মুমতাজ আলী কাজী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুমতাজ আলী কাজী
জন্ম(১৯২৮-০৬-২৫)২৫ জুন ১৯২৮
হায়দরাবাদ, সিন্ধু, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৫ জানুয়ারি ১৯৯৯(1999-01-25) (বয়স ৭০)
করাচি, সিন্ধু, পাকিস্তান
জাতীয়তাপাকিস্তানি
মাতৃশিক্ষায়তনকিং কলেজ লন্ডন
দাম্পত্য সঙ্গীগোহর মমতাজ কাজী
সন্তানআবিদ আলী কাজী, আসিফ আলী কাজী, আমির আলী কাজী, শেহলা কাজী, শাজিয়া কাজী
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রজৈব রসায়ন
প্রতিষ্ঠানসমূহসিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়

মুমতাজ আলী কাজী (২৫ জুন ১৯২৮ - ২৫ জানুয়ারি ১৯৯৯) পাকিস্তানের একজন বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান একাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং ১৯৭৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাসায়নিক সমিতির সভাপতি ছিলেন।

কাজী ১৯৫৫ সালে লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পাকিস্তানের প্রথম পিএইচডিধারীদের একজ । তাঁর কর্মজীবন ৪৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপৃত। তিনি বিজ্ঞান ও শিক্ষার উপর প্রচুর বই, গবেষণাপত্র এবং নিবন্ধ রচনা করেছিলেন। তার গবেষণার প্রধান বিষয় ছিল ইসলাম ও বিজ্ঞান।

জীবনী[সম্পাদনা]

কাজী সিন্ধুর হায়দরাবাদ নূর মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে করাচির ডিজে সিন্ধু সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এমএসসি পাস করেন। ১৯৫৫ সালে লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার পর দেশে ফিরে সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের পদে যোগদান করেন।

১৯৭২ সালে কাজী সিন্ধু সরকারের শিক্ষা বিভাগের সচিব নিযুক্ত হন। সিন্ধ প্রদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় তাঁর আমলে বেশ কিছু সংস্কার শুরু হয়েছিল। এক বছর পরে তিনি ইসলামাবাদে চলে আসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (পরে নাম বদলে উচ্চশিক্ষা কমিশন রাখা হয়) চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন।

১৯৭৭ সালে কাজী পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফেডারেল সচিবের পদ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির স্থপতি ছিলেন, যা দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।

তিনি ১৯৮০ সালে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এবং ১৯৮৪ সালে মুমতাজ প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন।

কাজী ১৯৮০-৮৮ সালে পাকিস্তান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং ১৯৭৮ - ৮৪ এবং ১৯৮৫ - ৮৮ সময়কালে দুই মেয়াদে পাকিস্তান বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৭৭ - ১৯৯০ সালে পাকিস্তানের কেমিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।

কাজী কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ইউনেস্কোর নির্বাহী সদস্য ছিলেন [১] এবং তিনি জাতিসংঘের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৯-৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা (COMSTECH) সম্পর্কিত সংগঠন ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) স্থায়ী কমিটির সাথে যুক্ত হন এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত ইসলামিক ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেসের (আইএএস) সভাপতি ছিলেন।

১৯৯৯ সালে তার সম্মানে সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ইনস্টিটিউটের নামকরণ করা হয়।[২]

যেসব পদে দায়িত্বরত ছিলেন[সম্পাদনা]

  • (১) সমন্বয়কারী, কমস্টেক, ইসলামাবাদ (১৯৮৮–১৯৯৬)
  • (২) পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (প্রতিমন্ত্রী), ইসলামাবাদ (১৯৮৫-১৯৮৮)
  • (৩)পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়), ইসলামাবাদ (১৯–০-১৯৮৫)
  • (৪) কেন্দ্রীয় সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পাকিস্তান সরকার, ইসলামাবাদ (১৯৭৭-১৯৮০)
  • (৫) চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ইসলামাবাদ (১৯৭৩-১৯৮০)
  • (৬) সচিব, শিক্ষা বিভাগ, সিন্ধু সরকার, করাচি (১৯৭২-১৯৭৩)

