টাইগার হিলের যুদ্ধ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২২ নং লাইন: | ২২ নং লাইন: | ||
==প্রেক্ষাপট== |
==প্রেক্ষাপট== |
||
১৯৯৮ এর শীত ও ১৯৯৯ এর মধ্যবর্তী সময়ে পাকিস্তান সেনার [[ |
১৯৯৮ এর শীত ও ১৯৯৯ এর মধ্যবর্তী সময়ে পাকিস্তান সেনার [[নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রি]] টাইগার হিল দখল করে নিয়েছিল। লাদাখ অঞ্চলের সর্বোচ্চ চূড়া হওয়ায় পাহাড়টির প্রচন্ডরকমের সামরিক কৌশলগত গুরুত্ব ছিল এবং এখান থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারত সেনার ৫৬ ব্রিগেড হেড কোয়াটার পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল। এহেন পরিস্থিতিতে শৃঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সেনা ভারতের দিক থেকে হওয়া যে কোনও আক্রমণকে সহজেই ধরে ফেলতে পারতো। শৃঙ্গটি থেকে ভারতের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ [[জাতীয় সড়ক ১ (ভারত)|জাতীয় সড়ক ১-ও]] অনায়াসেই দেখা যেত। এমনকি এই রাজপথটিকে কোনক্রমে দখল করা ছিল কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য। এর কারণ জাতীয় সড়ক ১ [[সিয়াচেন হিমবাহ|সিয়াচেন হিমবাহের]] একটি কৌশলগত পথ তথা [[শ্রীনগর|শ্রীনগরকে]] লাদাখের লেহ-এর সাথে সংযুক্ত করে। ফলে টাইগার হিলকে দখল করা মানে খুব সহজেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর গতিবিধির ওপর সর্বদা নজরদারি রাখতে ও আক্রমণ করতে সক্ষম হওয়া। |
||
পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের কারণে ভারতের জন্য টাইগার হিলের দখল নেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। টাইগার হিলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ভারতকে মুশকো এবং আশেপাশের শিখরে পাকিস্তানি সেনার অবস্থানগুলিতে আক্রমণ করার রাস্তা করে দিতো। |
পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের কারণে ভারতের জন্য টাইগার হিলের দখল নেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। টাইগার হিলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ভারতকে মুশকো এবং আশেপাশের শিখরে পাকিস্তানি সেনার অবস্থানগুলিতে আক্রমণ করার রাস্তা করে দিতো। |
||
৩৩ নং লাইন: | ৩৩ নং লাইন: | ||
==ভবিষ্যৎ ফল== |
==ভবিষ্যৎ ফল== |
||
আচমকা ভারতের টাইগার হিল পুনরায় দখল এবং একসাথে তিন দিক থেকে |
আচমকা ভারতের টাইগার হিল পুনরায় দখল এবং একসাথে তিন দিক থেকে আক্রমণের ফলে একটি বড়সড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান। কার্গিল সংঘর্ষে [[ভারতীয় বায়ুসেনা|ভারতীয় বায়ুসেনাও]] টাইগার হিলের চূড়ায় অবস্থিত দুই শত্রু শিবিরে বিধ্বংসী হামলা চালায়। |
||
==বীরত্ব পদক প্রাপক== |
==বীরত্ব পদক প্রাপক== |
||
গ্রেনেডিয়ার [[যোগেন্দ্র সিং যাদব|যোগেন্দ্র সিং যাদবকে]] যুদ্ধের সময় তার কৃতকর্মের জন্য ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান, [[পরমবীর চক্র]] প্রদান করা হয়।<ref name="bharat-rakshak">{{Cite web |url=http://www.bharat-rakshak.com:80/LAND-FORCES/History/1999/308-Seven-Hour-Battle.html |archive-url=https://web.archive.org/web/20090821105628/http://www.bharat-rakshak.com/LAND-FORCES/History/1999/308-Seven-Hour-Battle.html |url-status=dead |archive-date=21 August 2009 |title=Seven Hour Battle that won India, Tiger Hill |website=Bharat Rakshak |date=18 May 2005}}</ref> তিনি মোট ১৬ বার গুলিবিদ্ধ হন এবং টাইগার হিল দখলের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।<ref name="book">{{cite book|last1= Bisht|first1=Rachana|title= The Brave: Param Vir Chakra Stories|date=2009|publisher=Penguin Books|page= Yoginder singh Yadav Ghatak|isbn=9789351188056|url= https://books.google.com/books?id=rgEWBAAAQBAJ&q=fourteen+bullets&pg=PT210|language=en}}</ref><br/> |
