সোফিয়া ইম্বার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সোফিয়া ইম্বার
২০০৮ সালে সোফিয়া ইম্বার
জন্ম
সোফিয়া ইম্বার

(১৯২৪-০৫-০৮)৮ মে ১৯২৪
সরোকা, মলদোভা
নাগরিকত্বভেনেজুয়েলীয়
পেশাসাংবাদিক ও শিল্পকলা
পরিচিতির কারণশিল্পকলাবিশারদ ও সাংবাদিক
দাম্পত্য সঙ্গীগুইলার্মো মেনেজেস (১ম: বিবাহ-বিচ্ছেদ)
কার্লোস র‌্যাঞ্জেল (২য়: চলমান)
সন্তানসারা, আদ্রিয়ানা, ড্যানিয়েলা মেনেজেস ও পেড্রো গুইলার্মো

সোফিয়া ইম্বার বারু (স্পেনীয়: Sofía Ímber; জন্ম: ৮ মে, ১৯২৪) মলদোভার সরোকায় জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট ভেনেজুয়েলীয় প্রমিলা সাংবাদিক। এছাড়াও শিল্পকলার প্রবল সমর্থক সোফিয়া ইম্বার। কারাকাসের সমসাময়িক শিল্পকলা যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

ইহুদি ইম্বার পিতা-মাতার সন্তান নওম আনা ইম্বার চার বছর বয়সে ১৯৩০ সালে পরিবারের সাথে ভেনেজুয়েলায় অভিবাসিত হন।[১] তার পরিবার অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে এখানে আসেন। পাশাপাশি তার পরিবার তাকেসহ বোন লিয়াকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করেছিলেন। তার বোন লিয়া ইম্বার ভেনেজুয়েলার প্রথম মহিলা হিসেবে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।

বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ছাত্রী হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন ইম্বার। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি সাংবাদিকতা ও শৈল্পিক প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটান। অবসর গ্রহণ ও কারাকাসে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে চল্লিশ বছর বয়সে সোফিয়া ইম্বার তিন বছর মেয়াদে ইউনিভার্সিদাদ দে লস আন্দ্রেস থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। কারাকাসে অবস্থানকালে তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকমানের প্রকাশনা সংস্থার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এছাড়াও পঞ্চাশ বছরের অধিককাল ভেনেজুয়েলা, মেক্সিকো, কলম্বিয়াআর্জেন্টিনার বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে নিবন্ধ প্রকাশ করে চলেছেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

সাংবাদিক হিসেবে নিজ কর্মজীবন শুরু করেন ইম্বার।[১] ইম্বার বৈশ্বিক শিল্পকলার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। অন্যদিকে, স্বামী গুইলার্মো মেনেজেস কূটনীতিবিদ হিসেবে ফ্রান্সের প্যারিস ও বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থান করতেন।[১] জেনারেল মার্কোস পেরেজ জিমেনেজ সরকারের কূটনৈতিক শাখার সদস্যরূপে মেনেজেসের সাথে ইউরোপ ভ্রমণ করেন। এ সময়ে এ দম্পতি বামপন্থী বুদ্ধিজীবীভিন্নমতাবলম্বী হিসেবে পরিচিত ভেনেজুয়েলীয় শিল্পকলাবিশারদসহ চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর আলেজান্দ্রো ওতেরো'র সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। ভেনেজুয়েলায় ফিরে আসার পর তাদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক বিবাহ-বিচ্ছেদে গড়ায়।

দ্বিতীয় স্বামী কার্লোস র‌্যাঞ্জেল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উদারমনা বুদ্ধিজীবী ছিলেন। কার্লোস র‌্যাঞ্জেলের সাথে রাজনৈতিক টক শো বুয়েনস ডায়াস পরিচালনা করেছেন যা ভেনেভিশনে সম্প্রচারিত হতো।[১] দীর্ঘসময়ব্যাপী প্রাত্যহিক শুভ সকাল ভেনেজুয়েলা অনুষ্ঠানটি রেডিও কারাকাস টেলিভিশনে দ্য টুডে'র সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতো। এছাড়াও অনলি সোফিয়া শীর্ষক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি পরিচালক ও উপস্থাপকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। পাশাপাশি, ভেনেজুয়েলার বিভিন্ন সুপরিচিত সংবাদপত্র ন্যাশনাল, এল ইউনিভার্সাল, লেটেস্ট নিউজ এবং জার্নাল ২০০১-এ কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে 'আমি একরোখা' শীর্ষক সংবাদপত্রের বিভিন্ন নিবন্ধকে একত্রিত করে বুয়েনস আয়ার্স থেকে তায়েম্পো নুভোর সম্পাদনায় প্রকাশ করেন।

