ব্যবহারকারী আলাপ:Ashik Rahman Tajbir

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
আলোচনা যোগ করুন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সাম্প্রতিক মন্তব্য: Masum Ibn Musa কর্তৃক ৯ বছর পূর্বে

 মাসুম ইবনে মুসা  কথোপকথন ০৭:১৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ (ইউটিসি)উত্তর দিন

ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত জীবনি মুবারক।[সম্পাদনা]

ইসলামের ঊষালগ্ন থেকে এমন কিছু সোনার মানুষের আবির্ভাব হয়েছে, যাঁদের প্রভাব এবং বিভায় এ বসুন্ধরা এখনো এত অনিন্দ্যসুন্দর, শান্তি এবং জ্ঞানের প্রতিভু হয়ে যাঁরা এ বিশ্বকে আলোকিত করেছিলেন। পৃথিবীতে বিপ্লব সৃষ্টিকারী সেসব আলোকিত মানুষের মধ্যে অন্যতম হলেন- আমিরুল মু'মিনীন ফিল হাদিস, ইসলামের এক জ্বলন্ত মোজেজা, ইমাম বোখারি রহমতুল্লাহি আলাইহি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমানে উজবেকিস্তানের অধীনে মুসলিম অধ্যুষিত একটি প্রসিদ্ধ নগরী বোখারায় বিশ্ববরেণ্য হাদিস শাস্ত্রবিদ ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৯৪ হিজরির ১৩ শাওয়াল মোতাবেক ৮১০ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই জুমার নামাজের পর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবু আবদুল্লাহ। উপাধি আমিরুল মু'মিনীন ফিল হাদিস। জন্মস্থান বোখারায়, তাই তাঁকে বোখারি বলা হয়। তাঁর বাবা ইসমাইল, দাদা ইবরাহিম। তাঁর বাবা ছিলেন প্রসিদ্ধ হাদিস বিশারদ। তিনি ছিলেন তৎকালীন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি (৯৩-১৭৯ হি.) উনাদের অন্যতম ছাত্র। ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি শিক্ষা, জ্ঞান ও যোগ্যতা শুধু পিতার দিক থেকেই পাননি, বরং মায়ের দিক থেকেও অর্জন করেছিলেন। ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি -এর মা ছিলেন একজন মহীয়সী নারী। তিনি শৈশবেই পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হন। লালিত-পালিত হন তাঁর মমতাময়ী মায়ের কোলে।

শিক্ষাজীবন : ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি শিক্ষাজীবন শুরু হয় কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি কোরআন মুখস্থ করেন। ১০ বছর বয়স থেকে তিনি হাদিস মুখস্থ করা শুরু করেন। এ সময়ই তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ বিন মুবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ওয়াকি বিন জাররাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সব পাণ্ডুলিপি মুখস্থ করেন। তখন থেকে হাদিস চর্চার প্রতি তাঁর অন্য রকম আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তিনি নিজেই বলেন, '১০ বছর থেকে হাদিস চর্চায় আমি প্রচণ্ড আগ্রহ অনুভব করি।' তিনি ১৭ বছর বয়সে হাদিস শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৮ বছরের আগে থেকেই তাঁর কাছে লোকদের ভিড় বাড়তে থাকে। তিনি যখন হাদিস শিক্ষাদানে ব্রত হন, তখন তাঁর মুখে দাড়িও গজায়নি।

যাঁদের শিক্ষায় ধন্য হন ইমাম বোখারি : হাদিসের জ্ঞান অর্জনে হাজার হাজার মুহাদ্দিসের সান্নিধ্য লাভ করেছেন ইমাম বোখারি রহমতুল্লাহি আলাইহি। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মুহাদ্দিসগণ হলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি , ইয়াহইয়া বিন মায়িন, আলী ইবনুল মাদিনী এবং ইসহাক বিন রাহওয়াই রহমাতুল্লাহি আলাইহিম প্রমূখ।