গ্রেনেডিয়ার [[যোগেন্দ্র সিং যাদব|যোগেন্দ্র সিং যাদবকে]] যুদ্ধের সময় তার কৃতকর্মের জন্য ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান, [[পরমবীর চক্র]] প্রদান করা হয়।<ref name="bharat-rakshak">{{Cite web |url=http://www.bharat-rakshak.com:80/LAND-FORCES/History/1999/308-Seven-Hour-Battle.html |archive-url=https://web.archive.org/web/20090821105628/http://www.bharat-rakshak.com/LAND-FORCES/History/1999/308-Seven-Hour-Battle.html |url-status=dead |archive-date=21 August 2009 |title=Seven Hour Battle that won India, Tiger Hill |website=Bharat Rakshak |date=18 May 2005}}</ref> তিনি মোট ১৬ বার গুলিবিদ্ধ হন এবং টাইগার হিল দখলের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।<ref name="book">{{cite book|last1= Bisht|first1=Rachana|title= The Brave: Param Vir Chakra Stories|date=2009|publisher=Penguin Books|page= Yoginder singh Yadav Ghatak|isbn=9789351188056|url= https://books.google.com/books?id=rgEWBAAAQBAJ&q=fourteen+bullets&pg=PT210|language=en}}</ref><br/> |
||
সতপাল সিংহকে যুদ্ধের সময় তার কৃতকর্মের জন্য তার প্রাক্তন ব্রিগেড কম্যান্ডার ব্রিগেডিয়ার মোহিন্দর প্রতাপ বাজওয়া পরমবীর চক্র সম্মানের জন্য নাম মনোনয়ন করলেও তিনি [[বীর চক্র]] সম্মানে ভূষিত হন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=প্রতিবেদন |প্রথমাংশ1=নিজস্ব |শিরোনাম=কার্গিলে ৪ পাক সেনা মরেছিল ওঁর গুলিতে, তিনি আজ ট্রাফিক সামলান |ইউআরএল=https://www.anandabazar.com/india/kargil-war-vir-chakra-now-manages-traffic-as-a-head-constable-of-punjab-police-dgtl-1.1023118 |কর্ম=www.anandabazar.com |তারিখ=২৬ জুলাই ২০১৯}}</ref><br/> |
সতপাল সিংহকে যুদ্ধের সময় তার কৃতকর্মের জন্য তার প্রাক্তন ব্রিগেড কম্যান্ডার ব্রিগেডিয়ার মোহিন্দর প্রতাপ বাজওয়া পরমবীর চক্র সম্মানের জন্য নাম মনোনয়ন করলেও তিনি [[বীর চক্র]] সম্মানে ভূষিত হন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=প্রতিবেদন |প্রথমাংশ1=নিজস্ব |শিরোনাম=কার্গিলে ৪ পাক সেনা মরেছিল ওঁর গুলিতে, তিনি আজ ট্রাফিক সামলান |ইউআরএল=https://www.anandabazar.com/india/kargil-war-vir-chakra-now-manages-traffic-as-a-head-constable-of-punjab-police-dgtl-1.1023118 |কর্ম=www.anandabazar.com |তারিখ=২৬ জুলাই ২০১৯}}</ref><br/> |
||
১৮ গ্রেনেডিয়ার্সের ঘাতক প্লাটুনের লেফটেন্যান্ট বলওয়ান সিং পর্বতের শীর্ষে |
১৮ গ্রেনেডিয়ার্সের ঘাতক প্লাটুনের লেফটেন্যান্ট বলওয়ান সিং পর্বতের শীর্ষে উঠে আক্রমণ করেন। তিনি নিজে আহত হলেও শত্রুপক্ষকে ঘিরে নেওয়ার কোনো ত্রুটি রাখেননি। যুদ্ধের সময় তার কৃতকর্মের জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান, [[মহাবীর চক্র]] সম্মানে সম্মানিত হন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=Kargil war: Eight Sikh played a pivotal role in the capture of Tiger Hill, says Brigadier MPS Bajwa |ইউআরএল=https://indianexpress.com/article/india/kargil-war-eight-sikh-played-a-pivotal-role-in-the-capture-of-tiger-hill-says-brigadier-mps-bajwa-5276535/ |কর্ম=The Indian Express |তারিখ=২৬ জুলাই ২০১৮ |ভাষা=en}}</ref><br/> |
