আলাউদ্দিন সুইটমিট
আলাউদ্দিন সুইটমিট লিমিটেড | |
গঠিত | ১৮৬৪ |
---|---|
প্রতিষ্ঠাতা | আলাউদ্দিন হালুয়াই |
প্রতিষ্ঠাস্থান | চকবাজার, পুরান ঢাকা |
অবস্থান | |
পণ্যs | মিষ্টি, সেমাই, জলখাবার |
ওয়েবসাইট | alauddinsweetmeat.com.bd |
আলাউদ্দিন সুইটমিট লিমিটেড হল বাংলাদেশের প্রাচীনতম মিষ্টান্ন দোকান,[১] যা মিষ্টি ও জলখাবারের জন্য জনপ্রিয়। এর প্রতিষ্ঠাতার নাম আলাউদ্দিন হালুয়াই। এটি বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো মিষ্টি প্রস্তুতকারক ও সক্রীয় মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিক্রয় কেন্দ্র আছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ব্রিটিশ আমল (১৮৬৪-১৯৪৭)
[সম্পাদনা]ব্রিটিশ ভারতের লখনউ থেকে আগত আলাউদ্দিন হালুয়াই ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৬০-এর দশকে মিষ্টান্ন ব্যবসা শুরু করে সফলতা লাভ করার পরে আলাউদ্দিন তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৮৬৪ সালে তিনি ঢাকার চকবাজারে একটি মিষ্টির দোকান খুলেন। ১৮৯৪ সালে তিনি দোকানটির নাম পরিবর্তন করে রাখেন "আলাউদ্দিন সুইটমিট"। আলাউদ্দিন হালুয়াই ব্রিটিশ আমলে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর দোকানের দায়িত্ব তার ছেলে আফসারুদ্দিন পায়।[২][৩]
পাকিস্তান আমল (১৯৪৭-১৯৭১)
[সম্পাদনা]চকবাজারের দোকানটি পাকিস্তান আমলে বেশকিছু ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও ছাত্র নেতা জলখাবারের জন্য আলাউদ্দিন সুইটমিটে আসত।[২] বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আলাউদ্দিন সুইটমিট একাগ্রতা প্রকাশ করে তাদের প্রতীকে বাংলা বর্ণ ‘অ’ ব্যবহার শুরু করে।[৪] ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় আলাউদ্দিন সুইটমিটের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।[২]
স্বাধীনতা-পরবর্তী আমল (১৯৭১-বর্তমান)
[সম্পাদনা]সত্তরের দশকে, বিশেষত বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মিষ্টি ব্যবসার পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে এবং আলাউদ্দিন সুইটমিটের ব্যবসার নেতৃত্বের প্রথম সারীতে চলে আসে৷ চিকন খাকি কাগজের প্যাকেটের বদলে আলাউদ্দিন নিজেদের নাম লেখা কাগজের বাক্সে মিষ্টি বিক্রয় শুরু করে। মিলাদ, কুলখানি, গায়ে হলুদ ও বিয়েতে আলাউদ্দিনের গাঢ় নীল ও গোলাপি রঙের কাগজের বাক্স দ্রুত জনপ্রিয় হয়।[৩] স্বাধীনতার পর তারা ঢাকার গ্রিন রোডে আরেকটি দোকান খুলে।[৫] ১৯৮৩ সালে আলাউদ্দিন সুইটমিট একটি লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এরপর তারা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে।[২] যদিও ১৯৯৯ সালে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগের পরে আলাউদ্দিন সুইটমিটের ব্যবসায় ধ্বস নামতে শুরু করে। ২০০২ থেকে ২০০৫ সালে কোম্পানিটি সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও তারপর ৪ বছরের জন্য এটি বন্ধ ছিল। ২০০৯ সালে আলাউদ্দিন সুইটমিট ব্যবসায় ফিরে আসে।[৪] বর্তমানে মারুফ আহমেদ আলাউদ্দিন সুইটমিট লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।[৬][৭]
শাখা
[সম্পাদনা]২০১৫ সালে আলাউদ্দিন সুইটমিটের ১৬টি শাখা ছিল।[৩] এর মধ্যে ৬টি শাখা পুরান ঢাকায় আর ২টি শাখা বিদেশে অবস্থিত। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বিদেশে তাদের ৬টি শাখা রয়েছে:[৬][৮]
স্থানীয় শাখা
[সম্পাদনা]- চকবাজার-১
- চকবাজার-২
- নিউ মার্কেট
- গ্রিন রোড
- মৌচাক
- সিদ্ধেশ্বরী
- বিমানবন্দর
- চানখাঁরপুল
- মহাখালী
- সিক্কাটুলী
- নবাবপুর
- নারিন্দা
- কদমতলি
- নয়াবাজার
আন্তর্জাতিক শাখা
[সম্পাদনা]- জ্যাকসন হাইটস, নিউ ইয়র্ক
- ব্রিকলেন, লন্ডন
- সৌদি আরব
- মালয়েশিয়া
- সিঙ্গাপুর
- ভারত
পণ্য
[সম্পাদনা]নিয়মিত পণ্য
[সম্পাদনা]আলাউদ্দিন সুইটমিট নিয়মিত পণ্য হিসেবে মিষ্টি বিক্রি করে। মিষ্টি হিসেবে তাদের কাছে রয়েছে রানীভোগ, মালাইভোগ, চমচম, লালমোহন, কালোজাম, বরফি, হালুয়া, ছানা, মাওয়া লাড্ডু, জাফরানি লাড্ডু, মতিচুর লাড্ডু, স্বর মালাই, ইরানিভোগ, মালাইভোগ,[৬] রসগোল্লা, স্পঞ্জ রসগোল্লা, গুড় সন্দেশ, মালাইকারি,[৯] রাজভোগ, দই, হাফসি হালুয়া, দুধিয়া সন্দেশ, কাঁচা সন্দেশ, রসমালাই ইত্যাদি।[৩]
