বামাখ্যাপা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
37.111.204.209-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে 150.129.177.17-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
ট্যাগ: পুনর্বহাল
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
বামাখ্যাপা ছেলেবেলায় গৃহত্যাগ করে তিনি কৈলাশপতি বাবা নামে এক সন্ন্যাসীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কৈলাশপতি বাবা তারাপীঠে থাকতেন। বামাখ্যাপা তারাপীঠেই [[দ্বারকা নদ|দ্বারকা নদে]]<nowiki/>র তীরে যোগ ও তন্ত্রসাধনা করেন। পরে তিনি নিকটবর্তী মল্লরাজাদের মন্দিরময় গ্রাম [[মালুটি]] (অধুনা [[ঝাড়খণ্ড]] রাজ্য)<nowiki/>তে যান যোগ সাধনার জন্যে। সেখানে দ্বারকার তীরে মৌলাক্ষী দেবীর মন্দিরে সাধনাকালে প্রায় ১৮ মাস অবস্থান করেন।
বামাখ্যাপা ছেলেবেলায় গৃহত্যাগ করে তিনি কৈলাশপতি বাবা নামে এক সন্ন্যাসীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কৈলাশপতি বাবা তারাপীঠে থাকতেন। বামাখ্যাপা তারাপীঠেই [[দ্বারকা নদ|দ্বারকা নদে]]<nowiki/>র তীরে যোগ ও তন্ত্রসাধনা করেন। পরে তিনি নিকটবর্তী মল্লরাজাদের মন্দিরময় গ্রাম [[মালুটি]] (অধুনা [[ঝাড়খণ্ড]] রাজ্য)<nowiki/>তে যান যোগ সাধনার জন্যে। সেখানে দ্বারকার তীরে মৌলাক্ষী দেবীর মন্দিরে সাধনাকালে প্রায় ১৮ মাস অবস্থান করেন।
[[চিত্র:Bamakhyapa's_Temple.jpg|থাম্ব|Bamakhyapa's Temple. Maluti village, Jharkhand]]
[[চিত্র:Bamakhyapa's_Temple.jpg|থাম্ব|Bamakhyapa's Temple. Maluti village, Jharkhand]]
ক্রমে তিনি তারাপীঠের প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ভক্তরা বিশ্বাস করত তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তাই তাঁরা রোগারোগ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনে তাঁর কাছে আসত। বামাখ্যাপা মন্দিরের নিয়মকানুন মানতেন না। এমনকি দেবতার থালা থেকেই নৈবেদ্য তুলে খেয়ে নিতেন। কথিত আছে, [[নাটোর|নাটোরের]] মহারানিকে স্বপ্নে দেবী তারার প্রত্যাদেশ পান যে, দেবীপুত্র বলে বামাখ্যাপাকে যেন আগে খাওয়ানো হয়। এরপর থেকে মন্দিরে পূজার আগেই বামাখ্যাপাকে নৈবেদ্য প্রদান এবং তাঁকে অবাধে মন্দিরে বিচরণ করতে দেওয়া হত।<ref name="Harding">{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ= Harding|প্রথমাংশ= Elizabeth U.|শিরোনাম= Kali: the black goddess of Dakshineswar|পাতাসমূহ=275–279|সংগ্রহের-তারিখ=2010-06-26| ইউআরএল=http://books.google.co.in/books?id=4woiJbQTsBQC&pg=PA274&dq=The+tantric+Tarapith&hl=en&ei=tIUhTLXiBoOFrAfmysXXDg&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=3&ved=0CDIQ6AEwAg#v=onepage&q=The%20tantric%20Tarapith&f=false|প্রকাশক= Motilal Banarsidass Publ.