বার্মায় ব্রিটিশ শাসন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
||
১০৯ নং লাইন: | ১০৯ নং লাইন: | ||
===প্রশাসন=== |
===প্রশাসন=== |
||
ব্রিটিশ কোম্পানি তাদের সদ্যপ্রাপ্ত নতুন প্রদেশটিতে প্রত্যক্ষ শাসনপ্রক্রিয়া কায়েম করে এবং পুরাতন প্রশাসনিক স্তরে একাধিক পরিবর্তন সাধন করে৷ |
ব্রিটিশ কোম্পানি তাদের সদ্যপ্রাপ্ত নতুন প্রদেশটিতে প্রত্যক্ষ শাসনপ্রক্রিয়া কায়েম করে এবং পুরাতন প্রশাসনিক স্তরে একাধিক পরিবর্তন সাধন করে৷ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়৷ রাজা থিবৌকে ভারতে নির্বাসনে পাঠানো হয় এবং সাধারণ মানুষের ধর্মাচারণের সাথে শাসকতন্ত্রের মধ্যে মতবিভেদ সৃষ্টি হয়৷ এটা বিশেষ করে বৌদ্ধ সমাজর জন্য খুব ক্ষতিকর ছিলো কারণ বৌদ্ধভিক্ষুরা এতদিন অবধি রাজার দানের ওপর নির্ভর ছিলেন৷ একই সময়ে বৌদ্ধ সংস্থাগুলির রাজতন্ত্রের কার্যকলাপের বৈধতা চর্চা করতো আবার চার্চগুলি জনসাধারণকে জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন করতো৷<ref name="Encyclopædia Britannica"/> |
||
ব্রিটিশদের তাদের নতুন এই উপনিবেশ সরাসরিভাবে নিয়ন্ত্রন করার আরেকটি পন্থা ছিলো একটি [[ধর্মনিরপেক্ষ]] শিক্ষাক্ষেত্র ও শাসনতন্ত্রের নির্মান৷ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসিত [[ব্রিটিশ ভারত|ভারত সরকার]] তাদের নতুন উপনিবেশে ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্যালয় স্থাপন করার সাথে সাথে ছাত্রদের স্থানীয় [[বর্মী ভাষা]] এবং কোম্পানির [[ইংরাজী ভাষা]]য় বিদ্যাদানের প্রচলন করে৷ এসময়ে তারা খ্রিস্টান মিশনারীদের সাথে বিদ্যমান বিদ্যালয় পরিদর্শন ও নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনায় রত হয়৷ পুরানো এবং নতুন উভয় প্রকার বিদ্যালয়ে বৌদ্ধধর্মের চর্চা এবং বর্মী সংস্কৃৃতি উপেক্ষিত হয়৷ বর্মীরা এই সময় ব্রিটিশ সংস্কৃৃতির আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে একত্রিত হতে থাকে৷<ref name="Encyclopædia Britannica"/> |
|||
উত্তর বর্মাকে গ্রামস্তর থেকে নিপুনভাবে শাসন পরিচালনা করার জন্য গ্রামাঞ্চলে তার নতুন দমন নীতির প্রচলন করে৷ এই নীতি অনুসারে যে সমস্ত পরিবারের মুখ্য লোক উক্ত গ্রামের সর্বেসর্বা হিসাবে নিযুক্ত থাকতেন সেই পরিবারগুলির বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে তাদের সেখান থেকে তাড়ানো হয় এবং দক্ষিণ বর্মায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশরা স্থানীয় বর্মী প্রধানদের সেখান থেকে তাড়িয়ে তার পরিবর্তে তাদের পছন্দমতো নতুনদের নিয়োগ করতন৷<ref name="Encyclopædia Britannica"/> |
|||
==তথ্যসূত্র== |
==তথ্যসূত্র== |
০২:৫০, ৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
ব্রহ্মদেশ বর্মা | |||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৮২৪-১৯৪৮ ১৯৪২-১৯৪৫: নির্বাসিত সরকার | |||||||||||||||||
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ | |||||||||||||||||
অবস্থা | ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ | ||||||||||||||||
রাজধানী | মৌলমেইন (১৮২৬-১৮৫২) ইয়াঙ্গুন (১৮৫৩-১৯৪২) শিমলা (১৯৪২-১৯৪৫) রেঙ্গুন (১৯৪৫-১৯৪৮) | ||||||||||||||||
নির্বাসনে রাজধানী | শিমলা, ব্রিটিশ ভারত (১৯৪২-১৯৪৫) | ||||||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | ইংরাজী (সরকারী) বর্মী (আঞ্চলিক) | ||||||||||||||||
ধর্ম | বৌদ্ধধর্ম, খ্রিস্টধর্ম, হিন্দুধর্ম, ইসলাম | ||||||||||||||||
