র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তিব্বতির ১২ তম ধর্মগুরু

র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা (ওয়াইলি: rgyal dbang ’brug pa) বা 'ব্রুগ-ছেন (ওয়াইলি: 'brug chen) তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মসম্প্রদায় ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের 'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রধানের সাম্মানিক উপাধি। দ্বাদশ শতাব্দীর বৌদ্ধ পণ্ডিত গ্ত্সাং-পা-র্গ্যা-রাস-য়ে-র্দো-র্জে এই উপাধি প্রথম ধারণ করেন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠীর দর্শনের উৎপত্তি ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর মতোই তিলো পার মাধ্যমে হয়। তিলো পার থেকে তার শিক্ষা নারো পা, মার-পা-ছোস-ক্যি-ব্লো-গ্রোস, র্জে-ব্ত্সুন-মি-লা-রাস-পা, স্গাম-পো-পা-ব্সোদ-নাম্স-রিন-ছেন, রাস-ছুং-র্দো-র্জে-গ্রাগ্স-পা, ফাগ-মো-গ্রু-পা-র্দো-র্জে-র্গ্যাল-পোর মাধ্যমে এক দীর্ঘ সময় পরে গ্লিং-রাস-পা-পে-মা-র্দো-র্জে নিকটে পৌঁছয়। গ্লিং-রাস-পা-পে-মা-র্দো-র্জে প্রথম 'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রথম র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা উপাধিধারী গ্ত্সাং-পা-র্গ্যা-রাস-য়ে-র্দো-র্জের শিক্ষক ছিলেন। দ্বিতীয় র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা ও রালুং বৌদ্ধবিহারের ত্রয়োদশ প্রধান লামা কুন-দ্গা'-দ্পাল-'ব্যোর তার মৃত্যুর সময় কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারী না রেখে যাওয়ায় র্গ্যা পরিবারগোষ্ঠীর বাইরে গ্ত্সাং-পা-র্গ্যা-রাস-য়ে-র্দো-র্জের অবতাররূপে ব্যা পরিবারগোষ্ঠীর 'জাম-দ্ব্যাংস-ছোস-ক্যি-গ্রাগ্স-পাকে চিহ্নিত করা হয়।[১] ১৫২৩ খ্রিষ্টাব্দে 'জাম-দ্ব্যাংস-ছোস-ক্যি-গ্রাগ্স-পার মৃত্যু হলে কোংপো অঞ্চল থেকে কুন-ম্খ্যেন-পে-মা-দ্কার-পোকে পরবর্তী র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে কুন-দ্গা'-দ্পাল-'ব্যোরের পর তার ভ্রাতা নাং-সো-রিন-ছেন-ব্জাং-পোর (ওয়াইলি: nang so rin chen bzang po)[২] বংশ থেকে রালুং বৌদ্ধবিহারের প্রধান লামা নির্বাচন করা হয়। পরবর্তীকালে নাং-সো-রিন-ছেন-ব্জাং-পোর প্রপৌত্র মি-ফাম-ছোস-র্গ্যাল (ওয়াইলি: mi pham chos rgyal)[৩] রালুং বৌদ্ধবিহারের সপ্তদশ প্রধান লামা হিসেবে নির্বাচিত হন।

১৫৯২ খ্রিষ্টাব্দে কুন-ম্খ্যেন-পে-মা-দ্কার-পোর মৃত্যু হলে ছোংয়ে অঞ্চলের রাজপুত্রের পুত্র দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পো এবং রালুং বৌদ্ধবিহারের প্রধান লামা মি-ফাম-ছোস-র্গ্যালের পুত্র ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালের মধ্যে কে পরবর্তী অবতার সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। এই দ্বন্দ্বে তিব্বতের তৎকালীন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অধিকাংশ জড়িয়ে পড়েন। একদিকে যেমন কুন-ম্খ্যেন-পে-মা-দ্কার-পোর ঘনিষ্ঠ বৌদ্ধভিক্ষু ল্হা-র্ত্সে-বা-ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্জাং-পো (ওয়াইলি: lha rtse ba ngag dbang bzang po) এবং দ্রুক সাঙ্গাগ ছোলিং বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুরা দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পোকে সমর্থন করেন, অন্যদিকে র্গ্যা পরিবারগোষ্ঠীর রালুং বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুরা ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালকে পরবর্তী র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা হিসেবে নির্বাচন করেন। এই বিতর্ক নতুন মাত্রা নেয় যখন মধ্য তিব্বতের তৎকালীন শাসক গ্ত্সাং-পা রাজবংশের ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পোকে সমর্থন করেন। এই ঘটনায় 'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠী উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যাল হিমালয়ের দক্ষিণে এক নতুন রাজ্যের স্থাপন করেন, যা বর্তমানে ভুটান নামে পরিচিত। [৪][৫][৬][৭]

