ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ

ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ (ওয়াইলি: Byang Chub Ye shes' Od, ZYPY: Jangchub Yeshe-Ö) (৯৫৯ - ১০৪০) তিব্বতের বিভক্তির যুগে নবনির্মিত গুজ রাজ্যের দ্বিতীয় রাজা ছিলেন।[১]
রাজ্যাভিষেক
[সম্পাদনা]ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ তিব্বত সাম্রাজ্যের অন্তিম সম্রাট খ্রি-উ-দুম-ব্ত্সানের পৌত্র স্ক্যিদ-ল্দে-ন্যিমা-গোনের পুত্র ও গুজ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ব্ক্রা-শিস-ম্গোনের পুত্র ছিলেন। স্ক্যিদ-ল্দে-ন্যিমা-গোনের অপর পুত্র ও জাংস্কার রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ল্দে-গ্ত্সুগ-ম্গোনের পুত্রহীন অবস্থায় মৃত্যু হলে ৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ গুজ, পু-হ্রাং, জাংস্কার, স্পিতি, লাহুল এবং উত্তর কিন্নর অঞ্চলকে একত্র করে এক সংগঠিত রাজ্যের অধীশ্বর হন।[২][৩]
বৌদ্ধ ধর্ম প্রসার
[সম্পাদনা]ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ রাজত্বকালের শুরুতে ব্কা'-শোগ-ছেন-মো (ওয়াইলি: bka’ shog chen mo) নামক একটি আদেশ জারি করে তার রাজত্বকে ধর্মীয় ভিত্তিতে চালনা করবেন বলে স্থির করেন। সেই কারণে তিনি একাধারে রাজা ও লামা উভয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।[৩][৪]
ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ তিব্বতে দ্বিতীয়বার বৌদ্ধধর্ম প্রসারের জন্যও বিখ্যাত। তিনি কাশ্মীরে বৌদ্ধধর্ম শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিব্বত থেকে একুশ জন শিক্ষার্থীকে পাঠান। তাদের এই শিক্ষালাভের উদ্দেশ্য ছিল সংস্কৃত থেকে তিব্বতী ভাষায় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থগুলির অনুবাদ করা। কিন্তু উত্তর ভারতের প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে একুশজনের মধ্যে উনিশজন মারা যান। রিন-ছেন-ব্জাং-পো এবং লেগ্স-পা'ই-শেস-রাব (ওয়াইলি: legs pa'i shes rab) নামক অবশিষ্ট দুইজন পরবর্তীকালে তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে সহায়ক হন। রিন-ছেন-ব্জাং-পো বহু সংস্কৃত গ্রন্থের তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করেন এবং লাদাখ অঞ্চলে বহু বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেন।[১]
৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ থোলিং বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেন। তার একটি আদেশের ফলে থোলিং অঞ্চলে বসবাসকারী যাযাবর ও কৃষিজীবী মানুষেরা এই বৌদ্ধবিহারের খরচ চালানোর জন্য কর প্রদান করতে বাধ্য থাকত।[১]
শেষ জীবন
[সম্পাদনা]ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ নাগ-ত্শো-লো-ত্সা-বা-ত্শুল-খ্রিম্স-র্গ্যাল-বা সহ কয়েক জন ভিক্ষুর হাতে প্রচুর স্বর্ণ উপঢৌকন দিয়ে অতীশ দীপঙ্করকে তিব্বত ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানালে দীপঙ্কর সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এতে নিরাশ না হয়ে তিনি সীমান্ত অঞ্চলে সোনা সংগ্রহের জন্য গেলে কারাখানী খানাতের শাসক তাকে বন্দী করেন ও প্রচুর সোনা মুক্তিপণ হিসেবে দাবী করেন। তিনি তার পুত্র ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদকে মুক্তিপণ দিতে বারণ করেন এবং ঐ অর্থ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানকে তিব্বতে আনানোর জন্য ব্যয় করতে বলেন। বন্দীদশায় তার মৃত্য হয়। ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদ গুজ রাজ্যের রাজা হয়ে গুং-থং-পা নামে এক বৌদ্ধ উপাসককে ও আরো কয়েক জন অনুগামীকে অতীশ দীপঙ্করকে তিব্বতে আনানোর দায়িত্ব দেন। এরা নেপালের পথে বিক্রমশীলা বিহারে উপস্থিত হন এবং দীপঙ্করের সাথে সাক্ষাৎ করে সমস্ত সোনা নিবেদন করে ভূতপূর্ব রাজা ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদের বন্দী হওয়ার কাহিনী ও তার শেষ ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করলে অতীশ দীপঙ্কর অভিভূত হয়ে তিব্বত যাত্রা করেন।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 3 Powers, John; Templeman, David (১৮ মে ২০১২)। Historical Dictionary of Tibet। Scarecrow Press। পৃ. ৬৭৩। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮১০৮-৭৯৮৪-৩। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Handa, O.C. (২০০৪)। Buddhist Monasteries of Himachal। Indus Publishing। পৃ. ৯৩। আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৩৮৭-১৭০-২। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৩।
- 1 2 Phuoc, Le Huu (মার্চ ২০১০)। Buddhist Architecture। Grafikol। পৃ. ৮৮। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৯৮৪৪০৪৩-০-৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Thakur, Laxman S. (নভেম্বর ১৯৯৪)। "A Tibetan Inscription by lHa Bla-ma Ye-shes-'od from dKor (sPu) Rediscovered"। Journal of the Royal Asiatic Society। Third Series, Vol. ৪, (3)। JSTOR: Cambridge University Press: ৩৬৯–৩৭৫।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অতিরিক্ত বিরামচিহ্ন (লিঙ্ক) - ↑ তিব্বতে সওয়া বছর - রাহুল সাংকৃত্যায়ন, অনুবাদ - মলয় চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক - চিরায়ত প্রকাশন প্রাইভেট লিমিটেড, ১২ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০৭৩, আইএসবিএন ৮১-৮৫৬৯৬-২৭-৬