মোনার্ক | |||||||||||||||||
• ১৮৬২-১৯০১ | ভিক্টোরিয়া | ||||||||||||||||
• ১৯০১-১৯১০ | সপ্তম এডওয়ার্ড | ||||||||||||||||
• ১৯১০-১৯৩৬ | পঞ্চম জর্জ | ||||||||||||||||
• ১৯৩৬ | অষ্টম এডওয়ার্ড | ||||||||||||||||
• ১৯৩৬-১৯৪৮ | ষষ্ঠ জর্জ | ||||||||||||||||
গভর্নর | |||||||||||||||||
• ১৯২৩-১৯২৭ | স্পেন্সর হারকোর্ট বাটলার (প্রথম) | ||||||||||||||||
• ১৯৪৬-১৯৪৮ | হুবার্ট এলভিন রেন্স (অন্তিম) | ||||||||||||||||
মুখ্য কমিশনার | |||||||||||||||||
• ১৮৬২-১৮৬৭ | আর্থার পারভেজ ফেয়ার (প্রথম) | ||||||||||||||||
• ১৮৯৫-১৮৯৭ | ফ্রেডারিক উইলিয়াম রিচার্ড ফ্রায়ের (অন্তিম) | ||||||||||||||||
আইন-সভা | ব্রিটিশ বর্মা বিধানসভা পরিষদ (লেজিসলেটিভ কাউন্সিল অব বর্মা) (১৮৯৭-১৯৩৬) বর্মা আইন-পরিষদ (লেজিসলেচার অব বর্মা) (১৯৩৬-১৯৪৭) | ||||||||||||||||
• উচ্চকক্ষ | সেনেট | ||||||||||||||||
দূত নিবাস | |||||||||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | ঔপনিবেশিক ভারত | ||||||||||||||||
৫ই মার্চ ১৮২৪ | |||||||||||||||||
১৮২৪-১৮২৬, ১৮৫২, ১৮৮৫ | |||||||||||||||||
১৯১৮-১৯৪২ | |||||||||||||||||
• ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে পৃৃথকীকরণ | ১৯৩৭ | ||||||||||||||||
• জাপানের অধিগ্রহণ and থাই অধিগ্রহণ | ১৯৪২-১৯৪৫ | ||||||||||||||||
• যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতালাভ | ৪ঠা জানুয়ারী ১৯৪৮ | ||||||||||||||||
মুদ্রা | বর্মী রুপি, ভারতীয় টাকা, পাউন্ড স্টার্লিং | ||||||||||||||||
| |||||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | মিয়ানমার |
১৮২৪ থেকে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বর্মাতে ব্রিটিশ আধিপত্য কায়েম ছিলো৷ ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধের পর থেকে প্রাথমিকভাবে বর্মার কিছু অংশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলেও ধীরে ধীরে বর্মার দেশীয় রাজ্যগুলি ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলির একটি হয়ে ওঠে৷ পরে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ বর্মা ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশভুক্ত হয় এবং ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তা পূর্ণ স্বাধীনতা পায়৷ ব্রিটিশ শাসনকালে এই অঞ্চলটি "ব্রিটিশ বর্মা" নামে পরিচিত ছিলো৷ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধে জয়লাভ করে বর্মা রাজ্যক্ষেত্রের একাধিক অঞ্চল যেমন, আরাকান রাজ্য (রাখাইন প্রদেশ) এবং টেনাসেরিম বিভাগ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেয়৷ ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী দক্ষিণ বর্মার পেগু বা পেগুইয়োমা এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল দখল করে এবং সেখানে একটি মুখ্য কমিশনার নিয়োগ করেন৷ ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে " ব্রিটিশ বর্মা"কে "ব্রিটিশ ভারত"-এর অন্তর্ভুক্ত করে একটি অভিন্ন একক হিসাবে শাসন পরিচালনা শুরু হয়৷[১]