উচ্চতর শিক্ষা লাভে বিদেশ গমন : ১৬ বছরেই তিনি মা এবং বড় ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম হজে যান। হজের পর তিনি মক্কা শরিফে থেকে যান এবং হেজাজের মুহাদ্দিসদের কাছে হাদিস পড়তে শুরু করেন। এ ছাড়া হাদিসের জ্ঞান লাভের অদম্য স্পৃহা নিয়ে তিনি চষে বেড়িয়েছেন সিরিয়া, বসরা, কুফা, মিসর, বাগদাদ, হেজাজসহ অসংখ্য ইসলামী নগরীতে। এসব শহর-নগরে তিনি বহুবার গিয়েছেন।

অসাধারণ স্মৃতিশক্তি : শৈশবেই তাঁর অসাধারণ স্মৃতিশক্তি এবং তীক্ষ্ন মেধার স্ফূরণ ঘটে। মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি হাদিসের সূত্রসহ কয়েক হাজার হাদিস মুখস্থ করেন। উল্লেখ্য, হাদিস মুখস্থ করা আর কোরআন মুখস্থ করার মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। কারণ, হাদিসে শুধু বিষয়বস্তুই নয়, বরং বর্ণনা সূত্রেও সুবিশাল ধারাবাহিকতা রয়েছে। আর অজস্র অগণিত বর্ণনাকারীর নাম একটার সঙ্গে আরেকটার পার্থক্যসহ মুখস্থ করা বিশাল ও অসাধারণ কৃতিত্ব। এ ব্যাপারে মুহাম্মদ বিন হামদুওয়াহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে বলতে শুনেছি, 'আমি এক লাখ বিশুদ্ধ হাদিস ও দুই লাখ অশুদ্ধ হাদিস মুখস্থ করেছি।' তাঁর স্মৃতিশক্তি কত প্রখর ছিল তা একটি ঘটনা থেকে অনুমেয়। ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর অন্য সহপাঠীর সঙ্গে বিভিন্ন মুহাদ্দিসের ক্লাসে অংশগ্রহণ করতেন। তখনকার যুগে নিয়ম ছিল শিক্ষক হাদিসের দরস দেবেন। আর ছাত্ররা তা নিজ নিজ খাতায় লিপিবদ্ধ করবে। ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সহপাঠীরা শিক্ষকের কাছ থেকে হাদিস শুনে গুরুত্বসহকারে তা লিখলেও তিনি নীরবে বসে থাকতেন। কিছুই লিখতেন না। তারপর কোনো কোনো সহপাঠী তাঁকে বলল, অযথা মূল্যবান সময় নষ্ট করে কী লাভ? হাদিস যেহেতু লিখছেন না, কাজেই আপনি চলে যান। তাদের এহেন কথায় বিরক্ত হয়ে তিনি বললেন, আচ্ছা! আপনাদের লিখিত কপিগুলো নিয়ে আসুন। তারা কপিগুলো নিয়ে আসলে তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শিক্ষকের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তাদের সামনে হাদিসগুলো পাঠ করে শোনান। সহপাঠীরা তার পাঠ শুনে নিজ নিজ কপি সংশোধন করে নেন। সেই মজলিশে তাদের লেখা অনুযায়ী তিনি প্রায় ১৫ হাজার হাদিস মুখস্থ শোনান। তাঁর অসাধারণ মনীষায় প্রভাবিত হয়ে তাঁর সুযোগ্য ছাত্র ইমাম মুসলিম বিন হাজ্জাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছিলেন। হে ইমাম! হিংসুক ছাড়া কেউ এ ধরায় আপনার সঙ্গে শত্রুতা করতে পারে না। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, হাদিস শাস্ত্রে আপনার সমতুল্য এ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।

রচনাবলি : ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। বেশ কিছু গ্রন্থ হারিয়ে গেছে আর কিছু এখনো পাণ্ডুলিপি আকারে রয়ে গেছে। আর কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলি হলো- বোখারি শরিফ'। তাঁর আরো গ্রন্থ হলো- কাজায়াস সাহাব ওয়াত্তাবিয়ীন, আত-তারীখুস সগীর, আল আদাবুল মুফরাদ, কিতাবুল কুনা, আত-তারীখুল কবীর, আত-তারীখুল ওয়াসাত, আল জামিউল কবীর, আল মুসনাদুল কবীর, উসামাস সাহাবাহ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বোখারি শরিফ রচনা : ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনের শ্রেষ্ঠতম কাজ হচ্ছে- বোখারি শরিফের মতো একটি অনবদ্য হাদিস গ্রন্থের রচনা। গ্রন্থটি বোখারি শরিফ নামে প্রসিদ্ধি পেলেও এর প্রকৃত নাম "আল জামে'উল মুসনাদ আস-সহিহ আল মুখতাছারু মিন উমুরি রাসুলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি'। মুহাদ্দিসীনদের অভিমত হচ্ছে, পবিত্র কোরআনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশুদ্ধ গ্রন্থ বোখারি শরিফ। ২১৭ হিজরিতে ২৩ বছর বয়সে তিনি পবিত্র মক্কার হারাম শরিফে এ গ্রন্থের সংকলন শুরু করেন। ১৬ বছর নিরবচ্ছিন্ন সাধনা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২৩৩ হিজরিতে এর সংকলন চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছে। বোখারি শরিফ সংকলনের জন্য ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি একবার তাঁর প্রসিদ্ধ শিক্ষক ইসহাক বিন রাহওয়াহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্রদের উদ্দেশে বললেন, 'তোমাদের মধ্যে কি কেউ আছে, গায়রে সহিহ হাদিস থেকে সহিহ হাদিস পার্থক্য করে একটা গ্রন্থ সংকলন করতে পারে? এ ছাড়াও ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি একবার স্বপ্নে দেখেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র দেহের ওপর মাছি এসে বসছে আর তিনি পাখা দিয়ে সেগুলোকে তাড়াচ্ছেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারী আলেমরা এর ব্যাখ্যা দিলেন, রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সহিহ হাদিসগুলো গায়রে সহিহ হাদিস থেকে পৃথক করার মতো মহান কাজ স্বপ্নদ্রষ্টা দ্বারা সম্পাদিত হবে। তখন থেকে ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মানসপটে একখানি সহিহ হাদিসের উচ্চাঙ্গ গ্রন্থ রচনার প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং অদম্য স্পৃহা জাগ্রত হয়। পরবর্তী ১৬ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল হিসেবে বিশ্বমুসলিম পায় একখানা বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ বোখারি শরিফ।

বোখারি শরিফ এত গ্রহণযোগ্য কেন? এ গ্রন্থটি এত বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত হওয়ার পেছনে বড় কারণ, এ গ্রন্থ সংকলনের ক্ষেত্রে ইমাম বোখারির রহমাতুল্লাহি আলাইহি অতিমাত্রায় সতর্কতা। বোখারি শরিফ সংকলনকালে তিনি ১৬ বছর রোজা রেখেছেন এবং প্রতিটি হাদিস গ্রন্থে সন্বিবেশিত করার আগে তিনি ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য গোসল করতেন। এরপর দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে ইস্তিখারা, মোরাকাবা এবং ধ্যানের মাধ্যমে হাদিসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেন। মুহাদ্দিসীনদের অভিমত হলো, এই গ্রন্থে যত হাদিস আছে, সব হাদিসই সহিহ এবং বিশুদ্ধ। তবে হ্যাঁ, অনেকেই ধারণা করেন, বোখারি শরিফের বাইরে কোনো সহিহ হাদিস নেই। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি সব সহিহ হাদিস সংকলন করেননি। বরং সহিহ হাদিসগুলোর মধ্যে যেসব হাদিস তাঁর বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়েছে, কেবল সেগুলোই তিনি সন্নিবেশ করেছেন বোখারি শরিফে। তিনি নিজেই বলেন, আমি আমার জামে বোখারি শরিফে সহিহ হাদিস ছাড়া অন্য কোনো হাদিস উল্লেখ করিনি। তবে গ্রন্থের কলেবর অতিমাত্রায় বড় হয়ে যাবে, এই আশঙ্কায় আমি অনেক হাদিসই এখানে অনুল্লেখ করেছি। তিনি আরো বলেন, আমি আমার গ্রন্থে প্রতিটি হাদিস লিপিবদ্ধ করার আগে ভালোভাবে গোসল করেছি এবং দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছি। বোখারি শরিফের আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তরজমাতুল বাব (শিরোনাম)। তিনি বোখারি শরিফের শিরোনামগুলো রাসুলে করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা মুবারক ও মসজিদে নববীর মধ্যস্থলে বসে লিখেছিলেন এবং প্রত্যেক শিরোনামের জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছেন।

