মধু হই হই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
"মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা"
সোনাবন্ধু অ্যালবাম থেকে
আব্দুর রশীদ মাস্টার কর্তৃক আঞ্চলিক গান
ভাষাচাটগাঁইয়া
স্থানসেইন্ট মার্টিন দ্বীপ
গান লেখকআব্দুর রশীদ মাস্টার
সুরকারআব্দুর রশীদ মাস্টার

মধু হই হই চাটগাঁইয়া ভাষার একটি গান যা সারা বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পায় খুদে শিল্পী জাহিদের কণ্ঠে। ২০১৬ সালে সংগীতশিল্পী ইমরান হোসেনের মাধ্যমে ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’ শিরোনামে গানটি ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়।[১][২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা মধু হই হই জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা আবদুর রশীদকে সবার সামনে নিয়ে আসে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক টেলিভিশন সিপ্লাস টিভি। সেখানে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উঠে আসে জনপ্রিয় এই গানের পেছনের গল্প। সিপ্লাস টিভির এডিটর ইন চিফ আলমগীর অপুর সঙ্গে আলাপচারিতায় আবদুর রশীদ জানান, ২০০০ সালের আগে সেন্ট মার্টিনসে গানটির সৃষ্টি হয়। প্রেমিকা মীনারাকে হারিয়ে এই গানটি রচনা করেন তিনি। যা প্রবালের দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটকদের শোনাতেন তিনি। এভাবেই গানটি ফয়সাল সিদ্দিকী বগির মাধ্যমে চলে আসে ফোক-ফিউশন শিল্পী সন্দীপন দাসের হাতে। তিনি তার প্রথম অ্যালবাম ‘সোনাবন্ধু’তে গানটি ব্যবহার করেন, এবং গীতিকারসুরকার কে জানতেন না বলে সংগৃহীত বলে অ্যালবামে গানটি প্রকাশ করেন।[৩]

আব্দুর রশীদ মাস্টার[সম্পাদনা]

টুকটাক মার্শাল আর্ট জানেন বলে লোকমুখে আব্দুর রশীদের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘মাস্টার’। আব্দুর রশীদ মাস্টার বর্ষাকালে সমুদ্রে মাছ ধরেন আর শীতকালে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে আসা পর্যটকদের গান শোনান। প্রেমিকার সাথে বিচ্ছেদের পর সেন্টমার্টিন দ্বীপের সমুদ্রের তীরে বসে তিনি সৃষ্টি করেন একের পর এক গান। তবে ঐ সময়ে বাদ্যের তালে তালে তা সবার সামনে গাইতে পারেননি। জাহাজে করে আসা এক বিদেশি পর্যটক তার গান শুনে উপহার হিসেবে হাতে তুলে দিয়েছিলেন একটি ম্যান্ডোলিন। সে ম্যান্ডোলিন শিখে ২০০৪ সাল থেকে প্রকাশ্যে গান গাইতে শুরু করেন তিনি।[৪]

আলোড়ন[সম্পাদনা]

২০১৬ সালের শুরুর দিকে নেট দুনিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলে‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’ শিরোনামের একটি গান। আপন ঢংয়ে গানটি গেয়ে রাতারাতি তারকা হয়ে উঠেছিলেন শিশু শিল্পী জাহিদ। ফেসবুক-ইউটিউবে শুরু হয় তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন।[৫] তার গান দিয়ে নির্মিত হয় মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান রবির বিজ্ঞাপনও। কক্সবাজারে যাওয়া পর্যটকদের বিভিন্ন আঞ্চলিক গান শুনিয়ে সংসার চালানো জাহিদ রাতারাতি পরিচিত হয়ে ওঠে সংগীতশিল্পী ইমরান হোসেনের সেই ভিডিও ভাইরাল হবার পর।[২] ইমরান নিজের ছোট গিটারের মতো বাদ্যযন্ত্র ইউকেলেল দিয়ে জাহিদের কণ্ঠের গানের সঙ্গে সুর তোলে ভিডিও রেকর্ড করেন।[৬] পরবর্তীতে ইমরান ২০ মিনিটের একটি ভিডিও ইউটিউবে দিলে এক পর্যায়ে তা ভাইরাল হয়ে যায় এবং এর শেয়ার কোটি ছাড়িয়ে যায়।[৭]

