লা পুয়েরতা দেল পুয়েন্তে (করদোবা)

স্থানাঙ্ক: ৩৭°৫২′৪০″ উত্তর ৪°৪৬′৪৫″ পশ্চিম / ৩৭.৮৭৭৮° উত্তর ৪.৭৭৯১° পশ্চিম / 37.8778; -4.7791
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পুয়েরতা দেল পুয়েন্তে, সামনে থেকে তোলা ছবি।

লা পুয়েরতা দেল পুয়েন্তে বা সেতু তোরণ (স্পেনীয় - la Puerta del puente) হল স্পেনের করদোবা শহরের পুরনো রোমান সেতুর উত্তর মুখে অবস্থিত একটি ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে তৈরি তোরণ। তোরণটি বর্তমানে সেতু, তার দক্ষিণ মুখে অবস্থিত মধ্যযুগীয় কালাওরা মিনার ও ঐ অঞ্চলে অবস্থিত করদোবা শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রের অন্যান্য প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নির্মাণের সাথে একযোগে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো থেকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[১] অবশ্য তার পূর্বেই, ১৯৩১ সাল থেকেই তোরণটি সংলগ্ন রোমান সেতুকালাওরা মিনারের সাথে একযোগে "স্থাপত্য" বিভাগে স্পেনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (Bien de Interés Cultural) হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল।[২]

বহু শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী করদোবা শহরে যে তিনটি ঐতিহাসিক তোরণ টিকে আছে, লা পুয়েরতা দেল পুয়েন্তে তার অন্যতম।[৩] অন্য দু'টি হল চতুর্দশ শতাব্দীতে তৈরি ইসলামি স্থাপত্যের দুই তোরণ - আলমোদোবার তোরণপুয়েরতা দে সেভিয়া। লা পুয়েরতা দেল পুয়েন্তে বা সেতু তোরণটি এখন যেখানে অবস্থিত, সেখানেই রোমান আমলেও তোরণের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। সেইসময় এই তোরণ ও সেতু বিখ্যাত রোমান সড়ক ভিয়া আউগুস্তার অংশ ছিল। পরে মুসলমান আমলেও এখানে সেতুর অস্তিত্ব ছিল; সেটি ছিল তখন শহরের অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার। বাব আল-ওয়াদি, বাব আল-ইয়াজিরা, বাব আল-সুরা, প্রভৃতি বিভিন্ন নামে তখন সেই তোরণকে অভিহিত করা হত।[৪] বর্তমানে যে তোরণটি সেখানে দেখা যায়, সেটি পরবর্তীকালে নবজাগরণের সময়ে তৈরি। ১৫৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রখ্যাত স্পেনীয় আর্কিটেক্ট এরনান রুইথের পরিকল্পনায় এটি নির্মিত।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৮৯৭ সালে তোলা পুয়েরতা দেল পুয়েন্তের চিত্র। ছবিটি তুলেছিলেন ফরাসি আলোকচিত্রী মারি-জোসেফ অঁরি দ্য লেস্ত্রাঁজ।

ষোড়োশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে করদোবা শহরের কর্তৃপক্ষ পুরনো রোমান সেতুর সেতুমুখে স্থাপিত বহু শতাব্দী প্রাচীন জীর্ণ তোরণটির জায়গায় নতুন একটি তোরণ বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেই মতো ১৫৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের মেয়র আলোনসো গনথালেথ দে আরতেয়াগা একটি নির্দেশনামা জারি করেন। উদ্দেশ্য ছিল একাধিক: প্রথমত, যেহেতু এই তোরণটি ছিল শহরের একটি প্রধান প্রবেশদ্বার, প্রতিদিন প্রচূর লোকজন, পশু ও মালপত্র এই পথে যাতায়াত করত। সেই তুলনায় পুরনো তোরণটি ছিল যথেষ্ট সঙ্কীর্ণ। ফলে সেটির স্থলে আরও চওড়া একটি তোরণের প্রয়োজনও ছিল। তাছাড়া এই নতুন সেতুটিকে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করার কথা ভাবা হয়েছিল। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের শহরে আগমন উপলক্ষে এই পরিকল্পনা গৃহীত হয়।[৩][৫]