|বছর=1998|আইএসবিএন=8120814509}}</ref> আরও কথিত আছে, দেবী তারা ভয়ংকর বেশে বামাখ্যাপাকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং পরে মাতৃবেশে কোলে তুলে নিয়েছিলেন।<ref name="Kinsely, p. 111" /> তারাপীঠ শ্মশানে ও দুমকা জেলার মালুটি গ্রামের তার স্মৃতিমন্দির আছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.khabarindiaonline.com/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A5/|শিরোনাম=বামাখ্যাপার আবির্ভাব তিথি|শেষাংশ=খায়রুল আনম|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=|প্রকাশক=খবর ইন্ডিয়া অনলাইন|সংগ্রহের-তারিখ=১১ এপ্রিল ২০১৭}}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=মার্চ ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref>
ক্রমে তিনি তারাপীঠের প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ভক্তরা বিশ্বাস করত তার অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তাই তারা রোগারোগ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনে তার কাছে আসত। বামাখ্যাপা মন্দিরের নিয়মকানুন মানতেন না। এমনকি দেবতার থালা থেকেই নৈবেদ্য তুলে খেয়ে নিতেন। কথিত আছে, [[নাটোর|নাটোরের]] মহারানিকে স্বপ্নে দেবী তারার প্রত্যাদেশ পান যে, দেবীপুত্র বলে বামাখ্যাপাকে যেন আগে খাওয়ানো হয়। এরপর থেকে মন্দিরে পূজার আগেই বামাখ্যাপাকে নৈবেদ্য প্রদান এবং তাকে অবাধে মন্দিরে বিচরণ করতে দেওয়া হত।<ref name="Harding">{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ= Harding|প্রথমাংশ= Elizabeth U.|শিরোনাম= Kali: the black goddess of Dakshineswar|পাতাসমূহ=275–279|সংগ্রহের-তারিখ=2010-06-26| ইউআরএল=http://books.google.co.in/books?id=4woiJbQTsBQC&pg=PA274&dq=The+tantric+Tarapith&hl=en&ei=tIUhTLXiBoOFrAfmysXXDg&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=3&ved=0CDIQ6AEwAg#v=onepage&q=The%20tantric%20Tarapith&f=false|প্রকাশক= Motilal Banarsidass Publ.|বছর=1998|আইএসবিএন=8120814509}}</ref> আরও কথিত আছে, দেবী তারা ভয়ংকর বেশে বামাখ্যাপাকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং পরে মাতৃবেশে কোলে তুলে নিয়েছিলেন।<ref name="Kinsely, p. 111" /> তারাপীঠ শ্মশানে ও দুমকা জেলার মালুটি গ্রামের তার স্মৃতিমন্দির আছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.khabarindiaonline.com/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A5/|শিরোনাম=বামাখ্যাপার আবির্ভাব তিথি|শেষাংশ=খায়রুল আনম|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=|প্রকাশক=খবর ইন্ডিয়া অনলাইন|সংগ্রহের-তারিখ=১১ এপ্রিল ২০১৭}}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=মার্চ ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref>


== জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ==
== জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ==
১৮ নং লাইন: ১৮ নং লাইন:


===স্বামী বিবেকাকোনদের সাক্ষাৎ===
===স্বামী বিবেকাকোনদের সাক্ষাৎ===
মাত্র ১৯ বয়সে ঠাকুর রামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর নরেন্দ্রনাথ বামাখ্যাপাকে দর্শন করার জন্য তাঁর কলেজের সহপাঠী শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীকে জানান। শরৎচন্দ্র তাঁকে বলেন, ‘তুমি তো ঠাকুরের দেখা পেয়েছো। আবার কেন সেই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষকে দেখতে চাও?’
মাত্র ১৯ বয়সে ঠাকুর রামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর নরেন্দ্রনাথ বামাখ্যাপাকে দর্শন করার জন্য তার কলেজের সহপাঠী শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীকে জানান। শরৎচন্দ্র তাকে বলেন, ‘তুমি তো ঠাকুরের দেখা পেয়েছো। আবার কেন সেই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষকে দেখতে চাও?’
ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষদের চারটি অবস্থা বালকবৎ, জড়বৎ, উন্মাদবৎ এবং পিশাচবৎ। এই চারটি অবস্থাই ব্যামাক্ষ্যাপার মধ্যে দেখা যেত। কিন্তু ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে পিশাচবৎ ভাবটি অনুপস্থিত ছিল। তাই বামাক্ষ্যাপাকে দেখার জন্য নরেন্দ্রনাথ আকুল হয়ে ওঠেন। শেষে শরৎচন্দ্রকে নিয়ে নরেন্দ্রনাথ চলে এলেন তারাপীঠে। সেখানে বামাক্ষ্যাপা ও নরেন্দ্রনাথ দেখা হয়। আর তাঁর সম্পর্কে বামাক্ষ্যাপা তাঁর বন্ধু শরৎচন্দ্রকে বললেন, এই যুবক একদিন ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করবে।<ref name=":0">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bartamanpatrika.com/detailNews.php?cID=34&nID=109436&nPID=20180609|শিরোনাম=তারামায়ের ছেলে বামাক্ষ্যাপা|শেষাংশ=বর্তমান পত্রিকা|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=bartamanpatrika.com|সংগ্রহের-তারিখ=2019-01-18}}</ref>
ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষদের চারটি অবস্থা বালকবৎ, জড়বৎ, উন্মাদবৎ এবং পিশাচবৎ। এই চারটি অবস্থাই ব্যামাক্ষ্যাপার মধ্যে দেখা যেত। কিন্তু ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে পিশাচবৎ ভাবটি অনুপস্থিত ছিল। তাই বামাক্ষ্যাপাকে দেখার জন্য নরেন্দ্রনাথ আকুল হয়ে ওঠেন। শেষে শরৎচন্দ্রকে নিয়ে নরেন্দ্রনাথ চলে এলেন তারাপীঠে। সেখানে বামাক্ষ্যাপা ও নরেন্দ্রনাথ দেখা হয়। আর তার সম্পর্কে বামাক্ষ্যাপা তার বন্ধু শরৎচন্দ্রকে বললেন, এই যুবক একদিন ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করবে।<ref name=":0">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bartamanpatrika.com/detailNews.php?cID=34&nID=109436&nPID=20180609|শিরোনাম=তারামায়ের ছেলে বামাক্ষ্যাপা|শেষাংশ=বর্তমান পত্রিকা|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=bartamanpatrika.com|সংগ্রহের-তারিখ=2019-01-18}}</ref>


===মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সাক্ষাৎ ===
===মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সাক্ষাৎ ===
২৬ নং লাইন: ২৬ নং লাইন:


===আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সাথে সাক্ষাৎ===
===আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সাথে সাক্ষাৎ===
বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে তারাপীঠে বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন করার জন্য গিয়েছিলেন। আশুতোষ বামাক্ষ্যাপাকে ভক্তিভরে প্রণাম করতেই তিনি বলে উঠেছিলেন, {{cquote|যা যা, তোর মনের ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তুই শালা জজ হবি।}}
বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তার মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে তারাপীঠে বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন করার জন্য গিয়েছিলেন। আশুতোষ বামাক্ষ্যাপাকে ভক্তিভরে প্রণাম করতেই তিনি বলে উঠেছিলেন, {{cquote|যা যা, তোর মনের ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তুই শালা জজ হবি।}}
তিনি তো তখন হাইকোর্টের আইনজীবী। কিন্তু মনে জজ হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর। ১৯০৪ সালে তিনি হাইকোর্টের জজ হন।<ref name=":0" />
তিনি তো তখন হাইকোর্টের আইনজীবী। কিন্তু মনে জজ হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল তার। ১৯০৪ সালে তিনি হাইকোর্টের জজ হন।<ref name=":0" />


===রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মুকুন্দদাসের সাথে সাক্ষাৎ===
===রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মুকুন্দদাসের সাথে সাক্ষাৎ===

