যৌগিক অভিঘাত খাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অভিঘাত খাদ কাঠামো
চন্দ্র খাদ টাইকো

যৌগিক অভিঘাত খাদ হল এক ধরনের বৃহদাকার অভিঘাত খাদ এর অঙ্গসংস্থান।

গ্রহিক মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা পরিবর্তিত একটি নির্দিষ্ট অবম আকার ,অস্থায়ী গর্তের ব্যাপক ধস এবং রূপান্তরের ফলে পরিণত অবয়বটিকে বলা হয় যৌগিক অভিঘাত খাদ। অস্থায়ী খাদের ধস মাধ্যাকর্ষণের দ্বারা তরান্বিত হয় এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলের উত্তোলন এবং পরিধি প্রান্তের আভ্যন্তরীণ পতন উভয়কেই নিযুক্ত করে।

কেন্দ্রীয় উত্তোলন টি স্থিতিস্থাপক প্রতিক্ষেপনের ফলে ঘটে না যেটি একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি স্থিতিস্থাপক শক্তি সম্পন্ন উপাদান পুনরায় তার পূর্বের আকৃতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করে। বরং উত্তোলন একটি প্রক্রিয়া যাতে একটি স্বল্প শক্তিযুক্ত কিংবা শক্তিহীন উপাদান একটি মাধ্যাকর্ষীয় সাম্যাবস্থায় ফিরে আসার চেষ্টা করে।

যৌগিক খাদগুলোর রয়েছে উত্তোলিত কেন্দ্র এবং তাদের সাধারণত বিস্তৃত সমতল অগভীর গর্তের তল এবং ছাদযুক্ত দেয়াল। বৃহত্তম আকারে, সেখানে এক বা একাধিক বহির্মুখী বা অভ্যন্তরীণ বলয় দৃশ্যমান হতে পারে এবং তখন ওই কাঠামোটিকে অভিঘাত খাদের পরিবর্তে অভিঘাত বেসিন হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। সাধারণত পাথুরে গ্রহসমূহকে যৌগিক খাদের অঙ্গসংস্থান ক্রমবর্ধিত আকারের সাথে একটি নিয়মিত অনুক্রম অনুসরণ করতে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় টপোগ্রাফিক শিখরযুক্ত ছোট জটিল খাদকে কেন্দ্রীয়-শীর্ষ-শিখর বলা হয়, উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে টাইকো ;যা একটি মাঝারি আকারের গর্ত, যেখানে কেন্দ্রীয় চূড়াটি শিখরের বলয় দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে থাকে, আর এটিই শীর্ষ বলয় খাদ নামে পরিচিত , উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে শ্রোডিনজার আর বৃহত্তম খাদে একাধিক কেন্দ্রীভূত টপোগ্রাফিক বলয় থাকে এবং এগুলিকে বহু-বলয় যুক্ত বেসিন বলা হয়ে থাকে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ওরিয়েন্টাল । পাথুরে দেহের বিপরীতে বরফের উপরে, অন্যান্য গঠনসমূহ প্রদর্শিত হয় যেগুলোতে কেন্দ্রীয় শিখরের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় পিট থাকতে পারে, এবং বৃহৎ আকারের অনেকগুলো ঘনকীয় বলয় থাকতে পারে । কলিস্টোর ভালহাল্লা হ'ল এর একটি উদাহরণ।

সাধারণত যৌগিক খাদগুলোকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। যথাঃ কেন্দ্রীয় শীর্ষ এবং শীর্ষ-বলয় খাদ । শীর্ষ-বলয় খাদসমূহের ব্যাসার্ধ কেন্দ্রুহ-শীর্ষ খাদের তুলনায় অপেক্ষাক বড়। উত্থিত স্তূপ পর্বত সমূহের একটি বলয় থাকে যেগুলো কেন্দ্রীয় শীর্ষের পরিবর্তে প্রায় রিম-টু-রিম ব্যাসের অর্ধেক হয়ে থাকে। [১]

কেন্দ্রীয়-শীর্ষ খাদ[সম্পাদনা]

এডি ক্র্যাটার, মঙ্গল গ্রহের একটি কেন্দ্রীয় শীর্ষ-বলয় খাদ

কেন্দ্রীয়-শীর্ষ খাদ হল যৌগিক খাদের সর্বাধিক প্রাথমিক রূপ।

একটি কেন্দ্রীয়-শীর্ষ খাদে আঁটসাঁটো,বলয়ের মতো বিন্যস্ত শিখর থাকতে পারে, এইভাবে একটি শিখর প্রায়শই একক থাকলেও সেটি শিখর বলয় খাদ হতে পারে। [২]

কেন্দ্রীয়-শীর্ষ খাদগুলো উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সাংঘর্ষিক খাদ এ পরিণত হতে পারে। এর একটি বাস্তব উদাহরণ হল কানাডার মিস্টাস্টিন খাদ । [১] ভ্যালস ক্যালডেরার অনুরূপ এগুলোও ঘটে থাকে আগ্নেয়গিরির ফলে । [৩]

