বিষয়বস্তুতে চলুন

বেতার জগৎ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বেতার জগৎ-পাক্ষিক পত্রিকার প্রথম বর্ষের পঞ্চদশ সংখ্যার প্রথম পাতা

বেতার জগৎ বেতারের যাবতীয় অনুষ্ঠানের আগাম খবর শ্রোতাদের পৌঁছে দেওয়ার পাক্ষিক পত্রিকা। তৎকালীন 'দ্য ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি' ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ১ নম্বর গারস্টিন প্লেস হতে পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু করে। []

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

'দ্য ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানির উদ্যোগে কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শুরু হয়েছিল ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট। প্রথম ঘোষণা ঝঙ্কিত হয়েছিল- ক্যালকাটা কলিং সম্ভাষণে।[] কলকাতা কেন্দ্রের মুখপত্র হিসাবে বেতার জগৎ-এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর। [] প্রথমে ছিল আট পাতার কাগজ। তারপর আস্তে আস্তে অবয়ব বৃদ্ধি পায়। [] পত্রিকাটির নামকরণ করেন বীরেন রায় এবং সম্পাদনার দায়িত্ব পান সাহিত্যিক প্রেমাঙ্কুর আতর্থী। দু'বছর পর তিনি নবগঠিত ‘নিউ থিয়েটার্স’ -এ চলে গেলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন নলিনীকান্ত সরকার। তবে পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে ছাপা হত ভারতীয় অনুষ্ঠানের পরিচালকের নাম, পরে স্টেশন ডিরেক্টরের নাম। স্বাধীনতা লাভের পর পৃথকভাবে প্রকৃত সম্পাদকের নাম মুদ্রিত হতে থাকে। পরবর্তীতে যাঁরা সম্পাদনা করেন তাঁরা হলেন – গণেশচন্দ্র চক্রবর্তী, পি বি রায়, অনিল বরন গঙ্গোপাধ্যায়, বিবেকানন্দ রায়, সুভাষ বসু, অসীম সোম প্রমুখ। [] পত্রিকায় আগামী পক্ষকালের অনুষ্ঠান সূচি ছাড়াও প্রকাশিত হতে থাকে বেতারে প্রচারিত কথিকা, সমীক্ষা, গান, গানের স্বরলিপি, ছড়া, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ। প্রকাশিত হত বেতার শিল্পী তথা কলাকুশলীদের ছবি। শ্রোতারা পত্রিকাটির মাধ্যমে সেসময়ে তাদের দেখতে পেতেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে প্রচার সংখ্যা ও জনপ্রিয়তা। ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল রেডিওর শ্রোতা ও পাঠক সমাজে। একসময় প্রচার লক্ষাধিক সংখ্যায় পৌঁছেছিল এবং তা সামলাতে আকাশবাণী ভবনে আলাদা অফিসের ব্যবস্থা করতে হয়। [] পরে পত্রিকাটিতে কলকাতা কেন্দ্র ছাড়াও, ঢাকা বেতারের অনুষ্ঠান সূচিও প্রকাশিত হতে থাকে। []

নলিনীকান্ত সরকার তেরো বৎসরের বেশি পত্রিকাটির সম্পাদনা করেন এবং তাঁর সম্পাদনা কালেই বিশেষ বিশেষ সংখ্যার পাশাপাশি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রথম প্রকাশিত হতে থাকে ‘বেতার জগৎ’-এর শারদসংখ্যা। [] ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে নলিনীকান্ত সরকার, সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীদের অনুরোধে ‘বেতারজগৎ’ পত্রিকার জন্য রবীন্দ্রনাথ ৮ আগষ্ট শিরোনামহীন একটি কবিতা লেখেন—

“ধরার আঙিনা হতে ওই শোনো

উঠিল আকাশবাণী

অমরলোকের মহিমা দিল যে

মর্ত্যলোকেরে আনি।

সরস্বতীর আসন পাতিল

নীল গগনের মাঝে,

আলোকবীণার সভামণ্ডলে

মানুষের বীণা বাজে।

সুরের প্রবাহ ধায় সুরলোকে,

দূরকে সে নেয় জিনি।

কবিকল্পনা বহিয়া চলিল

অলখ সৌদামিনী।

ভাষারথ ধায় পুবে পশ্চিমে

সূর্যরথের সাথে--

উধাও হইল মানবচিত্ত

স্বর্গের সীমানাতে।”

কবিতাটি 'বেতার জগৎ'-এর ১৬ আগষ্ট সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ধারণা করা হয় এই কবিতায় উল্লেখিত আকাশবাণী শব্দটি রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে 'আকাশবাণী কলকাতা' কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া রেডিও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ভারতীয় ভাষায় নামের পরিবর্তনে - আকাশবাণী রাখা হয়। []

পত্রিকা প্রকাশনার ব্যয়ভার অসম্ভব বৃদ্ধি হওয়ার কারণে সমস্ত প্রকাশনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। তদনুসারে, ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত সংখ্যাটিই ছিল 'বেতার জগৎ' পাক্ষিক পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা।

সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বেতার জগৎ-এর ন্যায় ইংরাজীতে দ্য ইন্ডিয়ান লিসনার ও হিন্দিতে সারঙ্ নামে আরো দুটি পত্রিকা অল ইন্ডিয়া রেডিও প্রকাশ করত। একই কারণে এদুটিরও প্রকাশনা ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দেই বন্ধ হয়ে যায়।[]

সংরক্ষণ

[সম্পাদনা]

পত্রিকাটির প্রতি আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের বেতারপ্রেমী অগণিত শ্রোতা ও পাঠকের অসীম অনুরাগের ইতিহাস ধরে রাখার জন্য প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকারের উৎসাহে আকাশবাণী কলকাতা পাঠকের সাহায্যে পুরানো সংগ্রহ ইত্যাদির মাধ্যমে ই-বুক তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। পুরনো সব আলোকচিত্র, নথিপত্রও ডিজিটাইজ করার কাজ চলছে। [] ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে 'বেতার জগৎ'-এ গল্প, প্রবন্ধ বা নির্বাচিত কিছু সংকলন ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন-

  • বসু, অজিত (সম্পাদক) (২০১৫)। নির্বাচিত বেতার জগৎ। পারুল প্রকাশনী, কলকাতা। আইএসবিএন 978-93-8434-676-8 
  • চক্রবর্তী, অমিত; পাঠক, শোভন (১৯৯৮)। বেতার জগৎ সেরা গল্প সংকলন। মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন 81-7293-559-5 
  • চক্রবর্তী, অমিত; দাশগুপ্ত, কৃষ্ণশর্বরী (২০২২)। বেতার জগৎ সেরা প্রবন্ধ সংকলন। মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন 978-81-7293-618-1 

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "কলকাতার কড়চা - ইতিহাস বাঁচাতে চাইছে আকাশবাণী"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-২৯ 
  2. "রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ছিল 'আকাশবাণী' শব্দটি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-২৯ 
  3. "ধরার আঙিনা হতে ঐ শোনো উঠিল আকাশবাণী!"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-১৯ 
  4. চক্রবর্তী, অমিত (সম্পাদনা) (১৯৯৮)। বেতার জগৎ- সেরা গল্প সংকলন। মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড,কলকাতা। আইএসবিএন 81-7293-559-5 
  5. "1956 : AIR becomes Akashvani"Frontline। The Hindu Group। ১১ আগস্ট ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-০২