হাদিস সংখ্যা : বোখারি শরিফে সর্বমোট ৯ হাজার ৮২টি হাদিস সংকলিত হয়েছে। তাকরার বা পুনরাবৃত্তি (যা বিশেষ প্রয়োজনে করা হয়েছে) ছাড়া এই সংখ্যা মাত্র দুই হাজার ৫ শ তেরতে দাঁড়ায়। মুআল্লাক ও মুতাবাআত যোগ করলে এর সংখ্যা পৌঁছায় ৯ হাজার ৮২-তে। উপমহাদেশে প্রচলিত বোখারি শরিফের বর্ণনাকারী আল্লামা ফারাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা অনুসারে বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (৭৭৩-৮৫২ হি.) কর্তৃক গণনার সংখ্যা এখানে প্রদত্ত হয়েছে। তবে ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মত হচ্ছে বোখারি শরিফে তাকরারসহ হাদিসের সংখ্যা ৭ হাজার ২৭৫। পুনরাবৃত্তি বাদ দিলে এর সংখ্যা হয় প্রায় চার হাজার, বোখারি শরিফে ২২টি ছুলাছি (যে হাদিসে ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যে মাত্র তিনজন বর্ণনাকারী রয়েছেন) হাদিসে আছে, যা সিহাহ সিত্তার (প্রসিদ্ধ ছয় বিশুদ্ধ গ্রন্থ) অন্য কোনো গ্রন্থে নেই। বোখারি শরিফে ৯৮টি অধ্যায় এবং তিন হাজার ৪৫০টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।

চারিত্রিক গুণাবলি : ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি খুব অল্প খেতেন। তিনি ছিলেন দরবেশ প্রকৃতির, খোদাভীরু ও যাহেদ। ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতার সম্পর্ক ছিল। দানশীলতায় ছিলেন তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর সততা, বিশ্বস্ততা এবং খোদাভীতি তখন জনশ্রুতিতে পরিণত হয়েছিল।

অন্তিম সায়াহ্নে ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি : ইসলামী জগতের কিংবদন্তি পুরুষ ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি সমরকন্দের খরতঙ্গে ৬২ বছর বয়সে ২৫৬ হিজরীর ১ শাওয়াল, ৩১ আগস্ট, ৮৭০ খ্রিস্টাব্দের শুক্রবার দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেন। সমরকন্দের নিকটবর্তী গ্রাম খরতঙ্গে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন।

কবর থেকে সুগন্ধি বের হওয়া : জানাজার পর যখন তাঁকে কবরে রাখা হয়, তখন তাঁর কবরের মাটি থেকে মেশক আম্বরের সুগদ্ধ বাতাস প্রবাহিত হয়ে চারদিক মোহিত করে তোলে। অনেক দিন পর্যন্ত সেখানকার লোকেরা কবরের মাটি নিয়ে তা থেকে মেশক আম্বরের সুগন্ধ নিতেন এবং আশ্চর্যবোধ করতেন।

মুজাদ্দিদ কি? বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ কে?[সম্পাদনা]

আবু হোরাইরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার থেকে বর্ণিত রাসলল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বলেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তিনি উম্মতে মুহম্মদীর জন্যে প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে একজন ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন(যামানার ইমাম), যিনি তাদের দ্বীন তথা শরীয়তের আক্বীদা ও আমলের তাজদীদ বা সংস্কার করবেন ।” (আবূ দাউদ শরীফ, কিতাব:৩৭ ‘কিতাব আল-মালাহিম’, হাদীস নম্বর ৪২৭৮; মিশকাত শরীফ; দাইলামী শরীফ)

অর্থাৎ দ্বীন তথা শরীয়তের আক্বীদা ও আমলের তাজদীদ বা সংস্কার যিনি করেন তাঁকে মুজাদ্দিদ বা যামানার ইমাম বলে।

মুজাদ্দিদগণ প্রত্যেকে তাঁদের স্ব স্ব যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ হন। এ ব্যপারে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি তার যামানার ইমামকে চিনলো না সে.জাহিলিয়াতের মৃত্যূর ন্যায় মৃত্যূবরণ করলো।” (মুসলিম শরীফ)

