মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়
জন্ম(১৯২০-০৬-১৭)১৭ জুন ১৯২০
নলডাঙ্গা যশোর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু২০ এপ্রিল ২০০৩(2003-04-20) (বয়স ৮২)
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয় (১৯২০-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-২০০৩)
উল্লেখযোগ্য পুরস্কাররবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৯১)

মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় (১৭ জুন ১৯২০ - ২০ এপ্রিল ২০০৩) ছিলেন বামপন্থী গোষ্ঠীর একজন শক্তিশালী কবি।[১] বিংশ শতকের চল্লিশের দশকে প্রতিবাদী আন্দোলনের নির্যাস নিয়ে কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ কমিউনিস্ট মতাদর্শে অনুপ্রাণিত মঙ্গলাচরণের। তিনি প্রগতি লেখক সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

মঙ্গলাচরণের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলার নলডাঙা গ্রামে। পিতা সুরেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা প্রতিমা দেবী। তার পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাদু মহেশ্বরপুরে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএসসি ও বিএসসি পাশ করে কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে তিন বছর পড়ে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দেন। ওই সময়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সান্নিধ্যে আসেন এবং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সদস্যপদ নিয়ে সর্বক্ষণের কর্মী হন।[২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় কবিতাচর্চায় হাতেখড়ি হলেও ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে 'পরিচয়' পত্রিকায় প্রকাশিত 'মেঘবৃষ্টিঝড়' কবিতাটি তাঁকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। [৩] চল্লিশের দশকের প্রতিবাদী আন্দোলন আর তার সমাজমনস্কতাই সাফল্য প্রদান করে। স্বাধীনতার পরের বছরেই প্রকাশিত হয় তাঁর তেলেঙ্গানা ও অন্যান্য কবিতা। তার কথা চুপচাপ কবিতার এক অধ্যায়ের নাম "বন্যাদুর্গত মুর্শিদাবাদের কৃষকের কান্না শুনে" এবং পরের অধ্যায়ের নাম "আহত সন্তান বুকে ভিয়েতনামী মানুষের যুক্তকর ছবি দেখে" লেখা।[২] তাঁর কবিতা সম্পর্কে শিশিরকুমার দাশের মন্তব্য করেন -

" রোমান্টিকতা ও সমাজমনস্কতা, ব্যক্তিগত উচ্চারণ ও জনকবিতার সমন্বয় ঘটেছে তাঁর রচনায়।"

[১]

মঙ্গলাচরণ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রগতি লেখক সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৫০-৫১ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৯৫৬-৬৫ খ্রিস্টাব্দ সময়ে "পরিচয়" পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। পত্রিকা সম্পাদনা ও কবিতা লেখা ইত্যাদির সঙ্গে শিক্ষকতাও করেছেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি সোভিয়েত তথ্যকেন্দ্রে অনুবাদকের কাজ নিয়ে মস্কো যান। সেখানে প্রগতি প্রকাশনে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাজ করেন। শেষে ভারতে ফিরে কবিতা লেখা ও সাহিত্যচর্চাই করেছেন। তাঁর রচিত কবিতা গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-

  • স্নায়ু
  • মনপবন (১৯৪২)
  • ঘুমপাড়ানি ছড়া
  • তেলেঙ্গানা ও অন্যান্য কবিতা (১৯৪৮)
  • হায় ছায়াবৃতা
  • মেঘ বৃষ্টি ঝড় (১৯৫১)
  • কটি কবিতা ও একলব্য (১৯৫৯)
  • কোথাও যাওয়ার কথা ছিল
  • সূর্যের সাম্রাজ্য ভিনদেশ ইত্যাদি।

তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ হল মানুষের সপক্ষে

সম্মাননা[সম্পাদনা]

কবি মঙ্গলাচরণ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর "স্বনির্বাচিত কবিতা সংকলন" গ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাহিত্য পুরস্কার- রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

কবি মঙ্গলাচরণ ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ২০শে এপ্রিল প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১৬১। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  2. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২৯০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  3. "কলকাতার কড়চা - শতবর্ষ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০৯