ভিক্টর লাস্টিগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভিক্টর লাস্টিগ
জন্ম১১ মার্চ ১৯৪৭(1947-03-11) (বয়স ৫৭)
হস্টিন, বোহেমিয়া, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি (বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্র)
মৃত্যু১১ মার্চ ১৯৪৭(1947-03-11) (বয়স ৫৭)
অন্যান্য নামকাউন্ট লাস্টিগ
পেশাজালিয়াত/ঠগবাজ
অপরাধের অভিযোগজালিয়াতি
অপরাধের শাস্তি২০ বছরের কারাদণ্ড
অপরাধীর অবস্থাজেলখানায় মৃত্যুবরণ

ভিক্টর লাস্টিগ ( জার্মান উচ্চারণ: [ˈvɪktoɐ̯ ˈlʊstɪç]  ;  ; জানুয়ারী ৪, ১৮৯০ – মার্চ ১১, ১৯৪৭) [১][২] ছিলেন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির একজন অত্যন্ত দক্ষ (ঠগবাজ) কন শিল্পী, তিনি বিশ শতকের গোড়ার দিকে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে জালিয়াতি করে অপরাধমূলক জীবন পার করেন। লুস্টিগকে তার সময়ের অন্যতম কুখ্যাত শিল্পী হিসাবে গণ্য করা হয় এবং তিনি "যে ব্যক্তি দু'বার আইফেল টাওয়ার বিক্রি করেছিলেন" এবং "রুমানিয়ান বক্স" কেলেঙ্কারীর জন্য বিশেষ ভাবে কুখ্যাত ছিলেন।

জীবনের প্রথমার্ধ[সম্পাদনা]

ভিক্টর লুস্টিগের জন্ম অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির বোহিমিয়ার হোস্টিনিতে ।

যে কোন কিছু শিখার ক্ষেত্রে শুধুই যে তার পারদর্শীতা ছিল তা নয়, বরণ ঝামেলা করতেও বেশ ওস্তাদ ছিলেন তিনি। প্যারিসে পড়াশোনা শেষ করে ১৯ বছর বয়সে লুস্টিগ জুয়া খেলা শুরু করেন। এর মধ্যেই তিনি এক মহিলার সান্নিধ্য পেতে চান। যাতে হিংসার বসবর্তী হয়ে মহিলার প্রেমিক তার মুখের বাম দিকে আঘাত করে একটি দাগ বসিয়ে দেন। [৩] স্কুল শেষ করে লুস্টিগ তার জীবন যাত্রা শিক্ষা এবং বিভিন্ন বিদেশী ভাষার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অপরাধ জগতে ঝুঁকে পড়েন। অবশেষে বিভিন্ন ধরনের কেলেঙ্কারী এবং জালিয়াতি করার দিকে মনোনিবেশ করেন যা তাকে সম্পত্তি এবং অর্থ যোগান দেয়, যা তাকে পেশাদার জালিয়াতে পরিণত করেছিল। [৪]

লুস্টিগের শুরুর দিকের ঠগবাজীর বেশীরভাগ ফ্রান্সের আটলান্টিক বন্দর এবং নিউইয়র্ক সিটির মধ্যে সমুদ্রের উপর জাহাজে শুরু করেন। [৪] ধনী ভ্রমণকারীদের জন্য তিনি যে ফন্দি ফিকির করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিজেকে সঙ্গীত প্রযোজক হিসাবে উপস্থাপন করা। তিনি যাত্রীদেরকে তার ব্রডওয়ে পরিচালনার জন্য বিনিয়োগ করতে বলেন, যার আসলে কোন অস্তিত্ব নেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ট্রান্স-আটলান্টিক লাইনারসের যাত্রীসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন লুস্টিগ অন্য আয়ের পথ করার জন্য নতুন জায়গার সন্ধান করেছিলেন এবং সিধান্ত নেন যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমাবেন। এর মধ্যেই, তিনি বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির কছে কেলেঙ্কারীর করার জন্য বেশ কুখ্যাতি অর্জন করেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ১৯২২ সালে একটি ব্যাংক জালিয়াতি করার ঘটনা। সেখানে তিনি একটি ব্যাংক কে সম্পত্তির বিপরীতে বন্ডের অফার করছিলেন এবপ্নগ তার একটি অংশের জন্য তাকে অর্থ প্রদানের কথা দাবি করেন। পরে অর্থ এবং বন্ড উভয় নিয়েই ভোজবাজির মত পালিয়ে যান। [৩]