প্রথমে তোরণটি নির্মাণের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল স্থপতি ফ্রানথিসকো দে মোনতালবানের উপর। কিন্তু কয়েকমাস পরেই এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন স্থপতি এরনান রুইথ। পরিকল্পনা অনুযায়ী তোরণটি তৈরি হওয়া নিয়ে উদ্ভূত সংশয় থেকেই তার হাতে এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। এরফলে তোরণটি তৈরির খরচও প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ১৪০০ ডুকাট'এর জায়গায় হয়ে দাঁড়ায় ৩১০০ ডুকাট। যাইহোক, কাজটি মাঝপথে দীর্ঘদিন থেমে ছিল। ১৫৭৫ সালে এরনান রুইথ আবার তোরণের কাজে হাত দেন।[৪] তবে পরের বছর যতদূর সম্ভব, পৌর কর্তৃপক্ষের অর্থে টান পড়ায় শেষপর্যন্ত তোরণটি পুরোপুরি তৈরি হওয়ার আগেই কাজ আবার বন্ধ হয়ে যায়।

স্পেনের রাজা ত্রয়োদশ আলফোনসোর আমলে ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে তোরণটি যেখানে অবস্থিত সেখান থেকে পুরনো প্রাচীর ও অন্যান্য নির্মাণ অপসারিত করে তোরণটিকে আলাদা করা হয় ও ১৯২৮ সালে তোরণটিকে একটি স্মারক হিসেবে পুনর্সংস্কার করা হয়।[৩][৪] এইসময়ই তোরণের বাইরের দিকে থাকা কাজ ও নকশাগুলিকে ভিতরের দিকেও ফুটিয়ে তোলা হয়। ১৯৫০'এর দশকের শেষের দিকে তোরণ সংলগ্ন এলাকার ভূমির উচ্চতাও তোরণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তোরণ নির্মানের সময় তা যে উচ্চতায় ছিল, সেখানেই নামিয়ে আনা হয়।[৩] সুদীর্ঘ বছর ধরে আশেপাশের এলাকায় একের পর এক বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে এই উচ্চতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তোরণটিকে পুরো পরিষ্কার করা হয় এবং তার নিচের মাটিতে আর্কিওলজিকাল পরীক্ষার কাজ চালানো হয়। অন্যদিকে ২০০৫ সালে তোরণটির সম্পূর্ণ সংস্কারের কাজও সম্পন্ন করা হয়।

বিবরণ[সম্পাদনা]

পুয়েরতা দেল পুয়েন্তে, সেতুর দিক থেকে তোলা ছবি (২০১৪ সাল)

বড় বড় বালিপাথরের ব্লক ব্যবহার করে তোরণটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর তিনটি মূল অংশ। মাঝের অংশটিতেই মূল ফটকটি অবস্থিত। এই অংশটি আয়তাকার। উপরে একটি লিন্টেল অংশ রয়েছে। এর দুইপাশে একজোড়া করে ডোরিক স্তম্ভ নেমে এসেছে। এগুলি এসে মিশেছে উঁচু বেদীর মতো করে তৈরি করা ভিতে। আর এর উপরে ছোট ছোট বর্গাকার পাথরের ফলক বসানো একটা অংশ সমগ্র তোরণটি ঘিরে রয়েছে। অবশ্য এই ফলকগুলিতে কোনও খোদাই বা নকশা নেই। তারও উপরে রয়েছে একটি সরু কার্নিশ।[৪]

তোরণের মাঝের অংশটির একেবারে উপরে একটি অর্ধবৃত্তাকার পাথরের ফলক বসানো রয়েছে। এর উপরের নকশা রিলিফের কাজের। তবে কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। তার তলায় স্পেনীয় ভাষায় খোদাই করে লেখা - পবিত্র ক্যাথোলিক রাজা, আমাদের প্রভু, দ্বিতীয় ফিলিপের রাজত্বকালে। এছাড়া দু'দিকের স্তম্ভগুলির মাঝেও কিছু ভাস্কর্য খোদাই করা রয়েছে। যেমন শিশু কোলে এক মহিলার প্রতিকৃতি ও এক ছিন্নমস্তক মৃত ব্যক্তির উপরে বসে থাকা আরেক মহিলা (সম্ভবত জুডিথ ও হোলোফার্ন)।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. «Historic Centre of Cordoba». UNESCO. World Heritage List. সংগৃহীত ২১ জুলাই, ২০১৯।
  2. «Base de datos de bienes inmuebles inscritos en el Registro de Bienes de Interés Cultural (buscar escribiendo "Puente sobre El Guadalquivir, su Puerta" en el campo "General"». del Ministerio de Cultura de España. সংগৃহীত ২৪ অক্টোবর, ২০১৯।
  3. "Puerta del Puente". Córdoba 24. সংগৃহীত ২২ জুলাই, ২০১৯।
  4. "Puerta del Puente". artencordoba. Visitas guiadas. সংগৃহীত ২২ জুলাই, ২০১৯।
  5. "Puerta del Puente". Turismo de Córdoba. সংগৃহীত ২৫ জুলাই, ২০১৯।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]