বরাতি রুটি
[সম্পাদনা]এছাড়া শবে বরাতের আগের দিন তারা "বরাতি রুটি" নামক এক ধরনের বিশেষ রুটিও বিক্রি করে।[১০]
লাচ্ছা সেমাই
[সম্পাদনা]আলাউদ্দিন সুইটমিট দাবি করেছে যে পঞ্চাশ বছর আগে বাংলাদেশে তারাই প্রথম লাচ্ছা সেমাই নিয়ে এসেছে। তারা লাচ্ছা সেমাইও বিক্রি করে।[৬]
রমজান মৌসুম
[সম্পাদনা]রমজান মাসে ইফতারের খাবার বিক্রির জন্য আলাউদ্দিন সুইটমিট পরিচিত।[১১] তারা রমজানে হালিম,[১২] সমুচা, সিঙ্গাড়া, জিলাপি ইত্যাদি বিক্রি করে।[১৩] রমজানে তারা রেশমি জিলাপি বিক্রি করে যা ১৮৯৪ সাল থেকে বিক্রি হয়ে আসছে। আলাউদ্দিনের নাতি দাবি করেছে এটিই ঢাকার প্রথম রেশমি জিলাপি বিক্রির দোকান।[১৪]
প্রচারণা
[সম্পাদনা]দোকানের প্রচারণার জন্য আলাউদ্দিন সুইটমিট সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কার্টুনিস্ট রফিকুন নবী কর্তৃক আঁকা কার্টুন সম্বলিত বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতো।[৩]
সামাজিক দায়বদ্ধতা
[সম্পাদনা]আলাউদ্দিন সুইটমিটের গাজীপুর ও সাভারে দুটো এতিমখানা ও মাদ্রাসা রয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে তারা বেশ কিছু মসজিদ ও বিদ্যালয় পরিচালনা করে।[২]
নেতিবাচক দিক
[সম্পাদনা]আলাউদ্দিন সুইটমিটকে বিএসটিআইয়ের মোড়কে খুচরা মূল্য উল্লেখ না করা, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের শর্তাবলী লঙ্ঘন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, ভেজাল খাবার বিক্রি ইত্যাদি অভিযোগে বিএসটিআই ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে।[১৫][১৬][১৭][১৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ পারভীন, শাহনাজ (৩ আগস্ট ২০০৮)। "Tale of oldest Dhakai halwaiwalas"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ জামান, সুমাইয়া (৩০ ডিসেম্বর ২০২০)। "আলাউদ্দিন সুইটস: যে গল্পের শুরু দেড়শ বছর আগে"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "আলাউদ্দিন সুইটমিট: সোয়া শ বছর, মনকাড়া স্লোগান, সুস্বাদু হালুয়া আর বিচ"। কালের কণ্ঠ। ৩০ মে ২০১৫।
- ↑ ক খ খানম, নিলুফার (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "ঐতিহ্য নিয়ে এখনো টিকে আছে 'আলাউদ্দিন সুইটমিট'"। বাংলাদেশ জার্নাল।
- ↑ শফিক, হুমায়ুন (১১ এপ্রিল ২০১৯)। "বাংলার রস, বাংলার মিষ্টি"। রাইজিং বিডি।
- ↑ ক খ গ ঘ উম্মে মারজান জুঁই (১৭ নভেম্বর ২০১৯)। "Guilty pleasures of Alauddin Sweetmeat"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ এমএইচ হায়দার (২৫ অক্টোবর ২০২০)। "Not another sweet(s) story"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ হারুন উর-রশিদ (৮ মে ২০১৮)। "মিষ্টির কর্পোরেট ব্যবসা"। ডয়েচ ভেল।
- ↑ হোসেন, ফরহাদ (২৩ জুলাই ২০১৭)। "মিষ্টি মালাইকারি"। কালের কণ্ঠ।
- ↑ "শবে বরাতে 'বরাতি রুটির' ক্ষয়িষ্ণু ব্যবসা"। প্রথম আলো। ২৯ মার্চ ২০২১।
- ↑ "'ভয়ে' খোলেনি ইফতারির দোকান রেস্তোরাঁ"। দৈনিক সমকাল। ৩০ এপ্রিল ২০২০। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ নূর, মারিয়া (১২ জুন ২০১৮)। "ইফতারে ঢাকার হালিম ও জিলাপি"। নয়া দিগন্ত।
- ↑ "রোজার দিনেও চকবাজারে হাঁক নেই, ডাক নেই"। যায়যায়দিন। ২৬ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ আহমেদ, মুসা (৪ জুন ২০১৭)। "জিলাপির রসাল প্যাঁচ"। প্রথম আলো।
- ↑ "BSTI fines three business outlets in city"। ডেইলি সান (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ মে ২০১৭।
- ↑ হাসান, কামরুল (২২ জুন ২০১৫)। "11 shops fined for selling adulterated food"। ঢাকা ট্রিবিউন (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ "চকবাজারে চার মিষ্টির দোকানকে জরিমানা"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২৫ মে ২০১৮। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "আলাউদ্দিন সুইটকে জরিমানা"। কালের কণ্ঠ। ৩০ নভেম্বর ২০১৪।