বিষয়বস্তুতে চলুন

লাহোর খাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লাহোর খাল
لاہور نہر
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে লাহোর খালের একটি দৃশ্য
বিশেষ উল্লেখ
দৈর্ঘ্য৫১ মাইল (৮২ কিমি)
অবস্থাচালু
ইতিহাস
নিমার্ণ শুরু১৮৬৩
ভূগোল
আরম্ভস্থলবিআরবি খাল, খাইরা গ্রামের কয়েক গজ দূরে
সমাপ্তিস্থলরাইউইন্ড রোড
যার শাখাবাম্বাওয়ালি-রবি-বেদিয়ান (বিএআরবি) খাল
মানচিত্র

লাহোর খাল (উর্দু/পাঞ্জাবি: لاہور نہر) একটি খাল যা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর শহরের পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত। এটি বাম্বাওয়ালি-রবি-বেদিয়ান খাল (বিআরবি) থেকে বেরিয়ে এসেছে। ৩৭ মাইল (৬০ কিমি) দীর্ঘ এই জলপথটি প্রথমে মুঘল আমলে নির্মিত হয়। পরে ১৮৬১ সালে ব্রিটিশরা এটি উন্নত করে। এটি লাহোর শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।[]

এই খালটি পাঞ্জাব সেচ বিভাগের লাহোর জোন দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি শুধু সেচের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি একটি অনন্য লিনিয়ার পার্ক হিসেবেও কাজ করে। এটি লাহোর শহরের দীর্ঘতম সবুজ এলাকা এবং জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি।[] খালের গড় গভীরতা ৫ ফুট (১.৫ মি)। ক্যানাল ব্যাংক রোড এই খালের দুই ধারে প্রসারিত।[] স্থানীয় ও জাতীয় উৎসবের সময় এই খাল আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জায় সজ্জিত হয়।

নির্মাণ

[সম্পাদনা]

লাহোর শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বামবাওয়ালি রাভি-বেদিয়ান (বিআরবি) খালটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছিল। ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে, ব্রিটিশরা এই বিআরবি খালের মধ্য দিয়ে একটি অংশ কেটে এটি পশ্চিম দিকে প্রসারিত করে। খালটি লাহোরের দক্ষিণে অবস্থিত রায়উইন্ড শহর পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়।[]

এই খালটি প্রসারিত করার ধারণা সম্ভবত আগ্রা দুর্ভিক্ষ-এর পর গৃহীত হয়েছিল। সেই সময়ে, সেচ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। এই দুর্ভিক্ষ ভারতীয় উপমহাদেশে ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করেছিল এবং প্রায় এক কোটি রুপি ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছিল। এর ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

গমনপথ

[সম্পাদনা]
মুঘলপুরার কাছে লাহোর খালের নিম্নস্রোতের দৃশ্য

লাহোর খালটি বিআরবি খাল থেকে শুরু হয়। এটি খাইরা গ্রামের কাছাকাছি কয়েক গজ দূরে অবস্থিত। খালটি লাহোরের পুরনো এলাকাগুলিকে (খালের পশ্চিম পাশে) ধনী ব্যক্তিদের আধুনিক এলাকাগুলির (খালের পূর্ব পাশে) থেকে বিভক্ত করে। লাহোর মেট্রোবাস খালের উপর দিয়ে একটি উড়ালসেতু ব্যবহার করে অতিক্রম করে। মুসলিম টাউন ফ্লাইওভারও এই খালের উপর নির্মিত।

থোকর নিয়াজ বেগ পার হওয়ার পর, খালটি বাঁ দিকে মোড় নিয়ে রায়উইন্ড রোডের সমান্তরালে চলতে থাকে। এটি প্রধান মহাসড়কগুলোর মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং একই সঙ্গে শহরের প্রধান প্রবাহপথ হিসেবে কাজ করে।

সংস্কৃতি এবং শিল্প

[সম্পাদনা]

লাহোর খাল শহরের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গ্রীষ্মকালে শত শত মানুষ এখানে সাঁতার কাটতে আসে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

স্থানীয়, জাতীয় এবং ধর্মীয় উৎসবগুলিতে, যেমন জশনে-বা'হারান (বসন্তকে স্বাগত জানানো), বসন্ত উৎসব, ঈদ, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস এবং পাকিস্তান দিবসে খালটি আলোকসজ্জা এবং বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান, যেমন ওমোরে, তাদের ব্র্যান্ড প্রচারের জন্য এই খালকে ব্যবহার করেছে।[][]

বসন্তের বসন্ত উৎসব চলাকালীন লাহোর খাল

সমস্যা

[সম্পাদনা]

অস্বাস্থ্যকর পানি

[সম্পাদনা]

খালের পানিকে বিষাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর বলা হয়ে থাকে। লাহোরে পরিবেশ দপ্তরের বিশেষায়িত পরীক্ষাগারে খালের পানি পরীক্ষা করা হয়েছিল। এতে দেখা গেছে, পানিতে অতিরিক্ত মাত্রায় সালফাইড, বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন চাহিদা, রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা, মোট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থ, মোট স্থগিত কঠিন পদার্থ, ক্লোরিন এবং সালফেট রয়েছে। এছাড়াও পিএইচ ব্যালেন্সসহ আরও অনেক রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা দেখা গেছে, যা খালে ফেলা রাসায়নিকের কারণে হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষণকারীগুলোর পরিমাণ জাতীয় পরিবেশগত মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি। এই পানিতে সাঁতার কাটা বা পান করা নাগরিকরা জানে না যে, এই দূষিত পানি হেপাটাইটিস এবং ত্বকের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।[]

