সত্যচরণ লাহা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সত্যচরণ লাহা
Satya Churn Law
জন্ম১৮৮৮
কলকাতা ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ)
মৃত্যুডিসেম্বর ১১, ১৯৮৪(১৯৮৪-১২-১১)
কলকাতা
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাএম.এ.,বি.এল.
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানবিদ্যাসাগর কলেজ
প্রেসিডেন্সি কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিপেট বার্ডস্ অব বেঙ্গল

সত্যচরণ লাহা (১৮৮৮ – ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৪) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতে কলকাতার একজন ধনী প্রকৃতিবিদ, পক্ষীবিশারদ, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী । [১]

তিনি অল্পকিছুদিনের জন্য কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের কোষাধ্যক্ষ, লন্ডন জুলজিক্যাল সোসাইটির ফেলো এবং বৃটিশ অরিন্থোলজিস্ট ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে নীরদচন্দ্র চৌধুরী তার সাহিত্যবিষয়ের সহায়ক হন। [১] তিনিই কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রথম ভারতীয় সভাপতি ছিলেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

সত্যচরণ লাহার জন্ম বৃটিশ ভারতে বিপুল ঐশ্বর্য আর আর্থিক সচ্ছলতা সম্পন্ন কলকাতার কৈলাস বোস স্ট্রিটের অভিজাত লাহা পরিবারে। পিতা অম্বিকাচরণ লাহা এবং মাতা কিরণবালা দেবী। পড়াশোনা করেন উত্তর কলকাতার তদানীন্তন মেট্রোপলিটন কলেজ বর্তমানের বিদ্যাসাগর কলেজে [২] প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর আইন নিয়ে বি.এল ডিগ্রিও অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই সত্যচরণ পাখি সম্পর্কে কৌতূহলী ছিলেন। পড়াশোনার ফাঁকে পর্যবেক্ষণ করতেন প্রকৃতি আর এদেশের নানা প্রজাতির পাখির জীবনবৈচিত্র ও তাদের আচার আচরণ। শুধু বন্দিদশায় নয়, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে পাখিকে পোষ মানানো, ওদের আচার আচরণ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান চালাতেন। [৩]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

সত্যচরণ লাহার কর্মজীবন শুরু হয় কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট তথা আইএসআই'তে কোষাধ্যক্ষ হিসাবে। কিন্তু তিনি চাকুরির গতানুগতিক জীবনে বদ্ধ না থেকে পাখিদের নিয়ে গবেষণায় তথা পক্ষীতত্ত্ব বিষয়ে পডাশোনায় ব্যয় করতেন। দেশ-বিদেশের পাখি দেখার তীব্র আগ্রহে তাঁকে জীবন বিপন্নকারী পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল। রকমারি পাখি সংগ্রহ করে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার কাছে আগরপাডায় একটি পাখি নিকেতন গড়ে তোলেন। তিনি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পাখিদের পোষ মানানো, খাঁচার বাইরে, অরণ্যে উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে পাখিদের জীবন বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করতেন। বনে জঙ্গলের বিচিত্র রকমের পাখির আচার আচরণ, বাসা তৈরির কৌশল, বাচ্চা প্রতিপালন ইত্যাদির সূক্ষ্মভাবে নোট রাখতেন। তার বিভিন্ন সরল বাংলায় তথ্যসমৃদ্ধ লেখা তখনকার 'প্রবাসী', 'ভারতবর্ষ', 'মর্মবাণী', 'বোম্বে জার্নাল অফ নাচারাল হিস্ট্রি ', ‘এভিকালচার’, 'আইবিস ( ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এভিয়ান সায়েন্স)' ইত্যাদি দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত গ্রন্থগুলি হল -

  • পাখির কথা (১৯২১)
  • কালিদাসের পাখি (১৯৩৪)
  • জলচারী (১৯৩৫)
  • পেট বার্ডস্ অব বেঙ্গল (১৯২৩)

[৪] বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে তার একক প্রচেষ্টায় প্রকৃতি নামে বাংলায় দ্বিমাসিক বিজ্ঞানপত্রিকা ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ হতে দীর্ঘ ১৪ বৎসর পরিচালিত হয়েছে। [৫][৬] বাংলায় বিজ্ঞানবিষয়ক পরিভাষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল তার এই বিজ্ঞান পত্রিকা। বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় প্রয়াসী ব্যক্তিত্ব আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য, বিনয় কুমার সরকার, শিবনাথ সেন প্রমুখের প্রবন্ধ পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হত।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

পাখিদের নিয়ে সারাজীবনের গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ দেশ-বিদেশের বহু সম্মান লাভ করেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত লন্ডন জুলজিক্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ পেয়েছিলেন। কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের আজীবন সদস্য ছিলেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ অরিন্থোলজিস্ট ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করেন।

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

সত্যচরণ লাহা বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও দেশে পক্ষীতত্ত্ববিশারদ খ্যাতি অর্জন করেন এবং দীর্ঘ ৯৬ বৎসর পক্ষী বিষয়ে চর্চা করে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর কলকাতায় পরলোক গমন করেন।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Edward Shils, Joseph Epstein (1997) Portraits: A Gallery of Intellectuals. University of Chicago Press, 1997 আইএসবিএন ০-২২৬-৭৫৩৩৬-০. p.78-79
  2. "Vidyasagar College" 
  3. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৭৫২ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  4. "উপমহাদেশে পক্ষীতত্ত্ব গবেষণায় পথিকৃৎ সত্যচরণ লাহা"। ২০২১-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২০ 
  5. "INSA Deceased Fellow"। ২৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২১ 
  6. Law, Satya Churn (২০০৮-০৪-০৩)। "Note on the Occurrence of some hitherto unrecorded Birds in Central and South Bengal" (ইংরেজি ভাষায়): 405–408। ডিওআই:10.1111/j.1474-919X.1945.tb01372.x