মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরি
জন্ম১৯৫৩ (বয়স ৭০–৭১)[১]

মুহাম্মাদ রবি' আল-জাওয়াহিরি (জন্ম: ১৯৫৩)[১] হচ্ছেন একজন মিসরীয় ইসলামপন্থী, যিনি মিসরীয় ইসলামি জিহাদের সদস্য। এছাড়া সিআইএ ২০০১ সালে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সময় তাকে extraordinary rendition হিসেবে চৌদ্দজনের একজন হিসেবে চিহ্নিত করে। [৩] তিনি আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির ছোট ভাই।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

১৯৭৪ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশলে স্নাতক করেন।[১][৪] এরপর আল-জাওয়াহিরি সৌদি আরব গমন করেন এবং একটি নির্মাণ সংস্থার সাথে কাজ শুরু করেন।[৪]

১৯৮১ সালে তিনি সৌদি আরবে অবস্থাকালে অনুপস্থিতির কারণে তাকে আনোয়ার সাদাতের গুপ্তহত্যায় অভিযুক্ত করা হয়। যখন তার ভাই তাকে মুস্তফা কামাল মুস্তফা এবং আব্দুল হাদি আল-তুনসির সাথে যুক্ত হতে প্রভাবিত করেন।[৫] কিন্তু, এই অভিযোগে তিনি কোন অপরাধবোধ করেননি।[৪][৫] তিনি ওয়ার্ল্ড ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত হন। এবং ইন্দোনেশিয়া, বসনিয়া এবং মালয়েশিয়ায় ভ্রমণ করেন। এসব অঞ্চলে স্কুল এবং মেডিকেল ক্লিনিক তৈরিতে সাহায্য করেন।[৪]

আল-জাওয়াহিরি বিবাহিত, তার ছয়টি সন্তানও রয়েছে। যাইহোক, এরপর আল-জাওয়াহিরি তার পরিবারসহ ইয়েমেন চলে যান। সেখান থেকে তিনি তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আয়মানের সাথে খার্তুমে যুক্ত হন। সেখানে মিসরীয় ইসলামি জিহাদের কাজ সমবেতভাবে শুরু হয়। কিন্তু কিশোর বালক আহমাদ সালামা মাবরুকের ফাঁসির পর দলটি এখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। আয়মান আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তান চলে যান আর মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরি স্বীয় পরিবারসহ ইয়েমেনে ফিরে আসেন এবং পুনরায় নির্মাণকুশলদের সাথে কাজ শুরু করেন।[৪]

গ্রেফতার[সম্পাদনা]

আল-জাওয়াহিরির ইয়েমেনীয় ঠিকাদার তাকে বারবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্রমণ করতে দেখেন। কিন্তু অনুপস্থিতির সাথে আলবেনিয়া থেকে ফেরত আইন তাকে দোষী প্রমাণ করে দেয়। তিনি ১৯৯৯ সালের মার্চ অথবা এপ্রিলে গ্রেফতার হন। এবং আরব আমিরাত তাকে কায়রোর কাছে সমর্পণ করেন।[৪][৬] এসময় তিনি খালেদ আব্দুস সামীর সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন।[৫]

তার স্ত্রী ইয়েমেনের সানাস্থিত মিসর দূতাবাসের সাথে অক্টোবর পর্যন্ত যোগাযোগ করেননি। এবং তারা তার গ্রেফতারি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। আল-জাওয়াহিরির স্ত্রীকে সন্তানসমেত কায়রো ফেরতের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে তাদেরকে তিনদিন আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।[৪]

১৯৯৯ সালের শেষদিকে আল-জাওয়াহিরির ছোটভাই হুসাইনকে সিআইএ, মিসরীয় এবং মালয়েশিয়ান গোয়েন্দাসংস্থার যৌথ অভিযানে তার কর্মক্ষেত্র থেকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি মালয়েশিয়ান নির্মাতা কোম্পানি মাল্টিডিস্কোভারিতে কাজ করতেন।[৪]

বন্দী জীবন[সম্পাদনা]

