মুহম্মদ মতিউর রহমান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মুহম্মদ মতিউর রহমান
চিত্র:অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান
অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান
জন্ম (1937-12-18) ১৮ ডিসেম্বর ১৯৩৭ (বয়স ৮৬)
শাহজাদপুর থানা, সিরাজগঞ্জ জেলা
মৃত্যু৮ অক্টোবর ২০২১(2021-10-08) (বয়স ৮৩)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
মাতৃশিক্ষায়তন
পেশাঅধ্যাপক, সম্পাদক, লেখক
প্রতিষ্ঠানএশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, দৈনিক সংগ্রাম
পিতা-মাতা
  • আবু মুহম্মদ গোলাম রব্বানী (পিতা)
  • মোছাম্মৎ আছুদা খাতুন (মাতা)

অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান ছিলেন একজন বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক ও সম্পাদক।[১] তিনি ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।[২][৩] তিনি প্রথম বাংলা বিশ্বকোষ প্রকল্পের সম্পাদক ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।

জন্ম ও পরিচয়[সম্পাদনা]

মতিউর রহমান ১৩৯৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার অধীনস্থ শাহজাদপুর থানার চরনরিনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু মুহম্মদ গোলাম রব্বানী এবং মাতার নাম মোছাম্মৎ আছুদা খাতুন। মতিউর রহমানের দাদার নাম মুনশী ওয়াহেদ আলী পণ্ডিত এবং দাদার পিতার নাম মুনশী আবু হানিফ। এরা সবাই শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলো, জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষাদানের জন্য এলাকায় এই বাড়িকে ‘পণ্ডিতবাড়ি’ অভিহিত করা হতো।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মতিউর রহমান গ্রামে পিতার স্কুলে ভর্তি হন। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে পোতাজিয়া হাই স্কুলে ভর্তি হন।[৪] এই স্কুল থেকে ১৯৫৬ সালে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ইন্টারমিডিয়েট শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯৫৮ সনে আই এ এবং ১৯৬০ বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৬২ সালে এমএ পাস করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মতিউর রহমান ১৯৬২ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। এই কলেজে তিনি উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৭ সালে কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি নেন।

অবশ্য তিনি এই অধ্যাপনার মাঝেই ১৯৬৫ সালে মাত্র চার মাসের জন্য করটিয়া সা’দৎ কলেজে চাকরি করেছিলেন। এছাড়াও ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ঢাকাতে অবস্থিত আমেরিকান প্রকাশনা সংস্থা ‘ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামস’-এর সহকারি সম্পাদকের কাজ করেছেন। তিনি প্রথম বাংলা বিশ্বকোষ প্রকল্পের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে দৈনিক সংগ্রামের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদকের কাজও করেছেন।[৫]

তিনি ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দুবাই অবস্থান করেছিলেন। সেখানে তিনি দুবাই চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানিতে প্রকাশনা বিভাগের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এইসময় তিনি দুবাইয়ের সরকারি দায়িত্ব ও সাহিত্য চর্চা ও সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[৬] এরপর তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

লিখিত অবদান[সম্পাদনা]

মতিউর রহমান বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, সংস্কৃতি, দেশপ্রেম ও ইসলামিক সংস্কৃতি লিখে লেখালিখি করেছেন।[৭] বিভিন্ন বিষয়ে তার লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৭৮টি। এছাড়াও তিনি মাসিক আমার দেশ (পাবনা), মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত পত্রিকা, ফররুখ একাডেমি পত্রিকা পত্রিকাসহ নানা পত্র-সাহিত্য ও ম্যাগাজিনে সম্পাদনা করতেন। তিনি এসব জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রায় তিনি ২৮টি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন।

পুরস্কার ও সন্মাননা[সম্পাদনা]

তিনি জীবনভর নানা সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার:

  • ফররুখ সম্মাননা পদক (২০১৫)
  • নবাব আব্দুল লতিফ পদক (২০১৫)
  • কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৮)
  • নর্থ আমেরিকা রাইটার্স ফোরাম পদকসহ (নিউইয়র্ক ২০১৯)

মৃত্যুবরন[সম্পাদনা]

মতিউর ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মৃত্যুবরন করেন। মৃতুর সময় তার বয়স ৮৪ বছর হয়েছিলো, মৃত্যুর সময় তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে বেচে ছিলো। তার মৃত্যুতে ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশনসহ বাংলাদেশের নানা গুনীজন শোক প্রকাশ করেছিলেন।

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

তার মৃত্যুর পর ২০২২ সালের মার্চে আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ তার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে "অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান ফাউন্ডেশন" গঠন করে।[৮] মুহম্মদ মতিউর রহমানের মতাদর্শ, কার্যপদ্ধিতি, লেখন পদ্ধতি, প্রকাশনাসহ সার্বিক বিষয়ে চর্চার জন্য প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তার সহধর্মিণী খালেদা রহমান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. --একজন-সু-লেখকের-নাম "অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান একজন সু-লেখকের নাম"The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৭ 
  2. দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমানের ইন্তেকাল"Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৫ 
  3. "অফিসের একটি আলপিনও নিজের কাজে ব্যবহার করতেন না কবি ফররুখ"jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৭ 
  4. "লেখকঃ অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান | পাঠাগার"www.pathagar.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৭ 
  5. "একজন অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান_তৌহিদুর রহমান"মোলাকাত (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৪-০৮। ২০২২-১০-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৭ 
  6. ও-কর্ম "মুহম্মদ মতিউর রহমানের জীবন ও কর্ম"The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৬ 
  7. "Professor Muhammad Matiur Rahman Books - প্রফেসর মুহম্মদ মতিউর রহমান এর বই | Rokomari.com"www.rokomari.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৭ 
  8. দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান ফাউন্ডেশন গঠিত"Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৫