জুন, ২০১৪ সালে সোফিয়া ইম্বার তার ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় আন্দ্রেজ বেল্লোতে দান করেন। তার এ সংগ্রহশালায় প্রায় ১৪ হাজার গ্রন্থ রয়েছে যা 'ফাদার কালচারাল সেন্টার কার্লোস গুইলারমো প্লাজা' অধ্যয়ন কেন্দ্রে সংরক্ষিত থাকবে।[২]

মাকসি[সম্পাদনা]

সোফিয়া ইম্বারের নামানুসারে তৎকালীন যাদুঘরের প্রবেশপথ

১৯৭৩ সালে কারাকাস সোফিয়া ইম্বার মিউজিও দ্য আর্ট কন্টেম্পোরানিও দ্য কারাকাস নামীয় শিল্পকলা যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন।[৩] তিনি মাকসি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমানে সংস্থাটি কারাকাস সমসাময়িক শিল্পকলা যাদুঘর নামে পরিচিতি পাচ্ছে। এখানে প্রায় চার হাজার স্থায়ী চিত্রকর্ম নিয়মিত প্রদর্শন করা হয়। এটি লাতিন আমেরিকার সমসাময়িক চিত্রকলার সেরা সংগ্রহরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ তিনি যাদুঘরের কর্ণধারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন যা ব্যাপক দক্ষতা ও বিচরণের দৌঁড়ে বেশ এগিয়ে ছিল। কিন্তু ২০০১ সালে 'আলো প্রেসিডেন্টে' শীর্ষক টেলিভিশন সম্প্রচারের পর তিনি ভেনেজুয়েলীয় রাষ্ট্রপতি হুগো চাভেজের চক্ষুশূলে পরিণত হন ও যাদুঘরের প্রধানের পদ থেকে ইম্বারকে বরখাস্ত করেছিলেন।[৩] ঐ সময়ে চিত্রশিল্পী ও কলম্বীয় ভাস্কর ফার্নান্দো বোয়েত্রো কর্তৃক প্রতিবাদলিপি বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হয়। জানা যায় যে, সোফিয়া ইম্বারকে বরখাস্ত করার পর থেকেই মাকের সংগ্রহশালা থেকে চিত্রকর্মগুলো অদৃশ্য হতে শুরু করে। গুজব রয়েছে যে, সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতাগণ এ সকল চিত্রকর্ম তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। হারানো ঐ সকল চিত্রকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অঁরি মাতিসের 'ওদালিস্ক ই রেড প্যান্টস'।[৪] এর পরিবর্তে মূল চিত্রকর্মের অনুলিপি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে আর্ট সার্কেল মিয়ামিতে ভেনেজুয়েলার জেনারো আম্ব্রোসিনে গ্যালারির মালিক কর্তৃক চিত্রকর্মের বিক্রয়ের কথা ঘোষণার মাধ্যমে। ১৭ জুলাই, ২০১২ তারিখে মিয়ামির একটি হোটেলে এফবিআই গুপ্তচরের কাছে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ২০০৯ সালে ভেনেজুয়েলীয় সাংবাদিক মারিয়ানেলা বাল্বি কর্তৃক 'দ্য রেপ অব দি ওদালিস্ক' শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেকগুলো পুরস্কার লাভ করেন তিনি। একমাত্র মহিলা হিসেবে ভেনেজুয়েলার জাতীয় সাংবাদিকতা পুরস্কার লাভের অধিকারীনি হয়েছেন ইম্বার। এছাড়াও, সৃজনশীল প্রক্রিয়ার উদ্দীপনায় অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ ভেনেজুয়েলার প্লাস্টিক আর্টস জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও ভেনেজুয়েলা থেকে অর্ডার অব দ্য লিবারেটর এবং ইউনেস্কো কর্তৃক পিকাসো পদক পান। তন্মধ্যে, পিকাসো পদকে তিনিই প্রথম লাতিন আমেরিকান। ফরাসি সম্মাননা হিসেবে লেজিওঁ দনর; মেক্সিকোর আজটেক ঈগল, কলম্বিয়ার ক্রস অব বয়াকা; ইতালির অর্ডার অব মেরিট; আর্জেন্টিনার অর্ডার অব মে; চিলির অর্ডার অব মেরিট এডুকেশনাল এন্ড কালচারাল গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল; ব্রাজিলের অর্ডার অব রিও ব্রাঙ্কো; স্পেনের অর্ডার অব সিভিল মেরিট; স্পেনীয় সরকারের গ্রান্ড ক্রস অব দি অর্ডার অব ইসাবেলা দ্য ক্যাথলিক উল্লেখযোগ্য।