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধ|তৃতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধে জয়লাভ করে ব্রিটিশ বাহিনী উত্তর বর্মার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দখল নিলে সমগ্র বর্মাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে৷ অত্তর বর্মাকেও "ব্রাটিশ ভারতের" অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং "বর্মা প্রদেশ" নামে একটি বৃৃহৎ প্রদেশ গঠন করা হয়৷ ব্রিটিশ শাসনকালে প্রদেশটির গুরুত্ব বৃৃদ্ধি পেলে এবং সুশাসনের লক্ষ্যে প্রদেশটিতে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে একজন প্রশাসনিক লেফ্টেন্যান্ট নিয়োগ করা হয়৷[১] বর্মা অফিস গঠন করে বর্মাকে "সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া অ্যান্ড বর্মা"র অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে বর্মাকে ব্রিটিশ ভারত থেকে পৃৃথক ঘোষনা করা অবধি এই প্রশাসনিক নিয়ম লাগু থাকে৷ পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন একাধিক ব্রিটিশ ঔপনিবেশের সাথে বর্মাতে জাপানের অধিগ্রহণ হলে সেখানে ব্রিটিশ শাসন বিপর্যস্ত হয়৷ পরে তা আবার আবার যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হলে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারী বর্মা পূর্ণ স্বাধীনতা পায়৷
বর্মা যেহেতু অধিকাংশ সময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বদলে স্কটিশবাসী তথা স্যার জেমস স্কটের তত্ত্বাবধানে এবং ইরাবতী ফ্লোটিলা কোম্পানির অধীনে শাসিত হতো এবং অন্যান্য স্কটিশ প্রশাসনের প্রভাবই বেশি থাকতো তাই ঐতিহাসিকরা বর্মাকে "স্কটিশ উপনিবেশ" বলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন৷
ব্রিটিশ আধিপত্যের পূর্বে বর্মা
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বর্মা ছিলো ভারত এবং চিন|চিনের মধ্যবর্তী কম কষ্টসাধ্য ও সহজে অতিক্রম্য বাণিজ্য পথ সরাসরি বর্মার ওপর দিয়ে যেতো, যা বর্মাকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঐশ্বর্যশালী করে তোলে৷ এছাড়াও স্বয়ং সম্পূর্ণ চাষাবাদের প্রাচুর্য অঞ্চলটিকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করেছিলো৷ পূর্বে ভারতীয় পণ্যব্যবসায়ীরা সমুদ্র উপকুল বরাবর বা নদীপথ (বিশেষত ইরাবতী নদী) ধরে বাণিজ্য করতেন৷ এই অঞ্চলগুলিতে প্রচুর সংখ্যাক জাতিতে বর্মীরা বাস করতেন ফলে সেখানে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির গভীর ছাপ পড়ে, যা আজও স্পষ্ট৷ বর্মা বা ব্রহ্মদেশই ছিলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ যারা ভারতে প্রবর্তিত বৌদ্ধধর্মকে আপন করে নেয়, যা পরবর্তীতে ব্রহ্মদেশের দাপ্তরিক ও সংখ্যাগুরু পৃৃষ্ঠপোষিত ধর্মে পরিণত হয়৷
ব্রিটিশদের বর্মা বিজয় এবং উপনিবেশ স্থাপনের পূর্বে শাসনরত কোনবাউং রাজবংশ সেখানে দৃৃঢ়সংলগ্ন কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা স্থাপন করতে সক্ষম হয়৷ রাজা মূখ্য কার্যনির্বাহকের ভূমিকা পালন করতেন যার সিদ্ধান্তই সকলক্ষেত্রে অন্তিম ও সর্বজনগ্রাহ্য বলে ধরা হতো৷ তবে তিনি প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক বিষয়ে আদেশ দিতে পারলেও নতুন আইন বলবৎ করতে অপারক ছিলেন৷ দেশটিতে তিন ধরণের আইন কোড চলতো, সেগুলি হলো, "রাজথট", "দম্মাথট" এবং "হ্লুত্তউ"৷ কেন্দ্রীয় সরকার তিনটি শাখায় বিভক্ত ছিলো যথা; রাজকোষসম্বন্ধীয়, সম্পাদন-শাস্তিমূলক এবং বিচারবিভাগীয়৷ তথ্যপ্রমাণ অনুসারে হ্লুত্তউ আইনের ভারপ্রাপ্ত সর্বেসর্বা ছিলেন রাজা নিজেই এবং রাজার একাধিপত্য দমন করার জন্য যতক্ষণ না কোনো স্থানে বা কোনো বিষয়ে হ্লুত্তউ আইন বলবৎ হচ্ছে ততক্ষণ সেই স্থানের অধিবাসীবৃৃন্দ রাজার হুকুম মানতে বাধ্য নয়৷ দেশটি একাধিক ক্ষুদ্র প্রদেশে বিভক্ত ছিলো যা রাজার হ্লুত্তউ আইনের অধীনে প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব দ্বারা নিয়োগ করা হতো৷ আবার আলাদা আলাদাভাবে গ্রামাঞ্চলগুলিতে রাজা বা ঐ প্রদেশের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তির নির্বাচিত শিরোমণি পরিবারের যোগ্য সদস্য দ্বারা শাসিত হতো৷[২]
