বিষয়বস্তুতে চলুন

শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শ‍্যামল গঙ্গোপাধ‍্যায়
জন্ম২৫ মার্চ ১৯৩৩
মৃত্যু২৩ সেপ্টেম্বর ২০০১
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনখুলনা জিলা স্কুল
আশুতোষ কলেজ
চারুচন্দ্র কলেজ
আদি নিবাসবরিশাল
দাম্পত্য সঙ্গীইতি সান‍্যাল (বি.১৯৬০)
সন্তানমল্লিকা চৌধুরী (কন‍্যা)
ললিতা চট্টোপাধ‍্যায় (কন‍্যা)
আত্মীয়মতিলাল গঙ্গোপাধ্যায় (পিতা)
কিরণবালা দেবী (মাতা)

শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় (২৫ মার্চ, ১৯৩৩ - ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০১) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সম্পাদক ছিলেন। ছদ্মনাম- বৈকুন্ঠ পাঠক।

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

সাহিত্যিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অবিভক্ত ভারতের খুলনাতে(অধুনা বাংলাদেশ)। তার পিতার নাম মতিলাল ও মাতা কিরণবালা। আদি বাড়ি ছিল বরিশালে। পিতামহ যাত্রার দলে 'আয়ান ঘোষ' সাজতেন। দাদামশায় অর্থাৎ মায়ের কাকা ছিলেন স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে শ্যামল ছিলেন চতুর্থ।[] খুলনা জিলা স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং বেলুড়ে ইস্পাত কারখানার কাজে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে স্নাতক পাশ করে কলকাতার দক্ষিণে সাহাপুর মথুরানাথ বিদ্যাপীঠে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দেন ১৯৫৭ সালে এবং ১৯৬২ সাল পর্যন্ত পড়িয়েছিলেন। শিক্ষকতার জীবনে তিনি সহকর্মী হিসাবে পান সাহিত্যিক বরেন গঙ্গোপাধ্যায়কে। পরে কিছুদিন তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে এম.এ পড়েন।[]

সাহিত্য

[সম্পাদনা]

শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম গল্প চর প্রকাশিত হয় 'অগ্রণী' পত্রিকায়। লেখালেখির সূত্রে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন, ১৯৬১ সালে আনন্দবাজারে যোগ দেওয়ার পর তার ছোটগল্প হাজরা নস্করের যাত্রাসঙ্গী, ধানকেউটে ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাস বৃহন্নলা, কিন্তু দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে কুবেরের বিষয় আশয় প্রকাশিত হওয়ার পরেই শ্যামলের লেখনী বাংলা পাঠকমহলে সমাদৃত হয়। ব্যক্তিজীবনে বোহেমিয়ান, সুরসিক ও আড্ডাবাজ ছিলেন তিনি। আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা সন্তোষকুমার ঘোষের সাথে তার মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি যুগান্তরে যোগ দেন। যুগান্তরের সাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকা অমৃত সম্পাদনা করেছেন ছয় বছর। সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ লিখতেন বৈকুন্ঠ পাঠক ছদ্মনামে। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে যোগ দেন আজকাল পত্রিকায় এবং আমৃত্যু এই পত্রিকায় যুক্ত ছিলেন।[] দেশভাগের ওপর রচিত তার উপন্যাস আলো নেই। তার শেষ উপন্যাস হল গঙ্গা একটি নদীর নাম। ১৯৯০ সালে অবসরের পরে আজকাল পত্রিকা ও সাপ্তাহিক বর্তমানে নিয়মিত লিখতেন তিনি। গ্রামীণ জীবন, চাষবাস, সম্পর্কের জটিলতা ইত্যাদি শ্যামলের রচনার বৈশিষ্ট্য। ছোটদের জন্যে সাধু কালাচাদের গল্প, ভাস্কো ডা গামার ভাইপো, ক্লাস সেভেনের মিস্টার ব্লেক ইত্যাদি বই লিখেছেন। ১৯৯৩ সালে শ্যামল সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন তার বিখ্যাত উপন্যাস শাহজাদা দারাশিকোহ বইটির জন্যে।[][] তার সম্পাদিত গ্রন্থ বাংলা নামে দেশ। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দেশ বিদেশের নানা ভাষাতে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।[]

গ্রন্থ তালিকা

[সম্পাদনা]
  • কুবেরের বিষয় আশয়
  • বৃহন্নলা (পরে অর্জুনের অজ্ঞাতবাস)
  • ঈশ্বরীতলার রূপকথা
  • কঠিন সময়
  • কন্দর্প দর্পন
  • কামিনীকাঞ্চন
  • ক্ষমতার বারান্দা
  • গত জন্মের রাস্তায়
  • সিদ্ধকামিনী
  • সুধাময়ীর দিনলিপি
  • তার সানাই
  • দশ লক্ষ বছর আগে
  • হাওয়া গাড়ি
  • বেঁছে থাকার স্বাদ
  • দূরবীনের উল্টো দিক
  • ভালবাসিব না আর
  • মহাজীবন
  • যতীন দারোগার বেদান্ত
  • শাহজাদা দারাশুকো(২ খণ্ড)
  • আলো নেই (১ ও ২ খণ্ড)
  • নির্বান্ধব
  • হিম পড়ে এল
  • মহাকাল মেলের প্যাসেঞ্জার
  • বাজার সফর
  • গঙ্গা একটি নদীর নাম
কিশোর উপন্যাস-
  • সাধু কালাচাঁদ সমগ্র
  • ক্লাস সেভেনের মিস্টার ব্লেক
  • ভাস্কো-ডা-গামার ভাইপো
সম্পাদিত গ্রন্থ-
  • বাংলা নামে দেশ

ব্যক্তিগত জীবন ও জীবনাবসান

[সম্পাদনা]

আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করার সময় ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ২২ মে ইতি সান্যালকে বিবাহ করেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ অক্টোবর হতে চম্পাহাটীতে বসবাস শুরু করেন। তাদের দুই কন্যারা হলেন মল্লিকা চৌধুরী (জামাতা - তুষার চৌধুরী) ও ললিতা চট্টোপাধ্যায় (জামাতা সমীর চট্টোপাধ্যায়)।[] ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর তার ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে, অপারেশনের পর জানা যায় টিউমারটি ছিল ম্যালিগন্যান্ট। কিছুদিন অসুস্থতার পর সিঁথির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর পরলোক গমন করেন।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪০০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "সাদৃশ্যের সন্ধানে"। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৫, ২০১৮ 
  3. "শ্যামলদার বিষয় আশয়"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৮ 
  4. দ্বিতীয় খন্ডের সংযোজন, অঞ্জলি বসু (২০০৪)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৬৫। 
  5. "ললিতা চট্টোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার: আমার বাবা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে কয়েকটি জ্ঞাতব্য বিষয়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৮