কয়েক বছর আল-জাওয়াহিরি এবং তার পরিবারের ব্যাপারে কোন সংবাদ বের হয়নি। ধারণা করা হয়েছিলো, তাকে বিচারের দণ্ড অনুযায়ী ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ২০০১ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানে একটি গুহায় পাওয়া একটি মৃতদেহ তার ভাইয়ের কিনা সেটা যাচাই করতে তার ডিএনএর নমুনার জন্য অনুরোধ করে।[৪]

২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আল-শারকুল আওসাত সংবাদপত্র ঘোষণা করে, "তারা নির্ভরযোগ্য সংবাদ পেয়েছে আল-জাওয়াহিরি জীবিত এবং তোরা কারাগারে বন্দী আছেন।" এই সংবাদটি ঐ মাসেই মিসরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সত্য হিসেবে নিশ্চিত করেন। তিনি এটাও বলেন, "তার পরিবার মার্চে তাকে দেখতে যেতে পারেন।"[৪] এটা বলা হয়ে থাকে, মিসরের গোয়েন্দা সংস্থা মুখাবারাতের মাধ্যমে তিনি প্রহৃত এবং নির্যাতিত হন। মিসর ঘোষণা করে, তারা তার মোকদ্দমা দেখাশুনা করার জন্য নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে।[৪]

২০০৬ সালের জুলাইয়ে আইনজীবী মামদুহ ইসমাইল শরিফ হাযা (شريف هزاع Šarīf Hazāʿ) উপনামধারী এক ব্যক্তির ব্যাপারে প্রতিবেদন পেশ করেন। যাকে তিনি আল-জাওয়াহিরির সহযোগী আবু আইয়ুব আল-মাসরি মনে করেন।[৭][৮] আল-মাসরির ব্যাপারে অন্যান্য তথ্য ইসমাইলের মূল্যায়নের সাথে মিলে না। হয়তঃ "হাযা" মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরিই (অথবা আলবেনিয়া ফেরত আইনে বন্দীদের মধ্য হতে অন্য কেউ।)

২০০৭ সালের এপ্রিলে আল-জাওয়াহিরি এবং অন্যান্য ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে তাদের পূর্বের চিন্তাধারা সংশোধন করার উপর ভিত্তি করে তাদের দণ্ড লঘু করার জন্য আবেদন করেন। আইনজীবী মুনতাসির আল-যায়াত আদালতে তার পক্ষে উকালতি করেন।[৬]

মুক্তি[সম্পাদনা]

২০১১ সালের মার্চে তিনি মিসরে জেল হতে মুক্তিলাভ করেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক আবার গ্রেফতার হয়ে যান।[৯] এরপর তিনি পুনরায় একটি সামরিক আদালতে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ থেকে খালাসী চান। এবং ২০১২ সালের মার্চে মুক্তিলাভ করেন।[১০]

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরি ইসলামপন্থী এবং পাশ্চাত্যের মাঝে ১০ বছরকালের জন্য শান্তিচুক্তির আহ্বান জানান। যার শর্তাবলী ছিল- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বীয় ভূমিতে ফিরে যাবে, পশ্চিমা দেশগুলো মুসলিম ভূমির সমস্যাগুলোর মধ্যে হস্তক্ষেপ করবে না, ইসলামি শিক্ষা এবং মুসলিম শিক্ষার মধ্যে বাঁধা সৃষ্টি করবে না, 'ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধ' বন্ধ করবে এবং সকল ইসলামপন্থী বন্দীদের মুক্তি দিবে। [১১]

২০১২ সালের ৪ অক্টোবর মিসরে সিবিসি টিভিতে প্রচারিত হওয়া আল-জাওয়াহিরির একটি সাক্ষাতকারে আল-জাওয়াহিরি আল কায়েদা অথবা এরূপ অন্যান্য সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেন (এমইএমআরআইয়ের অনুবাদ অনুসারে)। কিন্তু তিনি এটাও বলেন, "মতাদর্শগতভাবে আমি এসব সংগঠনের সাথে একমত প্রকাশ করছি। আমাদের সবার চাওয়া একটাই, ইসলামি শরিয়াহ।" ইসরায়েল এবং ইহুদিদের ব্যাপারে আল-জাওয়াহিরী ঘোষণা করেন, "ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ করা, ইহুদিদের সাথে যুদ্ধ করা আমাদের সকলের উপর ফরজ হয়ে গিয়েছে। মিসরীয় সরকারের উচিৎ, ইহুদি শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করা... এটি সকল মুসলমানের উপর আবশ্যক ধর্মীয় কার্য হিসেবে পালনীয় হয়ে গিয়েছে।"[১২]

