চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য
জন্ম(১৮৮৩-০৬-২৯)২৯ জুন ১৮৮৩
মৃত্যু২৬ আগস্ট ১৯৬১(1961-08-26) (বয়স ৭৮)
সমাধিকলকাতা , শান্তিনিকেতন
অন্যান্য নামচারুচন্দ্র ভট্টাচার্য
পেশালেখক ও অধ্যাপক
পিতা-মাতাবসন্ত কুমার ভট্টাচার্য (পিতা), মেনকা দেবী (মাতা)

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইংরেজি: Charu Chandra Bhattacharya) ( জন্ম: ২৯ জুন, ১৮৮৩ - মৃত্যু: ২৬ আগস্ট, ১৯৬১) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের রচয়িতা। [১]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার হরিনাভিতে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম বসন্ত কুমার ভট্টাচার্য ও মাতার নাম মেনকা দেবী। অতিশয় মেধাবি ছিলেন তিনি। কলকাতার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এফ. এ পরীক্ষায় দ্বাদশ স্থান অর্জন করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন এবং ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এ পাশ করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

এম. এ পাশের পর পরই তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং দীর্ঘ ৩৫ বৎসর তিনি সেখানে অধ্যাপনা করেছেন। আর এ প্রসঙ্গে তিনি বলতেন-

"বাংলার পাঁচজন এফ.আর.এস - এর মধ্যে একজন আমার শিক্ষক, বাকি চারজন ছাত্র ।"

শিক্ষক হচ্ছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এবং ছাত্ররা হচ্ছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু , মেঘনাদ সাহা, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশশিশির কুমার মিত্র। তার আর এক ছাত্র প্রতুল চন্দ্র গুপ্ত বলতেন - "কত কঠিন বিষয় তিনি অত্যন্ত সহজে ব্যাখ্যা করতে পারতেন"।

সাহিত্যক্ষেত্রে অমর অবদান[সম্পাদনা]

চারুচন্দ্র ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দেই শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই সময়ে গ্রন্থন বিভাগের আর্থিক দূরাবস্থার মধ্যে বাংলার সাহিত্যক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের বাংলা রচনাসমূহের সংগ্রহ গ্রন্থ - রবীন্দ্র-রচনাবলী র (প্রথম প্রকাশ-১৯৩৯) প্রকাশ করে অমর অবদান রেখে গেছেন। শিক্ষাবিস্তারের জন্য রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনায় তারই দক্ষতায় বিশ্বভারতী "বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ গ্রন্থমালা" ও লোকশিক্ষার বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য লোকশিক্ষার প্রথম পুস্তক "বিশ্ব-পরিচয়: রবীন্দ্রনাথ সত্যেন্দ্রনাথ বসুকেই উৎসর্গ করেন। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের দুবছর পর চারুচন্দ্র বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহের পুস্তক রচনা করতে থাকেন। সহজ সরল ও হৃদয়গ্রাহী বাংলা ভাষায় লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল -

  • 'আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু'(১৯৩৮)
  • 'বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কাহিনী' (১৯৫৩)
  • 'নব্যবিজ্ঞান'
  • 'বাঙালির খাদ্য'
  • 'বিশ্বের উপাদান'(১৯৪৩)
  • 'তড়িতের অভ্যুত্থান' (১৯৪৯)
  • 'ব্যাধির পরাজয়'(১৯৪৯)
  • 'পদার্ধবিদ্যার নবযুগ'(১৯৫১)

সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রতিষ্ঠিত বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচার চেষ্টার সূচনা করেন 'বিজ্ঞান প্রবেশ' ও পদার্থবিদ্যা' গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে। নানা বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি জগদীশচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে সাধারণের মধ্যে পরিচিত করান। তার রচিত 'কবিস্মরণে' একখানি রসমধুর স্মৃতিচারণ গ্রন্থ তিনি ছদ্মনামে রচনা করেন। কয়েক বছর তিনি সমবায় সমিতির 'ভাণ্ডার' পত্রিকা এবং আমৃত্যু 'বসুধারা' পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদে প্রথম রাজশেখর বসু স্মৃতি বক্তৃতা "পরমাণু নিউক্লিয়াস "বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার অন্যতম মূল্যবান সংযোজন (১৯৬২)।

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর জন্য দুটি বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক ও রচনা করেন। বিজ্ঞানে ব্যবহারের জন্য বহু বাংলা প্রতিশব্দ নির্ধারণ করেছেন। এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত কমিটিতে তিনি সচিব ছিলেন এবং সভাপতি ছিলেন রাজশেখর বসু। তিনি পরিমাপ ও বৈজ্ঞানিক প্রতিশব্দ চয়ন ও নির্ধারণে ভারত সরকারকেও সহায়তা করেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে আগস্ট প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ২১৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