অনেক কেন্দ্রীয়-শিখর গর্তে রয়েছে পরিধি প্রান্ত যেগুলো দেখতে শামুকের ন্যায়, রয়েছে আভ্যন্তরীণ পাকা দেয়াল, এবং টিলা সদৃশ মেঝে। [৪]

কখন কেন্দ্রীয় শিখর গঠিত হয়[সম্পাদনা]

খাদগুলোর জটিল বৈশিষ্ট্য সৃষ্টিকারী ব্যাসসমূহ যে আকাশজাত মহাকর্ষের শক্তির উপর নির্ভর করে তার কারণেই ঘটে থাকে। চাঁদের তুলনায় পৃথিবীর ন্যায় শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ ,ছোট ব্যাসের খাদসমূহে রিম ধসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জটিল খাদগুলো পৃথিবীতে ২ কিলোমিটার (১.২ মা) থেকে শুরু করে ৪ কিলোমিটার (২.৫ মা) পর্যন্ত হতে পারে , তবে চাঁদে তা ২০ কিলোমিটার (১২ মা) থেকে শুরু হয়।[৫][৬]

যদি চন্দ্রের খাদগুলোর ব্যাস প্রায় ২০ কিলোমিটার (১২ মা) থেকে ১৭৫ কিলোমিটার (১০৯ মা) হয়, তবে কেন্দ্রীয় শিখরটি সাধারণত একক শিখর বা ছোট ছোট শীর্ষের হয়ে থাকে। ১৭৫ কিলোমিটার (১০৯ মা) অপেক্ষা বেশি ব্যাসসম্পন্ন চন্দ্র খণ্ডগুলোতে যৌগিক , বলয়-আকারের উত্তোলন বিদ্যমান থাকতে পারে। যদি সংঘর্ষের বৈশিষ্ট্য এর ব্যাসের ৩০০ কিলোমিটার (১৯০ মা) অতিক্রম করে তখন এগুলোকে খাদের পরিবর্তে ইমপ্যাক্ট বেসিন বলা হয়ে থাকে।[৭]

৩৫ কিলোমিটার (২২ মা) হতে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার (১১০ মা) ব্যাসযুক্ত চন্দ্র খাদগুলো প্রতিটিই কেন্দ্রীয় শিখর অধিকারী।[২]

কেন্দ্রীয় শিখর খাদের গঠন সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। প্রচলিত খাদসমূহের মধ্যে পৃথিবী, পৃথিবীর চাঁদ, মঙ্গলবুধ গ্রহের খাদ অন্যতম।[৮][৯]

খাদের ব্যাসের তুলনায় কেন্দ্রীয় শীর্ষের উচ্চতা[সম্পাদনা]

পৃথিবীর চাঁদে, কেন্দ্রীয় শিখরের উচ্চতা খাদগুলোর ব্যাসের সাথে সরাসরি সমানুপাতিক, যা শিখরের উচ্চতাকে খাদ গঠনের শক্তির সাথে পরিবর্তিত হওয়াকে সূচিত করে। [২] পৃথিবীর উল্কাপিণ্ড জনিত খাদ, এবং টিএনটি খাদগুলোর সাথে রয়েছে অনুরূপ সম্পর্ক যার উত্থান হয়েছিল প্রতিক্ষেপ থেকেই।[১০]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Science Concept 6: The Moon is an Accessible Laboratory for Studying the Impact Process on Planetary Scales" 
  2. Bray, Veronica J. (নভেম্বর ২০, ২০১৫)। "Central Peak Crater"। Encyclopedia of Planetary Landforms। পৃষ্ঠা 249–256। আইএসবিএন 978-1-4614-3133-6ডিওআই:10.1007/978-1-4614-3134-3_37 
  3. "Valles Caldra, Jemez Volcanic Field" 
  4. Bray, Veronica J (জানুয়ারি ১, ২০১৪)। "Central peak crater"researchgate.net 
  5. "Traces of Catastrophe"www.lpi.usra.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-৩০ 
  6. Bevan M French (১৯৯৮)। Traces of catastrophe: A handbook of shock-metamorphic effects in terrestrial meteorite impact structures (English ভাষায়)। Library Genesis। Lunar and Planetary Institute। 
  7. Millham, Rosemary। "Mapping The Surface of the Moon" (পিডিএফ) 
  8. Allen, Carlton C. (১৯৭৫-০৪-০১)। "Central peaks in lunar craters"The moon (ইংরেজি ভাষায়)। 12 (4): 463–474। আইএসএসএন 1573-0794ডিওআই:10.1007/BF00577935 
  9. Hodges, Carroll Ann (১৯৯২)। "Atlas of Volcanic Landforms on Mars" (পিডিএফ)pubs.usgs.gov 
  10. Wood, Charles A. (জুলাই ২৪, ১৯৭৩)। "Moon: Central peak heights and crater origins"sciencedirect