সীরাতে আয়েশা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সীরাতে আয়েশা
বাংলা অনুবাদের প্রচ্ছদ
লেখকসুলাইমান নদভী
মূল শিরোনামউর্দু: سیرت عائشہ‎‎
ভাষাউর্দু (মূল)
বিষয়আয়িশা
ধরনজীবনী
প্রকাশিত১৯২০
পৃষ্ঠাসংখ্যা৩১৪
ওসিএলসি৯৮৭৭৮৬৩১৮
২৯৭.০৯

সীরাতে আয়েশা (উর্দু: سیرت عائشہ‎‎) আয়িশার উপর রচিত সুলাইমান নদভীর একটি জীবনী সাহিত্য।[১] শিবলী নোমানীর অনুপ্রেরণায় সুলাইমান নদভী এই গ্রন্থটি রচনা করেন। এতে আয়িশার প্রাথমিক অবস্থা, শিক্ষা দীক্ষা, সামাজিক ও দাম্পত্য জীবন, সতিনদের ছেলেমেয়ে ও সতিনদের প্রতি সদাচার, অপবাদের ঘটনা, সংস্কারমূলক কার্যক্রম, কুরআনের ব্যূৎপত্তি, মাসাইল দক্ষতা, ইজতিহাদ ক্ষমতা, হাদিসে অগাধ জ্ঞান, ফিকহ ও কিয়াসে অসাধারণ প্রতিভা, চিকিৎসাশাস্ত্রে পারদর্শিতা, বক্তৃতা ও কাব্যে দক্ষতা, ফতওয়া প্রদানে পারঙ্গমতা, জগতের নারী সমাজের প্রতি তার অবদান সহ পুুরো জীবনচরিত উঠে এসেছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর আলোকে। সুলাইমান নদভী গ্রন্থটির গুরুত্ব সম্পর্কে নিজেই লিখেন, ‘উর্দু ভাষার নতুন বিপ্লব আমাদের ভাষার যে বিপুল রচনা সম্ভার সঞ্চয় করেছে তাতে ইসলামের পুরুষদের কীর্তি ও অবদান অনেকটাই মানুষ জানতে পেরেছে। কিন্তু পর্দানশীন ইসলামের নারীদের উজ্জ্বল অবদানসমূহ এখনও রয়ে গেছে পর্দার অন্তরালে। সীরাতে আয়েশাই প্রথম প্রয়াস, যার দ্বারা এই শ্রেণীর অবদান সমূহকে অবগুন্ঠন মুক্ত করা হল।’ এই গ্রন্থের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আয়িশার বয়স কেন্দ্রিক লেখকের গবেষণা।[২][৩][৪]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

সুলাইমান নদভী এপ্রিল ১৯০৬, তার ছাত্র জীবনের শেষ বছরে এই গ্রন্থটি সূচনা করেন যখন তিনি ছিলেন মাসিক আন নদওয়া পত্রিকার সহকারী সম্পাদক। তিনি ১৯১৪ সালে পুনায় অবস্থানকালে শিবলী নোমানী বিভিন্ন পত্র মারফত তাকে গ্রন্থটি রচনার তাগীদ দেন। তিনি ১৯০৮ সালে সীরাতে আয়েশার কিছু অংশ রচনা করে আন নদওয়া পত্রিকায় প্রকাশ করেন। কিন্তু অন্যান্য কাজের গুরুত্ব বিবেচনায় এর কাজে কিছুকালের জন্য বিরতি পড়ে যায়। অবশেষে ১৯২০ সালে গ্রন্থটি সমাপ্ত হয় এবং প্রথমবারের মত আলোর মুখ দেখে। তখন সুলাইমান নদভী খিলাফত প্রতিনিধি হিসেবে লন্ডনপ্রবাসী। অবশ্য গ্রন্থটি পরে তৃতীয় মুদ্রণের সময় মূল বক্তব্য, সূত্র ও উদ্ধৃতি এবং তথ্য-উপাত্তের পরিমার্জনসহ অনেক বিষয়ের সংযোজনও করা হয়। পরিশেষে বক্ষমান গ্রন্থে জালালুদ্দীন সুয়ুতীর রিসালাহ আইনুল ইসাবাহ গ্রন্থখানি অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে আয়িশা সম্পর্কিত এই দুর্লভ রচনাটি সর্বসাধারণের নাগালে এসে যায়।[২]

