লিডার-শ্রেণীর অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বঙ্গোপসাগরে টহলরত বিসিজিএস তাজউদ্দীন (পিএল৭২)
শ্রেণি'র সারাংশ
নাম: লিডার-শ্রেণীর অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল
নির্মাতা: ফিনক্যান্টিয়েরি এস.পি.এ, ইতালি
ব্যবহারকারী:  বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড
নির্মিত: ১৯৮৫-১৯৯০
পরিষেবাতে: ২০১৭-বর্তমান
অনুমোদন লাভ: ২০১৭-বর্তমান
সম্পন্ন: ৪টি
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
প্রকার: অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল (ওপিভি)
ওজন: ১,৩৯২ টন
দৈর্ঘ্য: ৮৭ মিটার (২৮৫ ফু)
প্রস্থ: ১০.৫ মিটার (৩৪ ফু)
ড্রাফট: ৪.৮০ মিটার (১৫.৭ ফু)
প্রচালনশক্তি:
  • ২ × ১১,০০০ অশ্বশক্তি (৮,২০০ কিওয়াট) বিশিষ্ট গ্র্যান্ডি মোটরি ট্রিয়েস্ট জিএমটি বিএম-২৩০.২০ ডিভিএম ডিজেল ইঞ্জিন (ইতালি);
  • ৪ × ইসোটা ফ্র্যাসচিনি আইডি-৩৬-এসএস-১২ভি ৩,৪৮৭ অশ্বশক্তি (২,৬০০ কিওয়াট) ডিজেল জেনারেটর (ইতালি);
  • আনসালদো এমএক্সআর ৪০০ এম৬জেড ইলেকট্রিক জেনারেটর (ইতালি);
  • ২ × শ্যাফট
গতিবেগ: ২৩ নট (৪৩ কিমি/ঘ; ২৬ মা/ঘ)
সীমা: ৩,৫০০ নটিক্যাল মাইল (৪,০০০ মা; ৬,৫০০ কিমি)
সহনশীলতা: ৭ দিন
নৌকা ও অবতরণ
নৈপুণ্য বহন করে:
২টি
লোকবল: ৮০ জন
সেন্সর এবং
কার্যপদ্ধতি:
  • ১ × ফুরুনো ডিআরএস৪ডব্লিউ র‍্যাডার (জাপান);
  • ১ × ফুরুনো এফএআর-৩৩২০ চার্ট র‍্যাডার (জাপান);
  • ১ × কেএনএস জেড১৫ এমকে২-কেইউ ভি-স্যাট সিস্টেম (দক্ষিণ কোরিয়া);
  • ১ × হাল মাউনন্টেড মাল্টি-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × হাল মাউনন্টেড সিঙ্গেল-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × ডিজিপিএস রিসিভার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × সাউন্ড ভেলোসিটি প্রোফাইলার (যুক্তরাজ্য);
  • ১ × মাল্টিরোল ডিসপ্লে সহ কেলভিন হিউগস র্শাপআই ই/এফ-ব্যান্ড (এস-ব্যান্ড) নেভিগেশনাল র‍্যাডার;
  • ১ × কেলভিন হিউজেস শার্পআই আই-ব্যান্ড (এক্স-ব্যান্ড) র‍্যাডার;
  • ১ × টাইপ-৩৪৮ ফায়ার কন্ট্রোল র‍্যাডার (মেইন গানের জন্য)
  • ১ × চৌম্বকীয় কম্পাস (জাপান);
  • ১ × জিপিএস রিসিভার (ফুরুনো);
  • ১ × ইকো সাউন্ডার (কোডেন);
  • ১ × রাডার অ্যাঙ্গেল ইন্ডিকেটর;
  • ১ × ভিএইচএফ সেট (আইকম);
  • ২০ × ভিএইচএফ ওয়াকিটকি সেট (আইকম/মটোরোলা)
রণসজ্জা:
  • ১ × ওরলিকন কেবিএ ২৫ মিমি রিমোট কন্ট্রোলড গান;
  • ২ × সিএস/এলএম৯ ১৪.৫ মিমি বিমান-বিধ্বংসী মেশিনগান;
  • ৬ × কিউডব্লিউ-২ ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণ যোগ্য বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র;
  • ২ × ওয়াটার গান
টীকা:
  • ১ × এফার ২২০এম ডেক ক্রেন (ইতালি);
  • সামুদ্রিক দূষণরোধী সরঞ্জাম (সংযোজিত)

