ভক্তবীরসিংহ তুলাধর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফিয়াটে ভক্ত বীর সিংহ, কালিম্পং, আনুমানিক ১৯৪৯
কাঠমান্ডুর ভুইখেলে দীপঙ্কর বুদ্ধকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য, ১৯৫২

ভক্তবীরসিংহ তুলাধর (দেবনাগরী: भक्तवीरसिंह तुलाधर) (১৯১২ - ১৯৮৯) হলেন একজন নেপালি বণিক এবং জনহিতৈষী। তিনি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে একটি বিশেষ সম্যক (सम्यक) উদ্‌যাপনের আয়োজন করেন যখন দেশে রাজনৈতিক সংকট বিরাজমান ছিল এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বে উভয় পক্ষের জন্যই বৌদ্ধদের ভিক্ষাদান উৎসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[১]

তিব্বতের ব্যবসা[সম্পাদনা]

ভক্ত বীর সিংহের পিতার নাম সম্যক সিংহ (সামেক রত্ন নামে পরিচিত)[২] এবং মায়ের নাম সানু মায়া। ভক্ত বীর কাঠমান্ডুর তুলাধর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ভক্ত বীরদের পৈতৃক নিবাস হ্নিয়োখা নামক স্থানে অবস্থিত, যা কাঠমান্ডুর একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। ভক্তবীর কংসকার পরিবারের লক্ষ্মী হীরার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ভগত সাহু নামে পরিচিত ছিলেন।

বণিক উত্তরপুরুষদের অনুসরণে ভক্ত বীর লাসায় একটি বাণিজ্য কুঠি পরিচালনা করতেন। তরুণ বয়সে তিনি পৈতৃক ব্যবসায় যোগদানের জন্য তিব্বতে গমন করেন। তিনি তিব্বতে খচ্চরচালিত ব্যবসার কেন্দ্র কাঠমান্ডু, লাসা ও ভারতের কালিম্পংয়ে সময় অতিবাহিত করেন।[৩]

সম্যক ও বিদ্রোহ[সম্পাদনা]

ভক্ত বীরের পিতা ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে পরের বছরে একটি বিশেষ সম্যক আয়োজনের জন্য পৃষ্ঠপোষকতার অঙ্গীকার করেন। এই সম্যকের আমন্ত্রণপত্রও তৈরি করা হয়ে যায়। কিন্তু সম্যকের প্রস্তুতি চলাকালেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার পুত্র সেই আয়োজনকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং যথাসময়ে সম্যকের আয়োজন করেন। কিন্তু সময়ের পূর্বে নেপালের বিদ্রোহ জেগে ওঠে এবং পরিকল্পনা মাঝ পথে থেমে যায়। যেহেতু সম্যকে রাষ্ট্রপ্রধানের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, ভক্ত বীর সিংহ এবং তার ভাইয়েরা কাকে দাওয়াত দেওয়া যায়, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান।[৪]

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে নেপালের প্রকৃত শাসক রাণা শাসকদের পতনের জন্য রাজা ত্রিভুবন ভারতের নয়া দিল্লিতে চলে যান। রাণারা এরপর তার নাতি জ্ঞানেন্দ্রকে রাজসিংহাসনে বসায়।[৫] এই কর্মের সাংস্কৃতিক অনুমোদনের জন্য রাজপরিবার জ্ঞানেন্দ্রকে প্রধান করে সম্যক আয়োজনের জন্য ভক্ত বীর সিংহকে চাপ দিতে থাকেন। বিদ্রোহীরা একই সময় এর বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। ভক্ত বীর তার পিতার সাম্প্রতিক মৃত্যুর অজুহাত দিয়ে সম্যকে বিলম্ব করতে থাকেন।[৬]

১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে রাণারা ক্ষমতাচ্যুত হলে ত্রিভুবন নেপালে ফিরে আসেন। এক বছর পর ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি ত্রিভুবনকে প্রধান করে সম্যক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি স্মরণীয় করে রাখতে ভুইখেলের উৎসব স্থলে একটি পাথুরে মণ্ডল স্থাপন করা হয়।[৭] এই ধর্মীয় উদ্‌যাপন বংশানুক্রমিক রাণা প্রধানমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে রাজা ত্রিভুবনের বিজয় স্মারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৮]

নেওয়ার বৌদ্ধ ধর্মের রীতি অনুসারে বৌদ্ধ ও ভিক্ষুদের দানের অনুশীলনকে স্মারক হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়। তিন দিনব্যাপী এই উৎসব কাঠমান্ডু দরবার চত্ত্বরস্বয়ম্ভূনাথ টিলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয়। এই উদ্‌যাপনের সময় দীপঙ্কর বুদ্ধের শত শত চিত্র বাহিত হয় এবং বিভিন্ন দেবতা ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতি রকমের খাদ্য নিবেদন করা হয়।[৯][১০]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Regmi Research Series"Regmi Research Series, Issues 1-99। ১৯৬৮। পৃষ্ঠা 60। 
  2. von Fürer Haimendorf, Christoph (১৯৬৬)। Caste and Kin in Nepal, India and Ceylon: Anthropological Studies in Hindu-Buddhist Contact Zones। Asia Publishing House। পৃষ্ঠা 128। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৪ 
  3. Tuladhar, Kamal Ratna (২০১১)। Caravan to Lhasa: A Merchant of Kathmandu in Traditional Tibet (2nd সংস্করণ)। Lijala & Tisa। পৃষ্ঠা 109। আইএসবিএন 978-99946-58-91-6 
  4. Gautama, Rājeśa (২০০৫)। Nepali Congress। Adroit Publishers। পৃষ্ঠা 367। আইএসবিএন 9788187392613 
  5. Kraemer, Karl-Heinz। "The Revolution of 1950/51"। Nepal Research। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১৩ 
  6. Tuladhar, Daman Raj (১৯৮০)। Contemporary Nepal, 1945-1955। Laxmi Publications। পৃষ্ঠা 243। 
  7. Shakya, Hem Raj (২০০৪)। Sri Svayambhu Mahacaitya (1st সংস্করণ)। Svayambhu Vikash Mandala। পৃষ্ঠা 617। আইএসবিএন 99933-864-0-5 
  8. Buffetrille, Katia, সম্পাদক (২০১২)। Revisiting Rituals in a Changing Tibetan World। BRILL। পৃষ্ঠা 232। আইএসবিএন 9789004232174 
  9. Lewis, Todd Thornton (২০০০)। Popular Buddhist Texts from Nepal: Narratives and Rituals of Newar Buddhism। State University of New York Press। আইএসবিএন 9780791446119। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৩ 
  10. Lewis, Todd T. (জানুয়ারি ১৯৯৬)। "Notes on the Uray and the Modernization of Newar Buddhism" (পিডিএফ)Contributions to Nepalese Studies। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৩  Page 112.