চামদোর যুদ্ধ
চামদোর যুদ্ধ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: গণচীনে তিব্বতের অন্তর্ভুক্তি | |||||||||
| |||||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||||
তিব্বত | গণচীন | ||||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||||
ঙ্গা-ফোদ-ঙ্গাগ-দ্বাং-'জিগ্স-'মেদ[১] |
মাও সে তুং লিউ বোচেং ঝাং গুয়োহুয়া ফান মিং | ||||||||
শক্তি | |||||||||
তিব্বতী সেনাবাহিনী[২]:২০ ৮,৫০০[৩] | চীনের সামরিক বাহিনী: ৪০,০০০[৪]:৩০১[৫]:৪৩ | ||||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||||
১৮০ নিহত বা আহত[৫]:৪৫[৬][৭]:১৪৪ | ১১৪ নিহত বা আহত[৬] |
চামদোর যুদ্ধ (চীনা: 昌都之战) বা চীনের তিব্বত আক্রমণ[৮][৯]:৬০৮[১০] যা তিব্বতের মুক্তি নামে চীনে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচলিত[১১], কার্যত স্বাধীন তিব্বতের বিরুদ্ধে গণচীন দ্বারা পরিচালিত একটি সামরিক অভিযান।[১২][১৩]
প্রেক্ষাপট
[সম্পাদনা]১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ তিব্বত সরকারের একটি প্রতিনিধিদল ভারতের কালিম্পং শহরে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত গণচীন সরকারের প্রতিনিধিদলের সাথে তিব্বতের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে আলোচনার জন্য উপস্থিত হন। কিন্তু সভাস্থল নিয়ে তিব্বতী, ভারতীয়, ব্রিটিশ ও চীনা প্রতিনিধিদলের মধ্যে বিরোধ শুরু হওয়ায় সভা শুরু হতে বিলম্ব হয়। তিব্বতীরা সিঙ্গাপুর বা হংকং, ব্রিটিশরা নতুন দিল্লি এবং চীনারা বেইজিং শহরকে সভার সম্ভাব্য আলোচনা স্থল হিসেবে মনোনয়ন করেন। তিব্বতীরা বেইজিং শহরে আলোচনা করতে রাজী ছিলেন না, অন্যদিকে ব্রিটিশ ও ভারতীয়রা কোন ধরনের আলোচনার পক্ষপাতী ছিলেন না। যাই হোক, ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই সেপ্টেম্বর নতুন দিল্লি শহরে তিব্বতী প্রতিনিধিদল চীনের বিদেশদূত জেনারেল ইয়ুয়ান ঝোংজিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ইয়ুয়ান তাদের নিকট তিব্বতকে চীনের অংশ হিসেবে এবং তিব্বতের প্রতিরক্ষা, ব্যবসা ও বৈদেশিক সম্পর্ক চীনের দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব পেশ করেন। তিব্বর সরকার এই প্রস্তাব মেনে নিলে তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তিপ্রদান এবং না মানলে যুদ্ধের হুমকি দেওয়া হয়। তিব্বতীরা এর বিপরীতে চীনকে ঐতিহাসিকভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেই মনে করতেন। তিব্বতী প্রতিনিধিদলের প্রধান ত্সি-দ্পোন-দ্বাং-ফ্যুগ-ব্দে-ল্দান-ঝ্বা-স্গাব-পা (ওয়াইলি: tsi dpon dbang phyug bde ldan zhwa sgab pa) চীন ও তিব্বতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বলেন।
বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রমণের কোন সম্ভাবনা না থাকায় চীনা সৈন্যদের তিব্বতে অবস্থান করার বিপক্ষে তিব্বতীরা সওয়াল করেন। ভারত বা নেপাল দ্বারা আক্রান্ত হলে তিব্বতীরা চীনাদের নিকট সামরিক সাহায্যের অনুরোধ করবেন বলেও জানান। কিন্তু ৭ই অক্টোবর, চীনা সেনাবাহিনী পাঁচটি স্থান দিয়ে পূর্ব তিব্বতের সীমান্ত অতিক্রম করে।[৯]:৪৮ চামদো অঞ্চলে স্থিত তিব্বতী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে তিব্বত সরকারকে তিব্বতের ওপর চীনের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বেইজিং শহরে প্রেরণ করার জন্য বাধ্য করা এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল।[১৪]:৪৮,৪৯
তিব্বত অধিকার
[সম্পাদনা]খাম্স অঞ্চলের নেতা স্পোম-ম্দা'-ত্শাং-রাব-দ্গা' (ওয়াইলি: spom mda' tshang rab dga’) এই অঞ্চলের স্বাধীনতার স্বীকৃতির পরিবর্তে খাম্স-পা যোদ্ধার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিলে চামদোর শাসক ঙ্গা-ফোদ-ঙ্গাগ-দ্বাং-'জিগ্স-'মেদকে (ওয়াইলি: nga phod ngag dbang 'jigs med) তা নাকচ করে দেন। বেশ কয়েক মাসের ব্যর্থ আলোচনা[৫]:২৮-৩২ ও তিব্বতীদের বৈদেশিক সমর্থনলাভের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর[৫]:১২,২০,২১ চীনের সামরিক বাহিনী ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসের ৬ ও ৭ তারিখ জিনশা নদী অতিক্রম করে।