রামদাস সেন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রামদাস সেন
রামদাস সেন
জন্ম(১৮৪৫-১২-১০)১০ ডিসেম্বর ১৮৪৫
বহরমপুর মুর্শিদাবাদ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ)ভারত
মৃত্যু১৯ আগস্ট ১৮৮৭(1887-08-19) (বয়স ৪১)
হাট-বোয়ালিয়া গ্রাম, নদীয়া
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
দাম্পত্যসঙ্গীদুর্গাতারিণী সেন (বি.১৮৬০ মৃ. ১৮৬৪)
বিদ্যুল্লতা সেন
সন্তানমণিমোহন সেন
হিরন্ময় সেন
বোধিসত্ত্ব সেন

রামদাস সেন (১০ ডিসেম্বর ১৮৪৫ - ১৯ আগস্ট ১৮৮৭) ছিলেন ঊনবিংশ শতকের একজন বাঙালি লেখক প্রাবন্ধিক ও ভারততত্ত্ববিদ যিনি পুরাতত্ত্ব বিষয়ক রচনার জন্য প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। [১] ভারতবিদ্যাচর্চায় তিনি রাজেন্দ্রলাল মিত্রের উত্তরসূরি ছিলেন।[২] ইতালির ওরিয়েন্টাল (ফ্লোরেনটিনো) অ্যাকাডেমি তাকে "ডক্টর" উপাধিতে ভূষিত করে।[৩]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

রামদাস সেনের জন্ম ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর (১২৫২ বঙ্গাব্দের ২৬ অগ্রহায়ণ) ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে। পিতা লালমোহন সেন এবং মাতা লক্ষ্মীমণি দেবী। কিন্তু তিন বৎসর বয়সেই তার পিতার মৃত্যু হয়। শৈশবেই পিতৃহীন হওয়ায় মূলত মাতাই তার প্রতিপালন করেন। সংস্কৃতের বিভিন্ন বিষয়সহ তার পড়াশোনা প্রধানত বাড়িতেই, গৌরসুন্দর মাষ্টার, বেণী সরকার, বিচারপতি দ্বারকানাথ মিত্রের জীবনীকার দীনবন্ধু সান্যাল ও ভোলানাথ পালের কাছে। তবে কিছুদিন বহরমপুর কলেজে শিক্ষালাভ করেন। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখিতে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। সাহিত্য-উৎসাহী তরুণ রামদাস তের-চোদ্দ বৎসর বয়সেই সাহিত্যক্ষেত্রে আসেন কবিতা নিয়েই। কতকগুলি ফুল সম্বন্ধে কবিতা রচনা করে তৎকালীন 'প্রভাকর' সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন। পরে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে এগুলিই কুসুমমালা নামে এক পুস্তকে সন্নিবেশিত হয়। মাইকেল মধুসূদনের অনুকরণে সনেট তথা চতুর্দ্দশপদী কবিতা রচনায় প্রয়াসী হয়েছিলেন। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুতেই প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ- বিলাপতরঙ্গ। পরমার্থ বিষ্ণুতত্ত্ব বিষয়ে কিছু সঙ্গীত রচনা করেন। তবে পুরাতত্ত্ব বিষয়ক রচনার জন্য তার খ্যাতি হয়েছিল। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তার অন্যতম বন্ধু। তার অনুপ্রেরণায় ও আহ্বানে তিনি বঙ্গদর্শন পত্রিকা গোষ্ঠীতে যোগ দেন এবং পুরাতত্ত্ব বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করতে থাকেন। এবিষয়ে তাকে অনেকেই রাজেন্দ্রলাল মিত্রের উত্তরসূরি হিসাবে আখ্যা দেন। বঙ্গদর্শন ছাড়াও নবজীবন, নব্যভারত, চারুবার্তা, এন্টিকোয়ারি প্রভৃতি পত্রিকায় এবিষয়ে বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

তার রচিত গ্রন্থসমূহ হল -

  • কুসুমমালা (১৮৬১)
  • বিলাপ-তরঙ্গ (১৮৬৪)
  • চতুর্দ্দশপদী কবিতামালা
  • কবিতালহরী (১৮৬৭)
  • তত্ত্বসঙ্গীতলহরী
  • বুদ্ধদর্শন
  • মহাকবি কালিদাস (১৮৭২)
  • ভারতবর্ষের পুরাতত্ত্ব সমালোচনা (১৮৭২)
  • ঐতিহাসিক রহস্য (প্রথম ভাগ) (১৮৭৪)
  • ঐতিহাসিক রহস্য (দ্বিতীয় ভাগ) (১৮৭৬)
  • ঐতিহাসিক রহস্য (তৃতীয় ভাগ) (১৮৭৯)
  • রত্নরহস্য (১৮৮৪)
  • ভারতরহস্য (১৮৮৫)

রামদাস সেনের মৃত্যুর পর তার পুত্রেরা (মণিমোহন, হিরন্ময় ও বোধিসত্ত্ব) পিতার রচনাসমূহ দুটি খণ্ডে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেন। রামদাস গ্রন্থাবলীর প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এবং দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশিত হয় ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে।

রামদাস সেন এশিয়াটিক সোসাইটি, এগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, সংস্কৃত টেক্সট সোসাইটি অফ লন্ডন, ওরিয়েন্টাল কংগ্রেস ও ফ্লোরেন্সের অ্যাকাডেমিয়া ওরিয়েন্টাল প্রভৃতির সভ্য ছিলেন। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ইটালি প্রভৃতি ইউরোপের দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি জীবৎকালে বহরমপুর কলেজের অন্যতম ট্রাস্টি ছিলেন।[৩]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

পুরাতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণার জন্য ইতালির ফ্লোরেন্সের অ্যাকাডেমিয়া ওরিয়েন্টাল তাকে ডক্টর উপাধি প্রদান করে। [৩]


জীবনাবসান[সম্পাদনা]

রামদাস সেন ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট (১২৯৪ বঙ্গাব্দের ৩ ভাদ্র) শুক্রবার নদিয়া জেলার হাট-বোয়লিয়া গ্রামে অপেলেক্সি তথা সন্ন্যাসরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন। তার মৃত্যুর পর তার স্মৃতিতে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট বহরমপুর কলেজের উত্তর-পশ্চিম কোণের মাঠে, গঙ্গার ধারে, তার এক প্রতিমূৰ্ত্তি স্থাপিত হয়। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে রামদাস সেনের জীবনীর উপর এক গবেষণাধর্মী গ্রন্থ- রামদাস সেন সময় জীবনী সাহিত্য শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১৯৩। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  2. গৌরী ঘোষ (২০১৬)। রামদাস সেন সময় জীবন ও সাহিত্য। সোপন। আইএসবিএন 978-93-8243-361-3 
  3. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৬৬১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