লিডার-শ্রেণীর অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল হলো ইতালিতে নির্মিত রূপান্তরিত মিনার্ভা-শ্রেণীর কর্ভেট জাহাজ যা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দ্বারা অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল (ওপিভি) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই জাহাজসমূহ ইতালিয়ান প্রযুক্তিতে ফিনক্যান্টিয়েরি এস.পি.এ, ইতালি কর্তৃক নির্মিত হয়। প্রতিটি জাহাজ সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান রোধ, জলদস্যুতা দমন, সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান, অন্য জাহাজকে অগ্নি নির্বাপণী সহায়তা প্রদান, সুনীল অর্থনীতির বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনাসহ মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়াও জাহাজগুলি দুর্যোগ কালীন সময়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।[১][২][৩][৪][৫][৬][৭][৮][৯][১০][১১][১২][১৩][১৪][১৫][১৬][১৭][১৮][১৯][২০][২১][২২][২৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য গৃহীত দীর্ঘমেয়াদী আধুনিকায়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ইতালি হতে জাহাজ ক্রয়ের পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ জুলাই, ২০১৫ সালে ৪টি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল ক্রয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এবং ফিনক্যান্টিয়েরি এস.পি.এ, ইতালি এর মধ্যেকার জাহাজ নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ফিনক্যান্টিয়েরির বিক্রয় ব্যবসা ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাওলো ফ্রিনো এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের হেড অব প্ল্যানিং অ্যান্ড সেলস মোহাম্মদ মাজেদুল হক। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, ম্যাসিমো ডি বেনেডিক্টিস, ফিনক্যান্টিরির রিজিওনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের তৎকালীন মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মকবুল হোসেন, এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএমএস, এনডিসি, পিএসসি-বিএন।

সম্পাদিত চুক্তির অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল এবং বিসিজিএস তাজউদ্দীন জাহাজ দুটি পুনঃসংস্কার করা হয়। সংস্কারকাজ শেষে ৪ আগস্ট, ২০১৬ সালে জাহাজ দুটি কোস্ট গার্ডের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। অবশেষে ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাজ দুটির কমিশনিং সম্পন্ন করেন।

সর্বশেষ ধাপে বিসিজিএস মনসুর আলী এবং বিসিজিএস কামারুজ্জামান জাহাজ দুটি পুনঃসংস্কার করা হয়। সংস্কারকাজ শেষে ১২ অক্টোবর, ২০১৭ সালে জাহাজ দুটি কোস্ট গার্ডের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালে বিসিজিএস মনসুর আলী এবং বিসিজিএস কামরুজ্জামান বাংলাদেশে পৌছায় এবং বাগেরহাটের মোংলার দিগরাজ কোস্ট গার্ড ঘাঁটিতে যুদ্ধ জাহাজ দুটি'কে গ্রহণ করেন মোংলা কোস্ট গার্ডের তৎকালীন পরিচালক (অপারেশন) ক্যাপ্টেন ইকরাম হোসেন। অবশেষে ১৫ নভেম্বর, ২০২০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাজ দুটির কমিশনিং সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল জাহাজটি সর্বপ্রথম ১০ জুন, ১৯৮৭ সালে আইটিএস মিনার্ভা (এফ৫৫১) নামে ইতালি নৌবাহিনীতে কর্ভেট হিসেবে কমিশন লাভ করে। পরবর্তীতে ১৪ মে, ২০১৫ সালে জাহাজটি ডিকমিশন করা হয়। জাহাজটিকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী পুনঃসংস্কার করে অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল জাহাজে রূপান্তর করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালে জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ইতালি ছেড়ে আসে। অবশেষে ২ নভেম্বর, ২০১৬ সালে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছায়। পথিমধ্যে জাহাজটি ২৬ অক্টোবর, ২০১৬ সালে শুভেচ্ছা সফরের অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে পৌছায়। বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল জাহাজটিকে কলম্বো বন্দরে পৌঁছানোর পর শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে ঐতিহ্যবাহী নৌ-স্বাগতম জানানো হয়।

বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল ২৬ থেকে ৩০ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত ল্যাংকাউই ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যান্ড অ্যারোস্পেস এক্সিবিশন (লিমা)-২০১৯-এ অংশগ্রহণ করে। জাহাজটি ১৮ মার্চ, ২০১৮ তারিখে ইভেন্টে অংশ নিতে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। পথিমধ্যে শুভেচ্ছা সফরের অংশ হিসেবে ভারতের পোর্ট ব্লেয়ার এবং থাইল্যান্ডের ফুকেট বন্দর সফর করে।