[৫]:৩২ চীনা বাহিনীর দুইটি দল খুব শীঘ্রই তিব্বতী সেনাবাহিনীকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে ১৯শে অক্টোবরের মধ্যে চামদো অধিকার করে নেয়। এই লড়াইয়ে ১১৪ জন চীনা[৬] ও ১৮০ জন তিব্বতী সৈন্য[৬][৭]:১৪৪ নিহত বা আহত হন। এই অভিযানে চীনা সেনাপতি ঝাং গুয়োহুয়ার মতে, ৫৭০০ জন তিব্বতী নিহত হন এবং ৩০০০ জন শান্তিপূর্ণ ভাবে আত্মসমর্পণ করেন। খাম্স অঞ্চলের তিব্বতীরা চীনা বাহিনীর চামদো আক্রমণের বিরুদ্ধে কোন ধরনের প্রতিরোধ না গড়ে তোলায় চীনের সামরিক বাহিনী প্রায় বিনা প্রতিরোধে খাম্স অঞ্চল অধিকার করে নেয়।[১৫] চামদো অধিকৃত হলে স্পোম-ম্দা'-ত্শাং-রাব-দ্গা' তিব্বত ও চীনের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা নেন। চীনা বাহিনী ঙ্গা-ফোদ-ঙ্গাগ-দ্বাং-'জিগ্স-'মেদকে মধ্যস্থতার জন্য লাসা প্রেরণ করে।[৫]:৪৯
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Mackerras, Colin. Yorke, Amanda. The Cambridge Handbook of Contemporary China.(1991). Cambridge University Press. আইএসবিএন ০-৫২১-৩৮৭৫৫-৮. p.100.
- ↑ Goldstein, M.C., "The Snow Lion and the Dragon", (1997) University of California Press. আইএসবিএন ০-৫২০-২১২৫৪-১
- ↑ Freedom in Exile: The Autobiography of the Dalai Lama, Tenzin Gyatso, London: Little, Brown and Co, 1990 আইএসবিএন ০-৩৪৯-১০৪৬২-X
- ↑ Laird, Thomas. The Story of Tibet: Conversations with the Dalai Lama (2006) Grove Press. আইএসবিএন ০-৮০২১-১৮২৭-৫
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Shakya, Tsering. The Dragon In The Land Of Snows (1999) Columbia University Press. আইএসবিএন ০-২৩১-১১৮১৪-৭
- ↑ ক খ গ ঘ Jiawei Wang et Nima Gyaincain, The historical Status of China's Tibet, China Intercontinental Press, 1997, p.209 (see also The Local Government of Tibet Refused Peace Talks and the PLA Was Forced to Fight the Qamdo Battle ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ মার্চ ২০১২ তারিখে, china.com.cn): "The Quamdo battle thus came to a victorious end on October 24, with 114 PLA soldiers and 180 Tibetan troops killed or wounded."
- ↑ ক খ Feigon, Lee. Demystifying Tibet: Unlocking the Secrets of the Land of Snows (1996) Ivan R. Dee Inc. আইএসবিএন ১-৫৬৬৬৩-০৮৯-৪
- ↑ New York Times archives search for "Invasion of Tibet".
- ↑ ক খ Goldstein, Melvyn C. (২০০৭)। A History of Modern Tibet, Volume 2: The Calm Before the Storm: 1951-1955 (ইংরেজি ভাষায়)। University of California Press। আইএসবিএন 978-0-520-24941-7।
- ↑ This Day in History, BBC News, Saturday, December 25th 1999.
- ↑ Press, the Associated (১৯৪৯-০৯-০৩)। "Chinese Reds Promise The 'Liberation' of Tibet"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-০৫।
- ↑ Shakya, Tsering (২০১২-০২-২৯)। Dragon In The Land Of Snows: The History of Modern Tibet since 1947 (ইংরেজি ভাষায়)। Random House। পৃষ্ঠা ৪৩১। আইএসবিএন 978-1-4481-1429-0।
- ↑ Roemer, Stephanie (২০০৮)। The Tibetan Government-in-exile: Politics at Large (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা ৩২। আইএসবিএন 978-0-415-45171-0।
- ↑ Goldstein, Melvyn C. A History of Modern Tibet, Volume 1: 1913–1951: The Demise of the Lamaist State (1989) University of California Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২০-০৬১৪০-৮
- ↑ Knaus, John Kenneth (২০০৮)। Orphans of the Cold War: America and the Tibetan Struggle for Survival। PublicAffairs। পৃষ্ঠা 71। আইএসবিএন 078672403X। ২৬ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৪।
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- Ford, Robert; Bstan-vdzin-rgya-mtsho (১৯৯০)। Captured in Tibet। Oxford paperbacks (পূণমূদ্রণ সংস্করণ)। Hong Kong: Oxford Univ. Press। আইএসবিএন 978-0-19-581570-2।
- Grunfeld, A. Tom (১৯৯৬)। The making of modern Tibet (২য় সংস্করণ)। Armonk, N.Y: M.E. Sharpe। আইএসবিএন 978-1-56324-713-2।