হ্লাকপা ঘেলু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

হ্লাকপা ঘেলু (নেপালি: ल्हाक्पा घेलु) (জন্ম ২৩ জুন ১৯৬৭), হলেন একজন নেপালি শেরপা পর্বতারোহী, যিনি নেপালের সোলুখুম্বু জেলার খারীখোলার জুবিং-১ এ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাউন্ট এভারেস্টের (৮,৮৪৮ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ; নেপালি নাম "সাগরমাতা") দ্রুততম আরোহণের বিশ্ব রেকর্ড ধারণের জন্য বিখ্যাত। তিনি মাত্র ১০ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে এভারেস্ট জয় করেন। ঘেলুর জীবনের দশম এভারেস্ট যাত্রায় তিনি এই রেকর্ড করেন।[১]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

হ্লাকপা ঘেলু ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুনের আশেপাশের কোনো এক সময়ে[২] নেপালের সোলুখুম্বু জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। উপজাতীয় শেরপা সম্প্রদায় ঐতিহ্যগতভাবে জন্ম তারিখ গণনা করে না, যে কারণে সঠিকভাবে তাদের জন্ম তারিখ ও বয়স বের করা সম্ভব হয় না।

হ্লাকপা ঘেলুর পরিবার বংশানুক্রমিকভাবে পর্বতারোহী। হ্লাকপার বড় ভাই ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে অন্নপূর্ণা আরোহণের সময় মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া তার ছোট ভাইও মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন।[৩] হ্লাকপা ব্যক্তিজীবনে ফুলি নামক একজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এবং তাদের আং দাওয়া, নিমা এবং তাশি নামে তিনজন সন্তান রয়েছে।

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে হ্লাকপা ঘেলু যুক্তরাষ্ট্রের ইউটায় স্থানান্তরিত হন।[৪] তার পর্বতারোহণে দক্ষতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিকভাবে যুদ্ধমান, কেননা পাশ্চাত্যের একজন গাইডের (পথপ্রদর্শক) চেয়ে নেপালি শেরপারা খুবই অল্প মজুরি পান।[৪] ইউটায় পর্বতারোহণের গাইড হিসেবে কাজ খুঁজতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয় এবং এ কারণে কাজ খোঁজার পাশাপাশি কফি হাউজ, সাইনবোর্ড টাঙানো এবং পিজা সরবরাহের কাজ করতে হয়।[৫]

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে হ্লাকপা আল্পাইন অ্যাসেন্ট ইন্টারন্যাশনালের গাইড হিসেবে কাজ শুরু করেন। কাজের অংশ হিসেবে তিনি মাউন্ট রাইনার এবং আকনকাগুয়ায় আরোহণ করেন।[৬][৭]

এছাড়া তিনি সোলুখুম্বু জেলায় সামাজিক কাজ করার জন্য একটি দাতব্য তহবিল পরিচালনা করেন।

এভারেস্টের দ্রুততম আরোহণ[সম্পাদনা]

হ্লাকপা ঘেলু ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে বিকাল ৫:০০ টায় এভারেস্টে উঠার জন্য যাত্রা শুরু করেন এবং ২৬ মে সকাল ৩টা ৫৬ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান। তিনি ২৬ মে সকাল ১১:২০ মিনিটে বেজ ক্যাম্পে ফেরত আসেন। হ্লাকপা চূড়ায় পৌঁছে ৬ ফুট (১.৮ মিটার) লম্বা তাম্রদণ্ডে নেপালের পতাকা উত্তোলন করেন বলেও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। বেজ ক্যাম্প থেকে শৃঙ্গে আরোহণ এবং শৃঙ্গ থেকে বেজ ক্যাম্প পর্যন্ত অবরোহণে তার সময় প্রয়োজন হয় ১৮ ঘণ্টা ২০ মিনিট।

হ্লাকপার ভাঙা পূর্বের রেকর্ডটি (১২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট) কিছুদিন পূর্বেই ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মে রোলওয়ালিং হিমাল থেকে আগত পেম্বা দোর্জি শেরপা কর্তৃক করা হয়েছিল।

হ্লাকপা গেলু "জুবিলমস এক্সপেডিশন মাউন্ট এভারেস্ট ২০০৩" এর বারো সদস্যবিশিষ্ট দলের সরদার বা দলনেতা ছিলেন। তিনি জার্মানির স্কাফলাশ থেকে আগত ৫৬ বছর বয়সী পর্বতারোহী ইকহার্ড শ্মিটের নেতৃত্বে মাউন্ট এভারেস্টের দক্ষিণ পূর্ব শৈলশিরা থেকে আরোহণ শুরু করেন।

প্রায় এক বছর পর ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মে পেম্বা দোর্জি শেরপা ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিটে এভারেস্ট জয় করে ঘেলুর রেকর্ড ভেঙে দেন।

অন্যান্য পর্বতারোহণ[সম্পাদনা]

বারো বারেরও বেশি এভারেস্ট জয় করার পাশাপাশি হ্লাকপা হিমালয়ের চোইয়ু এবং অমা ডবলাম শৃঙ্গ জয় করেন।[৬]

২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে নেপালে তার জন্মস্থানের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তহবিল সংগ্রহ এবং হিমালয়ের পর্বতারোহণে শেরপাদের ভূমিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এভারেস্ট জয় করেন।[৮][৯]

গাইডিং সংক্রান্ত অভিযান ও পর্বতারোহণ[সম্পাদনা]

ঘেলু অ্যাডভেঞ্চার অ্যাসেন্টস (adventureascents.com) নামক একটি অভিযান/পর্বতারোহণ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি হিমালয়ের অভিযান ও পর্বতারোহণকে মাথায় রেখে সারা পৃথিবীব্যাপী বেশ কিছু শৃঙ্গে গাইড হিসেবে কাজ করেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Everesteer Pemba Dorje stripped of Guinness title, Lakpa Gelu's claim legitimised" 
  2. http://www.everestnews.com/everest2005/everestiran2005u06102005.htm
  3. http://skinnymoose.com/adventurist/?p=1185[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. http://www.denverpost.com/hiking/ci_5735613
  5. "Archived copy"। ২০১২-০২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৬-২০ 
  6. "Archived copy"। ২০১৬-০৩-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৫-২৭ 
  7. "Archived copy"। ২০১১-০৭-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৫-২৭ 
  8. http://www.sltrib.com/ci_6021063
  9. http://www.sltrib.com/ci_5643465

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]