পদক
পদক সাধারণতঃ গোলাকৃতি বস্তুবিশেষ যা ব্যক্তি, দল কিংবা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কৃত করার লক্ষ্যে হস্তান্তর করা হয়। পদকের ইংরেজি প্রতিশব্দ মেড্যাল যা বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বৃহৎ আকৃতির পদক মেড্যালিয়ন নামে অভিহিত। পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং পদক-খোদাইকারী - উভয়েই মেড্যালিস্ট নামে পরিচিত।
খোদাই কর্ম
[সম্পাদনা]যে-কোন প্রতীক, প্রতিকৃতি কিংবা অন্য কোন চিত্রকে পদকে প্রতিস্থাপন করা হয়। খোদাই করে, ছাঁচে ঢেলে, ছাপ প্রয়োগ অথবা অন্য কোনভাবে ছাপ মেরে পদককে আকর্ষণীয় ও স্মারক হিসেবে রাখা হয়। স্বতন্ত্র কোন ব্যক্তি কিংবা ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যেও পদক তৈরী হতে পারে। এছাড়াও শৈল্পিক চিত্রকর্মের অভিব্যক্তি, বিমূর্ত ভাবনা বা প্রতিচ্ছবি পদকে প্রকাশ করা হয়। চিত্রকর হিসেবে যিনি বা যারা পদকে এ সকল সৃষ্টিশীল বিষয়াদি উপস্থাপন করেন, তিনিই মেড্যালিস্ট বা পদক-খোদাইকারী।
পদক সাধারণতঃ গোলাকৃতি হলেও কখনো কখনো চতুর্ভূজ আকৃতিরও তৈরী করা হয়ে থাকে, যাকে প্লাক নামে অভিহিত করা হয়। চতুর্ভূজ আকৃতির পদকগুলো বৃহৎ ধরনের। বিজয়ের প্রতীকস্বরূপ ও শোভা বর্ধনের জন্য কলেজ পর্যায়েই মূলতঃ বৃহৎ আকৃতির পদক হিসেবে মেড্যালিয়ন প্রদান করা হয়।
বৈশিষ্ট্যাবলী
[সম্পাদনা]সচরাচর পদকের সম্মুখদিকই দৃশ্যমান ও সুশোভন করা হয়। এতে প্রতিকৃতি, দৃশ্যমালা অথবা অন্য কোন চিত্র খোদাই করা কিংবা কোন কিছু লেখা থাকে। পদকের উল্টোভাগ ব্যবহার করা হয় না বিধায় সাধারণতঃ খালি থাকে অথবা গুরুত্বহীন বিষয়াদি থাকতে পারে। প্রয়োজনে পদকের কিনারে গোপন চিহ্ন, প্রতীক, ধারাবাহিক নম্বর লুক্কায়িত অবস্থায় রাখা হয়।
পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য চিকন ফিতা ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। এছাড়াও, ব্যক্তির পোষাকে পদক গেঁথে দেয়ার জন্য নিরাপদ পিনও ব্যবহৃত হয়। বিশেষতঃ পদকের পিছনে কিংবা উপরে অদৃশ্যমান ছিদ্রে ফিতা অথবা পিন প্রবেশ করানো হয়।
ব্যবহৃত পদার্থ
[সম্পাদনা]ব্রোঞ্জ পদার্থের মাধ্যমেই পদক তৈরী হয়ে থাকে। সুবিধাজনক আর্থিক সীমারেখা, দীর্ঘস্থায়িত্বসহ সহজপ্রাচ্যতাই এর মূল কারণ। কিন্তু বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অন্যান্য প্রতিযোগিতায় সিলভার বা রৌপ্য, প্লাটিনাম এবং সোনা ব্যবহারও সবিশেষ লক্ষ্যণীয়। কপার, ব্রাশ, লোহা, এলুমিনিয়াম, সীসা, জিঙ্ক, নিকেল এবং পিউটার জাতীয় পদার্থের সংমিশ্রণও পদকে ঘটে থাকে। গুরুত্ব ও উপযোগীতার উপর নির্ভর করে পদকে স্বর্ণমণ্ডিত, রৌপ্যমিশ্রিত করে পদক গড়া হয়। এছাড়াও, কাচ, পোর্সেলি, কয়লা, কাঠ, কাগজ, টেরা কোট্টা, এনামেল, ল্যাকুয়েওয়্যার এবং প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্যাদির সাহায্যেও পদক তৈরী করা হয়ে থাকে।
পদক প্রদান
[সম্পাদনা]দৌড়বিদ, সামরিক বাহিনী, বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড ও গবেষণা, শিক্ষাক্ষেত্রসহ বিভিন্ন স্তরে অবদানের জন্য ব্যক্তি কিংবা সংস্থাকে পদক প্রদানের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ হিসেবে আধ্যাত্মিক পদকও পরিধান করানো হয়। সামরিক পোষাকে তারকা চিহ্নের পদক প্রদান এবং সংগ্রহশালার মাধ্যমে ব্যক্তির পরিচিতি ঘটানোও অত্যন্ত জনপ্রিয় ধারা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ইতিহাসবেত্তা জোসেফাস খ্রীষ্ট-পূর্ব ৪র্থ শতকে পদক প্রদান সম্পর্কে উল্লেখ করেন। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটকে খ্রীস্টান পাদ্রী জোনাথনের পক্ষ থেকে ইহুদীদের নেতৃত্ব গ্রহণে আমন্ত্রণ জানান। ফিরে আসার পর তিনি আলেকজান্ডার সম্পর্কে বলেন যে, "জোনাথনকে প্রেরণ করেছেন ... স্বর্ণ দণ্ড প্রদানের মাধ্যমে সম্মানসূচক পুরস্কৃত করেছেন যা রাজার রক্ত সম্পর্কীয় আচরণ বিশেষ"।
রোমান সম্রাটগণ সামরিক এবং রাজনৈতিক - উভয়ক্ষেত্রেই উপহার প্রদানের ক্ষেত্রে মেড্যালিয়ন বা বৃহৎ আকারের পদক ব্যবহার করতেন। সাধারণতঃ সোনা, রূপা দিয়ে এটি তৈরী হতো। এছাড়া ছাপ মারা মুদ্রাও উপহার হিসেবে প্রদান করা হতো।[১] প্রায়শঃই এগুলো খাঁটি স্বর্ণ মুদ্রা হিসেবে পুরুষ এবং মহিলা উভয়কেই পরিধান করানো হতো।
ব্র্যাকটিয়েট এক ধরনের চ্যাপ্টা, পাতলা স্বর্ণ পদক। এটির উল্টোপিঠ সাধারণত পাতলা ধরনের। অন্ধকার যুগে তৈরী এ পদকটি উত্তর ইউরোপে পাওয়া যায়। স্থানভেদে প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে এ ধরনের মুদ্রা ও পদকগুলোয় দেব-দেবীর মাথা, প্রাণী কিংবা অন্য কোন নকশা অঙ্কিত থাকতো।[২] এ ধরনের পদক প্রাচীন গুপ্ত সাম্রাজ্য এবং রোমান সাম্রাজ্যে প্রচলিত মুদ্রার সমগোত্রীয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Osbourne, 563
- ↑ "Bracteate [Scandinavian] (2001.583)". In Heilbrunn Timeline of Art History. New York: The Metropolitan Museum of Art, 2000 ndash. (October 2006)