||
ক্যাপ্টেন শের খানের মরদেহ যুদ্ধস্থল থেকে প্রথমে শ্রীনগরে নামিয়ে আনা হয় ও পরবর্তিতে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। তার মরদেহ পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর সময়ে তার জামার পকেটে টাইগার হিল যুদ্ধের সেনাধিপতি ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া একটা ছোট্ট চিরকুট লিখে দিয়েছিলেন: '১২ নম্বর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির ক্যাপ্টেন |
পাকিস্তানি সেনার ক্যাপ্টেন শের খানের মরদেহ যুদ্ধস্থল থেকে প্রথমে শ্রীনগরে নামিয়ে আনা হয় ও পরবর্তিতে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। তার মরদেহ পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর সময়ে তার জামার পকেটে টাইগার হিল যুদ্ধের সেনাধিপতি ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া একটা ছোট্ট চিরকুট লিখে দিয়েছিলেন: '১২ নম্বর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তাকে সম্মান জানানো উচিৎ।'। ভারতের সুপারিশের কারণে কারনাল শের খান পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক পদক, [[নিশান-ই-হায়দার]] পেয়েছিলেন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=ভারতের সুপারিশে বীর খেতাব পাওয়া পাকিস্তানি সৈনিক |ইউআরএল=https://www.bbc.com/bengali/news-49061025 |কর্ম=BBC News বাংলা |তারিখ=২১ জুলাই ২০১৯ |ভাষা=bn}}</ref> |
||
==তথ্যসূত্র== |
==তথ্যসূত্র== |
১৬:১৩, ২১ আগস্ট ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
টাইগার হিল যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: কার্গিল যুদ্ধ | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
ভারতীয় সেনাবাহিনী | পাকিস্তান সেনাবাহিনী | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
ব্রিগেডিয়ার এম এস বাজওয়া কর্নেল এস পি সিং (৮ নম্বর শিখের কমান্ডিং অফিসার)[৩] ব্রিগেডিয়ার কুশল ঠাকুর (১৮ গ্রেনেডিয়ার্সের কমান্ডিং অফিসার) | মেজর হাশিম[৪] | ||||||
জড়িত ইউনিট | |||||||
৮ নম্বর শিখ ১৮ গ্রেনেডিয়ার্স ২ নম্বর নাগা | ১২ নম্বর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রি[৫] |
টাইগার হিল যুদ্ধ বা টাইগার হিলের পুনর্দখল ভারতীয় সেনা কর্তৃক শুরু হয় ১৯৯৯ সালের মে মাসের অন্তিম সপ্তাহ থেকে এবং এই সংঘর্ষটি ৮ই জুলাই অবধি চলতে থাকে। ভারতীয় সেনার এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের টাইগার হিল শৃঙ্গ হইতে পিছু হটানো। প্রায় এক মাস যুদ্ধর পর তারা এই অভিযানে সফল হন।
প্রেক্ষাপট
১৯৯৮ এর শীত ও ১৯৯৯ এর মধ্যবর্তী সময়ে পাকিস্তান সেনার নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রি টাইগার হিল দখল করে নিয়েছিল। লাদাখ অঞ্চলের সর্বোচ্চ চূড়া হওয়ায় পাহাড়টির প্রচন্ডরকমের সামরিক কৌশলগত গুরুত্ব ছিল এবং এখান থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারত সেনার ৫৬ ব্রিগেড হেড কোয়াটার পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল। এহেন পরিস্থিতিতে শৃঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সেনা ভারতের দিক থেকে হওয়া যে কোনও আক্রমণকে সহজেই ধরে ফেলতে পারতো। শৃঙ্গটি থেকে ভারতের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ জাতীয় সড়ক ১-ও অনায়াসেই দেখা যেত। এমনকি এই রাজপথটিকে কোনক্রমে দখল করা ছিল কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য। এর কারণ জাতীয় সড়ক ১ সিয়াচেন হিমবাহের একটি কৌশলগত পথ তথা শ্রীনগরকে লাদাখের লেহ-এর সাথে সংযুক্ত করে। ফলে টাইগার হিলকে দখল করা মানে খুব সহজেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর গতিবিধির ওপর সর্বদা নজরদারি রাখতে ও আক্রমণ করতে সক্ষম হওয়া।
পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের কারণে ভারতের জন্য টাইগার হিলের দখল নেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। টাইগার হিলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ভারতকে মুশকো এবং আশেপাশের শিখরে পাকিস্তানি সেনার অবস্থানগুলিতে আক্রমণ করার রাস্তা করে দিতো।
যুদ্ধ
মে মাসের শেষাংশে ভারত সেনার ৮ নম্বর শিখ রেজিমেন্ট টাইগার হিল পুনর্দখলের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা সত্ত্বেও পাকিস্তান সেনা দ্বারা ক্ষুদ্র্রাস্ত্র গুলিবর্ষণের জেরে তারা অক্ষম হন। পর্বতশৃঙ্গে এঁড়ে বসে থাকা পাকিস্তানি সেনা তথা ভারতের তরফে তোপের বোমাবাজির অবর্তমানে ভারতীয় সেনার আক্রমণগুলি ব্যার্থ হয়। এরপর তারা শৃঙ্গটি চারিপাশ থেকে ঘিরে বসে যায়। অভিযানে যোগদান করে ভারতীয় সেনার ১৮ গ্রেনেডিয়ার্স।[৬]
টাইগার হিলে সর্বশেষ আক্রমণ শুরু হয় ৩রা জুলাই বিকেল ৫টা বেজে পনের মিনিট নাগাদ। মাল্টি-ব্যারেলড রকেট লঞ্চার থাকা ভারতীয় সেনার তোপ রেজিমেন্টের ২২টি ব্যাটারি ১৩ ঘণ্টা ধরে অবিরত পর্বতশৃঙ্গে পাকিস্তানি সেনার অবস্থান লক্ষ্য করে বোমাবাজি চালানোর মাধ্যমে পাহাড়ে উঠতে থাকা পদাতিক বাহিনীকে সাহায্য করে দেয়। নাগা রেজিমেন্ট (২ নাগা) এর ২য় ব্যাটালিয়ন ডান দিকে অগ্রসর হয় এবং ৮ নম্বর শিখ বাম দিকে অগ্রসর হয়। তারা বিস্ময়ের উপাদান বজায় রেখে অপ্রত্যাশিত (ফলে কঠিন) পন্থা অবলম্বন করে। ১৮ গ্রেনেডিয়ার্সের আলফা ও চার্লি কোম্পানির ২০০ জন জওয়ান ঘাতক প্লাটুন এর সঙ্গে হাড়হিম করা বৃষ্টির মধ্যে এক হাজার ফুটের উল্লম্ব চূড়া বেয়ে পাকিস্তানি চৌকির পিছনের দিকে অগ্রসর হয়। তবে শিখরে পৌঁছনোর পূর্বেই তারা পাকিস্তানিদের নজরবন্দী হয় এবং পাকিস্তানিরা ভারতীয় সেনার আক্রমণ থামিয়ে ভারী গুলি চালানো শুরু করে। অভিযান ব্যার্থ হয়ে যেতে পারে বুঝতে পেরে, ৮ নম্বর শিখের মেজর রবিন্দর সিং একটি সাহসী আক্রমণ করেন। তিনি এবং ২০০ সৈন্যের একটি দল সংলগ্ন পশ্চিম রিজের পাশ দিয়ে আরোহণ করেন এবং ৫ জুলাইয়ের রাত্রে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষাকে বিভক্ত করে দেয়। এই দলটি পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি পাল্টা আক্রমণকেও ব্যার্থ করে। বেশিরভাগ শিখ সৈন্যই কোনরকম ঠান্ডা আবহাওয়ার পরিধান বা প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই আক্রমণ করেছিল এবং আহতদের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। আরও তিনদিনের প্রবল লড়াইয়ের পর ভারতীয় সেনার সাহসী পরিকল্পনা সফল হয় এবং ১৮ গ্রেনেডিয়ার্সের দুই দিক থেকে পাকিস্তানিদের উপর পুনরায় আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি সেনার ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান ততক্ষণে ক্রমেই পাক সেনাকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। এরপরেই পাকিস্তানী সেনাকে দুর্মুশ করতে বাহিনীর নেতাকে শেষ করার পন্থা নেয় ভারত। ৮ নম্বর শিখের সতপাল সিংহের হাতে প্রাণ যায় পাকিস্তানি সেনার নেপথ্য নায়ক ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান-সহ মোট চার জন পাকিস্তানি সেনার।[৭] মনোবল ভেঙে যায় পাকিস্তানী সেনার। এরপর ক্রমশ টাইগার হিল ছেড়ে নামতে থাকে পাকিস্তানেী সেনা। ১৬,৭০০ ফুট উচ্চতায়, ৮ জুলাই সকালে ১৮ গ্রেনেডিয়ার্স টাইগার হিল টপ দখল করে।[৬]
