হাতি উৎসব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

হাতি উতসব ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুর শহরের একটি উৎসব। হাতি, উট, ঘোড়া এবং লোক নর্তকদের একটি সুন্দর শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই উতসবের সূচনা হয়। মালিকরা তাদের হাতিদের চকমকে রং, রেশমের কাপড়, ভারী গয়না ইত্যাদি বিবিধ সাজপোশাকে সজ্জিত করে। মহিলা হাতিদের পায়ের গোড়ালিতে মল পরানো হয় যা হাঁটার সময় সুন্দর শব্দ উতপন্ন করে। চলমান হাতির পিঠে বসে হাতিপালক জমায়েতে আগত মানুষদের মাথায় আবীর ছড়িয়ে দেয়। সবচেয়ে সুন্দরভাবে সাজানো হাতিটিকে বিজয়ী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। ১৯ জন লোকের মধ্যে এই প্রতযোগিতা হয়। এলিফ্যান্ট পোলো, হাতির দৌড় এবং রশি টানা ইত্যাদি বিবিধ অনুষ্ঠান এই প্রতিযোগীতার অংশ। হাতিদের কান এবং গলা বিভিন্ন কাপড় দিয়ে সজ্জিত করা হয়। মাহুতরা পশুদের সাজায় এবং সেইসাথে সোনা, রৌপ্য ব্রেসলেট এবং আংটি দিয়ে নিজেদেরকেও বিবিধ সাজে সজ্জিত করে। উত্সবের একটি বিশেষ খেলায় সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিটিকে দশ জনের একটি দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বেছে নেওয়া হয়।

যদিও উত্সবটি মূলত হাতিদের উতসব কিন্তু অন্যান্য প্রাণী যেমন উট এবং ঘোড়াও এতে অংশ নেয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

হাতি উতসব জয়পুর শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি বলে বিবেচিত হয়। এই উত্সব চালু হওয়ার পর থেকে, বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে এর সম্পর্কে উতসাহ বেড়েছে এবং বহিরাগতদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। রাজস্থানের ঐতিহ্য অনুযায়ী হাতি রাজকীয়তার প্রতীক। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মেও হাতির গুরুত্ব দেখা যায়। ভারতীয় ঐতিহ্যে হাতির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দেবতা এবং অসুররা সাগর মন্থনের আয়োজন করেছিল, এই আশায় যে তারা অমর হয়ে উঠবে। সেই মন্থনের ফলে সমুদ্র থেকে বিবিধ মূল্যবান বস্তু উদ্ভূত হয়েছিল। সেই মূল্যবান বস্তুর মধ্যে উলেখহযোগ ছিল নয়টি মূল্যবান রত্ন এবং হাতি। সেই থেকে হাতিকে মূল্যবান প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

রাজস্থান রাজ্য তার ইতিহাস ও রাজকীয় ব্যক্তিত্বের জন্য জনপ্রিয়। প্রাচীনকালে রাজা এবং রাজপুত্ররা হাতির চড়ে রাজস্থানের বিভিন্ন প্রাসাদে পরিভ্রমন করতেন। রাজতন্ত্রের সময়কালে বিবিধ রাজকীয়রা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত, যেখানে রাজকীয় অতিথিদের আপ্যায়ন করার জন্য হাতিদের ব্যবহার করা হত। এছাড়াও মনোরঞ্জনের জন্য হাতিদের বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হত যাতে শক্তিশালী হাতিরা একে অপরের সাথে লড়াই করত। অধুনা হাতি উতসব এই পরম্পরাকেই বহন করে চলেছে। চৌগান স্টেডিয়ামে রাজস্থান পর্যটন গোষ্ঠী দ্বারা প্রতি বছর এই হাতি উৎসবের আয়োজন করা হত। উৎসবের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে এর স্থান পরিবর্তন করে জয়পুর পোলো গ্রুপের মাঠে উতসবের আয়োজন করা হয়। হাতিদের পবিত্র এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বিতর্ক[সম্পাদনা]

পশু কল্যাণ বোর্ডের প্রতিবাদের কারণে পরপর দুই বছর, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে হাতি উত্সব বাতিল করা হয়েছিল। পশু কর্মীরা হাতিদের গায়ে রাসায়নিক রং ঢেলে তাদের সজ্জিত করত। যা নিয়ে পশু কল্যাণ বোর্ড উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং আশঙ্কা করেছিলেন যে এই প্রক্রিয়ায় হাতিদের ক্ষতি হবে। রাজস্থান পর্যটন গোষ্ঠী, যারা প্রতি বছর উৎসবের আয়োজন করে, তারা পশু কল্যাণ বোর্ডের কাছে উপযুক্ত নথি প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলস্বরূপ, আয়োজকরা অনুষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে হোলি উৎসব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস (PETA) এর প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটন দফতরের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।[১][২][৩][৪][৫][৬][৭][৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. V. Srinivasan, Amrutur (৮ জুলাই ২০১১)। Hinduism For Dummies। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 249আইএসবিএন 978-0470878583 
  2. "Elephant Festival"। jaipur.org.uk। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১২ 
  3. "Elephant Festival"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৪ 
  4. "Elephant Festival of Jaipur"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৪ 
  5. "Fairs & Festivals in India - Elephant Festival"। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৪ 
  6. "Elephant Festival Cancelled"Times of India। ১৫ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৪ 
  7. "Rajasthan Cancels Elephant Festival"The Hindu। ২৭ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৪ 
  8. "Charles Freger: Painted Elephants"Sgustok Magazine। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫।