বিষয়বস্তুতে চলুন

বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মাজার

স্থানাঙ্ক: ৩০°১২′০২″ উত্তর ৭১°২৮′৩৫″ পূর্ব / ৩০.২০০৫৬° উত্তর ৭১.৪৭৬৩৯° পূর্ব / 30.20056; 71.47639
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মাজার
بہاؤ الدین زکریا درگاہ
বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মাজার দক্ষিণ পাঞ্জাবের স্বতন্ত্র স্থাপত্যরীতির ক্রমবিকাশে আদিরূপ হিসেবে গণ্য
বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মাজার পাঞ্জাব, পাকিস্তান-এ অবস্থিত
বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মাজার
পাঞ্জাব, পাকিস্তানে অবস্থান
বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মাজার পাকিস্তান-এ অবস্থিত
বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মাজার
পাঞ্জাব, পাকিস্তানে অবস্থান
মানচিত্র
স্থানাঙ্ক৩০°১২′০২″ উত্তর ৭১°২৮′৩৫″ পূর্ব / ৩০.২০০৫৬° উত্তর ৭১.৪৭৬৩৯° পূর্ব / 30.20056; 71.47639
অবস্থানমুলতান, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
ধরনসুফি মাজার
সম্পূর্ণতা তারিখ১২৬২ খ্রিষ্টাব্দ

বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মাজার (উর্দু: بہاؤ الدین زکریا درگاہ‎‎) হলো পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শহরে অবস্থিত ১৩শ শতাব্দীর একটি মাজার। স্থাপনাটি সুফিবাদের সোহরাওয়ার্দিয়া ধারার প্রবর্তক মুসলিম সাধক বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার সম্মানে নির্মিত। একে দক্ষিণ পাঞ্জাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাজারগুলোর অন্যতম বলে মনে করা হয়। এটিকে মুলতানের নিজস্ব স্থাপত্যরীতির আদিরূপ হিসেবে গণ্য করা হয়।[]

প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

১৩শ শতাব্দী নাগাদ মুসলিম বিশ্বে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, মুসলিম সাধকদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা তাদের কবরের সাথে থেকে যায়।[] ফলে আধ্যাত্মিক নেতাদের কবর ঘিরে মাজার গড়ে উঠতে থাকে।

পাঞ্জাবে সুফিবাদের প্রসারের সাথে সাথে মুলতানের আশেপাশের এলাকায় ছোট ছোট মাজারও গড়ে উঠতে থাকে।[] এই মাজারগুলো প্রধান মাজারের অধীনে বিলায়ত বা “আধ্যাত্মিক অঞ্চল” গঠন করে। [] প্রধান মাজারের অংশ হিসেবে মুলতান বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার বিলায়তের রাজধানী হিসেবে কাজ করতো।[] এই মাজারের বিলায়তের সীমানা পাকপত্তন-ভিত্তিক বাবা ফরিদের মাজারের সাথে সংযুক্ত ছিল বলে জানা যায়।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

মাজারটি বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার মৃত্যুর (১২৬৮) আগে ১২৬২ সালে নির্মিত হয়।[] এই অবকাঠামোটি সম্পূর্ণভাবে বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার নিজস্ব অর্থায়নের নির্মিত হয়, যা একজন দরবেশ হিসেবে তার স্বতন্ত্রতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি ইঙ্গিত করে।[]

১৬৫৮ সালে সমুগড়ের যুদ্ধে নিজের ভাইয়ের কাছে পরাজিত হয়ে দারা শিকো এই মাজারে ২৫,০০০ রুপি দান করে মুলতানের সাধারণ জনগণের মন জয় করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেন।[]

মাজারের সাজ্জাদা নাশিন বা উত্তরাধিকারী তত্ত্বাবধায়ক মখদুম মাহমুদ ১৮৪৮ সালে মুলতান অবরোধকালে শিখদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীকে সহায়তা করেন।[] অবরোধকালে মাজারের গম্বুজ ও উপরের অংশ ব্রিটিশদের গোলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[] কিন্তু খুব দ্রুতই তা মেরামত করা হয়।[]

স্থাপত্য

[সম্পাদনা]
মাজারের নকশা দুইটি স্তরে বিভক্ত। এটি মুলতানের স্বতন্ত্র স্থাপত্যরীতির আদিরূপ হিসেবে গণ্য।[]

মাজারটি দুই স্তরের কাঠামো দিয়ে নির্মিত, যা দক্ষিণ পাঞ্জাবের শুরুর দিককার মাজারগুলোর স্বতন্ত্র রীতির আদিরূপ হয়ে ওঠে।[] সম্পূর্ণ কাঠামোটির ভিত্তি ৫১ ফু ৯ ইঞ্চি (১৫.৭৭ মি) আয়তনজুড়ে একটি বর্গাকার ক্ষেত্রের ওপরে গড়ে উঠেছে।[] বর্গাকার ভিতের ওপরে বর্গের প্রায় অর্ধেক উচ্চতায় একটি অষ্টভুজাকার কাঠামো উঠে গেছে,[] যার উপরে রয়েছে একটি অর্ধ-গোলাকার গম্বুজ। মাজারটির মূল অবকাঠামো ঘিরে প্রায় কয়েকশ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে বিশাল প্রাঙ্গণ রয়েছে।[] প্রাঙ্গণের চারপাশ বেষ্টন করে উঠে যাওয়া দেয়ালগুলো ১৮শ শতকে মুলতানের দুররানি শাসক নওয়াব আলি মোহাম্মদ খান খাকওয়ানি কর্তৃক নির্মিত হয়।[]