বর্মায় ব্রিটিশের আগমন
কোনবাউং রাজবংশের শাসকরা ব্রিটিশ ভারতের অধীনস্ত চট্টগ্রাম নৌবন্দর বেষ্টন করে আসাম রাজ্য পর্যন্ত আরাকান রাজ্যের সীমানা প্রসারিত করতে চাইলে বর্মার রাজবংশ ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে৷ ১৭৮৪ থেকে ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্রে বর্মী সেন্যবাহিনীর হাত থেকে আরাকান সাম্রাজ্য বেদখল হওয়ার পর ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে তারা আবার তা পুণর্দখল করার চেষ্টা করে ও সীমান্ত অতিক্রম করে৷ এটিই ছিলো ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ঘটে যাওয়া প্রথম ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধর অন্যতম প্রধান কারণ৷ ব্রিটিশরা এসময় রেঙ্গুন পর্যন্ত একটি বৃৃহৎ সমুদ্রচালিত অভিযান চালালে ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিনাযুদ্ধে তারা রেঙ্গুন দখল করে৷ মান্দালয়ের নিকট আভা(ইনোয়া)-এর দক্ষিণে অবস্থিত দনুব্যু অঞ্চলে বর্মী সেনাধ্যক্ষ মহা বন্ধুল নিহত হন ও তার সেনাবাহিনী নিকেষ করা হয়৷ বর্মা আসাম সহ উত্তর দিকের প্রদেশগুলি ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়৷[৩] ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ইয়াণ্ডাবু সন্ধির মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতে দীর্ঘতর, বিপুল অর্থক্ষয়ী এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে৷ সরকারী হিসাবে পনেরো হাজার ইউরোপীয় এবং ভারতীয় সৈন্য সহ অগণিত বর্মী সৈন্য ও সাধারণের মৃৃত্যু হয় এবং উভয়পক্ষেরই বহু মানুষ আহত হয়৷[৪] হিসাব মতো ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর সেনাছাউনি বাবদ খরচ হয় ৫ মলিয়ন পাউন্ড এবং সর্বমোট খরচ ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড, যার বর্তমান মূল্য ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের বাজারদরে প্রায় ১৮.৫ এবং ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷[৫] এই বিপুল পরিমান অর্থক্ষয় ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ অবধি ব্রিটিশ ভারতে অর্থনীতিকে চরম সঙ্কটাপন্ন করে৷[৬]
১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা সিঙ্গাপুর এবং কলকাতার নোবন্দরের মধ্যবর্তী দক্ষিণ বর্মার সেগুন বন দাবী করে৷ বর্মীরা তৎক্ষনাৎ ব্রিটিশ গুপ্তচরকে বর্মা থেকে সরিয়ে নেওয়া পাল্টা দাবী তোলেন৷ ফলে দীর্ঘ ২৫ বছর শান্তিচুক্তির পরে ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধ শুরু হয়৷ ব্রিটিশরা যুদ্ধশেষে জয়লাভ করে এবং দক্ষিণ বর্মার একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে এবং দাবীকৃত সেগুনবন, তেল এবং উত্তর বর্মার অমূল্যসম্পদ লাভ করে৷