১৩:১৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বামাখ্যাপা, তারাপীঠের তান্ত্রিক সাধু, উনিশ শতক

বামাখ্যাপা (জন্ম ১২ ফাল্গুন ১২৪৪, মৃত্যু ২ শ্রাবণ ১৩১৮ )[১] ছিলেন এক হিন্দু তান্ত্রিক। তিনি তারাপীঠে বাস করতেন। তিনি দেবী তারার ভক্ত ছিলেন এবং মন্দিরের কাছে শ্মশানঘাটে সাধনা করতেন।[১] তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের সমসাময়িক ছিলেন।

প্রথম জীবন

১২ ফাল্গুন ১২৪৪ বঙ্গাব্দে বীরভূমে বামাক্ষ্যাপার জন্ম। তার পিতা ছিলেন সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায়। বামক্ষ্যাপার প্রকৃত নাম বামচরণ চট্টোপাধ্যায়। শৈশব থেকেই দেবভক্তি প্রবল। তিনি দেবী তারার ভক্ত ছিলেন এবং মন্দিরের কাছে শ্মশানঘাটে সাধনা করতেন।[২]

সাধনা ও খ্যাতি

বামাখ্যাপা নামাঙ্কিত ঘাট, তারাপীঠ

বামাখ্যাপা ছেলেবেলায় গৃহত্যাগ করে তিনি কৈলাশপতি বাবা নামে এক সন্ন্যাসীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কৈলাশপতি বাবা তারাপীঠে থাকতেন। বামাখ্যাপা তারাপীঠেই দ্বারকা নদের তীরে যোগ ও তন্ত্রসাধনা করেন। পরে তিনি নিকটবর্তী মল্লরাজাদের মন্দিরময় গ্রাম মালুটি (অধুনা ঝাড়খণ্ড রাজ্য)তে যান যোগ সাধনার জন্যে। সেখানে দ্বারকার তীরে মৌলাক্ষী দেবীর মন্দিরে সাধনাকালে প্রায় ১৮ মাস অবস্থান করেন।

Bamakhyapa's Temple. Maluti village, Jharkhand

ক্রমে তিনি তারাপীঠের প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ভক্তরা বিশ্বাস করত তার অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তাই তারা রোগারোগ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনে তার কাছে আসত। বামাখ্যাপা মন্দিরের নিয়মকানুন মানতেন না। এমনকি দেবতার থালা থেকেই নৈবেদ্য তুলে খেয়ে নিতেন। কথিত আছে, নাটোরের মহারানিকে স্বপ্নে দেবী তারার প্রত্যাদেশ পান যে, দেবীপুত্র বলে বামাখ্যাপাকে যেন আগে খাওয়ানো হয়। এরপর থেকে মন্দিরে পূজার আগেই বামাখ্যাপাকে নৈবেদ্য প্রদান এবং তাকে অবাধে মন্দিরে বিচরণ করতে দেওয়া হত।[৩] আরও কথিত আছে, দেবী তারা ভয়ংকর বেশে বামাখ্যাপাকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং পরে মাতৃবেশে কোলে তুলে নিয়েছিলেন।[১] তারাপীঠ শ্মশানে ও দুমকা জেলার মালুটি গ্রামের তার স্মৃতিমন্দির আছে।[৪]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

সাধক বামাখ্যাপাকে নিয়ে বহু গান, পল্লীগীতি রচিত হয়েছে। তার জীবনী বৃত্তান্ত নিয়ে বাংলা টেলিসিরিয়াল তৈরী হয়েছে।