মাজারটি প্রধানত ইটের তৈরি। এই ভবনেই একদম শুরুর দিকে চকচকে নীল টালি বসানো হয়,[] যা পরবর্তীতে মুলতান ও দক্ষিণ পাঞ্জাবের সাধারণ রীতিতে পরিণত হতো। অবকাঠামোয় নীল টালির ব্যবহার তৎকালে মধ্য এশিয়া তথা বৃহত্তর খোরাসান থেকে আসা অভিবাসী স্থপতিদের প্রতি ইঙ্গিত করে, যারা ১৩শ শতকে পাঞ্জাব অঞ্চলে যথেষ্ট সক্রিয় ছিল।[] ১৯৫২ সালে কাঠের ওপর চিত্রযুক্ত ছাদের ইটনির্মিত একটি বারান্দা মাজারের সাথে যুক্ত করা হত।[] বারান্দা থেকে মাজারের মূল অংশে প্রবেশের জন্য প্রশস্ত কাঠের দরজা স্থাপন করা হয়েছে।

বর্তমানে মূল মাজারটি আশেপাশে বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার বংশধর ও মুরিদদের অসংখ্য কবর দ্বারা বেষ্টিত।[]

রেওয়াজ ও প্রথা

[সম্পাদনা]

মাজারে মাগরিবের নামাজের পর রাতব্যাপী কাওয়ালি ও নাচের আসর বসে।[১০] মাজারটি বেরলভী ধারার অনুসারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। অন্যদিকে দেওবন্দিরা এধরনের মাজার ও এখানে পালিত বিভিন্ন রেওয়াজের কট্টর সমালোচনা করে থাকে।[১১] মাজারের ভক্তরা মান্নাত প্রথা মেনে চলে, অর্থাৎ মাজারে প্রার্থনার নিদর্শনস্বরূপ সুতা বেঁধে রেখে যায়।[১১] জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই মাজার সিন্ধু নদচেনাব নদীতে মাঝিদের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকে।[১২]

কুরেশী নামধারী শ্রেণির ভক্ত বাহাউদ্দিন জাকারিয়াকে অনুসরণ করে এবং নিজেদের মুহাম্মদি কুরাইশ বংশের বংশধর বলে দাবি করে।[১১] কুরাইশীরা পাকিস্তানের সরাইকি অঞ্চলে যথেষ্ট প্রভাবশালী।[১১] কুরাইশীদের অন্যতম শাহ মাহমুদ কোরেশী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

প্রশাসন

[সম্পাদনা]

উত্তরাধিকারসূত্রে মাজারের তত্ত্বাবধায়ক, তথা সাজ্জাদা নাশিন নিজেদের বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার বংশধর হিসেবে দাবি করে। তাদের কেউ কেউ অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং মাজারের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতেও প্রভাব সৃষ্টি করেছেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের সদস্য শাহ মাহমুদ কোরেশী এই মাজারের সাজ্জাদা নাশিন ছিলেন। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে সংহত করতে মাজারকে ব্যবহারের অভিযোগ উঠলে ভক্তদের আপত্তির মুখে তাকে মাজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।[১৩]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Suvarova, Anna (২০০৪)। Muslim Saints of South Asia: The Eleventh to Fifteenth Centuries। Routledge। আইএসবিএন 9781134370061। ৯ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  2. Richard M. Eaton (১৯৮৪)। Metcalf, Barbara Daly, সম্পাদক। Moral Conduct and Authority: The Place of Adab in South Asian Islam। University of California Press। আইএসবিএন 9780520046603। ৭ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  3. Singh, Rishi (২০১৫)। State Formation and the Establishment of Non-Muslim Hegemony: Post-Mughal 19th-century Punjab। SAGE India। আইএসবিএন 9789351505044। ৯ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  4. "Bahauddin Zakariya's shrine continues to inspire people"। Express Tribune। ১৭ জানুয়ারি ২০১৭। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  5. Faruqui, Munis (২০১২)। The Princes of the Mughal Empire, 1504–1719। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9781139536752 
  6. Khan, Hussain Ahmad (২০১৪)। Artisans, Sufis, Shrines: Colonial Architecture in Nineteenth-Century Punjab। IB Taurus। আইএসবিএন 9781784530143। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  7. University of Calcutta (১৮৯১)। Calcutta review। University of Calcutta। পৃষ্ঠা 251। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১১  This section uses content copied verbatim from this source, which is public domain.
  8. Durrani, Ashiq Muhammad Khān (১৯৮১)। Multān Under the Afg̲h̲āns, 1752-1818। Bazme Saqafat। 
  9. Khan, Ahmad Nabi (২০০৩)। Islamic Architecture in South Asia: Pakistan, India, Bangladesh। Oxford University Press। আইএসবিএন 9780195790658 
  10. Abbas, Shemeem Burney (২০১০-০৮-১১)। The Female Voice in Sufi Ritual: Devotional Practices of Pakistan and India 
  11. Khan, Hussain Ahmed (২০০৪)। Re-Thinking Punjab: The Construction of Siraiki Identity। Research and Publication Centre, National College of Arts। আইএসবিএন 9789698623098। ৯ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  12. Rizvi, S.H.M. (১৯৯৮)। Muslims। B.R. Publishing Corporation। আইএসবিএন 9788176460064 
  13. "Qureshi 'dethroned' as Sajjada Nashin of Bahauddin Zakariya shrine"। The Nation। ২৯ নভেম্বর ২০১৪। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