কাঁকরোল
কাঁকরোল মোমর্ডিকা ডাইয়োইকা | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
বিভাগ: | ম্যাগনোলিয়োফাইটা |
শ্রেণী: | ম্যাগনোলিয়োপ্সিডা |
বর্গ: | কিউকার্বিটেলস |
পরিবার: | কিউকার্বিটেসি |
গণ: | মোমর্ডিকা |
প্রজাতি: | এম M. ডাইয়োইকা |
দ্বিপদী নাম | |
মোমর্ডিকা ডাইয়োইকা রক্সব্ প্রাক্তন বন্য |
কাঁকরোল একটি উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম হল মোমর্ডিকা ডাইয়োইকা, তাই এটি এক ধরনের ছোট সবজি, যা সাধারণত গ্রীষ্মকালে ফলে। কাঁকরোল সম্ভবত ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে জন্মায়না। কাঁকরোলের বীজ কাঁকরোল গাছের নীচে হয়ে থাকে যা দেখতে মিষ্টি আলুর মত। কাঁকরোল একটি পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় সবজি৷ এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন বি, শ্বেতসার ও খনিজ পদার্থ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে৷ বাংলাদেশে কুমড়ো পরিবারের যতো সবজি আছে তার মধ্যে কাঁকরোলের বাজার দর ও চাহিদা বাজারে অনেক বেশি৷ কাঁকরোল গাছ লতানো গাছ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয়না। তাই বাগানে দুই ধরনের গাছ না-থাকলে, পরাগ মিলন না-হলে, ফল হবেনা।
বিভিন্ন মাটিতে মার্চ ও এপ্রিলে এ সবজির চাষ করা যায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় কাঁকরোলের অনেক জাত দেখতে পাওয়া যায়৷ ফলের আকার, আকৃতি ও বর্ণ এবং নরম কাঁটার বৈশিষ্ট্য দ্বারা বিভিন্ন শনাক্ত করা যায়৷ ৯০-১০০ দিনের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া সম্ভব। লালমাই গ্রামের, ফটিকছড়ি উপজেলা, চট্রগ্রাম জেলা (এই গ্রামে ধানের পরে প্রাধন ফসল হিসাবে কাঁকরোল চাষ করে থাকে কৃষকরা)। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লা এর অন্যতম প্রধান উৎপাদন এলাকা৷ ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কিছু প্রজাতি সংগ্রহ করে সেগুলোর চাষ শুরু করেছেন এবং বিভিন্ন জাত সংগ্রহ করার জন্য নিজেরাই মণিপুরি, আলমি, সবুজ টেম্পু, হলুদ টেম্পু, বর্ণ টেম্পু, মেরাশানি ও অন্যান্য নাম [১] দিয়েছেন৷ বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাঁকরোল মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়৷
এটি কন্দমূলের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। জমিতে রোপণের সময় ১০ শতাংশ পুরুষ গাছ রাখতে হয়।
বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম
[সম্পাদনা]- প্রমিত বাংলা: কাঁকরোল, ঘি-করলা
- প্রচলিত নাম: (উত্তরবঙ্গে) ভাত-করলা, চোটোল, (নোয়াখালী) আকরি
- অসমীয়া: ভাত কেৰেলা
- সংস্কৃত: कर्कोटकी (karkotaki)
- হিন্দি: ककोड़ा (kakoda), परोड़ा (paroda)
- বিহার ও ইউপি: चटैल (chataila)
- নেপালি: chatela
- ইংরেজি: spiny gourd, spine gourd, bristly balsam pear, prickly carolaho, teasle gourd or kantola
পুষ্টি তথ্য
[সম্পাদনা]প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁকরোলে (ভোজন যোগ্য) থাকে প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, চর্বি ১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ১.১ গ্রাম, শর্করা ৭.৭ গ্রাম, শক্তি ৫২ কিলো ক্যালোরি, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিগ্রা, ফসফরাস ৪২ মিগ্রা, আয়রন ৪.৬ মিগ্রা এবং ক্যারোটিন ১৬২০ মাইক্রো গ্রাম। বাংলাদেশে কাঁকরোল চাষের কোনো পরিসংখ্যান না-থাকলেও এটি সারা দেশে চাষযোগ্য গ্রীষ্মকালীন একটি অতি প্রচলিত সবজি।
গুণাগুণ
[সম্পাদনা]- কাঁকরোলে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। এতে রয়েছে ফাইবার, মিনারেল, ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
- গর্ভকালীন সময়ে অনেকের স্নায়ুবিক ত্রুটি দেখা দেয়। কাঁকরোল ভিটামিন বি এবং সি-এর ভালো উৎস। যা কোষের গঠন ও নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে স্নায়ুবিক ত্রুটি হয়না।
- কাঁকরোলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট, পলিপেপটিড-পি এবং উদ্ভিজ্জ ইনসুলিন আছে। যা ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করে যকৃৎ, পেশি ও শরীরের মেদবহুল অংশে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণ করে।
- কাঁকরোল ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সাহায্য করে।
- কাঁকরোল ভিটামিন সি পরিপূর্ণ হওয়ায় প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টরূপে কাজ করে। যা শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- কাঁকরোলে আছে বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন, লিউটেইন, যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না, ত্বককে করে তারুণ্যদীপ্ত।
- কাঁকরোলের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- জ্বর হলে কাঁকরোল পাতার রস কিছু সময় সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে পান করুন, জ্বর কমে যাবে।
- পাইলসের সমস্যা থাকলে পাঁচ গ্রাম কাঁকরোল বাটার সঙ্গে পাঁচ গ্রাম চিনি মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করুন, পাইলস নিরাময় হবে।
- ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতেও কাঁকরোলের জুড়ি নেই। গোসলের সময় কাকরোল বাটা স্ক্রাব হিসেবে গায়ে মাখুন, ১০ মিনিট শরীরে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এতে দুর্গন্ধও কমে যাবে এবং ত্বকও কোমল থাকে।
- কাশি হলে তিন গ্রাম কাঁকরোল বাটা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে তিনবার পান করুন, কাশি কমে যাবে।
- শ্বাসকষ্ট হলে ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম কাঁকরোলের শেকড় বাটার সঙ্গে এক চা চামচ আদার রস ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খান, আরাম পাবেন।
- কিডনিতে পাথর হলে ১০ গ্রাম কাঁকরোল বাটা এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে খান। এভাবে প্রতিদিন পান করুন, দ্রুত সেরে যাবে।
- কাঁকরোলের বিভিন্ন অংশ ভারতে ডায়াবেটিস রোগের ঐতিহ্যবাহী ভেষজ প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "বাংলাপিডিয়া"। ১৪ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০০৯।
- ↑ Singh, Rambir; Sharma, Poonam (২০১৪)। "Effect of Momordica dioica fruit extract on antioxidant status in liver, kidney, pancreas, and serum of diabetic rats"। Pharmacognosy Research (ইংরেজি ভাষায়)। 6 (1): 73। আইএসএসএন 0974-8490। ডিওআই:10.4103/0974-8490.122922। পিএমআইডি 24497747। পিএমসি 3897014 । ২ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০২১।