"আইফেল টাওয়ার" কেলেঙ্কারী[সম্পাদনা]

১৯২৫ সালে, লুস্টিগ আবার ফ্রান্সে ফিরে আসেন। প্যারিসে থাকাকালীন তিনি একটি সংবাদপত্রের নিবন্ধে আকৃষ্ট হন যার শিরোনাম ছিল আইফেল টাওয়ার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন তা নিয়ে আলোচনা। যেটি তাকে নতুন এক ধোঁকাবাজির জন্য উৎসাহিত করে। সেই সময়, স্মৃতিস্তম্ভটি জং ধরে ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল এবং শহরটি এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনরায় রঙ করা ব্যয়বহুল মনে করে। নিবন্ধের অংশে একটি মন্তব্য ছিল যে স্মৃতিস্তম্বটির বিষয়ে সামগ্রিক জনমত তার অপসারণের আহ্বানের দিকে অগ্রসর হবে। যা লাস্টিগকে পুরোপুরি নিশ্চিত করে যে এটিই তার পরবর্তী ঠগবাজীর অংশ হিসেবে ব্যবহার করা সুবিধাজনক হবে। [৩] নিবন্ধটি থেকে তথ্যটি কীভাবে ব্যবহার করা যায় তার জন্য যথেষ্ট বিচার বিশ্লেষণ করার পরে, লুস্টিগ এই প্রতারণার প্রস্তুতির কাজ শুরু করেন। যার মধ্যে একটি নকল সরকারী স্টেশনারি তৈরির কাজে একজন জালিয়াত নিয়োগ দেওয়াটাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। [৫]

যখনি প্রস্তুতি শেষ হল, লুস্টিগ একটি ব্যয়বহুল হোটেলে একটি গোপনীয় বৈঠকে লোহা ব্যবসায়ীদের একটি ছোট্ট দলকে আমন্ত্রণ জানালেন তারপরে তিনি নিজেকে মিনিস্ট্রে ডি পোজেটস এবং তেলগ্রাফসের উপ-মহাপরিচালক (ডাক ও টেলিগ্রাফ মন্ত্রক) হিসাবে তাদের নিজের পরিচয় দেন। [৩] বৈঠকে তিনি অতিথিদের বুঝিয়ে দেন যে আইফেল টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণ প্যারিসের পক্ষে খুব বেশি ব্যয় বহুল হয়ে উঠেছে এবং ফরাসী সরকার এটিকে ভেঙ্গে বিক্রি করতে চান। কিন্তু এই চুক্তিটি কিছুটা বিতর্কিত এবং এটি জনসাধারণের অমতের কারণ হতে পারে। তাই বিস্তারিত কাজ সম্পূর্ণের আগে এটি প্রকাশ করা যাবেনা। লুস্টিগ এটাও বলেছিলেন যে তিনি এর মালিকানা বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং দাবি করেন যে এই গ্রুপটি "সৎ ব্যবসায়ী" হিসাবে তাদের খ্যাতির কারণে অতি সাবধানে নির্বাচিত হয়। তাঁর ভাষণটিতে নগরীতে স্মৃতিস্তম্ভের স্থান সম্পর্কে সত্যিকারের অন্তর্দৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এটি কীভাবে নগরীর অন্যান্য দুর্দান্ত স্মৃতিসৌধগুলির সাথে গথিক ক্যাথেড্রালস বা আর্ক ডি ট্রায়োফের সাথে খাপ খায়নি সেটিও চতুরতার সাথে ফুটে উঠে। [৫]

