কেট উইন্সলেট
কেট এলিজাবেথ উইন্সলেট (জন্ম ৫ অক্টোবর, ১৯৭৫) একজন ইংরেজ অভিনেত্রী এবং অনিয়মিত গায়িকা। নিজ পেশাজীবনে বিভিন্ন রকম চরিত্রে রূপদানের জন্য তিনি সুপরিচিত; বিশেষ করে কিছু চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয়শৈলী সমালোচকদের দৃষ্টিতে সংবর্ধিত হয়েছিলো। যেমন: সেন্স এন্ড সেন্সসিবিলিটি-তে মারিয়ান ড্যাশউড, টাইটানিক-এ রোজ ডুয়েটবুকেটর, ইটারনাল সানশাইন অফ দ্য স্পটলেস মাইন্ড-এ ক্লিমেনটাইন ক্রুজিনস্কি, লিটল চিলড্রেন-এ সারাহ পিয়ারস্, রেভ্যুলশনারি রোড-এ এপ্রিল হুইলার এবং দ্য রিডার-এ হ্যানা শিমিট্জ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য।
উইন্সলেট ছয়বার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন এবং দ্য রিডার-এ অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এছাড়া তিনি স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড, ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অফ ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) এবং হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন থেকেও পুরষ্কার পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি একবার এমির জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন। তাঁর বাইশ বছর বয়সে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ অভিনেত্রী, যিনি দুটো অস্কার মনোনয়ন পেয়েছেন। এখন, এই তেত্রিশ বছর বয়সেও তিনি সর্বকনিষ্ঠ অভিনয়শিল্পী যিনি লিঙ্গ নির্বিশেষে ছয়বার অস্কার মনোনয়ন পেয়েছেন।
প্রাথমিক জীবন
উইন্সলেটের জন্ম যুক্তরাজ্যের, লন্ডনের রিডিং-এ। তাঁর মা স্যালি অ্যান (জন্মসূত্রে ব্রিজেস) ছিলেন পানশালার একজন পরিবেশনকারিনী এবং বাবা রজার জন উইন্সলেট ছিলেন একজন সুইমিং পুল ঠিকাদার। তাঁর বাবা-মা দুজনই ছিলেন খুচরো অভিনেতা”, এছাড়াও উইন্সলেট যেমনটি বলেন, ুশিৰাদীৰার সুযোগসুবিধা খুব একটা পাওয়া যায় নি” এবং তাঁদের অবস্থা ছিলো অনেকটা ুদিন আনি দিন খাই”-এর মতো। উইন্সলেটের নানা-নানী, লিন্ডা (জন্মসূত্রে পস্নাম্ব) ও আর্চিবাল্ড অলিভার ব্রিজেস, রিডিং রির্পেটরি থিয়েটার নামে একটি নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এটা তাঁরাই চালাতেন। তাঁর মামা রবার্ট ব্রিজেসকে ওয়েস্ট এন্ড-এর প্রযোজিত অলিভার! নাটকে দেখা গিয়েছিলো। এবং তাঁর দুই বোন, বেথ উইন্সলেট ও অ্যানা উইন্সলেটও অভিনয়শিল্পী।
উইন্সলেট বড়ো হন একজন অ্যাঙ্গলিকান হিসেবে। এগারো বছর বয়সে তিনি রেডরম্নফস থিয়েটার স্কুল-এ নাটক বিষয়ে পড়াশোনা শুরম্ন করেন। বিদ্যালয়টি ছিলো বার্কশায়ার, মেইডেনহেডএ অবস্থিত একটি স্বাধীন বিদ্যালয়। সেখানে সহশিৰা কার্যক্রম চালু ছিলো এবং উইন্সলেট ছিলেন সেখানকার হেড গার্ল, এবং সেখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় তাঁকে প্রথমবারের মতো টেলিভিশনের জন্য নির্মিত একটি বাণিজ্যিক সিরিয়ালে দেখা যায়। সিরিয়ালটির নাম ছিলো সুগার পাফ্স এবং পরিচালনায় ছিলেন টিম পোপ।
পেশাজীবন
প্রাথমিক কাজ