আন্দ্রেজ বেল্লো ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোফিয়া ইম্বার গবেষণা কক্ষ এবং কার্লোস র‌্যাঞ্জেল গবেষণা কক্ষ প্রতিষ্ঠা করে। গবেষণা ক্ষে সোফিয়া ও কার্লোসের পরিচালনায় গুড মর্নিংয়ের সকল কথোপকথন ডিজিটাল মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের এ সাংবাদিকতার দলিলগুলো ভেনেজুয়েলার গণমাধ্যমের অমূল্য সম্পদরূপে বিবেচ্য।

২০১২ সালে প্রথিতযশা গবেষক আর্লেত্তে মাচাদো মিল সোফিয়া শীর্ষক সোফিয়ার স্বাক্ষাৎকারধর্মী প্রতিবেদন ২৫৩ পৃষ্ঠায় সম্পাদকীয় আকারে প্রকাশ করে।[৫]

২০১৪ সালে ইম্বারকে ভেনেজুয়েলান আমেরিকান এনডোম্যান্ট ফর দি আর্টস পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।[৬] একই সালে লাতিন আমেরিকায় শিল্পকলা প্রসারে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে পেইজ মেডেল অব আর্ট প্রদান করা হয়।[৭]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

ভেনেজুয়েলার বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক ও কূটনীতিবিদ গুইলার্মো মেনেজেসের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন তিনি।[১] এ দম্পতির সারা, আদ্রিয়ানা ও ড্যানিয়েলা মেনেজেস ইম্বার নাম্নী তিন কন্যা রয়েছে এবং ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণকারী পেড্রো গুইলার্মো নামীয় এক পুত্র ছিল।[৮] ইউরোপ ভ্রমণ শেষে ভেনেজুয়েলায় ফিরে আসার পর তাদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক বিবাহ-বিচ্ছেদে গড়ায়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় স্বামী কার্লোস র‌্যাঞ্জেলের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Miller, Michael E. (২৭ আগস্ট ২০১৪)। "CHAVEZ, MATISSE, AND THE HEIST THAT SHOOT THE AMERICAS"। Miami New Times। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  2. "Sofia Imber donates his library to the UCAB"। National। ১০ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১০, ২০১৪ 
  3. "Chavez dismisses as director Sofia Imber Museum of Art in Caracas"। ২৮ জানুয়ারি ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  4. "The accused of stealing a Matisse plead guilty"। The Universal। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১, ২০১২ 
  5. "The thousand stories of Sofia Imber"। The Universal। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৫, ২০১২ 
  6. "Sofia Imber received Paez Medal in New York"। www.eluniversal.com। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৬ 
  7. "Sofia Imber will be the recipient of VAEA's Páez Medal of Art 2014, she also was a recipient of the National Prices of Journalim and the Art."। The Venezuelan American Endowment for the Arts। ১৩ জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৫ 
  8. Lopez, Virginia (২১ আগস্ট ২০১২)। "Recovery of Matisse painting revives questions for museum"। The Brunei Times। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৫ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Andrea Imaginario, Sofía Ímber: Yo me voy en paz, Analítica.com 23-1-2001

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]