জাতীয় সংগঠনের সাথে সহযোগিতা[সম্পাদনা]

  • ইমেরিটাস অধ্যাপক, সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮৯-১৯৯৯)
  • রসায়ন বিভাগের মেধা অধ্যাপক, সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭২-১৯৮৮)
  • চেয়ারম্যান, পাকিস্তান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিষদ (১৯৮০-১৯৮৮)
  • সভাপতি, পাকিস্তান বিজ্ঞান একাডেমি (১৯৭৮–১৯৮৪) এবং (১৯৮৬-১৯৮৮) [৩]
  • সভাপতি, পাকিস্তান বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানবিষয়ক পেশা সমিতি (১৯৮৫–১৯৯০)
  • সভাপতি, পাকিস্তান পানিসম্পদ গবেষণা পরিষদ (১৯৮২-১৯৮৮)
  • সভাপতি, পাকিস্তান নির্মাণ গবেষণা পরিষদ (১৯৮২-১৯৮৮)
  • সভাপতি, পাকিস্তান কেমিক্যাল সোসাইটি (১৯৭৭–১৯৯০)
  • সভাপতি, সিন্ধু বিজ্ঞান সমিতি(১৯৭১-১৯৭৯)
  • চেয়ারম্যান,

বোর্ড অব গভর্নরস, জাতীয় সিলিকন প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট (১৯৮৫–১৯৮৮)

  • চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ, মহাসাগর ইনস্টিটিউট (১৯৮২-১৯৮৮)
  • চেয়ারম্যান, বোর্ড অব গভর্নরস, পাকিস্তান একাডেমি অফ লেটারস (১৯৭৮-১৯৮০)
  • চেয়ারম্যান, পাকিস্তানের জাতীয় গ্রন্থ পরিষদ (১৯৭৭–১৯৮০)
  • চেয়ারম্যান, বোর্ড অব গভর্নরস, উন্নয়ন অর্থনীতি ইনস্টিটিউট (১৯৭৭–১৯৭৮)
  • চেয়ারম্যান, নির্বাহী বোর্ড, মার্কিন শিক্ষা ফাউন্ডেশনের পাকিস্তান শাখা (১৯৭৪–১৯৭৬)
  • চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সমন্বয় পরিষদ (১৯৭৩–১৯৭৮)
  • চেয়ারম্যান, উচ্চশিক্ষা কমিটি (১৯৭৩–১৯৭৮)
  • সদস্য, ট্রাস্টি বোর্ড, পাকিস্তান সায়েন্স ফাউন্ডেশন (১৯৮২-১৯৮৮)
  • সদস্য, পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি কমিশন (১৯৭৩–১৯৯৯)
  • সদস্য, পাকিস্তান স্পোর্টস বোর্ড (১৯৭৩–১৯৮০)
  • সদস্য, পাঞ্জাব, করাচি, সিন্ধু এবং কায়েদে-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিন্ডিকেট (১৯৭৩-১৯৭৭))
  • সদস্য, পরিচালনা পর্ষদ, সিন্ধু শিক্ষা ফাউন্ডেশন (১৯৯৪-১৯৯৯)
  • সদস্য, বোর্ড অফ গভর্নর, সিন্ধুতত্ত্ব ইনস্টিটিউট (১৯৮২-১৯৯৯)
  • সদস্য, সিন্ধু ভাষা কর্তৃপক্ষ (১৯৯৩—১৯৯৬)

ইউনেস্কোর সাথে সহযোগিতা[সম্পাদনা]