গঠন[সম্পাদনা]

৩১৪ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট গ্রন্থটিতে বিভিন্ন হাদিসের আলোকে আয়িশার জীবনে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনাবলী বর্ণনার পাশাপাশি তার চরিত্র মাধুরী, চাল-চলন ও অভ্যাসের বর্ণনা সহ তার ইজতেহাদী জ্ঞানভাণ্ডারের বিস্তারিত আলোচনা সাজিয়ে লেখা হয়েছে। গ্রন্থটির শুরুতে ১৩–১৮ পৃষ্ঠায় একটি ভূমিকা ও সীরাতে আয়েশার গুরুত্ব আলোচনা করা হয়েছে। তার পরেই ১৯–৩৩ পৃষ্ঠায় আয়িশার নাম, জন্ম ও বংশ পরিচয় তথা জন্ম থেকে বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত প্রাথমিক জীবন স্থান পেয়েছে। তার তালিম তারবিয়াত তথা শিক্ষা-দীক্ষা, অল্প বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এবং তার বৈবাহিক জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে গ্রন্থের ৩৪–৬৬ পৃষ্ঠায়। সংসার জীবন, দাম্পত্য জীবন, সতীনদের প্রতি আচরণ, সতীনদের সন্তানদের সাথে আচরণ এবং স্বামীর প্রতি ভালবাসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে ৬৭–৮৪ পৃষ্ঠায়। আয়িশাকে অপবাদ দিয়ে প্রচারিত একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা হলো ইফকের ঘটনা। আলোচনায় বাদ পরেনি এ ঘটনাটিও। ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যবহুল আলোচনা রয়েছে গ্রন্থের ৮৫–১০৭ পৃষ্ঠায়। রাসূল (স.) এর ইন্তিকালের পর আয়িশা মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিধবা হওয়ার পর তার জীবন কেমন কেটেছে তারও একটি চিত্র এঁকেছেন সুলাইমান নদভী। রাসূল (স.) এর শেষ জীবনে অসুস্থ হয়ে পড়া, তার ইন্তিকালের পর আয়িশার পিতা আবু বকরের ইমামত এবং আয়িশার সাধারণ অবস্থা বর্ণনাসহ আবু বকর, উমর, উসমান বা আলীর খিলাফতকালে আয়িশার অবস্থা ও বিভিন্ন ঘটনাবলীর বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে গ্রন্থের ১০৮–১২২ পৃষ্ঠায়। অতঃপর আলোচনা রয়েছে শিক্ষকতা, জ্ঞান ছড়ানো ও ইসলামের দাওয়াত সংক্রান্ত বিষয়টি। জংগে জামাল এর ঘটনা, মোয়াবিয়ার সময়কাল, ইয়াযিদের ঘটনা, হাসান-হোসাইনের শহীদ হওয়ার ঘটনা এবং আয়িশার মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে গ্রন্থের ১২৩–১৫৭ পৃষ্ঠার মধ্যে। অতঃপর আলোচনায় আনা হয়েছে আয়িশার চরিত্র ও অভ্যাসগত বিষয়টির বর্ণনা। আর তা আলোচনা করা হয়েছে গ্রন্থের ১৫৮–১৭৩ পৃষ্ঠায়। আয়িশার কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান ছিল অতুলনীয়। হাদিস বর্ণনার সংখ্যাধিক্যের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। আর এ বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে ১৭৪–২০৬ পৃষ্ঠায়। ইলমে ইজতিহাদ ও ইলমে হাদিস, ইলমে ফিকহ ও ইলমে কিয়াস, ইলমে কালাম ও ইলমে আকায়িদ, ইলমে আসরারে দ্বীন তথা ধর্মীয় তাৎপর্যজ্ঞান এবং চিকিৎসা শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে আয়িশার অবদান তুলে ধরা হয়েছে ২০৭–২২৯ পৃষ্ঠায়। তার ইতিহাস জ্ঞান, সাহিত্য, কবিতা, বক্তৃতা, অন্যান্য নারীদেরকে শিক্ষাদান এবং বিভিন্ন মাসআলার ফাতওয়া প্রদান এবং এসব বিষয়ে তার পারদর্শিতার বিষয়টি স্থান পেয়েছে গ্রন্থের ২৩০–২৮১ পৃষ্ঠায়। অবশেষে ২৮২–২৯৭ পৃষ্ঠায় নারী জাতির উপর আয়িশার অবদানসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্ব নারী জগতে আয়িশার অবস্থান ও গুরুত্ব নির্ণয় করার মাধ্যমে গ্রন্থের ইতি টানা হয়েছে। তবে গ্রন্থটির শেষে আয়িশার বর্ণিত অনেকগুলো হাদিসের সংকলন গ্রন্থ আইনুল ইসাবাতি ফি মা ইসতাদরাকা স সায়্যিদাতু আয়িশাতু আলাস সাহাবাতি নামক রিসালাহ সংযোজন করা হয়েছে। মূলত রিসালাহটির লেখক হলেন জালালুদ্দীন সুয়ুতী। এ রিসালাহটির সম্পাদনা ও টীকা লেখার কাজ করেছেন সুলাইমান নদভী।[২]

