রোহিনী খাদিলকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রোহিনী খাদিলকার
রোহিনী খাদিলকার, লুজার্ন ১৯৮২
দেশভারত
জন্ম(১৯৬৩-০৪-০১)১ এপ্রিল ১৯৬৩
মুম্বই
খেতাবওম্যান ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার (১৯৮১)
ফিদে রেটিং২২১৫ [নিষ্ক্রিয়]
সর্বোচ্চ রেটিং২২২০ (জুলাই ১৯৮৭)[১]

রোহিনী খাদিলকার (জন্ম ১লা এপ্রিল ১৯৬৩ মুম্বাইয়ে) হলেন একজন দাবা খেলোয়াড়, যিনি ওম্যান ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার (ডব্লিউআইএম) খেতাবধারী। তিনি পাঁচবার ভারতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ এবং দুবার এশিয়ান মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন।[২] তিনিই প্রথম মহিলা দাবা খেলোয়াড় যিনি ১৯৮০ সালে অর্জুন পুরস্কার পেয়েছিলেন।

তিনি তিন খাদিলকার বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট, তিন বোনের নাম বাসন্তী, জয়শ্রী এবং রোহিনী - যাঁরা সবাই দাবাতে পারদর্শী। তাঁদের বাবা, নীলকান্ত খাদিলকর (১৯৩৪ - ২০১৯), মারাঠি ভাষার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক ছিলেন, মুম্বাইয়ের কাছাকাছি অবস্থানে তিনি কাজ করতেন। তিন বোনই তাঁর মৃত্যুর সময় তাঁর প্রতিষ্ঠা করা 'নব কাল' পত্রিকা চালাতে সাহায্য করছিলেন। সাহিত্যের সাথে পরিবারের যোগসূত্রটি মারাঠি নাট্যকার কৃষ্ণজি প্রভাকর খাদিলকরের (১৮৭২ - ১৯৪৮) থেকে শুরু হয়েছিল, যিনি বোনদের প্রপিতামহ ছিলেন।[৩]

দাবা খেলার জীবন[সম্পাদনা]

মহিলাদের প্রতিযোগিতা[সম্পাদনা]

রোহিনী ১৯৭৬ সালে ১৩ বছর বয়সে জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন এবং টানা তিন বার এই চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করা প্রথম মহিলা হয়েছিলেন। তিনি পাঁচবার এই শিরোপা জয় করেছেন:

১৯৮১ সালে, হায়দ্রাবাদে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলে খাদিলকার এশিয়ান মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন। তিনি সেই প্রতিযোগিতায় অপরাজিত ছিলেন এবং সম্ভাব্য ১২ পয়েন্টের মধ্যে ১১.৫ স্কোর করেছিলেন। একই বছরে, তিনি একজন মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার হন এবং ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলে তিনি আবার এশিয়ান মহিলাদের শিরোপা জিতেছিলেন।

পুরুষদের প্রতিযোগিতা[সম্পাদনা]

খাদিলকার ১৯৭৬ সালে অংশগ্রহণ করার সময় ভারতীয় পুরুষদের চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রথম মহিলা হয়েছিলেন। একটি পুরুষ প্রতিযোগিতায় তাঁর অংশগ্রহণের ফলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যার ফলে উচ্চ আদালতে একটি আবেদনের প্রয়োজন হয়। এরপর বিশ্ব দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ম্যাক্স ইউওয়েকে এই রায় দেন যে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাদ মহিলাদের দেওয়া যাবে না। প্রতিযোগিতায় তিনি তিন রাজ্য চ্যাম্পিয়ন - গুজরাটের গৌরাঙ্গ মেহতা, মহারাষ্ট্রের আবদুল জব্বার এবং পশ্চিমবঙ্গের এ কে ঘোষ -কে পরাজিত করেছিলেন।[৪]

অন্যান্য প্রতিযোগিতা[সম্পাদনা]

১৯৮০ দাবা অলিম্পিয়াড, ভাল্লেত্তাতে খালদিকার বোনেরা

রোহিনী বুয়েনস আইরেসে (১৯৭৮), ভাল্লেত্তা (১৯৮০), লুসার্ন (১৯৮২), থেসালোনিকি (১৯৮৪), এবং দুবাই (১৯৮৬) দাবা অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেন।

রোহিনী দুবাই এবং মালয়েশিয়ায় দুবার জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন এবং বিশ্বের ৮ নম্বর খেলোয়াড় হয়েছেন। ১৯৮৯ সালে লন্ডনে দাবা কম্পিউটারকে হারানো প্রথম এশিয়ান খেলোয়াড় ছিলেন তিনি।[৫]

একটি অনুষ্ঠানে, তিনি একসাথে ১১৩ প্রতিপক্ষের সাথে খেলেছেন, ১১১টি গেম জিতেছেন এবং দুটি ড্র করেছেন।[৪]

দাবা দূত[সম্পাদনা]

রোহিণী ৫৬ বার ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, বহু দেশ সফর করেছেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানে, তাঁকে দাবা দূত হিসেবে ভারত সরকারের তরফ থেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর সফরের মধ্যে পোল্যান্ড, ইউএসএসআর এবং যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন কমিউনিস্ট দেশগুলিতে ভ্রমণ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেগুলিতে যেতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উৎসাহিত করেছিলেন।

সংবাদপত্রের জীবন[সম্পাদনা]

১৯৯৩ সালে, রোহিণী দাবা থেকে অবসর নেন এবং প্রিন্টিং টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন। তিনি নিজের শ্রেণীতে স্বর্ণপদক অর্জন করেন, এবং আগফা-গেভার্ট তাঁকে প্রিন্টিংয়ে ডিপ্লোমা দেয়।[৫]

রোহিণী মহারাষ্ট্রের একটি সান্ধ্য সংবাদপত্রের প্রথম মহিলা সম্পাদক হন। তিনি নবকালের সহকারী সম্পাদক এবং ১৯৯৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে সন্ধ্যাকালের সম্পাদক ছিলেন।

স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

১৯৭৭ সালে, রোহিনী দাবাতে অসাধারণ প্রদর্শনের জন্য ছত্রপতি পুরস্কার জিতেছিলেন। পরবর্তীকালে, তিনি ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান, অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। দাবা খেলার জন্য তাঁকে মহারাষ্ট্র কন্যাও ঘোষণা করা হয়েছে।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Khadilkar, Rohini FIDE rating history, 1979-2001 at OlimpBase.org
  2. Menon, Ajay (৩ জুন ২০১২)। "Anand's win fires former chess whiz from Girgaon"Hindustan TimesMumbai। ৮ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১৪ 
  3. "Senior journalist Nilkanth Khadilkar dies at 86"। ২২ নভেম্বর ২০১৯। 
  4. "Rohini Khadilkar"prabook.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০১ 
  5. "Cornered Sports: At The Age Of 13, This Indian Was The First Female In The World To Compete In The Men's Chess Championship"Cornered Zone (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-০৬ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]