বিসিজিএস তাজউদ্দীন জাহাজটি সর্বপ্রথম ১৬ মে, ১৯৯১ সালে আইটিএস সিবিল্লা (এফ৫৫৮) নামে ইতালি নৌবাহিনীতে কর্ভেট হিসেবে কমিশন লাভ করে। ২৮ মার্চ, ১৯৯৭ সালে, সিবিল্লা ওট্রান্টো প্রণালীতে আলবেনিয়ান জাহাজ ক্যাথরি ই রাদেস এর সাথে সংঘর্ষ কবলিত হয়। যার ফলে অসংখ্য আলবেনিয়ান অভিবাসী পানিতে ডুবে প্রাণহানির সম্মুখীন হন। উক্ত ঘটনাটি ট্র্যাজেডি অফ ওট্রান্টো নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ১৪ মে, ২০১৫ সালে জাহাজটি ডিকমিশন করা হয়। জাহাজটিকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী পুনঃসংস্কার করে অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল জাহাজে রূপান্তর করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালে জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ইতালি ছেড়ে আসে। অবশেষে ২ নভেম্বর, ২০১৬ সালে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছায়। পথিমধ্যে জাহাজটি ২৬ অক্টোবর, ২০১৬ সালে শুভেচ্ছা সফরের অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে পৌছায়। বিসিজিএস তাজউদ্দীন জাহাজটিকে কলম্বো বন্দরে পৌঁছানোর পর শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে ঐতিহ্যবাহী নৌ-স্বাগতম জানানো হয়।

বিসিজিএস তাজউদ্দীন শুভেচ্ছা সফরের অংশ হিসেবে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ পর্যন্ত ভারতের গোয়া বন্দর পরিদর্শন করে। গোয়া বন্দরে অবস্থানকালে, জাহাজটি ১০ম রিজিয়নাল কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (রিক্যাপ) এর অংশ হিসেবে সেফ অ্যান্ড সিকিউর সি ২০১৭ নামে বার্ষিক নৌ-মহড়ায় অংশ নেয়। পরবর্তীতে জাহাজটি ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ পর্যন্ত ভারতের চেন্নাই বন্দর পরিদর্শন করে।

২২ মে, ২০১৮ সালে বিসিজিএস তাজউদ্দীন পুনঃরায় শুভেচ্ছা সফরের অংশ হিসেবে ভারতের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে। জাহাজটি ২৫ মে, ২০১৮ তারিখে ভারতের চেন্নাই বন্দরে পৌছায় এবং ২৮ মে, ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। পরবর্তীতে ২৯ মে, ২০১৮ তারিখে জাহাজটি ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দরে পৌছায়। অবশেষে ৪ জুন, ২০১৮ তারিখে জাহাজটি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে।

বিসিজিএস মনসুর আলী জাহাজটি সর্বপ্রথম ১ জুন, ১৯৮৭ সালে আইটিএস ইউরেনিয়া (এফ৫৫২) নামে ইতালি নৌবাহিনীতে কর্ভেট হিসেবে কমিশন লাভ করে। বিসিজিএস কামারুজ্জামান জাহাজটি সর্বপ্রথম ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭ সালে আইটিএস ড্যানাইডে (এফ৫৫৩) নামে ইতালি নৌবাহিনীতে কর্ভেট হিসেবে কমিশন লাভ করে। পরবর্তীতে ১০ মার্চ, ২০১৬ সালে জাহাজ দুটি ডিকমিশন করা হয়। জাহাজ দুটি'কে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী পুনঃসংস্কার করে অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল জাহাজে রূপান্তর করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালে জাহাজ দুটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ইতালির লা স্পেজিয়া বন্দর ছেড়ে আসে। বাংলাদেশে আসার পথে গত ২১ নভেম্বর মিশরের পোর্ট সেইড এ পৌঁছে প্রায় ২ দিন অবস্থান করে এবং ২৫ নভেম্বর কেএসএ জিআই জেদ্দা বন্দরে পৌঁছে ৩ দিন অবস্থান করে। এরপর গত ২ ডিসেম্বর ওমানের সালালাহ বন্দরে পৌঁছে ৬ দিন অবস্থান করে। গত ৮ ডিসেম্বর অপরাহ্নে ভারতের মুম্বাই বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং ১১ ডিসেম্বর পৌঁছায়। সেখানে ২ দিন অবস্থান করার পর ১৩ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং সেখানে ২ দিন অবস্থানের পর ১৮ ডিসেম্বর জাহাজ দুটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। অবশেষে ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছায়।

