হামিদীয় গণহত্যা
হামিদিয়ান গণহত্যা | |
---|---|
আর্মেনীয় নিপীড়ন-এর অংশ | |
স্থান | অটোমান সাম্রাজ্যে |
তারিখ | ১৮৯৪–১৮৯৬ |
লক্ষ্য | আর্মেনীয় এবং অ্যাসিরীয় |
হামলার ধরন | গণহত্যা, লুটপাট |
নিহত | ২,০০,০০০–৪,০০,০০০ জন |
হামলাকারী দল | সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ-এর সরকার |
হামিদিয়ান গণহত্যা (আর্মেনীয়: Համիդյան ջարդեր, তুর্কি: Hamidiye Katliamı, ফরাসি: Massacres hamidiens), হ'ল ১৮৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অটোমান সাম্রাজ্যে আর্মেনীয়দের উপরে চালানো হত্যাযজ্ঞ, যা ১৮৯৪–১৯৯৬-এর আর্মেনীয় গণহত্যা[২] এবং আর্মেনীয় জাতিগোষ্ঠী নিধন[২] হিসাবেও অভিহিত হয়। অনুমান করা হয় যে হতাহতের সংখ্যা ৮০,০০০ থেকে ৩০০,০০০ জন,[৩] এর ফলে ৫০,০০০ শিশু অনাথ হয়।[৪]এই গণহত্যার নামকরণ করা হয় সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের নামে, যিনি ভেঙে পরা অটোমান সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্যবাদী শাসনক্ষেত্র বজায় রাখার প্রয়াসে প্যান-ইসলামবাদকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসাবে পুনরুদ্ধার করেন।[৫] যদিও এই গণহত্যার লক্ষ্য ছিল মূলত আর্মেনিয়ানদের দিকে, তারা দিয়ারবাকারের হত্যাকাণ্ডের মতো কিছু ক্ষেত্রে নির্বিচারে খ্রিস্টান বিরোধী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকারে পরিণত হয়, যেখানে কমপক্ষে একটি সমসাময়িক উৎস অনুসারে প্রায় ২৫,০০০ জন অ্যাসিরীয় মারা যায়।[৬]
পরের বছরগুলিতে আরও ব্যাপক আকার ধারণ করার আগে ১৮৯৪ সালে অটোমান অভ্যন্তরে হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ১৮৯৪ সাল থেকে ১৮৯৬ সালের মধ্যে বেশিরভাগ খুনের ঘটনা ঘটে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আব্দুল হামিদকে নিন্দার পরে ১৮৯৭ সালে গণহত্যার সূচনা হয়। দীর্ঘকাল নিপীড়িত আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপগুলি পরিচালিত হয়, কারণ সরকার থেকে নাগরিক সংস্কার এবং উন্নততর চিকিৎসার আহ্বান অগ্রাহ্য করা হয়। অটোমানরা ক্ষতিগ্রস্থদের বয়স বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনও ভাতা প্রদান করেনি এবং সকলকে নির্মম ভাবে হত্যা করে।[৭] এটি এমন এক সময়ে ঘটেছিল যখন টেলিগ্রাফ বিশ্বজুড়ে সংবাদ ছড়িয়ে দিতে সক্ষম ছিল এবং পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার গণমাধ্যমে গণহত্যার ব্যাপক প্রচার হয়।
পটভূমি
[সম্পাদনা]উনিশ শতকের শেষ প্রান্তে অটোমান সাম্রাজ্য বুঝতে পারে আর্মেনীয়দের প্রতি শত্রুতার উদ্ভব ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীন অবস্থানে রয়েছে। বলকানদের উপর অটোমান রাজত্বের সমাপ্তি ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের একটি যুগ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দীর্ঘ সময় অটোমান শাসনের অধীনে থাকা বহু অঞ্চল আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি জোর দেয়। সাম্রাজ্যের আর্মেনীয়রা, যাদের দীর্ঘকালীন সময় ধরে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করা হত, তারা নাগরিক সংস্কার এবং সরকারের কাছ থেকে আরও উন্নততর চিকিৎসার জন্য ১৮৯০-এর দশকের মাঝামাঝি এবং ১৮৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে জিজ্ঞাসা শুরু করে।
মৃতের সংখ্যা
[সম্পাদনা]গণহত্যায় কতজন আর্মেনীয় নিহত হয় তা নির্ধারণ করা অসম্ভব, যদিও ঐতিহাসিকদের দ্বারা উদ্ধৃত পরিসংখ্যানগুলি ৮০,০০০ জন থেকে ৩,০০,০০০ জনের মধ্যে রয়েছে।[৩]
সুতরাং, তৃতীয় পক্ষের পরিসংখ্যানগুলি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হয়। জার্মান যাজক জোহানেস লেপসিয়াস সাবধানতার সাথে ধ্বংসের তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তার হিসাব অনুসারে ৮৮,২৪৩ আর্মেনিয়ান নিহত হয়, ৫,৪৬,০০০ জন নির্বাসিত হয় এবং ২,৪৯৩ টি গ্রাম ধ্বংস হয়, যার মধ্যে ৪৫৬ জন বাসিন্দাকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়[৮] এবং ৬৪৯ টি গির্জা এবং মঠকে অপবিত্রতা করা হয়, যার মধ্যে ৩২৮ টি মসজিদে রূপান্তর করা হয়।[৯] দুর্ভিক্ষ ও রোগের কারণে প্রায় ১,০০,০০০ জন আর্মেনীয়র অতিরিক্ত মৃত্যুরও তিনি অনুমান করেন, মোট সংখ্যা আনুমানিক ২,০০,০০০ জন।[১০]
আর্মেনীয়দের পাশাপাশি প্রায় ২৫,০০০ অ্যাসিরীয় এবং আরও এক লাখ গ্রীকও প্রাণ হারায়।[৬][যাচাই প্রয়োজন]
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
[সম্পাদনা]সাম্রাজ্যে আর্মেনীয় গণহত্যার সংবাদ ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয় এবং বিদেশী সরকার, মানবিক সংস্থা এবং প্রেসের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে।[১১] ব্রিটিশ মুদ্রণ ও সচিত্র সংবাদপত্রগুলি নিয়মিত গণহত্যার সংবাদ প্রকাশ করে, জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পাঞ্চ হত্যার চিত্রটি প্রদর্শন করে কয়েক ডজন কার্টুন প্রকাশ করে।[১২] আরও, ঐতিহাসিক লেসলি রোগন শুমাচার উল্লেখ করেছেন যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের বছরগুলিতে গণহত্যাগুলি "ইউরোপীয় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিবর্তিত বিশ্বকে প্রতিফলিত ও প্রভাবিত করে", অটোমান সাম্রাজ্যের সাথে ব্রিটেনের সম্পর্ককে দুর্বল করে এবং রাশিয়ার সাথে ব্রিটিশদের সম্পর্ককে জোরদার করে।[১৩]
ফরাসী রাষ্ট্রদূত তুরস্ককে "সর্বত্র হত্যাযজ্ঞ"-এর সাথে "আক্ষরিক অর্থে আগুনে" হিসাবে বর্ণনা করেন এবং সকল খ্রিস্টানদের হত্যা করা হচ্ছে "পার্থক্য ছাড়াই"।[১৪][১৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "The Graphic" (ইংরেজি ভাষায়)। ডিসেম্বর ৭, ১৮৯৫। পৃষ্ঠা 35। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৫ – The British Newspaper Archive-এর মাধ্যমে।
- ↑ ক খ Adalian, Rouben Paul (২০১০), Historical Dictionary of Armenia (2nd সংস্করণ), Lanham, MD: Scarecrow, পৃষ্ঠা 154 .
- ↑ ক খ Akçam, Taner (2006) A Shameful Act: The Armenian Genocide and the Question of Turkish Responsibility p. 42, Metropolitan Books, New York আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮০৫০-৭৯৩২-৬
- ↑ "Fifty Thousand Orphans made So by the Turkish Massacres of Armenians", The New York Times, ডিসেম্বর ১৮, ১৮৯৬,
The number of Armenian children under twelve years of age made orphans by the massacres of 1895 is estimated by the missionaries at 50.000
. - ↑ Akçam 2006, পৃ. 44।
- ↑ ক খ Angold, Michael (২০০৬), O'Mahony, Anthony, সম্পাদক, Cambridge History of Christianity, 5. Eastern Christianity, Cambridge University Press, পৃষ্ঠা 512, আইএসবিএন 978-0-521-81113-2 .
- ↑ Cleveland, William L. (২০০০)। A History of the Modern Middle East (2nd সংস্করণ)। Boulder, CO: Westview। পৃষ্ঠা 119। আইএসবিএন 0-8133-3489-6।
- ↑ On this issue in general, see Selim Deringil (April 2009), "'The Armenian Question Is Finally Closed': Mass Conversions of Armenians in Anatolia during the Hamidian Massacres of 1895–1897," Comparative Studies in Society and History 51, pp. 344-71.
- ↑ Hovannisian. "The Armenian Question in the Ottoman Empire," p. 224.
- ↑ Forsythe, David P. (ed.) (২০০৯)। Encyclopedia of human rights। Oxford: Oxford University Press। আইএসবিএন 0195334027।
- ↑ Gary J. Bass, Freedom's Battle: The Origins of Humanitarian Intervention. New York: Alfred A. Knopf, 2008; Balakian, The Burning Tigris.
- ↑ Schumacher, Leslie Rogne (2020), "Outrage and Imperialism, Confusion and Indifference: Punch and the Armenian Massacres of 1894-1896," in Comic Empires: Imperialism in Cartoons, Caricature, and Satirical Art, Manchester: Manchester University Press, 2020, p. 306
- ↑ Schumacher, "Outrage and Imperialism, Confusion and Indifference," p. 326
- ↑ (ফরাসি ভাষায়) Cambon, Paul (1940). Tome Premier (1870–1908): L'établissement de la République – Le Protectorat Tunisien – La régence en Espagne – La Turquie d'Abd Ul Hamid, vol. 1 of Correspondance, 1870–1924. Paris: Grasset, p. 395.
- ↑ De Courtois, Sébastien (2004). The Forgotten Genocide: The Eastern Christians, the Last Arameans. Piscataway, NJ: Gorgias Press, pp. 106–10.