮ 
  7. Hackett, Jeremiah (১৯৯৭)। Roger Bacon and the Sciences: Commemorative Essays 1996 (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। আইএসবিএন 978-90-04-10015-2 
  8. WORTHIES (১৮২৮)। The Worthies of the United Kingdom; Or Biographical Accounts of the Lives of the Most Illustrious Men, in Arts, Arms, Literature and Science, Connected with Great Britain. With Numerous Portraits, Etc (ইংরেজি ভাষায়)। Knight&Lacey। 
  9. Coyne, George V.; Hoskin, Michael A.; Pedersen, Olaf; vaticana, Specola; scienze, Pontificia Accademia delle (১৯৮৩)। Gregorian Reform of the Calendar: Proceedings of the Vatican Conference to Commemorate Its 400th Anniversary, 1582-1982 (ইংরেজি ভাষায়)। Pontificia Academia Scientiarum। 
  10. Ptolemy; Smith, A. Mark (১৯৯৬)। Ptolemy's Theory of Visual Perception: An English Translation of the Optics (ইংরেজি ভাষায়)। American Philosophical Society। আইএসবিএন 978-0-87169-862-9 
  11. Needham, Joseph (১৯৮৭-০১-২২)। Science and Civilisation in China: Volume 5, Chemistry and Chemical Technology, Part 7, Military Technology: The Gunpowder Epic (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-30358-3 
  12. Zambelli, Paola (২০০৭)। White Magic, Black Magic in the European Renaissance (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। আইএসবিএন 978-90-04-16098-9 

টীকা


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "n" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="n"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি