রামমোহন লাইব্রেরি

স্থানাঙ্ক: ২২°৩৪′৫৪″ উত্তর ৮৮°২২′২৯″ পূর্ব / ২২.৫৮১৮° উত্তর ৮৮.৩৭৪৬° পূর্ব / 22.5818; 88.3746
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রামমোহন লাইব্রেরি
দেশভারত
ধরনটাউন- সর্বসাধারণ
প্রতিষ্ঠিত২৮ ডিসেম্বর ১৯০৪; ১১৯ বছর আগে (1904-12-28)
অবস্থান২৬৭,আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোড কলকাতা ৭০০ ০০৯
স্থানাঙ্ক২২°৩৪′৫৪″ উত্তর ৮৮°২২′২৯″ পূর্ব / ২২.৫৮১৮° উত্তর ৮৮.৩৭৪৬° পূর্ব / 22.5818; 88.3746
শাখাসমূহ
সংগ্রহ
আকার৬৪,১৮৪ (৩১ মার্চ ২০১০)
ওয়েবসাইটhttp://rammohunlibrarykolkata.org/
মানচিত্র
মানচিত্র

রামমোহন লাইব্রেরি পুরো নাম রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুম কলকাতা মহানগরীর শতাব্দী প্রাচীন গ্রন্থাগারগুলির অন্যতম। বর্তমানে এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার পোষিত টাউন লাইব্রেরি। রাজা রামমোহন রায় দেশের মানুষের জ্ঞানার্জনে ও উন্নতিসাধনে যুক্তি ও জ্ঞানের মশাল প্রজ্জ্বলন করতে চেয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। একসময় এই গ্রন্থাগারের সদস্য ছিলেন বাংলার নবজাগরণের পুরোধারা। নানা সময়ে রামমোহন লাইব্রেরি হয়ে উঠেছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং ভারতীয় শিক্ষিত শ্রেণির জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সমাজচর্চার পীঠস্থান৷

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর সিটি কলেজ হলে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক সভায় দেশের মহান সংস্কারকের নামে প্রথম একটি স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নেওয়া হয়। [১]পরবর্তীতে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সুইডেনের কার্ল এরিখ হ্যামারগ্রেন ব্রাহ্ম সমাজ ও রামমোহন রায়ের উপর গবেষণা করতে ভারতে এসে রামমোহন রায়ের স্মরণে একটি গ্রন্থাগার স্থাপনে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুলাই তার প্রয়াণে সেসময়ে সম্ভব হয়নি। তার পারলৌকিক ক্রিয়ার সময় রাজাবাজারের চিকিৎসক ডা মোহিনী মোহন বসু হ্যামারগ্রেনের পরিকল্পিত রামমোহন লাইব্রেরির জন্য একশত টাকা দান করেন।[২]দীর্ঘ সময়ের পর ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর নবীন চন্দ্র বিদ্যারত্ন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় গ্রন্থাগার স্থাপনা চূড়ান্তভাবে রচিত হয়। শেষে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি ১০১, আপার সার্কুলার রোড (বর্তমানে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোডের) এক ভাড়া বাড়িতে রামমোহন লাইব্রেরি কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে তৎকালীন বোম্বাই শহরের গোবর্ধন দাস ও দামোদর দাস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মারফত পাঁচ হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সার্বজনিক করার শর্ত দিলে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ই জুন গ্রন্থাগারের নাম পরিবর্তন করে রামমোহন গ্রন্থাগার ও ফ্রি রিডিং রুম নাম রাখা হয় এবং সেই বছরের ১৫ আগস্ট গ্রন্থাগারটি ১৮৬০ সালের ২১ আইনের অধীনে নিবন্ধিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের আবেদনক্রমে কলকাতা পুরসভা ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন আপার সার্কুলার রোড (বর্তমানে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড) এবং সুকিয়া রোড়ের সংযোগস্থলে ছয় কাটা পরিমাণ জমি প্রদান করে। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ মে বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চাঁদ মহতাব ভবনের শিলান্যাস করেন। লর্ড কারমাইকেল, বিজয় চাঁদ মহতাব, বামরার রাজা শ্রী ত্রিভুবন দেও, রাজা ঋষিকেশ লাহা, প্রফুল্লনাথ ঠাকুর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, শ্রী পৃথিবী নাথ দেও, মহারাজা মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দী প্রমুখের আর্থিক সহায়তায় এবং খ্যাতনাম স্থপতি স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জির তত্ত্বাবধানে মার্টিন কোম্পানি চারতলার গ্রন্থাগার ভবনটি নির্মিত হয় এবং ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর ভবনটির দ্বারোঘাটন হয়। বর্তমানে ভবনটি কলকাতা শহরের হেরিটেজ তালিকাভুক্ত। [১]

কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরির প্রবেশদ্বার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণীসহ

পাঠাগারটির ঐতিহ্য[সম্পাদনা]

রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতি চিরস্থায়ী করা ছাড়াও, বিভিন্ন শাখার সুস্থ সাহিত্য অধ্যয়নের সুযোগ-সুবিধা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সমাজের উন্নতি সাধনের জন্য আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকে গ্রন্থাগারটি। [১] শতাব্দী প্রাচীন গ্রন্থাগারটির সংগ্রহে রয়েছে বাংলার নবজাগরণের দুষ্প্রাপ্য নথি, রাজা রামমোহনের ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী, পুঁথি, বই ও দলিল। নীল চাষ মামলার কাগজপত্র, সুইডেনের সংবিধানের প্রথম খণ্ডের ছাপানো অনেক নথি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাণ্ডুলিপিও রয়েছে লাইব্রেরিতে। ভগিনী নিবেদিতা তার সংগ্রহের বহু গ্রন্থ লাইব্রেরিতে দান করেছেন এবং ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের শুরু থেকেই ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিলেন লাইব্রেরির সহ-সভাপতি। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তির পর কলকাতা শহরে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি কবিকে প্রথম নাগরিক সম্বর্ধনা প্রদান করা হয় লাইব্রেরির প্রেক্ষাগৃহে।[৩]কবি গীতাঞ্জলি হতে 'রাত্রি যখন আঁধার হলো’ কবিতাটি পাঠ করে শোনান সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের অনুরোধে। কবি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিলেন সহ-সভাপতি এবং তিনি ২২ টি সভায় উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গ্রন্থাগারের সভাপতি ছিলেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ইওরোপ ফেরত আচার্য জগদীশ বসু উদ্ভিদের প্রাণ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটিও মাতৃভাষায় এই প্রেক্ষাগৃহেই পাঠ করেছিলেন৷ দীর্ঘদিন সহ-সভাপতি পদে ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ও[৪] ভারতের প্রথম কেমিস্ট চুনীলাল বসুর আবিষ্কার থেকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বেঙ্গল কেমিক্যাল তৈরির উদ্দেশ্য কী এবং কেন, তা-ও আলোচিত হয়েছিল এই গ্রন্থাগারেই৷ আবার স্বাধীনতা সংগ্রাম বা জাতীয়তাবাদী ক্রিয়াকলাপও বুদ্ধিজীবী মহলে মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে এই গ্রন্থাগারে। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের এক আলোচনা সভায় ভারতীয় মহিলাদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন ইউরোপীয় শিক্ষাবিদ মিসেস রট বোর্ণ। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ পত্র পাঠান। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায পাল্টা প্রতিবাদ সভা করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিবাদ পত্র ও সভার সিদ্ধান্তে অন্যান্যদের মতামত পাঠান হয় ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলের কাছে।[৫]

২০২১ খ্রিস্টাব্দের ২২ মে হতে বর্ষব্যাপী রাজা রামমোহন রায়ের সার্ধদ্বিশত জন্মজয়ন্তী উদযাপন করে।[১]

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের প্রায় ১৭৫০ টি ৭৮ আরএমপি’র লং প্লেয়িং রেকর্ড লাইব্রেরির সংগ্রহে আছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য রেকর্ড গুলি হল- কবিগুরুর স্বকণ্ঠে - ‘তবু মনে রেখ’ গান, ‘আমি যখন বাবার মত হব’ কবিতা, কবি নজরুলের রেকর্ড ‘রবি হারা’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নিজের গলাত গাওয়া গান ও আবৃত্তি, সরোজিনী নাইডুর ইংরেজি গান ইত্যাদি। লাইব্রেরিতে সংগৃহীত এরকম বহু দুর্লভ রেকর্ড সংগ্রহ পরম্পরা চর্চা ও গবেষণা সহায়ক। [৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]