পলি অপসারণ

[সম্পাদনা]

২০০৮ সালের শুরুর দিকে, খালের তলদেশ পরিষ্কার এবং পলি অপসারণের জন্য পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্রেন ব্যবহার করে খালের মাটি খনন করা হয় এবং তা ট্রাকে ভরে তীরে ফেলা হয়।

যখন এই প্রক্রিয়া শেষ হয় এবং খালের তলদেশ সমান দেখাতে শুরু করে, তখন সেচ বিভাগের কর্মকর্তারা ২০০৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পানির প্রবাহ পুনরায় শুরু করেন।[]

প্রতি বছর ডিসেম্বরে ও জানুয়ারি মাসে পাঞ্জাব সেচ বিভাগ খালের পলি অপসারণের কাজ সম্পন্ন করে।[]

সরকারের প্রতি সমালোচনা

[সম্পাদনা]

লাহোর বাঁচাও তেহরিক (সেভ লাহোর মুভমেন্ট) এর লাহোর খাল চওড়া করার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। এখন পর্যন্ত খালের পানি বিশুদ্ধ করার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। লাহোর কনজারভেশন সোসাইটির তথ্য সচিব ড. ইজাজ বলেন, “যখন ভিআইপিরা খালের পাশ দিয়ে যায়, তখন পানিকে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর আবার তা আগের খারাপ অবস্থায় ফিরে আসে।” তিনি আরও বলেন, সরকার মানুষের কল্যাণ নিয়ে আন্তরিক নয় এবং তাদের এই দূষিত পানির সংস্পর্শে রেখে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। মুস্তানসার হুসেন তারার এবং অন্যরা লাহোর খালের রাস্তা চওড়া করার প্রকল্প নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তারা এক্সপ্রেস নিউজের তথ্যচিত্রে বহাও এ এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন।

উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ

[সম্পাদনা]

সাঁতার কাটার স্থান

[সম্পাদনা]

খালের কিছু অংশকে সঠিকভাবে সাঁতার কাটার জন্য উপযোগী স্থানে রূপান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রকল্পটি নাগরিকদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত মানুষদের জন্য এটি একটি ভালো উদ্যোগ। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকার খালের পানির প্রবাহ কয়েক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখবে। এ সময় খালের তলদেশ পরিষ্কার করা হবে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে এর নকশা পরিবর্তন করা হবে। খালের বিভিন্ন স্থানে সিঁড়ি নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি খালের গভীরতা নির্দেশ করে সাইনবোর্ড বসানো হবে, যাতে শিশুদের নির্দিষ্ট স্থানে সাঁতার কাটতে বাধা দেওয়া যায়। এছাড়া, সাঁতার কাটার স্থানগুলোতে প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড, লাইফজ্যাকেট, চিকিৎসা দল, সাঁতারের সরঞ্জাম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা সরবরাহ করা হবে। সাঁতার জানে না এমন দর্শনার্থীদের জন্য খাবারের দোকান, বসার স্থান, এবং সবুজায়নের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা হবে।

সরকার আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, একই সঙ্গে দেশীয় সাংস্কৃতিক রীতিনীতি মাথায় রেখে, নির্দিষ্ট স্থানে এই সুবিধা প্রদান করবে। খালের গভীরতার ওপর নির্ভর করে এই সুবিধা নির্দিষ্ট এলাকায় স্থাপন করা হবে।

ফেরোজপুর রোডের কাছে তোলা লাহোর খালের একটি ছবি

এই পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেবে উদ্যান ও উদ্যানপালন কর্তৃপক্ষ, পর্যটন মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ ও নির্মাণ এবং সেচ বিভাগের মতো অন্যান্য সংস্থা পরে প্রস্তাবিত উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করবে। পিএইচএর মহাপরিচালক ড. রাহিল আহমদ সিদ্দিকী বলেন, “আমরা মানুষের জন্য একটি অত্যাধুনিক সুবিধা তৈরি করব। অনেক গাছ লাগানো হবে, যা শুধু জায়গাগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে না বরং এই ঐতিহাসিক শহরের পরিবেশগত অবস্থারও উন্নতি ঘটাবে।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Lahore – A Canal Runs Through It « TheSouthAsianIdea Weblog"। Thesouthasianidea। ২০১০-০১-২০। 
  2. "Leading News Resource of Pakistan"। Daily Times। ২০১০-০৭-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০২ 
  3. "Lahore Bachao Tehreek: Water park idea at Lahore canal"। ২০০৯-০৮-০২। 
  4. "Leading News Resource of Pakistan"। Daily Times। ২০০৯-১২-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০২ 
  5. Rumi, Raza (২০০৮-০৪-১৫)। "On Lahore's canal | Lahore Nama"। 
  6. presents Lahore Canal in Bloom
  7. "Lahore Canal Desilted"। Lahore Metblogs। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০২ 
  8. "DESILTING PLAN. ANNUAL CANAL CLOSURE 2019-20." (পিডিএফ)www.irrigation.punjab.gov.pk। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০২৪ 
  9. "Part of Lahore Canal to be swimming, picnic area » Overseas Pakistani Friends"। Opfblog.com। ২০১৬-১০-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০২ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]