টেলিভিশনে অভিনয়ের মাধ্যমে উইন্সলেট তাঁর পেশাজীবন শুরম্ন করেন। তাঁর শুরম্নটা ছিলো ১৯৯১ সালে, বিবিসি-তে শিশুদের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ধারাবাহিক ডার্ক সিজন-এ সহঅভিনেত্রী হিসেবে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে তাঁকে দেখা যায় অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন অ্যাটিচুডস চলচ্চিত্রে, যা টেলিভিশনে সম্প্রচারের জন্য নির্মিত হয়েছিলো। এছাড়া তিনি ১৯৯৩-এ চিকিৎসা বিষয়ক নাটক ক্যাজুয়ালিটির একটি পর্বেও অভিনয় করেছিলেন। আর এ সব কাজই ছিলো বিবিসি’র জন্য।
ব্যক্তিগত জীবন
ডার্ক সিজন-এ উইন্সলেট যখন কাজ করছিলেন তখন তাঁর সাথে পরিচয় হয় অভিনেতা ও লেখক স্টিফেন ট্রিডের-এর সাথে। সেখান থেকে তাঁদের সম্পর্ক পাঁচ বছর স্থায়ী হয়েছিলো। উইন্সলেট টাইটানিক-এর কাজ সম্পূর্ণ করার কিছুদিনের মধ্যেই স্টিফেন ট্রিডের [হাড়ের ক্যান্সার]-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর লন্ডনে তাঁর অন্তেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবার জন্যে তিনি টাইটানিক-এর প্রথম প্রদর্শনীতে যোগ দিতে পারেন নি। উইন্সলেট ও টাইটানিক-এ তাঁর সহশিল্পী লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও, তাঁরা দুজনে এখন পর্যন্ত পরষপরের ভালো বন্ধু।
উইন্সলেট পরে রাফাস সিউয়েল-এর সাথে সম্পর্কে জড়ান, কিন্তু ১৯৯৮ সালের ২২ নভেম্বর তিনি বিয়ে করেন পরিচালক জিম থ্রিপলেটনকে। তাঁদের একটা মেয়ে আছে, যার নাম মিয়া হানি এবং জন্ম হয়েছিলো লন্ডনে, ২০০০ সালের ১২ অক্টোবর। তাঁদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের পরে ২০০১ সালে উইন্সলেট সম্পর্কে জড়ান পরিচালক স্যাম মেন্ডেজ-এর সাথে, যাকে তিনি ২০০৩ সালে ২৪ মে বিয়ে করেন। তাঁদের বিয়েটা হয়েছিলো ক্যারিবিয়ান-এর অ্যাঙ্গিলা দ্বীপে। এই ঘরে উইন্সলেটের একটা ছেলে আছে, যার নাম জো আলফি উইন্সলেট মেন্ডেজ, এবং জন্ম হয়েছিলো ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর, নিউ ইয়র্ক শহরে।
মেন্ডেজ ও তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিল স্ট্রিট প্রডাকশন্স, অনেক দিন ধরে পড়ে থাকা মেবেল শার্ক চলচ্চিত্রটির স্বত্ত্ব কিনে নেয়। ছবিটি সার্কাসের একজন বাঘ প্রশিৰকের জীবনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিলো। এ সম্পর্কে এই দম্পতির মুখপাত্র বলেন, ুএটা খুব সুন্দর একটা গল্প। তাঁরা অনেকৰণ ধরে এই ছবিটি দেখেছেন। যদি তাঁরা স্ক্রিপ্টটা ঠিকভাবে তৈরি করতে পারেন তবে তাঁরা একটা দারম্নণ ছবি তৈরি করতে পারবেন।
উইন্সলেট ও মেন্ডেজ বর্তমানে বাস করছেন নিউ ইয়র্ক সিটির গ্রীনিচ ভিলেজ-এ। এছাড়া ইংল্যান্ড-এর গস্নুচেস্টারশায়ার-এর চার্চ ওয়েস্টকোট-এর ছোটো একটা গ্রামে তাঁদের একটা ম্যানর হাউজ আছে।
বিমানভ্রমনের ৰেত্রে বিভিন্ন সময় উইন্সলেট ও মেন্ডেজ নানা রকম ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন এবং তাঁদের সন্তানেরা বাবা-মা বিহীন হয়ে পড়তে পারে, এই ভয়ে তাঁরা কখনো একই বিমানে ভ্রমন করেন না। অ্যামেরিকান এয়ারলাইন্স-এর ফ্লাইট ৭৭-এ মেন্ডেজের ভ্রমন করার কথা ছিলো, যেটা ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১-এ ছিনতাই হয় এবং পেন্টাগনের ওপর বিধবস্ত হয়। এবং অক্টোবর, ২০০১-এ উইন্সলেট, তাঁর মেয়ে মিয়া’র সাথে লন্ডন-ডালাস-এ ভ্রমণ করার সময় ঐ ফ্লাইটের একজন যাত্রী নিজেকে মুসলিম সন্ত্রাসী হিসেবে দাবি করে। পরবর্তীতে ঐ যাত্রীর বিরম্নদ্ধে আতঙ্ক সৃষ্টি করার অভিযোগ আনা হয় এবং বলা হয় যে, তিনি দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছেন, আমরা সবাই মারা যাচ্ছি।