বিশ্বব্যাপী নারী ধর্মঘট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বিশ্বব্যাপী নারী ধর্মঘট হলো এমন একটি আন্দোলন যা সারা বিশ্বের সমস্ত মহিলাদের কাজ এবং তাদের জীবনের মূল্যকে এই আন্দোলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। বিশ্বের অনেক দেশ যেমন গায়ানা, হাইতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, ইতালি,[১] পেরু, লুক্সেমবার্গ, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের নারীরা সক্রিয়ভাবে এই প্রচার অভিযানে অংশগ্রহণ করে। নারীরা তাদের অস্বীকৃত শ্রমশক্তির অবদানের স্বীকৃতি ও ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে এই প্রচারাভিযানে সামিল হয়।

পটভূমি[সম্পাদনা]

২০১৭ সালের ৮ মার্চ তুরিনে (ইতালি) ধর্মঘটের সাথে যুক্ত একটি বিক্ষোভের পোস্টার।

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ পরিবারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কাজ মহিলা এবং মেয়েরা করে। এই কাজের মধ্যে রয়েছে শারীরিক শ্রম যেমন থালা-বাসন ধোয়া, লন্ড্রির কাজ, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা ইত্যাদি। এছাড়া মানসিক শ্রমের প্রয়োজন হয় এমন কাজ যেমন, জন্মদিনের কার্ড পাঠানো, পারিবারিক ছুটির আয়োজন করা, ছুটির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ইত্যাদি এইসব কাজও তাদের করতে হয়। গৃহস্থালির বেশিরভাগ এই কাজগুলিকে কেউ কেউ "দ্বিতীয় শিফট" হিসাবে উল্লেখ করেন। এই কাজগুলির জন্য নারীরা কোনো অর্থ পান না। এই কাজগুলি অবৈতনিক থেকে যায়। তাই এই কাজগুলি একটি দেশের মোট জাতীয় পণ্য বা মোট অভ্যন্তরীণ পণ্যের মধ্য অন্তর্ভুক্ত নয়। যদিও মহিলাদের অবৈতনিক শ্রম প্রায় ১১০০০০০ কোটি ডলার হিসাবে অনুমান করা হয়। এই প্রচার অভিযানের সঙ্গে যুক্ত অনেক মহিলা মনে করেন যে, নারীদের একটি বড় অংশ সামরিক ও শিল্পক্ষেত্রে মজুরি ও লিঙ্গবৈষম্যের শিকার। বিশ্বব্যাপী সামরিক খাতে বছরে ১০০০০০ কোটি ডলার ব্যয় করা হয়। যদিও এই ব্যয়ের একটি বড় অংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করে থাকে। যদি এই অর্থের শতকরা দশভাগ নারীদের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়, তবে তা জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন, জল, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, পুষ্টি কর্মসূচি, সাক্ষরতা কর্মসূচি, ন্যূনতম মজুরি প্রভৃতি সরবরাহ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ১৯৭২সালে সেলমা জেমস সর্বপ্রথম বিশ্বব্যাপী নারী ধর্মঘটের ডাক দেন। এই বিশ্বব্যাপী নারী ধর্মঘটের উদ্দেশ্য ছিল গৃহকর্মের জন্য আন্তর্জাতিক মজুরির প্রয়োজনীয়তার কথা প্রচার করা, সমস্ত যত্নশীল কাজের জন্য স্বীকৃতি এবং অর্থ প্রদান। একটি নীতির মাধ্যমে সামরিক ব্যয়ের একটি অংশ নারীদের কল্যাণমূলক কাজে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানানো হয়। শ্লোগান ছিল "সেবায় বিনিয়োগ, হত্যায় নয়"।[২] [৩]

পুরুষদের তুলনায় নারীদের বৈষম্যমূলক বেতন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ২৪ অক্টোবর ২০২৩ নারী ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জ্যাকবসদোত্তিরসহ হাজার হাজার নারী। তিনি বলেন, দেশে এবং দেশের বাইরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে।[৪]

লক্ষ্য[সম্পাদনা]

বিশ্বব্যাপী প্রচারের লক্ষ্যগুলি হলো:

  • অর্থ বা অন্যান্য সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে যে কোনও ধরণের যত্নশীল কাজের জন্য অর্থ প্রদান;
  • কল্যাণমূলক কাজে আরও বিনিয়োগ করা ও সাম্ভাব্য সামরিক ব্যয় কমানো;
  • বিশ্ব বাজারে নারী ও পুরুষদের জন্য মজুরির সমতা ;
  • মাতৃত্ব এবং স্তন্যদানের জন্য অর্থ, সুবিধা এবং বিরতি;
  • তৃতীয় বিশ্বের ঋণ বিলোপ;
  • পরিস্রুত পানীয় জল , উপযুক্ত আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, গণপরিবহন এবং সাক্ষরতার জন্য আরও ভাল প্রবেশযোগ্যতা;
  • প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কম কর্মঘণ্টা;
  • যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সুরক্ষা এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে আশ্রয়ের অধিকার;
  • ভ্রমণ এবং চলাফেরার স্বাধীনতা। [৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "8 marzo, sarà sciopero 'globale': donne in marcia in 40 Paesi del mondo", article by Maria Novella Deluca on the 8-3-2107 issue of La Repubblica, see www.repubblica.it
  2. 100 Women: Should mothers get living wage?, 23 October 2013 article on www.bbc.co.uk
  3. "Stop the world and change it: the global women's strike", The Guardian, 7 March 2000.
  4. "আইসল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীসহ হাজারো নারীর ধর্মঘট"। ২০২৩-১০-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১০ 
  5. The No-nonsense Guide to Women's Rights, p. 127; Nikki van der Gaag, Verso, 2004.