সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী
সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৫ অক্টোবর ১৯৬৫ | (বয়স ৭০)
পেশা | সঙ্গীতজ্ঞ |
পিতা-মাতা | রাজচন্দ্র চক্রবর্তী (পিতা) |
সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী (৭ এপ্রিল ১৮৯৫ - ৫ অক্টোবর ১৯৬৫)[১] ছিলেন একজন বিপ্লবী, আইনজীবি এবং সঙ্গীত-সাধক ও বিশেষজ্ঞ।[২]
জীবনী
[সম্পাদনা]সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর জন্ম ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ এপ্রিল (১৩০১ বঙ্গাব্দের ২২ চৈত্র) ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী কানিহারী গ্রামে। পিতা রাজচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জমিদার সূর্যকান্তের আইনী উপদেষ্টা। সুরেশচন্দ্রের প্রাথমিক শিক্ষা স্থানীয় পাঠশালায়। কৈশোরে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। সেই সময় মায়ের দৃষ্টি এড়িয়ে তিনি বিপ্লবী স্বদেশী দলে যোগদান করেন। বিষয়টি জানার পর ছেলেকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য, তাঁর মা অল্প বয়সে স্থানীয় একটি সুন্দরী কন্যার সাথে বিবাহ দেন। কিন্তু সুরেশচন্দ্র কিছুদিন পর স্ত্রী-সংসার ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। দীর্ঘদিন তাঁর পরিবার এবং পুলিশ বিভাগ তাঁর সন্ধান পান নি। গৃহত্যাগের অনেক দিন পর বিপ্লবী দলের সদস্য হিসাবে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং প্রায় চার বছর কারাবাসে থাকেন। জেল থেকে মুক্তি লাভের পর তিনি এক বছর পুলিশের নজরদারিতে গ্রামে কাটান।[১] পরে গৌরীপুরেই স্কুল কলেজের ধারাবাহিক শিক্ষাক্রম অনুসারে বিএ এবং বিএল পাশ করেন।[২][৩] ছাত্রজীবনে বৈপ্লবিক কাজকর্মের পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন।[২] এদিকে প্রথাগত শিক্ষালাভের সময় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সংস্পর্শে এসে সঙ্গীতকেই জীবনের সাধনারূপে গ্রহণ করেন। সাত বৎসরের অধ্যাবসায়ে অনুশীলন করেন নানাবিধ সঙ্গীতশাস্ত্র ও রাগ-রাগিনী। গৌরীপুরেই প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উস্তাদ বিলায়েত খানের পিতা এনায়েত খানের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়।[৩] সঙ্গীতের বিভিন্ন ঘরানার নানা দিকে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং 'সঙ্গীতশাস্ত্রী' নামে পরিচিত হন। তবে সুকণ্ঠের অধিকারী না হওয়ার কারণে তিনি নিজেকে একজন অসাধারণ এস্রাজবাদক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিপ্লবী বারীন্দ্র কুমার ঘোষের বিজলী পত্রিকার সম্পাদক নলিনীকান্ত সরকারের সাথে লেখালেখির সূত্রে আগে থেকেই সুরেশচন্দ্রের পরিচয় ছিল। নলিনীকান্ত সরকারই ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তাকে সঙ্গীতবেত্তা হিসাবে অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। বেতারে নতুন নতুন সঙ্গীতানুষ্ঠান সংযোজনের পরিকল্পক ছাড়াও নানা অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্ভাবনায় ছিল তার অসামান্য অবদান। আকাশবাণীতে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে নিয়োগে সঙ্গীতজ্ঞ সুরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী বড় হাত ছিল। কাজী নজরুল যে হারমনি' নামে যে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান মিউজিক্যাল প্রোগ্রাম পরিচালনা করেন তার গবেষণার কাজটি করেছেন সংগীতজ্ঞ সুরেশচন্দ্র। [৪]
শেষ জীবনে তিনি দিল্লীতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গীত বিভাগের সহকারী প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর (১৩৭২ বঙ্গাব্দের ১৭ আশ্বিন) তিনি পরলোক গমন করেন। সঙ্গীতের বিষয়ে কয়েকটি তথ্যবহুল প্রবন্ধ ও মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন তিনি।[২]
- সঙ্গীত প্রবেশ (তিন খণ্ড), ডি এম লাইব্রেরী, কলকাতা
- রাগ-রূপায়ণ (১৯৬৫) জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী (১৮৯৫ - ১৯৬৫)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০২।
- ↑ ক খ গ ঘ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৮১৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ ক খ "সংগীতের সুর ধরে মিলেমিশে গিয়েছে গুরু-শিষ্যের জীবনে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০২।
- ↑ "Pride of AIR & DD - Kazi Nazrul Islam (From the Archieves)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০২।