মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ
মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ
জন্ম
মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ

(১৯৪৬-০৭-১১)১১ জুলাই ১৯৪৬
ঢাকা
মৃত্যু৩০ আগস্ট ১৯৭১(1971-08-30) (বয়স ২৪)
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণমুক্তিযোদ্ধা, ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য
পিতা-মাতাইউনুস আহমেদ চৌধুরী, মোসাম্মাৎ সাফিয়া বেগম

মাগফার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আজাদ (জন্ম: ১১ জুলাই, ১৯৪৬ - নিখোঁজ: ৩০ আগস্ট, ১৯৭১) যিনি শহীদ আজাদ নামে সর্বাধিক পরিচিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের ২নং সেক্টরের বিখ্যাত আরবান গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুন এর সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট ক্র্যাক প্লাটুনের আরও কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ পাকহানাদারদের হাতে ধরা পড়েন নিজ বাসভবনে। তাকে ধরে নিয়ে রাখা হলো নাখালপাড়ার ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এম.পি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে। এরপর ছেলের সাথে দেখা করার জন্য রমনা থানায় ছুটে গিয়েছিলেন আজাদের মা । মাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আজাদ। মা জানতে চাইলেন "কেমন আছো?", আজাদ মাকে বলেছিলো, "এরা খুব মারে, ভয় হচ্ছে কখন সব স্বীকার করে ফেলি।" ছেলের সামনে তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং ছেলেকে সাহস দিয়ে বলেছিলেন, "শক্ত হয়ে থেকো বাবা। কোন কিছু স্বীকার করবে না।"

সেদিন থানা হাজতে মায়ের কাছে আজাদ ভাত খেতে চেয়েছিলেন। আজাদ মায়ের কাছে ভাত খেতে চেয়ে বলেন, "মা, কতোদিন ভাত খাই না। এরপর যখন আসবে, আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো।" পরের দিন মা ভাত নিয়ে যান থানায়। গিয়ে দেখেন ছেলে নেই। এই ছেলে আর কোনদিনও ফিরে আসে নি। ধরে নেওয়া হয়, সেদিনই ঘাতকরা মেরে ফেলেছিলো আজাদকে।

ছেলে একবেলা ভাত খেতে চেয়েছিলেন, মা পারেননি ছেলের মুখে ভাত তুলে দিতে। সেই কষ্ট, ইন্দ্রিয়ের সেই যাতনায় সেদিনের পর থেকে যতোকাল বেঁচে ছিলেন, সেই পুরো ১৪টি বছর মুখে একটা ভাতও তুলে নেননি মা সাফিয়া বেগম! তিনি অপেক্ষায় ছিলেন ১৪ টা বছর ছেলেকে ভাত খাওয়াবেন বলে। বিশ্বাস ছিলো তাঁর আজাদ ফিরবে। ছেলের অপেক্ষায় শুধু ভাতই নয়, ১৪ বছর তিনি বিছানায়ও শোননি। মেঝেতে শুয়েছেন, শীত-গ্রীষ্ম কোনো কিছুতেই তিনি পাল্টাননি তার এই পাষাণ-শয্যা। এর মূল কারণ ছিলো, তাঁর আজাদ রমনা থানায় আটক থাকাকালে বিছানা পায়নি। রুপকথার মতো এই বাস্তবতা নিয়ে পরে বরেণ্য লেখক আনিসুল হক তার বিখ্যাত মা উপন্যাস রচনা করেন।[১][২][৩]

জন্ম ও পরিবার[সম্পাদনা]

আজাদের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১১ জুলাই। তার বাবা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইউনুস আহমেদ চৌধুরী এবং মা মোসাম্মাৎ সাফিয়া বেগম। তিনি ছিলেন তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। শৈশব কেটেছে নিউ ইস্কাটনের সুরম্য বাড়িতে। তবে পরবর্তীতে তার পিতার প্রতি ক্ষোভ নিয়ে মা সাফিয়া বেগম ফরাশগঞ্জের বাসায় চলে আসেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

আজাদ সবসময়েই ছিলেন স্বাধীনচেতা তরুণ। দুরন্ত, গানপাগল, সিনেমা-অন্তঃপ্রাণ আর বইপড়ুয়া হিসেবেই আজাদ পরিচিত ছিল সবার কাছে। তবে পড়ালেখায় খুব বেশি মনোযোগী ছিলেন না। এস.এস.সি'তে সেকেন্ড ডিভিশন নিয়ে পাশ করেন। তারপরে পড়তে যান করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে । সেখান থেকেই স্নাতক উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপরে ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে এম.এ. পাশ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

ধনীর দুলাল হলেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকার সেবার ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন আজাদ। নাম লেখান কিংবদন্তিসম ক্র্যাক প্লাটুন-এ। বেশ কিছু সফল অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ এর ২৯ আগস্ট দিবাগত রাতে, অর্থাৎ ৩০ আগস্ট নিজ বাড়ি থেকে আজাদকে তার কয়েক সহযোদ্ধাসমেত ধরে নিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। মুক্তিবাহিনীর তথ্য নেওয়ার জন্য তার ওপরে চালানো হয় পাশবিক অত্যাচার। সবকিছু সহ্য করে গেছেন, তবু মুখ খোলেননি বীর আজাদ। তার মা যখন তার সাথে বন্দি অবস্থায় দেখা করেন, তখন ভাত খেতে চেয়েছিলেন। মা ভাত নিয়ে গিয়ে ছেলেকে আর পাননি। ছেলেকে ভাত খাওয়াতে না পারার কষ্টে আজাদের মা জীবনে আর মুখে ভাত তুলে নেননি।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Anisul., Haq,। Maa.। [Place of publication not identified]: Somoy Prokashan। আইএসবিএন 9844584221 
  2. "একাত্তরের মায়েরা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২২ 
  3. "গল্পটি গেরিলা আজাদের! | banglatribune.com"Bangla Tribune। ২০২০-০২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২২ 
  4. রাহমান, আয়াজ উর। "মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিখ্যাত গেরিলা যোদ্ধা গ্রেগরীয়ান আজাদের গল্প | All About Dhaka" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৬-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-১১