তালিকা[সম্পাদনা]

র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা নাম ওয়াইলি প্রতিলিপিকরণ জীবনকাল
প্রথম গ্ত্সাং-পা-র্গ্যা-রাস-য়ে-শেস-র্দো-র্জে[৮] gtsang pa rgya ras ye shes rdo rje ১১৬১ - ১২১১
দ্বিতীয় কুন-দ্গা'-দ্পাল-'ব্যোর[৯] kun dga’ dpal ’byor ১৪২৮ - ১৪৭৬
তৃতীয় 'জাম-দ্ব্যাংস-ছোস-ক্যি-গ্রাগ্স-পা[১] 'jam dbyangs chos kyi grags pa ১৪৭৮ - ১৫২৩
চতুর্থ কুন-ম্খ্যেন-পে-মা-দ্কার-পো kun mkhyen pe ma dkar po ১৫২৭ - ১৫৯২
পঞ্চম দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পো dpag bsam dbang po ১৫৯৩ - ১৬৪১
ষষ্ঠ মি-ফাম-দ্বাং-পো mi pham dbang po ১৬৪১ - ১৭১৭
সপ্তম 'ফ্রিন-লাস-শ্রিং-র্তা ’phrin las shing rta ১৭১৮ - ১৭৬৬
অষ্টম কুন-গ্জিগ্স-ছোস-ক্যি-স্নাং-বা kun gzigs chos kyi snang ba ১৭৬৮ - ১৮২২
নবম মি-'গ্যুর-দ্বাং-র্গ্যাল mi ’gyur dbang rgyal ১৮২৩ - ১৮৮৩
দশম মি-ফাম-ছোস-ক্যি-দ্বাং-পো mi pham chos kyi dbang po ১৮৮৪ - ১৯৩০
একাদশ ব্স্তান-'দ্জিন-ম্খ্যেন-রাব-দ্গে-লেগ্স-দ্বাং-পো bstan ’dzin mkhyen rab dge legs dbang po ১৯৩১ - ১৯৬০
দ্বাদশ 'জিগ্স-মেদ-পে-মা-দ্বাং-ছেন ’jigs med pe ma dbang chen ১৯৬৩ -

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Gardner, Alexander (2010-03)। "The Third Drukchen, Jamyang Chodrak"The Treasury of Lives: Biographies of Himalayan Religious Masters। সংগ্রহের তারিখ 2013-12-06  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. http://www.tbrc.org/#!rid=P4477
  3. http://www.tbrc.org/#!rid=P2629
  4. Sangay Dorji (২০০৮)। The Biography of Shabdrung Ngawang Namgyal: Pal Drukpa Rinpoche। Sonam Kinga (translator)। Thimphu, Bhutan: KMT Publications। আইএসবিএন 99936-22-40-0 
  5. Yoshiro Imaeda (২০১৩)। The Successors of Zhabdung Ngawang Namgyel। Thimphu: Riyang Books। পৃষ্ঠা 8–10। আইএসবিএন 978-99936-899-3-5 
  6. Yonten Dargye (২০০১)। History of the Drukpa Kagyud School in Bhutan (12th to 17th Century A.D.)। Thimphu, Bhutan। পৃষ্ঠা 119–123। আইএসবিএন 99936-616-0-0 
  7. Karma Phuntsho (২০১৩)। The History of Bhutan। Nodia: Random House India। পৃষ্ঠা 213–217। আইএসবিএন 9788184003116 
  8. Martin, Dan (2008-08)। "The First Drukchen, Tsangpa Gyare Yeshe Dorje"The Treasury of Lives: Biographies of Himalayan Religious Masters। সংগ্রহের তারিখ 2013-08-18  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  9. Gardner, Alexander (2010-03)। "The Second Drukchen, Kunga Peljor"The Treasury of Lives: Biographies of Himalayan Religious Masters। সংগ্রহের তারিখ 2013-12-06  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]