মনীষীদের সাথে বামাক্ষ্যাপার সাক্ষাৎ

স্বামী বিবেকাকোনদের সাক্ষাৎ

মাত্র ১৯ বয়সে ঠাকুর রামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর নরেন্দ্রনাথ বামাখ্যাপাকে দর্শন করার জন্য তার কলেজের সহপাঠী শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীকে জানান। শরৎচন্দ্র তাকে বলেন, ‘তুমি তো ঠাকুরের দেখা পেয়েছো। আবার কেন সেই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষকে দেখতে চাও?’ ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষদের চারটি অবস্থা বালকবৎ, জড়বৎ, উন্মাদবৎ এবং পিশাচবৎ। এই চারটি অবস্থাই ব্যামাক্ষ্যাপার মধ্যে দেখা যেত। কিন্তু ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে পিশাচবৎ ভাবটি অনুপস্থিত ছিল। তাই বামাক্ষ্যাপাকে দেখার জন্য নরেন্দ্রনাথ আকুল হয়ে ওঠেন। শেষে শরৎচন্দ্রকে নিয়ে নরেন্দ্রনাথ চলে এলেন তারাপীঠে। সেখানে বামাক্ষ্যাপা ও নরেন্দ্রনাথ দেখা হয়। আর তার সম্পর্কে বামাক্ষ্যাপা তার বন্ধু শরৎচন্দ্রকে বললেন, এই যুবক একদিন ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করবে।[৫]

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সাক্ষাৎ

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম হলেও তিনি বামাক্ষ্যাপাকে দেখার জন্য তারাপীঠে গিয়েছিলেন। সেখানে দুজনার কিছুক্ষণ কথা হয়। কথিত আছে, ফেরার সময় বামাক্ষ্যাপা মহর্ষিকে বললেন,

ফেরার পথে সেই মাঠ এবং ছাতিম গাছ দেখে তিনি চমৎকৃৎ হলেন। সেখানে বসে ধ্যানে মগ্নও হলেন। তিনি ঠিক করেন সেখানে তিনি আশ্রম স্থাপন করবেন। পরবর্তী কালে ওখানেই শান্তিনিকেতনপ্রতিষ্ঠিত হয়।[৫]

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সাথে সাক্ষাৎ

বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তার মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে তারাপীঠে বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন করার জন্য গিয়েছিলেন। আশুতোষ বামাক্ষ্যাপাকে ভক্তিভরে প্রণাম করতেই তিনি বলে উঠেছিলেন,

তিনি তো তখন হাইকোর্টের আইনজীবী। কিন্তু মনে জজ হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল তার। ১৯০৪ সালে তিনি হাইকোর্টের জজ হন।[৫]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মুকুন্দদাসের সাথে সাক্ষাৎ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একবার চারণকবি মুকুন্দদাসের সঙ্গে তারাপীঠে গিয়ে বামাক্ষ্যাপার সঙ্গে দেখা করার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করেছিলেন। সন্ধ্যায় বামাক্ষ্যাপার সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। মুকন্দদাসকে দেখে বামাক্ষ্যাপা বললেন,

উল্লেখ্য, চারণকবির কোমরে একটা রিভলভার গোঁজা ছিল। তারপর তিনি রবীন্দ্রনাথকে বললেন, ‘তোর খুব নামডাক হবে।’ দুজনকে তারামায়ের প্রসাদ খাইয়ে তিনি ছেড়েছিলেন।[৫]

তথ্যসূত্র

  1. Kinsely, p. 111
  2. বসু, অঞ্জলি; গুপ্ত, সুবোধ চন্দ্র সেন (২০১০)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান: প্রায় চার সহস্রাধিক জীবনী-সংবলিত আকর গ্রণ্থ. প্রথম খন্ড। Sāhitya Saṃsada। আইএসবিএন 9788179551356 
  3. Harding, Elizabeth U. (১৯৯৮)। Kali: the black goddess of Dakshineswar। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 275–279। আইএসবিএন 8120814509। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-২৬ 
  4. খায়রুল আনম। "বামাখ্যাপার আবির্ভাব তিথি"। খবর ইন্ডিয়া অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. বর্তমান পত্রিকা। "তারামায়ের ছেলে বামাক্ষ্যাপা"bartamanpatrika.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-১৮ 

গ্রন্থপঞ্জি