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

রশীদ মাস্টার বলেন, পুরা গানটা কেউ গাইতে ফারে না। মূল গানটা কেউ বলে না। গানে একটা কথা আছে ‘কোন দুষহান ফাই ভালোবাসার মূল ন’দিলা’-এখানে সবাই বলে ‘কোন কারণে দাম ন’ দিলা’। গানের শেষে আমার নাম আছে সেটাও ব্যবহার করা হয় না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার তো ওইভাবে হিসাব মনে নাই। ২০০০ সালের ফরে ২০০৩ এর দিকে সন্দীপন দাস আমার কাছ থেকে গানটা লিখে নিয়ে যায়। আমার কাছ থেকে অনেকেই এরকম করে, গান লিখে, ভিডিও করে নিয়ে যায়। সবাই আমার গানটা গায়, গানের মধ্যে আমার নামটাও বলে না। সবাই দাবি করতেছে, আমার গান, আমার গান, আমি লিখছি। আমি কী বলব, কী করব? আমি তো একটা গরিব মানুষ, আছি আমার মতো।[৪]

গানটি সৃষ্টির সময় সেন্ট মার্টিনে ঘুরতে আসা এক পর্যটক গানটি লিখে নেন এবং ভিডিও করেন। যা সন্দীপন দাস তার প্রথম অ্যালবাম ‘সোনাবন্ধু’তে ব্যবহার করেন (সংগৃহীত বলে)। তবে এটা ইচ্ছাকৃত ছিল না বলে জানান সন্দীপন।[৮]

জনপ্রিয়তা[সম্পাদনা]

সন্দীপন দাসের কণ্ঠ হয়ে দেশের জনপ্রিয় অসংখ্য শিল্পীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া গানটি মোবাইল ফোন অপারেটর রবির বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয় ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদে শিল্পী জাহিদের কণ্ঠে।[৪] এমনকি ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’ নামে একটি চলচ্চিত্রও মুক্তি পায় ২০১৭ সালে। যদিও চলচ্চিত্রটির আইটেম গান হিসেবে বিকৃত উপস্থাপনের সমালোচনা ওঠে।[৯] গানের এই উক্তিটি রম্য করে ব্যবহার করা হচ্ছে নাটক, কৌতুক কিংবা ওয়াজ মাহফিলে[১০][১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "কানাই লালের গান নিয়ে আসছেন ইমরান"চ্যানেল আই । ১ ডিসেম্বর ২০২০। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  2. "হারিয়ে যাইনি, গানের মধ্যেই আছি : জাহিদ"এনটিভি। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  3. "পাওয়া গেল 'মধু হই হই' গানের শিল্পী ও এর পেছনের কাহিনী"দৈনিক যুগান্তর। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  4. "প্রকাশ্যে এলেন 'মধু হই হই' গানের মূল শিল্পী"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ৬ ফেব্রু ২০১৯। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  5. "মধু হই হই-এর পর শিশু শিল্পী জাহিদের প্রথম মৌলিক গান"দৈনিক ইনকিলাব। ৩১ আগস্ট ২০১৮। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  6. "মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা …"রাইজিংবিডি.কম। ৩ জানুয়ারি ২০১৭। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  7. "কী করছেন 'মধু হই হই' গানের জাহিদ?"জাগো নিউজ। ১৯ জুলাই ২০২২। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  8. "'মধু হই হই' গানের আসল শিল্পী আবদুর রশীদ"। bdmorning। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  9. "সত্যিই কি মধু, না বিষ! (ভিডিও)"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২৭ জুলাই ২০১৭। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  10. "নাটকের ভেতরে নাটকীয়তা ঢুকে গেছে"। প্রথম আলো। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬। ১০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০২৩ 
  11. "ওয়াজ আর গান মিলেমিশে একাকার"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ৬ জানু ২০২৩। ১০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০২৩