শান্তা সিনহা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শান্তা সিনহা
অধ্যাপক শান্তা সিনহা নিজের অফিসে
জন্ম (1950-01-07) ৭ জানুয়ারি ১৯৫০ (বয়স ৭৪)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাসমাজসেবা
প্রতিষ্ঠানভারতের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের সভাপতি
পুরস্কারপদ্মশ্রী (১৯৮৮) রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (২০০৩- সমাজসেবা)

অধ্যাপক শান্তা সিনহা (জন্ম ৭ই জানুয়ারী, ১৯৫০[১]) একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিশুশ্রম-বিরোধী সমাজকর্মী। তিনি মমিদিপুড়ি ভেঙ্কটরঙ্গাইয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, যা এমভি ফাউন্ডেশন নামে পরিচিত (প্রতিষ্ঠানটি তাঁর দাদু মামিদীপুড়ি ভেঙ্কটরঙ্গাইয়ের স্মরণে নামকরণ করা হয়েছে), এবং হায়দ্রাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। তিনি টানা দুইবার (৩ বছর করে প্রতি মেয়াদ) শিশু অধিকার সংরক্ষণের জাতীয় কমিশন (এনসিপিসিআর) -এর শীর্ষ অধিকর্তা ছিলেন। ২০০৫ সালে শিশু অধিকার আইন সংসদে প্রণয়ন হওয়ার পরে, ২০০৭ সালের মার্চ মাসে শিশু অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিশন গঠিত হয়। অধ্যাপক শান্তা সিনহা এর প্রথম সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ভারত সরকার দ্বারা চতুর্থ সর্ব্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন[২]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

শান্তা সিনহা সেকেন্দ্রাবাদের সেন্ট অ্যান উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি অবধি এবং কেইস হাই স্কুল ফর গার্লসে দ্বাদশ শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করেছিলেন[৩]

তিনি ১৯৭০ সালে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন এবং জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করেন গবেষণার জন্যে। ১৯৭২ সালে নকশাল আন্দোলনের সময় তিনি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) গবেষণার কাজ শুরু করেছিলেন; সেখানে সেইসমস্ত ছাত্রদের সাথে তাঁর মতবিনিময় হয় যাঁরা ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তি, সাংবিধানিক নীতি, নেহেরুভিয়ান ধারণা পরিবর্তন, গান্ধী জাতীয়তাবাদী আদর্শ এবং আম্বেদকের রাজনীতি, মার্কসবাদী ধারণা ইত্যাদি বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। এর ফলস্বরূপ, শান্তা শেষ পর্যন্ত অন্ধ্র প্রদেশের নকশাল রাজনীতি বিষয়ের উপর গবেষণা করেন এবং ১৯৭৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

পিএইচডি অর্জন করার পরে, শান্তা সিনহা হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপকরূপে যোগদান করেন। প্রায় সেই সময়েই শহর ও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের লক্ষ্য করে প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষার কেন্দ্র শ্রমিক বিদ্যাপীঠ স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্প শুরু হয়। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আবেদন করতে পারত, শান্তা সিনহাও একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম। সেই প্রস্তাব গৃহীত হলে শান্তাকে পরিচালক করা হয়েছিল এবং সেখানে কাজ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছিল।

শান্তার পরে, তাঁর বন্ধু গীতা রামস্বামী, যিনি সে সময় ইব্রাহিম্পাতনম বৈবাসা কুলি সংঘে কর্মরত ছিলেন, কৃষক শ্রমিকদের ইউনিয়নে সংগঠিত করছিলেন এবং ক্রীতদাস শ্রমিকদের মুক্তির জন্য লড়াই করছিলেন। শান্তা গীতার কাজ দেখতে গিয়েছিলেন এবং তখনই দাসত্ব থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি চিন্তিত হয়ে ওঠেন এবং শিশু অধিকারের ব্যাপারে কিছু করার কথা চিন্তা করেন। ১৯৯০ সাল নাগাদ তিনি মমিদিপুড়ি ভেঙ্কটরঙ্গাইয়া ফাউন্ডেশন স্থাপনা করেন এবং তিনটি গ্রামে মুক্তিপ্রাপ্ত ৩০টি শিশু নিয়ে কাজ শুরু করেন।

ধীরে ধীরে এমভিএফ-এর কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকে এবং ২০১২ সালে, তেলঙ্গানার ১২০০টি গ্রামে তাদের উপস্থিতি তৈরি হয়। এখন এই গ্রামগুলিতে কোনও শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে না এবং প্রত্যেকে অন্তত দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এমভিএফ মধ্যপ্রদেশ সরকারকে একযোগে ৪৮ টি জেলায় কাজ করে প্রযুক্তিগত সহায়তাও দিয়েছে। এছাড়া বিহারের প্রায় ছয়টি জেলায় এবং আসাম, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও রাজস্থান সহ অন্যান্য রাজ্যেও শিশুশ্রম নিবারণে নিরলস কাজ করে চলেছেন শান্তা সিনহা এবং তাঁর এমভিএফ ফাউন্ডেশন।

শিশু অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিশনের (এনসিপিসিআর) সভাপতি রূপে শান্তা সিনহা শিশুশ্রম আইনের সংশোধন করার পক্ষেও সওয়াল করেছেন। শিশু শ্রম বিরোধী দিবস উপলক্ষে আইএলও, এনসিপিসিআর এবং জাতিসংঘের শিশু তহবিল আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে, তিনি, এনসিপিআরসি-এর সদস্য যোগেশ দুবে এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব নীলা গঙ্গাধরনের উপস্থিতিতে কিশোর-কিশোরীদেরও এর আওতাধীন করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন[৪]। একজন সমাজকর্মী রূপে শিশুশ্রমের অভাবনীয় হ্রাসে তাঁর অবদান অতুলনীয়। তাঁর এই অভাবনীয় সাফল্য বিবেচনা করে, ভারত সরকার তাঁকে নবগঠিত এনসিপিসিআর-এর প্রথম সভাপতির পদে নিযুক্ত করে এবং স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ সালে দেশের চতুর্থ সর্ব্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দ্বারা ভূষিত করে[৫]

সম্মাননা ও স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

  • রোটারি ইন্ডিয়া পুরস্কার, ১৯৯৮
  • এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল থেকে আলবার্ট শঙ্কর আন্তর্জাতিক পুরস্কার (১৯৯৯)
  • এসোচাম লেডিজ লীগ দ্বারা হায়দ্রাবাদ উইমেন অফ দ্য ডিকেড অ্যাচিভার্স পুরস্কার [৬]
  • ১৯৯৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার
  • ২০০৩ সালে সামাজিক নেতৃত্বে অবদানের জন্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রামন ম্যাগসেসে পুরস্কার[৭][৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Shantha Sinha | University of Hyderabad - Academia.edu"uohyd.academia.edu (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-০৯ 
  2. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  3. Syeda Farida (১২ জুন ২০০৬)। "St Ann's — Shining on"The Hindu। ২৬ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০২০ 
  4. "NCPCR for change in Child Labour Act, seeks cover for teens" 
  5. [১] Padma Shri Awardees-Source-india.gov.in
  6. ইউটিউবে ভিডিও
  7. [২] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে Thirty-sixth Foundation Day Lecture delivered by Dr Shantha Sinha-Source-IIM Bangalore
  8. [৩] Shantha Sinha wins Magsaysay Award for anti-child labour activities-Source-Rediff News