রাজা মিন্দন মিন এই আধিপত্য এবং ঔপনিবেশিকতা আটকানোর ও প্রশাসনিক পুণর্বিন্যাসের যথাসাধ্য চেষ্টা করেন৷ তিনি প্রশাসনিক সংস্কার করে বর্মাকে বিদেশী আকর্ষনের জন্য আরো সুগ্রাহী করে তোলেন৷ কিন্তু ব্রিটিশরা সুকৌশলে তৃতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধের সূচনা করে, যা ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ঘটে এবং দুসপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়৷ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের আক্রমনের পিছনে যুক্তি দেখান যে, বর্মার শেষ স্বাধীন রাজা থিবৌ মিন একজন অত্যাচারী রাজা ছিলেন এবং ষড়যন্ত্র করে তার দেশে ফ্রান্সের প্রভাব বৃৃদ্ধি করতে চাইছেন৷ ব্রিটিশ সৈন্যদল ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে নভেম্বর মান্দালয়ে প্রবেশ করে৷ এভাবে তিনটি যুদ্ধের পর এক এক করে ব্রিটিশ বাহিনী সমগ্র বর্মার ওপর নিজ অধিপত্য কায়েম করতে সফল হয়৷ এরপরে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা জানুয়ারী বর্মা ব্রিটিশ ভারতের একটি প্রদেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে৷[২]
ব্রিটিশরা উত্তর বর্মার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজের উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত করে এবং পুরো বর্মাকে "ব্রিটিশ বর্মা" নামে একটি প্রদেশ হিসাবে "ব্রিটিশ ভারত"-এর আওতায় আনে৷ ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারী মাসে উত্তর ও দক্ষিণ বর্মাকে একত্রিত করে একটি বৃৃহত্তর প্রদেশে পরিণত করা হয়৷[৭]
প্রাক ব্রিটিশ শাসন
ওলন্দাজ ভারত | ১৬০৫–১৮২৫ |
---|---|
দিনেমার ভারত | ১৬২০–১৮৬৯ |
ফরাসি ভারত | ১৭৬৯-১৯৫৪ |
কাসা দা ইন্দিয়া | ১৪৩৪–১৮৩৩ |
পর্তুগিজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি | ১৬২৮–১৬৩৩ |
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি | ১৬১২–১৭৫৭ |
কোম্পানি রাজ | ১৭৫৭–১৮৫৮ |
ব্রিটিশ রাজ | ১৮৫৮–১৯৪৭ |
বার্মায় ব্রিটিশ শাসন | ১৮২৪–১৯৪৮ |
দেশীয় রাজ্য | ১৭২১–১৯৪৯ |
ভারত বিভাজন | ১৯৪৭ |
১৮৮৫ থেকে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে একাধিকবার বিক্ষাপ্তভাবে বর্মী সেনাবাহিনী ব্রিটিশদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে ব্রিটিশ সেনাধিনায়ক উচ্চ আদালতকে দমননীতি চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে৷ সরকারীভাবে দু'সপ্তাহের মধ্যে তৃৃতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধ নিষ্পত্তি পেলেও ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একাধিক বার উত্তর বর্মা থেকে বিদ্রোহ ঘোষিত হয়৷ ব্রিটিশ বাহিনী গ্রামগুলির নিয়মানুগ ক্ষয়ক্ষতি করে নতুন অফিসার নিয়োগ করে শেষ পর্যন্ত এই গেরিলা কার্যকলাপ আপাতভাবে বন্ধ করতে সক্ষম হয়৷
ঐতিহ্যশালী বর্মী সমাজ রাজবংশ এবং স্বধর্মীয় শাসনতন্ত্র এবং স্বশাসন বিনষ্ট হওয়ার পরে বহুলাংশে রদবদল করে৷ স্থানীয় বর্মী এবং বহিরাগত ইউরোপীয়দের আন্তর্বিবাহে ইউরেশীয় (মিশ্র পরিচয়)|ইউরেশীয় সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ঘটে, যারা ইঙ্গ-বর্মী নামে পরিচিত৷ এরাই পরবর্তীকালে বর্মার বৃৃহত্তর জাতিতে পরিণত হয়, তারা ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে ব্রিটিশ ও স্থানীয় বর্মী মধ্যবর্তী স্থান পায়৷
ব্রিটিশ বাহিনী সমগ্র বর্মার ওপর আধিপত্য বিস্তার করলেও তারা চিনের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে চিনকে রাজত্ব দেওয়া চালিয়ে যায় কিন্তু বিশেষ কারণে তারা চিনের সম্মুখে তাদের পুরানো পদমর্যাদা হারায়৷[৮] ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের বর্মা সম্মেলনে চিন এবং ব্রিটিশ উভয়পক্ষ এটা স্থির করে যে উত্তর বর্মায় চিন ব্রিটিশ আধিপত্য মেনে নেবে এবং এর পরিবর্তে ব্রিটিশ আগামী দশ বছরের জন্য সমগ্র বর্মা থেকে সা যাবতীয় রাজস্ব বেজিংকে দান করবে৷[৯]
প্রশাসন
