শর্করা পরিপাক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শর্করা পরিপাক হল এমন একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পৌষ্টিক নালীর বিভিন্ন অংশ থেকে নিঃসৃত পাকরসে অবস্থিত শর্করা বিশ্লেষণকারী উৎসেচকের সাহায্যে বিভিন্ন শর্করা বিশ্লিষ্ট হয়ে একক শর্করা উৎপন্ন হয়। শর্করা জাতীয় খাদ্যের পরিপাক মুখগহ্বরে শুরু হয় এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে শেষ হয়।[১]

মুখগহ্বরে পরিপাক[সম্পাদনা]

শর্করা খাদ্য মুখগহ্বরে দাঁতের সাহায্যে কর্তিত ও চর্বিত হয় এবং লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত মিউসিনের সাহায্যে খাদ্য নরম ও পিচ্ছিল হয়। লালারসে উপস্থিত শর্করা পরিপাককারী উৎসেচকগুলি হল -

  1. স্যালাইভারি অ্যামাইলেজ বা টায়ালিন
  2. মল্টেজ
  3. লাইসোজাইম

টায়ালিন[সম্পাদনা]

টায়ালিন সিদ্ধ অদ্রবণীয় শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের উপর কাজ করে। সিদ্ধ শ্বেতসার টায়ালিনের সাহায্যে প্রথমে দ্রবনীয় শ্বেতসারে পরিণত হয় এবং তারপর এরিথ্রোডেক্সট্রিনমল্টোজে বিশ্লিষ্ট হয়। এরিথ্রোডেক্সট্রিন টায়ালিনের সহায়তায় পুনরায় বিশ্লিষ্ট হয়ে প্রথমে অ্যাক্রোডেক্সট্রিন ও মল্টোজ এবং তারপর উৎপন্ন অ্যাক্রোডেক্সট্রিন মল্টোজ, আইসোমল্টোজ, মল্টোট্রায়োজ ও α সীমিত ডেক্সট্রিনে পরিণত করে। এটি জটিল শর্করাকে ভেঙ্গে মল্টোজ এ পরিনত করে।

মল্টেজ[সম্পাদনা]

লালারসস্থিত অল্প পরিমাণ মল্টেজ মল্টোজকে ভেঙে দুই অণু গ্লুকোজে পরিণত করে।

লাইসোজাইম[সম্পাদনা]

লালারসে উপস্থিত লাইসোজাইম নামক জীবাণুনাশক উৎসেচকটি বিভিন্ন জীবাণুকে বিনষ্ট করে।

পাকস্থলীতে পরিপাক[সম্পাদনা]

মুখগহ্বরে শর্করা জাতীয় খাদ্যের সাথে লালা মিশ্রিত হওয়ার পর লালামিশ্রিত খাদ্যমণ্ড গলবিলের মাধ্যমে গ্রাসনালীতে প্রবেশ করে ও পাকস্থলীতে এসে পৌঁছয়। এখানে খাদ্যের সঙ্গে পাচকরস ভালোভাবে মিশ্রিত হয়ে যে অর্ধতরল পদার্থ তৈরি হয় তাকে পাকমণ্ড বলে। পাচকরসে কোনও শর্করা বিশ্লিষ্টকারী উৎসেচক থাকে না। তবে পাচকরসের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড সুক্রোজকে আর্দ্রবিশ্লিষ্ট করে এক অণু গ্লুকোজ ও এক অণু ফ্রুক্টোজ তৈরি করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুনীতি ঘোষ চট্টোপাধ্যায় ও নারায়ণী বসবো: উচ্চমাধ্যমিক খাদ্য ও পুষ্টি, ক্যালকাটা বুক হাউস, কোলকাতা, ষষ্ঠ সংস্করণ, ২০১৪।