পরবর্তী কার্যক্রম[সম্পাদনা]

মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরি ২০১২ ঈসাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বরের কায়রোতে হওয়া মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষোভরত সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। [১৩]

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারিতে তিনি কায়রোস্থ ফ্রান্স দূতাবাসের সামনে ফ্রান্সের মালিতে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আয়োজন করেন। তিনি ফ্রান্স সেনাবাহিনীর এই হস্তক্ষেপকে "ফ্রান্সের আরব ও মুসলিম জনগণের সাথে ঔপনিবেশিকসুলভ আচরণের দিকে প্রত্যাবর্তন" হিসেবে উল্লেখ করেন। এবং বলেন, "ফ্রান্স পারতপক্ষে ইসলামের সাথেই লড়াই করছে।"[১৪]

২০১৩ সালের আগস্টে মুহাম্মদ মুরসির পতনের পর আল-জাওয়াহিরি পুনরায় গ্রেফতার হন।[১৫] ২০১৪ সালের এপ্রিলে আল-জাওয়াহিরি এবং অন্যান্য ৬৭ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকার এবং মিসরের নিরাপত্তা দুর্বল করার অভিযোগ দাখিল করা হয়।[১৬] ২০১৬ সালের ১৭ই মার্চ আল-জাওয়াহিরি কারামুক্তি লাভ করেন।[১৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. জাওয়াহিরি, আয়মান. As-Sahab, The Open Meeting with Al-Zawahiri ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ মার্চ ২০০৯ তারিখে, 2008
  2. "Zawahry, 67 others referred to criminal court"। Cairo Post। ৭ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৪ 
  3. Mother Jones, Disappearing Act: Rendition by the Numbers, 3 March 2008
  4. Human Rights Watch, Chapter VI: Muhammad al-Zawahiri and Hussain al-Zawahiri
  5. al-Zayat, Montasser, "The Road to al-Qaeda", 2002
  6. Top Al Qaeda Ideolgue and Zawahiri's Brother to Denounce Violence ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ অক্টোবর ২০১২ তারিখে, AP, 20 April 2007
  7. "Zarqawi successor 'in Egypt jail'" al-Jazeera, 6 July 2006
  8. "Iraq al-Qaeda chief jail mystery" BBC, 6 July 2006
  9. "Egypt rearrests Zawahiri's brother after release"। Reuters। ২০ মার্চ ২০১১। ২১ মার্চ ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১১ 
  10. "Egypt acquits Qaeda leader brother, others in retrial"। Reuters। ১৯ মার্চ ২০১২। ১ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৮ 
  11. "Exclusive: Al Qaeda leader's brother offers peace plan"। CNN। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১২। ২০১২-১০-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৭ 
  12. Egyptian Salafist Muhammad Al-Zawahiri, Brother of Al-Qaeda Leader: We Don't Recognize Elections or President Morsi; Calls for Jihad against the Jews, MEMRITV, Clip No. 3611 (transcript), 4 October 2012.
  13. Joscelyn, Thomas (২৬ অক্টোবর ২০১৩)। "Al Qaeda-linked jihadists helped incite 9/11 Cairo protest"। The Long War Journal। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  14. "Brother of Al-Qaeda chief at Cairo anti-France demo"। AFP। ১৮ জানুয়ারি ২০১৩। ২৪ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  15. "Jihadi Mohamed al-Zawahiri arrested"Egypt Independent। ১৭ আগস্ট ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৩ 
  16. "The brother of Qaeda chief Zawahiri to stand trial in Egypt"। AFP। ৬ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৪ 
  17. "Ayman al Zawahiri's brother released from Egyptian prison - The Long War Journal" 

টেমপ্লেট:আল জিহাদ