চুক্তির সময়কালে, লুস্টিগ তার জালিয়াতির জন্য সবচেয়ে বেশি কে ক্ষয়ক্ষতিতে পড়বেন সেদিকে নজর রাখছিলেন এবং আন্ড্রে পোইসন- একজন নিরাপত্তাহীন ব্যক্তি যিনি প্যারিসের ব্যবসায়ীদের মধ্যে মাত্র উঠে দাঁড়ানোর জন্য সুযোগ খুঁজছিলেন।[৬] পোইসন স্মৃতিস্তম্ভটি কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখান। ডিলাররা যখন লুস্টিগের কাছে তাদের দর পাঠায় তখন সে তার দিকে মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন। পইসনের সাথে একটি ব্যক্তিগত বৈঠকের ব্যবস্থা করে লুস্টিগ তাকে জানান যে তিনি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা। এটাও জানান যে তাঁর সরকারী অবস্থান তাকে বিলাস বহুল জীবন যাপন করতে দেয় না।[৭] আইফেল টাওয়ার বিক্রির কথা বিশ্বাস করে অন্যান্য শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিজের মালিকানা সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে পোইসন একটি বড় অংকের ঘুষও দিতে রাজি হন। যাইহোক, এইবার লুস্টিগ তার ঘুষ এবং স্মৃতিসৌধের "বিক্রয়" (প্রায় ৭০,০০০ ফ্রাঙ্ক) এর টাকা পয়সা হাতে পাওয়ার পর অচিরেই তিনি অস্ট্রিয়ায় পালিয়ে যান। [৫]

লুস্টিগের সন্দেহ ছিল যে পোইসন যখন জানতে পারবেন তিনি ভয়ঙ্কর এক প্রতারণার শিকার হয়েছেন তখন লজ্জায় এবং বিব্রত হয়ে সে সম্পর্কে ফরাসী পুলিশকে জানাতে যাবেন না। তবুও এই বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও তিনি অস্ট্রিয়ায় থেকে সংবাদপত্রগুলি নিয়মিত চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর সন্দেহগুলি শীঘ্রই সঠিক প্রমাণিত হয়। যখন তিনি খবরের পৃষ্ঠা গুলোতে তার প্রতারণার কোন খবর খুঁজে পেলেন না তখন আরো একবার একই ভাবে প্রতারণার পরিকল্পনা নিয়ে ফিরে আসেন প্যারিসে সেই বছরের শেষের দিকে।[৫][৭] যাইহোক, যখন লুস্টিগ আরেকটি ব্যবসায়ী দলের সাথে কথা বলে তাদের আইফেল টাওয়ার কিনতে রাজি করাচ্ছিলেন ঠিক তখনি তার কেচ্ছা পুলিশের কাছে ফাঁস হয়ে যায়। যার ফলে গ্রেপ্তার এড়াতে বাধ্য হয়ে পালিয়ে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে[৩][৬]

"রুমানিয়ান বক্স" কেলেঙ্কারী[সম্পাদনা]

লুস্টিগের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কেলেঙ্কারীর মধ্যে অন্যতম ছিল একটি বক্স বিক্রয় করা যা ছিল যে কারো সন্দেহের উর্ধে। সেটিকে তিনি অবশ্য বক্স না বলে মেশিন হিসেবে দাবি করে বলেছিলেন যে এটি যে কোন কাগজের টাকা হুবহু নকল করে ছাপাতে পারে। তবে সেই টাকা ছাপাতে ছয় ঘণ্টার মত সময় লাগবে। যেটি তার পালিয়ে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। "টাকার বাক্স" অথবা "রোমানিয়ান বক্স" নামের এই প্রতারনার ব্যবহৃত বক্সটি মূলত একটি বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা মেহেগনি কাঠের বক্স। যেটি আকারে স্টিমার ট্রাঙ্ক থেকে খুব একটা বড় নয়। বক্সটি এমনভাবে নকশা করা ছিল যাতে ছোট দুটি স্লট ছিল। যার একটি টাকা ঢুকানোর জন্য এবং অপরটি নকল করে "মুদ্রণ" করার জন্য। সেই সাথে ছিল একটা গোপন কুঠুরি যেটি লিভার এবং ম্যাকানিজম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেত।

সবাইকে বিশ্বাস করারনোর জন্য লুস্টিগ তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট পরিমানের টাকা ( যেমন ১০০ ডলার) দিতে বলত এবং সেটি যন্ত্রের ভেতর ঢুকিয়ে তাদের সাথে ততক্ষন অপেক্ষা করতো যতক্ষণ না সেটি জাল হয়ে আসে। আর এর পরে তাদের কে সাথে করে ব্যাংকে চলে যেত টাকাটি পরীক্ষা করানোর জন্য। বাস্তবে, যেটি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতো তা হল, লুস্টিগ যন্ত্রটির মধ্যে আসল টাকা আগেই রেখে দিত। আর মেশিনে টাকা দেওয়ার পরিমানটাও তার নির্ধারিত থাকতো। সবাই নিশ্চিত হওয়ার পর লুস্টিগ বক্সটি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ার ভান করতো যতক্ষণ না এর জন্য একটি বিশাল অংকের দাম হাঁকা হয়। বিক্রি করার আগে আগেই সে বক্সটি আসল টাকা সহ খালি করে রাখতো। আর সবাই অপেক্ষা করতো টাকা বেরুনোর। ততক্ষণে সে পালিয়ে যেত যতক্ষণে তারা বুঝতে পারতো যে তারা আসলে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিল।[৩][৬][৭]

লুস্টিগের এই বক্সটির সব থেকে বাজে ব্যবহার হয়েছিল টেক্সাসের এক পুলিশের উপর, যাকে তিনি বক্সটি কিনতে রাজি করিয়েছিলেন কয়েক হাজার ডলারে। ধোঁকাবাজি বুঝতে পেরে পুলিশ লুস্টিগকে শিকাগোতে পর্যন্ত তাড়া করলেন। তার সাথে আবার দেখা করার পরে, সেই পুলিশটিকে বিশ্বাস করানো হয় যে তিনি যন্ত্রটি ঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। তবে সেই নাছোড় বান্দা তাকে মোটা অংকের নগদ টাকা জরিমানা করে হস্তগত করেন। যার পুরোটাই ছিল জাল যা তিনি বুঝতেও পারেননি। এই জালিয়াতি শেষ পর্যন্ত আমেরিকান আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা তাকে গ্রেপ্তারের দিকে ধাবিত করে।[৭]

পরবর্তী বছরগুলি, ধরা পড়া এবং মৃত্যু[সম্পাদনা]

মহামন্দা যখন আঘাত হানে তখন লুস্টিগ আল ক্যাপোনকে লক্ষ্য করে নিশ্চিত মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও একটি ঝুকিপূর্ণ জালিয়াতির পরিকল্পনা করে। লুস্টিগের জন্যে এটি কোন সহজ সরল জালিয়াতি ছিল না। তবে এটি এমন একটি পরিকল্পনা ছিল যাতে অল্প কিছু পরিমানে টাকা খসানোই ছিল তার মূল লক্ষ্য। লুস্টিগ কুপোনকে ৫০,০০০ ডলার বিনিয়োগ করতে বলেন যা তিনি একটি নিরাপদ আমানত বাক্সে রাখেন। কিন্তু ফেরত দেওয়ার দুই মাস আগে দাবি করেন যে চুক্তিটিতে ধরা খেয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কাপোন লস্টিগের মরাকান্না দেখে সৎ লোক ভেবে বিশ্বাস করে ফেলে। এই পর্যায়ে এসে লুস্টিগ কাপোনকে বলে যে তিনি আসলে এতটাই নিঃস্ব যে নিজেও আর কিছু করার সামর্থ নেই। সে কাপোনকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ৫,০০০ ডলার তাকে দান করার জন্য রাজি করিয়ে ফেলে (কারো কারো মতে ১,০০০ ডলার)[৫] যা আগেই তার পরিকল্পনার অংশ ছিল।[৪][৭]

১৯৩০ সালে, লুস্টিগ আরো বড় ধরনের জালিয়াতি করার জন্য নেব্রাস্কা- ফর্মাসিস্ট উইলিয়াম ওয়াটস এবং রসায়নবিদ টম শ-এ দু'জনের সাথে অংশীদারে শরীক হন। ওয়াটস এবং শ উভয়ই সেই প্লেটগুলি খোদাই করেছিল যা জাল ডলারের বিল তৈরিতে ব্যবহৃত হত। যখন লুস্টিগ জালিয়াতি করে তা বিতরণের জন্য কুরিয়ারে একটি রিংয়ের ব্যবস্থা করছিল। যাতে জালিয়াতি সম্পর্কে সব আড়ালে রাখা হবে বলে নিশ্চিত করে। [৮] সংক্ষেপে, এই কাজটি দিয়ে পরবর্তী পাঁচ বছরের প্রতি মাসে হাজার হাজার ডলার জাল টাকা বানাতে করতে সক্ষম হয় তারা। এটি "লাস্টিগ মানি" নামে পরিচিত ছিল যদিও মার্কিন অর্থনীতিতে প্রবেশের ফলে এর পরিমাণ শেষ পর্যন্ত ফেডারেল এজেন্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বসে।