ওলীআল্লাহগণ সম্পর্কে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “সাবধান! নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক উনার ওলী তাদের কোন ভয় নেই এবং চিন্তা-পেরেশানী­ও নেই।” (সূরা ইউনূছঃ আয়াত শরীফ ৬২)

যামানার ইমাম তথা ওলীআল্লাহগণের বিরোধিতা প্রসঙ্গে হাদীসে কুদসী শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি কোন ওলীআল্লাহ উনাদের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করে স্বয়ং আমি (আল্লাহ পাক তাবারাকতা আলা) তার সঙ্গে জিহাদ ঘোষণা করি।” (বুখারী শরীফ)

সহিহ দ্বীন তথা শরীয়তের আক্বীদা ও আমল মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহ পাক ন্যস্ত করেছেন হক্কানী আলিম তথা আউলিয়ায়ে কিরামগণের উপর। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাযাহ্ শরীফ, আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মুজাদ্দিদ বা যামানার ইমাম উনার কাজ কিঃ

(১) ওলামায়ে হক্বদেরকে হক্ব পথে কায়েম থাকার জন্য সাহায্য করা এবং ওলামায়ে সু’দের তথা দুনিয়াদার আলেমদের গোমরাহী হতে ফিরিয়ে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী আমল করতে সাহায্য করা। (২) খারাপ বিদয়াত, কুফরী সহ যাবতীয় ভ্রান্ত বিষয় ইসলাম থেকে দূরীভূত করে সুন্নাহ্ প্রতিষ্ঠা করা। (৩) মাসয়ালা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে মানুষ হারাম কাজে লিপ্ত হলে তা হতে হালাল পথ প্রদর্শন করা। (৪) খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার কৌশিশ করা। ইত্যাদি

সুতরাং মুজাদ্দিদগণের এ দুনিয়াতে আগমনের কারণ বা উদ্দেশ্য হল- সমাজে প্রচলিত যাবতীয় বদ ও কুফরী আক্বীদা, খারাপ বিদ’আত-বেশরা ও শরীয়ত বিরোধী কুসংস্কারমুলক আমল সমুহের মুলউৎপাটন করা ও ছহীহ্ আক্বীদা ও সুন্নতের আমল সমুহে সকলকে অভ্যস্ত করে তোলা এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার চেষ্টা করা।

মুজাদ্দিদগণর পরিচয়:

আসুন এখন জেনে নেই সেইসব মুজাদ্দিদুয যামান বা যামানার ইমাম আলাইহিস সালাম উনাদের সম্পর্কে যারা ছিলেন যামানার ইমাম।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের মধ্যে প্রতি হিজরী শতকের মাথায় মাথায় একজন করে মুজাদ্দিদ বা দীন সংস্কারক প্রেরণ করবেন। যিনি দীন ইসলামকে (অর্থাৎ এর মধ্যে প্রবিষ্ট যাবতীয় বিদ্য়াত, বেশরা, কুফরী, শিরেকী ইত্যাদি ধ্বংস করার মাধ্যমে) তাজদীদ বা সংস্কার করবেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ, শরহে বদরুদ্দীন আইনী, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ, ফতহুল মুলহিম, মিশকাত শরীফ, মিরক্বাত, লুমুয়াত, আশয়াতুল লুমুয়াত, মুযাহিরে হক্ব, শরহুত ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, মিরয়াত) উক্ত হাদীছ শরীফ মুতাবিক আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিছাল শরীফ-এর পর ২য় হিজরী শতক থেকে মুজাদ্দিদ আগমনের ধারা শুরু হয়েছে। মনে রাখতে হবে, যিনি যে যামানার মূল মুজাদ্দিদ তাঁকে ইমামুল আইম্মাহ, আল গাউছুল আ’যমও বলা হয়। নিম্নে প্রত্যেক হিজরী শতকের মূল মুজাদ্দিদগণের তালিকা পেশ করা হলো।

১ম হিজরী শতকঃ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানা তথা ১ম হিজরী শতক ১০০ থেকে ১১০ হিজরী পর্যন্ত। ১ম হিজরী শতক হচ্ছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানা। অতএব, মুজাদ্দিদ আগমন শুরু হয়েছে ২য় হিজরী শতক থেকে।