উৎস[সম্পাদনা]

জীবনীগ্রন্থ রচনার জন্য সাধারণত ইতিহাসগ্রন্থের সাহায্য নেওয়া হয়। কিন্তু এ গ্রন্থ যে-সময় ও সমাজকে কেন্দ্র করে রচিত, তার ইতিহাস শুধু হাদিসগ্রন্থেই সীমাবদ্ধ। তাই এ গ্রন্থের যাবতীয় তথ্য-উপাত্তের উৎস শুধুই হাদিসগ্রন্থ। হাদীসগ্রন্থগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ এবং মুসনাদে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল থেকে তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে। মুসনাদ গ্রন্থগুলোতে আয়িশা সম্পর্কে বর্ণনার অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তাই জামে, মুসনাদ, সুনান সহ আরও অসংখ্য আসমাউর রিজালগ্রন্থ যেমন: ইবনে সা‘দের তাবাকাত, যাহাবির তাযকিরাতুল হুফফাজ, ইবনে হাজারের তাহযীব এবং ফাতহুল বারী সহ কাসতালানী, ইমাম নববী প্রমুখের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকেও তথ্য-উপাত্তের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। উৎসগ্রন্থগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিরল গ্রন্থ হল হাকিমের মুসতাদরাক ও সুয়ূতীর আইনুল ইসাবা একটি ছোট্ট রিসালাহ। এতে যে হাদিসগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে, তাতে তৎকালীন প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো আয়িশা কর্তৃক খণ্ডিত হয়েছে।[২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ইমরান, আতিফ (২০২০)। Contribution of Syed Sulaiman Nadvi to Islamic studies [ইসলামিক স্টাডিজে সৈয়দ সুলাইমান নদভীর অবদান] (গবেষণাপত্র)। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৫৯, ১২৩–১৩০। hdl:10603/346360 
  2. বাহারুল ইসলাম, মোহাম্মদ (২০১৭)। উর্দু সাহিত্যে সৈয়দ সুলাইমান নদভীর অবদান (গবেষণাপত্র)। উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১০৩–১১০। 
  3. আ ফ ম খালিদ হোসেন, ডক্টর। "গ্রন্থ পর্যালোচনা: আল্লামা সাইয়েদ সুলায়মান নদভী (রহ.) বিরচিত সীরাতে আয়েশা"মাসিক আত তাওহীদ। ২১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০২১ 
  4. আব্দুল হান্নান, শাহ (৯ জানুয়ারি ২০২০)। "'সীরাতে আয়েশা রা:' পুস্তকটি পর্যালোচনা"দৈনিক নয়া দিগন্ত 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]