লুস্টিগের উপপত্নী বিলি মে যখন জানতে পেরেছিল যে তিনি শ- এর তরুণ উপপত্নীর জন্য তাকে বিশ্বাসঘাতকতা করন, তখন তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি বেনামে ফোন করেন। [৮] ১৯৩৫ সালের ১০ মে লুস্টিগকে নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার করে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। যদিও তিনি অভিযানের সাথে অংশীদারদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেন তবে তিনি নিজেকে বিষয়টি থেকে বাদ রাখতে চেয়েছিলেন। যাইহোক, লাস্টিগের নিজের কাছে থাকা একটি চাবি সম্পর্কে তথ্য প্রদানে অস্বীকার করেন। পরে অবশ্য টাইমস স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশনে একটি ৫১,০০০ ডলারের জাল বিল জালিয়াতের প্লেটগুলি মুদ্রিত ছিল সেগুলিতে একটি লকার খোলার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে। [৭]

তার বিচারের ঠিক আগের দিন, লুস্টিগ ভুয়া অসুস্থতার কথা বলে এবং ভবন থেকে আরোহণের জন্য একটি বিশেষভাবে তৈরি দড়ি ব্যবহার করে নিউ ইয়র্ক সিটির ফেডারাল হাউস অফ ডিটেনশন থেকে পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু গুনে গুনে ঠিক ২৭ দিন পরে পিটসবার্গে তাকে পুনরায় ধরা হয়। লাস্টিগ তার বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং তার মূল অভিযোগের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার আলকাট্রাজ দ্বীপে পনের বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত হয়। কারাগার থেকে পালানোর জন্য তাকে আরও পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ৯ ই মার্চ লুস্টিগ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন এবং দু'দিন পরে মিসৌরির স্প্রিংফিল্ডের ফেডারেল কারাগারদের মেডিকেল সেন্টারে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর সার্টিফিকেটে তার পেশা শিক্ষানবিশ বিক্রয়কারী হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়। [৯]

দশটি উপদেশ[সম্পাদনা]

"জালিয়াতির ১০ টি উপদেশ" [১০] হিসাবে পরিচিত ১০ টি উপদেশের কৃতিত্ব লুস্টিগকে দেওয়া হয়।

  • ধৈর্যশীল শ্রোতা হোন।
  • কখনো বিরক্তি প্রকাশ করবেন না।
  • অন্যের রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্যে অপেক্ষা করুন তারপর তার সাথে তাল মিলান।
  • একই ভাবে অন্যকে আগে ধর্মের মতাদর্শ প্রকাশ করতে দিন পরে তার সাথে একমত হন।
  • শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দিন তবে সঙ্গীর সাড়া পেলে তবেই আগাবেন।
  • কখনোই অসুস্থতার কথা প্রকাশ করবেন না যদিনা বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে না পড়েন।
  • কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে আগেই নাক গলাবেন না। (ধীরে সুস্থে তিনিই আপনাকে জানাবেন)
  • অহংকার করবেন না- কেবল নীরবে নিজের গুরুত্বটা বুঝতে দিন।
  • আগোছালো থাকবেন না।
  • কখনও মাতাল হবে না।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

  • চার্লস পঞ্জি
  • আর্থার নাদেল
  • বার্নি ম্যাডফ

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Victor Lustig"Biography.com। ২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৩ 
  2. "Biography of Victor Lustig"Hoaxes, Scams, & Con Artists। ২১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৩ 
  3. "Victor Lustig Biography"। ২৮ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৮ 
  4. Velinger, Jan (১৫ অক্টোবর ২০০৩)। "Victor Lustig - the man who (could have) sold the world"Radio Prague 
  5. "Smooth Operator: How Victor Lustig Sold The Eiffel Tower"। ১৭ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৮ 
  6. "THE MAN WHO SOLD THE EIFFEL TOWER"। ১৪ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৮ 
  7. King, Gilbert (২২ আগস্ট ২০১২)। "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৫ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২০ 
  8. The Passing Parade - John Doremus. Evenings with George Illich, Radio 2CH, 20:40 ADST, 14 December 2009.
  9. Johnson, James F.; Miller, Floyd (১৯৬১)। The Man Who Sold the Eiffel Tower। Doubleday & Company Inc.। পৃষ্ঠা 216। এলসিসিএন 61009522 
  10. Lindskoog, Katherine Ann.; Fakes, Frauds & other malarkey

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • ভিক্টর লাস্টিগ সম্পর্কে রেডিও শোয়ের একটি পর্ব শুনুন