২য় হিজরী শতকঃ তাবিয়ী, আল মুজতাহিদুল মুতলাক্ব, আল ইমামুল আ’যম ২য় হিজরী শতকের আল মুজাদ্দিদুল আ’যম, আল মুজাদ্দিদুল আউয়াল, হাকিমুল হাদীছ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা নু’মান বিন ছাবিত ইবনে যাওত্বী কূফী আলাইহিস সালাম। জন্ম মুবারকঃ ৮০ হিজরী। ওফাত মুবারকঃ ১৫০ হিজরী। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব হানাফী মাযহাবের মহান ইমাম এবং ইলমুল ফিক্বহ ও ইলমুল উছূল-এর প্রতিষ্ঠাতা । উনার লিখিত কিতাবঃ আল ফিক্বহুল আকবর (আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ-এর আকাইদ সম্পর্কিত)। (কাশফুয্ যুনূন, তা’রীখুল বাগদাদী, সীরাতুন নুবালা, হায়াতে আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ত্ববাকাতুল হানাফিয়া ইত্যাদি)

৩য় হিজরী শতকঃ ৩য় হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, আল মুজতাহিদুল মুত্বলাক, ইমামুল আইম্মাহ্, হাকীমুল হাদীছ, মুফাস্সির, ফক্বীহ, হযরত ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে হাম্বল ইবনে হিলাল ইবনে ইদ্রীস শাইবানী মারূযী বাগদাদী আলাইহিস সালাম। তিনি মাযহাব চতুষ্টয়ের মধ্যে হাম্বলী মাযহাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা। জন্ম মুবারকঃ ১৬৪ হিজরী, ওফাত মুবারকঃ ২৪১ হিজরী। উনার লেখা কিতাব সমূহ (১) তাফসীরুল কুরআন (২) কিতাবুল মুসনাদ ইয়াহতাবী আলা আরবাঈনা আলাফি হাদীছ (৩) ত্বায়াতুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (৪) কিতাবুল আশরিবাতিছ ছগীর (৫) কিতাবুল ঈমান (৬) কিতাবুর রদ্দ্ আলাল জাহ্মিয়াহ (৭) কিতাবুয্ যুহ্দ (৮) কিতাবুল ইলাল ফিল হাদীছ (৯) কিতাবুল ফারায়িদ্ব (১০) কিতাবুল্ ফাদ্বায়িল (১১) কিতাবুল মাসায়িল (১২) কিতাবুল মানাসিখ (১৩) কিতাবু মানক্বিবিল ইমাম আলী ইবনে আবী ত্বালিব কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু আনহু (১৪) কিতাবুন্ নাসিখ ওয়াল মানসূখ মিনাল কুরআন। (কাশফুয্ যুনূন ৫ জি: ৪২ পৃষ্ঠা, ইকমাল ফী আসমায়ির রিজাল লিছাহিবিল মিশকাত, মিফতাহুস্ সায়াদা, আল হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন)

৪র্থ হিজরী শতকঃ ৪র্থ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুতাকাল্লিম, মুফাস্সির, উছূলী, হানাফী মাযহাবের আক্বায়িদী ইমাম, ইমামুল হুদা, হযরত আবূ মানছূর মুহম্মদ ইবনে মাহমূদ ইবনে মাহমূদ মাতুরীদী হানাফী সমরকন্দী আলাইহিস সালাম। যিনি হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ ও মুজতাহিদ ছিলেন। জন্ম মুবারক: ২৭০ মতান্তরে ২৭১ হিজরী। ওফাত মুবারক: ৩৩৩ হিজরী। উনার লিখিত কিতাবঃ ১. তা’বীলাতু আহলিস্ সুন্নাহ (তাফসীরুল কুরআন সম্পর্কিত) ২. তা’বীলাতুল্ কুরআন ৩. শরহুল ফিক্বহিল আকবর আল মানসূব লিআবী হানীফাহ্ ৪. বয়ানু ওয়াহমিল্ মু’তাযিলাহ্ ৫. মা’খাযুশ্ শারায়ি’ ফী উছূলিল্ ফিক্বহ ৬. আদ্ দুরার ফী উছূলিদ্ দীন ৭. আর রদ্দু আলা তাহযীবিল কা’বী ফিল জাদাল ৮. আক্বীদাতুল মাতুরীদী ৯. কিতাবুত তাওহীদ ওয়া ইছবাতিছ্ ছিফাত ১০. কিতাবুল জাদাল ১১. আল মাক্বালাতু, ইত্যাদি। (কাশফুয্ যুনূন লিহাজী খলীফাহ্ হানাফী ৬ খ- ৩০ পৃষ্ঠা, মু’জামুল মুওয়াল্লিফীন ১১ খ- ৩০০ পৃষ্ঠা, ত্ববাকাতুল হানাফিয়াহ ২ খ- ১৮ পৃষ্ঠা, তাজুত্ তারাজিম লিইবনি ক্বাত্বলূবাগা ৪৩, ৪৪ পৃষ্ঠা, হাদিয়াতুল আরিফীন লিল বাগদাদী ২ খ- ৩৬, ৩৭ পৃষ্ঠা)