বিসিজিএস কামারুজ্জামান ১০ এপ্রিল, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক মহড়ায় অংশ নিতে ১৫ জন কর্মকর্তা, ১০৬ জন নাবিক ও ৮ জন অসমরিক ব্যক্তিসহ ভারত ও শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে দিগরাজ কোস্ট গার্ড মোংলা সদর দপ্তর ঘাঁটি থেকে ছেড়ে যায়। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন মোংলা সদর দপ্তর সূত্রে জানায়, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ‘ন্যাশনাল লেভেল পলুশন রেন্সপন্স এক্সারসাইজ’ এ অংশ নেবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জাহাজ ‘বিসিজিএস কামরুজ্জামান’। মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজটি পথিমধ্যে ভারতের গোয়ায়, চেন্নাই ও শ্রীলঙ্কার কলম্বো সমুদ্র বন্দর শুভেচ্ছা সফর করবে। ২২ দিনের এ শুভেচ্ছা সফরে এক হাজার ৩শ’ ৫০ নটিক্যাল মাইল নৌপথ পাড়ি দিয়ে প্রথমে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪ দিন। এক সপ্তাহ অবস্থানের পর সেখান থেকে পুনরায় ভারতের গোয়ায় ও চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে পৌঁছাতে নৌপথে ৭শ’ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিতে দুই দিন সময় লাগবে বলেও কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আন্তর্জাতিক মহড়ায় অংশগ্রহণ ও শুভেচ্ছা সফর শেষে জাহাজটি আগামী ৩০ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে জাহাজটি দেশে প্রত্যাবর্তন করে।

বৈশিষ্ট্য ও যান্ত্রিক কাঠামো[সম্পাদনা]

লিডার-শ্রেণীর অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল জাহাজের দৈর্ঘ্য ৮৭ মিটার (২৮৫ ফু), প্রস্হ ১০.৫০ মিটার (৩৪.৪ ফু) এবং ড্রাফট ৪.৮০ মিটার (১৫.৭ ফু)। জাহাজের ওজন ১,৩৯২ টন এবং জাহাজে প্রচলন শক্তি হিসেবে রয়েছে:

  • ২টি ১১,০০০ অশ্বশক্তি (৮,২০০ কিওয়াট) বিশিষ্ট গ্র্যান্ডি মোটরি ট্রিয়েস্ট জিএমটি বিএম-২৩০.২০ ডিভিএম ডিজেল ইঞ্জিন (ইতালি);
  • ৪টি ইসোটা ফ্র্যাসচিনি আইডি-৩৬-এসএস-১২ভি ৩,৪৮৭ অশ্বশক্তি (২,৬০০ কিওয়াট) ডিজেল জেনারেটর (ইতালি);
  • আনসালদো এমএক্সআর ৪০০ এম৬জেড ইলেকট্রিক জেনারেটর (ইতালি)
  • ২টি শ্যাফট।

যার ফলে জাহাজটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২৩ নট (৪৩ কিমি/ঘ; ২৬ মা/ঘ)। এছাড়াও জাহাজটি ৮০ জন সদস্য নিয়ে একনাগাড়ে ৭ দিন অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম। সেন্সর এবং কার্যপদ্ধতি হিসেবে জাহাজটিতে রয়েছে:

  • ১টি ফুরুনো ডিআরএস৪ডব্লিউ র‍্যাডার (জাপান);
  • ১টি ফুরুনো এফএআর-৩৩২০ চার্ট র‍্যাডার (জাপান);
  • ১টি কেএনএস জেড১৫ এমকে২-কেইউ ভি-স্যাট সিস্টেম (দক্ষিণ কোরিয়া);
  • ১টি হাল মাউনন্টেড মাল্টি-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১টি হাল মাউনন্টেড সিঙ্গেল-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১টি ডিজিপিএস রিসিভার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১টি সাউন্ড ভেলোসিটি প্রোফাইলার (যুক্তরাজ্য);
  • ১টি জেআরসি জেএমএ-৩৩০০ মাল্টিরোল ডিসপ্লে সহ নেভিগেশন র‍্যাডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১টি চৌম্বকীয় কম্পাস (জাপান);
  • ১টি জিপিএস রিসিভার (ফুরুনো);
  • ১টি ইকো সাউন্ডার (কোডেন);
  • ১টি রাডার অ্যাঙ্গেল ইন্ডিকেটর;
  • ১টি ভিএইচএফ সেট (আইকম);
  • ১০টি ভিএইচএফ ওয়াকিটকি সেট (আইকম/মটোরোলা)।

রণসজ্জা[সম্পাদনা]

লিডার-শ্রেণীর অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল জাহাজের সক্ষমতা আধুনিক বিশ্বে ব্যবহৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। শত্রু জাহাজ মোকাবেলা, চোরাচালান রোধ, জলদস্যূতা দমনে জাহাজটিতে রয়েছে:

  • ১টি ওরলিকন কেবিএ ২৫ মিমি রিমোট কন্ট্রোলড গান;
  • ২টি সিএস/এলএম৯ ১৪.৫ মিমি বিমান-বিধ্বংসী মেশিনগান;
  • ৬টি কিউডব্লিউ-২ ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণ যোগ্য বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।

জাহাজসমূহ[সম্পাদনা]

 বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড
 পরিচিতি সংখ্যা   নাম   নির্মাতা   নির্মাণ শুরু   হস্তান্তর   কমিশন   অবস্থা 
পিএল৭১ বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল ফিনক্যান্টিয়েরি এস.পি.এ ১১ মার্চ, ১৯৮৫ ৩ এপ্রিল, ১৯৮৬ ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ সক্রিয়
পিএল৭২ বিসিজিএস তাজউদ্দীন ১১ অক্টোবর, ১৯৮৯ ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯০
পিএল৭৩ বিসিজিএস মনসুর আলী ৪ এপ্রিল, ১৯৮৫ ২১ জুন, ১৯৮৬ ১৫ নভেম্বর, ২০২০
পিএল৭৪ বিসিজিএস কামারুজ্জামান ২৬ জুন, ১৯৮৫ ১৮ অক্টোবর, ১৯৮৬

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Fincantieri | FINCANTIERI TO SUPPLY FOUR OPVs TO THE BANGLADESH COAST GUARD" (পিডিএফ)www.fincantieri.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  2. "Fincantieri | FINCANTIERI DELIVERS THE FIRST TWO OPVs TO THE BANGLADESH COAST GUARD" (পিডিএফ)www.fincantieri.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  3. "Fincantieri | FINCANTIERI DELIVERS THE LAST TWO OPVs TO THE BANGLADESH COAST GUARD" (পিডিএফ)www.fincantieri.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  4. "Fincantieri | FINCANTIERI DELIVERS THE LAST TWO OPVs TO THE BANGLADESH COAST GUARD"www.fincantieri.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  5. "বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বার্তা - নভেম্বর, ২০১৫" (পিডিএফ)coastguard.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  6. "বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সাফল্য" (পিডিএফ)coastguard.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  7. "ALL SHIPS - BANGLADESH COAST GUARD" (পিডিএফ)coastguard.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  8. "সিজিএস সৈয়দ নজরুল ও সিজিএস তাজউদ্দীন-এর কমিশনিং অনুষ্ঠান" (পিডিএফ)pmo.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  9. "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের (বিসিজি) ৯টি টহল জাহাজ ও ১টি ঘাঁটি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন"pmo.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  10. "বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের (বিসিজি) ৯টি টহল জাহাজ ও ১টি ঘাঁটি কমিশনিং অনুষ্ঠান"pmo.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  11. "কোস্ট গার্ডের ৯টি জাহাজ ও ১টি ঘাঁটির কমিশনিং প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী" 
  12. "কোস্টগার্ডকে আরো যুগোপযোগী করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী"The Daily Ittefaq। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  13. "স্মরণীয় দিন উদযাপন করলো কোস্টগার্ড | Bangladesh Coast Guard | Somoy TV" 
  14. "চট্টগ্রামে কোস্ট গার্ডের ৯টি জাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী" 
  15. "আওয়ামীলীগ ছাড়া সমুদ্রসীমায় অধিকার প্রতিষ্ঠা হতো না -প্রধানমন্ত্রী 15Nov.20|| Bangladesh Coast Guard" 
  16. "উদ্বোধনের পরই অত্যাধুনিক ৯টি জাহাজে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড | Coast Guard" 
  17. "কোস্ট গার্ড হবে 'গার্ডিয়ান অব দ্য সি'"jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  18. "০৪ টি জাহাজ - বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দিন, মনসুর আলী, কামরুজ্জামান" 
  19. "LIMA 2019 Day 2: LIMA '19 International Fleet Review" 
  20. "Two Bangladesh Coast Guard ships arrive at the Port of Colombo" 
  21. Enusha (২০১৬-১০-২৬)। "Bangladesh Coast Guard Ships arrive in Colombo"www.dgi.gov.lk (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  22. "Fincantieri | FINCANTIERI DELIVERS THE LAST TWO OPVs TO THE BANGLADESH COAST GUARD"www.fincantieri.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  23. "সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী এর মধ্যে স্বাক্ষরিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি" (পিডিএফ)mhapsd.portal.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০