ব্রিটিশ কোম্পানি তাদের সদ্যপ্রাপ্ত নতুন প্রদেশটিতে প্রত্যক্ষ শাসনপ্রক্রিয়া কায়েম করে এবং পুরাতন প্রশাসনিক স্তরে একাধিক পরিবর্তন সাধন করে৷ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়৷ রাজা থিবৌকে ভারতে নির্বাসনে পাঠানো হয় এবং সাধারণ মানুষের ধর্মাচারণের সাথে শাসকতন্ত্রের মধ্যে মতবিভেদ সৃষ্টি হয়৷ এটা বিশেষ করে বৌদ্ধ সমাজর জন্য খুব ক্ষতিকর ছিলো কারণ বৌদ্ধভিক্ষুরা এতদিন অবধি রাজার দানের ওপর নির্ভর ছিলেন৷ একই সময়ে বৌদ্ধ সংস্থাগুলির রাজতন্ত্রের কার্যকলাপের বৈধতা চর্চা করতো আবার চার্চগুলি জনসাধারণকে জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন করতো৷[২]
ব্রিটিশদের তাদের নতুন এই উপনিবেশ সরাসরিভাবে নিয়ন্ত্রন করার আরেকটি পন্থা ছিলো একটি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাক্ষেত্র ও শাসনতন্ত্রের নির্মান৷ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসিত ভারত সরকার তাদের নতুন উপনিবেশে ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্যালয় স্থাপন করার সাথে সাথে ছাত্রদের স্থানীয় বর্মী ভাষা এবং কোম্পানির ইংরাজী ভাষায় বিদ্যাদানের প্রচলন করে৷ এসময়ে তারা খ্রিস্টান মিশনারীদের সাথে বিদ্যমান বিদ্যালয় পরিদর্শন ও নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনায় রত হয়৷ পুরানো এবং নতুন উভয় প্রকার বিদ্যালয়ে বৌদ্ধধর্মের চর্চা এবং বর্মী সংস্কৃৃতি উপেক্ষিত হয়৷ বর্মীরা এই সময় ব্রিটিশ সংস্কৃৃতির আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে একত্রিত হতে থাকে৷[২]
উত্তর বর্মাকে গ্রামস্তর থেকে নিপুনভাবে শাসন পরিচালনা করার জন্য গ্রামাঞ্চলে তার নতুন দমন নীতির প্রচলন করে৷ এই নীতি অনুসারে যে সমস্ত পরিবারের মুখ্য লোক উক্ত গ্রামের সর্বেসর্বা হিসাবে নিযুক্ত থাকতেন সেই পরিবারগুলির বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে তাদের সেখান থেকে তাড়ানো হয় এবং দক্ষিণ বর্মায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশরা স্থানীয় বর্মী প্রধানদের সেখান থেকে তাড়িয়ে তার পরিবর্তে তাদের পছন্দমতো নতুনদের নিয়োগ করতন৷[২]
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ Imperial Gazetteer of India vol. IV 1908, পৃ. 29
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Encyclopædia Britannica
- ↑ World Book Encyclopedia
- ↑ Thant Myint-U (২০০১)। The Making of Modern Burma। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 18। আইএসবিএন 0-521-79914-7।
- ↑ Thant Myint-U (২০০৬)। The River of Lost Footsteps—Histories of Burma। Farrar, Straus and Giroux। পৃষ্ঠা 113, 125–127। আইএসবিএন 978-0-374-16342-6।
- ↑ Webster, Anthony (১৯৯৮)। Gentlemen Capitalists: British Imperialism in South East Asia, 1770–1890। I.B.Tauris। পৃষ্ঠা 142–145। আইএসবিএন 978-1-86064-171-8।
- ↑ Dictionary of Indian Biography। Ardent Media। ১৯০৬। পৃষ্ঠা 82। GGKEY:BDL52T227UN।
- ↑ Alfred Stead (১৯০১)। China and her mysteries। LONDON: Hood, Douglas, & Howard। পৃষ্ঠা 100। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১। (Original from the University of California)
- ↑ William Woodville Rockhill (১৯০৫)। China's intercourse with Korea from the XVth century to 1895। LONDON: Luzac & Co.। পৃষ্ঠা 5। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১। (Colonial period Korea ; WWC-5)(Original from the University of California)