৫ম হিজরী শতকঃ ৫ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ও ইমাম, হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম আবূ হামিদ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ গাজ্জালি তূসী শাফিয়ী আশয়ারী আলাইহিস সালাম। জন্ম মুবারক: ৪৫০ হিজরী, ওফাত মুবারক: ৫০৫ হিজরী। উনার লিখিত কিতাবঃ আখেরাত (মৃত্যুর পরের জিবন), দাকায়েকুল আখবার (সৃষ্টির রহস্য), মিশকাতুল আনোয়ার, মুকাশাফাতুল কুলূব বা আত্মার আলোকমণি, জিবনের ক্ষতি, সবর ও শোকর, সৃষ্টি দর্শন, এহইয়া উলুমুদ্দীন, কিমিয়ায়ে সা’আদাত, ধন সম্পদের লোভ ও কৃপণতা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, ইত্যাদি।

৬ষ্ঠ হিজরী শতকঃ ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, ক্বাদিরিয়া ত্বরীক্বার ইমাম, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, আল গাউছুল আযম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মুহিউদ্দীন, সাইয়্যিদ আবূ মুহম্মদ আব্দুল ক্বাদির ইবনে আবূ ছালিহ ইবনে আব্দুল্লাহ জীলানী হাম্বলী আশয়ারী বাগদাদী আলাইহিস সালাম। জন্ম মুবারক: ৪৭১ হিজরী ১লা রমাদ্বান শরীফ ছুবহি ছাদিকের সময়, ওফাত মুবারক: ৫৬১ হিজরী ১১ রবীউছ ছানী সোমবার ছূবহি ছাদিকের সময়।

৭ম হিজরী শতকঃ ৭ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, চীশতিয়া ত্বরীক্বার ইমাম, গরীবে নেওয়ায, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জিরী হানাফী মাতুরীদী আলাইহিস সালাম। জন্ম মুবারক: ৫৩৬ হিজরী ১৪ই রজব ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি ছুবহি ছাদিকের সময়। ওফাত মুবারক: ৬৩৩ হিজরী। তিনি মোট ৯৭ বছর হায়াত মুবারক পেয়েছিলেন।

৮ম হিজরী শতকঃ ৮ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, সুলত্বানুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল আউলিয়া, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, ফক্বীহ, লাগবী, নাহ্বী, ছরফী, মানতিক্বী, হযরত ইমাম ছূফী নিযামুদ্দীন আউলিয়া মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে আলী বুখারী বাদায়ূনী দিহলবী হানাফী মাতুরীদী চীশ্তী আলাইহিস সালাম। গ্রহণযোগ্য মতে; জন্ম মুবারক: ৬৬০ হিজরী, ওফাত মুবারক: ৭৪৫ হিজরী। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম শ্রেণীর মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির ও ফক্বীহগণের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন।

৯ম হিজরী শতকঃ ৯ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, নকশ্বন্দিয়া ত্বরীকার ইমাম, আরিফ বিল্লাহ ছূফী শাইখ খাজা বাহাউদ্দীন মুহম্মদ ইবনে আহমদ যুহুরী ফারূক্বী নক্শবন্দী বুখারী হানাফী মাতুরীদী আলাইহিস সালাম। জন্ম মুবারক: ৭২৮ হিজরী, ওফাত মুবারক: ৮০৮ হিজরী, মতান্তরে ৭৯১ হিজরী।