  • সদস্য, ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ড (১৯৭৮–১৯৮৩) এবং (১৯৮৭-১৯৮৯) [৪]
  • সদস্য, বিকল্প নেতা, ১৯৭৬, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮২, ১৯৮৫, ১৯৮৭, ১৯৮৯ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতা
  • সদস্য, ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের বিশেষ কমিটি (১৯৭৮–১৯৮৩)
  • সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ দর্শনের জন্য ইরাকে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে গমন(১৯৮২)
  • দ্বিতীয় কাস্তাসিয়া সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতা, ম্যানিলা, ফিলিপাইন (১৯৮২)
  • ইউনেস্কোর সিনিয়র ভিজিটর শিপ, এপিআইইডি প্রোগ্রাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া (১৯৮০)
  • ইউনেস্কোর প্রতিনিধি, ব্যাংকক, নয়াদিল্লি, নাইরোবি, কায়রো এবং প্যারিস (১৯৮০)
  • আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যুরো, জেনেভা, সুইজারল্যান্ডের সম্মেলনে নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের নেতা (১৯৭৯)
  • চতুর্থ আঞ্চলিক শিক্ষামন্ত্রী সম্মেলনের ও এশিয়া ও ওশেনিয়া, কলম্বো, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বিনির্মাণকারী ব্যক্তিবর্গের সম্মেলন (১৯৭৮)
  • "পুরুষদের মনে শান্তি" সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদলের সদস্য, নাইরোবি (১৯৮৮)

জাতিসংঘের সাথে সহযোগিতা[সম্পাদনা]

  • উন্নয়ন ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত আন্তঃসরকার কমিটির পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের নেতা ও ভাইস চেয়ারম্যান (১৯৮৫-১৯৮৭)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত জাতিসংঘের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য (১৯৮৪-১৯৮৯)
  • উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য আর্থিক সংস্থাগুলির কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন সম্পর্কিত এসএএসটিডি প্যানেলের চেয়ারম্যান, ইসলামাবাদ (১৯৮৬)

ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার সাথে (ওআইসি) সহযোগিতা[সম্পাদনা]

  • সভাপতি, ইসলামিক ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস, জর্ডান (১৯৮৭–১৯৯৯)
  • চেয়ারম্যান, ইসলামিক দেশসমূহের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সম্পর্কিত ওআইসির স্থায়ী কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটি (১৯৮৩–১৯৯৬)
  • বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফর সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (১৯৮২–১৯৮৯)

ফেলোশিপস[সম্পাদনা]

  • ফেলো, রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি, লন্ডন (১৯৬৭-১৯৯৯)
  • ফেলো, পাকিস্তান একাডেমি অফ সায়েন্সেস, ইসলামাবাদ (১৯৭২-১৯৯৯)
  • প্রতিষ্ঠাতা ফেলো, ইসলামিক ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস, আম্মান (১৯৮৬-১৯৯৯)
  • ফেলো, পাকিস্তান কেমিক্যাল সোসাইটি, ইসলামাবাদ (১৯৯০-১৯৯৯)

পুরস্কার ও পদক[সম্পাদনা]

  • হিলাল-ই-ইমতিয়াজ, (পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার), মরণোত্তর সম্মানননা (২০০০)
  • করাচি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিএসসি (সম্মানসূচক) (১৯৯৫)
  • পাকিস্তান একাডেমি অফ সায়েন্সেস শিল্ড, বিশ বছরের ফেলোশিপ সম্পন্নকারীদের দেওয়া হয় (১৯৯৩)
  • উচ্চ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানে বিশিষ্ট অবদানের জন্য সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক (১৯৯২)
  • হামদর্দ ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৯২)
  • লতিফ স্বর্ণপদক (১৯৯১)
  • ইউনেস্কো পদক (১৯৮৪ এবং ১৯৮৯)
  • ইকবাল শতবর্ষ পদক (১৯৭৭)
  • সিলভার পাম স্কাউটস পদক (১৯৭৭)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "DECISIONS ADOPTED BY THE EXECUTIVE BOARD AT ITS 117th SESSION" (পিডিএফ)। United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization Executive Board। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. "Dr. M.A. Kazi Institute of Chemistry"সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়। মে ২৯, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৮, ২০১৭ 
  3. "Former Office Bearers"www.paspk.orgপাকিস্তান একাডেমি অফ সায়েন্সেস। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৮, ২০১৭ 
  4. "Pakistan - General information"www.unesco.org। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৮, ২০১৭