মারিয়া রাইশে (১৫ই মে ১৯০৩- ৮ই জুন ১৯৯৮) একজন জার্মান -পেরুভীয় গণিতবিদ, নৃতত্ত্ববিদ এবং প্রযুক্তি অনুবাদক। তিনি নাজকা রেখাসমূহ নিয়ে ১৯৪০ সালে গবেষণা শুরু করেন। এই অঞ্চলের সংরক্ষণ ও পরিচয় তুুুলে ধরতে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। নিজের অর্থায়নে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তিনি জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তুুুুলেন। তাই সরকার তাকে "রেখাসমূূূূহের মহীয়সী" উপাধিতে ভূষিত করে।[১] ১৯৯৫ সালে নাজকা রেখাসমূহ ইউনেস্কোবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।[২]
মারিয়া রাইশে ১৯০৩ সালের ১৫ই মে জার্মানির ড্রেসডেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ড্রেসডেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধারে গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বিদেশী ভাষায় পড়ালেখা করেন।[৩] তিনি পাঁচ ধরনের ভাষায় কথা বলতে পারতেন।
১৯৩২ সালে মারিয়া রাইশে পেরুতে কর্মরত একজন জার্মান দূতের সন্তানদের শিক্ষক এবং দেখাশোনার কাজে নিযুক্ত হন। ১৯৩৪ সালে পেরুতে থাকা অবস্থাতেই দূর্ঘটনাক্রমে ফণীমনসায় আঘাত পেয়ে গ্যাংরিনে একটি আঙ্গুল হারান। ১৯৩৯ সালে রাইশে লিমাতে একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। একই সাথে তিনি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের অনুবাদের কাজ চালিয়ে যান।[৪] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি পেরুতেই ছিলেন। সেই সময়ে নাজকা মরভূমির উপর দিয়ে উড্ডয়নকালে তিনি নাজকা রেখাসমূহ আবিষ্কার করেন।[৫]
১৯৪০ সালে মারিয়া রাইশে মার্কিন ইতিহাসবিদ পল কুওস্কের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পল ব্রুকলিনেরলং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ছিলেন।
তিনি দক্ষিণ গোলার্ধেমকরক্রান্তি রেখার অবস্থান নিয়ে গবেষণা করেন। মারিয়া ও পল একসাথে মানচিত্রের রেখার সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় ঘটনার সম্পর্ক খোঁজার কাজে নিয়োজিত হন। পরবর্তীতে রাইশে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মকরক্রান্তি রেখা পর্যবেক্ষণ করেন। তার এই তত্ত্ব জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় দিনপঞ্জিতে বড় ধরনের মাত্রা আনে। ১৯৪৬ সালের দিকে রাইশে নাজকা রেখাসমূহের মানচিত্র আঁকা শুরু করেন। তিনি সেখানে ১৮ রকমের ভিন্ন পশুপাখির অস্তিত্ব ছিল বলে সন্ধান পান। ১৯৪৮ সালে পল চলে গেলেও মারিয়া একাই নিজের কাজ চালিয়ে যান। নিজের গণিত বিষয়ক জ্ঞান দিয়ে তিনি নাজকায় কীভাবে এত বিশাল আকারের ফিগার তৈরি হল তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি তত্ত্ব প্রদান করেন যে, নাজকা রেখাসমূহ সৃষ্টিকারীরা এই রেখাসমূহ সৌর দিনপঞ্জি হিসেবে ব্যবহার করতো। এছাড়াও জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় চক্র পর্যবেক্ষণে এই রেখাসমূহ ব্যবহার হত।[৪]
যেহেতু এই রেখাসমূহ উপর থেকে ভালোভাবে দেখা যেত, তাই তিনি নাজকা রেখাসমূহের ছবির জন্য পেরুর বিমান বাহিনীর সাহায্য নেন। ১৯৪৯ সালে মারিয়া রাইশে নিজের গবেষণা নিয়ে "মরুভূমির রহস্য" নামক একটি বই প্রকাশ করেন। ইতিপূর্বে গবেষকেরা এই রেখাসমূহের সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় কোন সম্পর্ক খুঁজে পাননি। কিন্তু মারিয়া রাইশে ও পল কুওস্কের কাজ এক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মেচন করে। অনেকেই মনে করেন "ঈশ্বরের নিকট থেকে পানি ভিক্ষায়" এই রেখাসমূহ ধর্মীয় কারণেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[৬]
রাইশে তার বই বিক্রির অর্থ নাজকা মরুভূমি সংরক্ষণে ব্যয় করেন। তিনি নিজস্ব অর্থে পাহারাদার নিয়োগ করেন। দেশটির সরকার প্যান আমেরিকান মহাসড়ক নির্মানে একটি রেখা ক্ষতিগ্রস্থ করলে তিনি বিভিন্ন জায়গায় এই জায়গাটির গুরুত্ব প্রচারে তদবির করেন। পর্যটকেরা যেন নাজকা রেখাসমূহের কোন ক্ষতি না করেই পর্যবেক্ষণ করতে পারেন সেজন্য নিজস্ব অর্থায়নেই তিনি উক্ত মহাসড়কের পাশে একটি টাওয়ার নির্মান করেন। ১৯৭৭ সালে রাইশে দক্ষিণ আমেরিকার পর্যবেক্ষকদল নামক একটি অলাভজনক ভ্রমণ, বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক সঙ্গঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে যোগ দেন। তিনি এর উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ছিলেন।[৭]
নাজকায় মারিয়া রাইশের কবরস্থান
বয়সের সাথে সাথে রাইশের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করতেন। এছাড়াও তিনি পারকিনসন রোগে ভোগ ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ৮ই জুন জরায়ুমূখী ক্যান্সারে লিমায় বিমানবাহিনীর হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় নাজকার কাছেই নিজের বোনের সাথে তাকে সমাহিত করা হয়।
↑"Bean Sprouts New Theory"(পিডিএফ)। ১৫ মে ২০১৮ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।South American Explorer, January 1983
Biography Maria Reiche of Zetzsche, Viola and Schulze, Dietrich: Picture book of the desert – Maria Reiche and the ground designs of Nasca, Mitteldeutscher Verlag Halle, September 2005, আইএসবিএন৩-৮৯৮১২-২৯৮-০