১০ম হিজরী শতকঃ ১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, ইমাম ও মুজতাহিদ, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, ফক্বীহ, মুওয়াররিখ, আদীব, মু’তাকাল্লিম, আল্লামা আলিম যাহিদ ইবনে কামালুদ্দীন আবূ বকর ইবনে মুহম্মদ ইবনে আবূ বকর ইবনে উছমান ইবনে মুহম্মদ ইবনে খাদ্বর ইবনে আইয়ূব ইবনে মুহম্মদ ইবনে হুমামুদ্দীন খুদ্বাইরী সুয়ূত্বী মিছরী তূলূনী শাফিয়ী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। জন্ম মুবারক: ৮৪৯ হিজরী ৯ জুমাদাল ঊলা, ওফাত মুবারক: ৯১১ হিজরী।

১১তম হিজরী শতকঃ একাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদিয়া ত্বরীকার ইমাম, ইমামু রব্বানী, কাইয়্যূমে যামানী, আফদ্বালুল আউলিয়া, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, ফক্বীহ, মুওয়াররিখ, মুতাকাল্লিম, উছূলী, নাহবী, ছরফী, শাহ ছূফী হযরত শাইখ মুজাদ্দিদু আলফি ছানী আহমদ ইবনে আব্দুল আহাদ সিরহিন্দী ফারূক্বী নক্শবন্দী হানাফী মাতুরীদী আলাইহিস সালাম। জন্ম মুবারক: ৯৭১ হিজরী, ওফাত মুবারক: ১০৩৪ হিজরী।

১২তম হিজরী শতকঃ দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, ফক্বীহ, উছূলী, শাহ ছূফী হযরত আল্লামা আবূ আব্দিল্লাহ শাহ ওয়ালিউল্লাহ আহমদ ইবনে আব্দুর রহীম দিহলবী উমারী হিন্দী হানাফী মাতুরীদী নক্শবন্দী মুজাদ্দিদী ক্বাদিরী চীশ্তী আলাইহিস সালাম। জন্ম মুবারক: ১১১৪ হিজরী, ওফাত মুবারক: ১১৭৬ হিজরী।

১৩তম হিজরী শতকঃ ত্রয়োদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদুয্ যামান, মুহম্মদিয়াহ ত্বরীকার ইমাম, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল্ মুসলিমীন, শহীদে বালাকোট, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, ফক্বীহ, মুতাকাল্লিম, ছূফী হযরত আল্লামা সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী হানাফী মাতুরীদী নক্শবন্দী মুজাদ্দিদী ক্বাদিরী চীশ্তী হিন্দী আলাইহিস সালাম। তিনি হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দিহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রধান খলীফা এবং হযরত শাহ সূফী নূর মুহম্মদ নিযামপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত শাহ ছূফী কারামত আলী জৌনপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শাইখ বা মুরশিদ ছিলেন। জন্ম মুবারক: ১২০১ হিজরী, শাহাদত মুবারক: ১২৪৬ হিজরী। (মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৮২/১০৯)

১৪তম হিজরী শতকঃ চতুর্দশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদুয্ যামান, ইমাম, আমীরুশ্ শরীয়াহ ওয়াত ত্বরীক্বাহ, কুতুবুল আলম, শাহ ছূফী আলহাজ্জ হযরত মাওলানা আল্লামা আব্দুল্লাহিল্ মা’রূফ মুহম্মদ আবূ বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী হানাফী মাতুরীদী নক্শবন্দী মুজাদ্দিদী ক্বাদিরী চীশতী মুহম্মদী আলাইহিস সালাম। তিনি অসংখ্য দৈনিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। জন্ম মুবারক: ১২৬৩ হিজরী, ওফাত মুবারক: ১৩৫৮ হিজরী। (ফুরফুরা শরীফ-এর ইতিবৃত্ত, হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলার বিস্তারিত জীবনী লি বশীরহাটী)

বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ কে? তা চিনতে হলে খুজতে হুবে পবিত্র কোরআন পবিত্র সুন্নাহ আর ইজমা এবং ক্বিয়াস শরিফ উনাদের মাধ্যমে।