ভবিষ্যৎ ফল
আচমকা ভারতের টাইগার হিল পুনরায় দখল এবং একসাথে তিন দিক থেকে আক্রমণের ফলে একটি বড়সড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান। কার্গিল সংঘর্ষে ভারতীয় বায়ুসেনাও টাইগার হিলের চূড়ায় অবস্থিত দুই শত্রু শিবিরে বিধ্বংসী হামলা চালায়।
বীরত্ব পদক প্রাপক
গ্রেনেডিয়ার যোগেন্দ্র সিং যাদবকে যুদ্ধের সময় তার কৃতকর্মের জন্য ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান, পরমবীর চক্র প্রদান করা হয়।[৮] তিনি মোট ১৬ বার গুলিবিদ্ধ হন এবং টাইগার হিল দখলের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।[৯]
সতপাল সিংহকে যুদ্ধের সময় তার কৃতকর্মের জন্য তার প্রাক্তন ব্রিগেড কম্যান্ডার ব্রিগেডিয়ার মোহিন্দর প্রতাপ বাজওয়া পরমবীর চক্র সম্মানের জন্য নাম মনোনয়ন করলেও তিনি বীর চক্র সম্মানে ভূষিত হন।[১০]
১৮ গ্রেনেডিয়ার্সের ঘাতক প্লাটুনের লেফটেন্যান্ট বলওয়ান সিং পর্বতের শীর্ষে উঠে আক্রমণ করেন। তিনি নিজে আহত হলেও শত্রুপক্ষকে ঘিরে নেওয়ার কোনো ত্রুটি রাখেননি। যুদ্ধের সময় তার কৃতকর্মের জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান, মহাবীর চক্র সম্মানে সম্মানিত হন।[১১]
পাকিস্তানি সেনার ক্যাপ্টেন শের খানের মরদেহ যুদ্ধস্থল থেকে প্রথমে শ্রীনগরে নামিয়ে আনা হয় ও পরবর্তিতে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। তার মরদেহ পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর সময়ে তার জামার পকেটে টাইগার হিল যুদ্ধের সেনাধিপতি ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া একটা ছোট্ট চিরকুট লিখে দিয়েছিলেন: '১২ নম্বর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তাকে সম্মান জানানো উচিৎ।'। ভারতের সুপারিশের কারণে কারনাল শের খান পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক পদক, নিশান-ই-হায়দার পেয়েছিলেন।[১২]
তথ্যসূত্র
- ↑ Wilson Prabhakar, Peter (২০০৩)। Wars, Proxy-wars and Terrorism: Post Independent India। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 142। আইএসবিএন 9788170998907।
- ↑ Lavoy, Peter R., সম্পাদক (২০০৯)। Asymmetric Warfare in South Asia: The Causes and Consequences of the Kargil Conflict। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 190। আইএসবিএন 9781139482820।
- ↑ MASIH, ARCHANA (২২ জুলাই ২০১৯)। "'We had to throw the Pakistanis out'"। Rediff (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ "ভারতের সুপারিশে বীর খেতাব পাওয়া পাকিস্তানি সৈনিক"। BBC News বাংলা। ২১ জুলাই ২০১৯।
- ↑ Philip, Snehesh Alex (২৪ জুলাই ২০১৯)। "How an Indian officer helped an enemy captain win Pakistan's highest gallantry award"। ThePrint (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ ক খ Acosta, Marcus P.। "High Altitude Warfare: The Kargil Conflict and the Future" (পিডিএফ)। Naval Postgraduat School, US Navy। ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২০। এই উৎস থেকে এই নিবন্ধে লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে।
- ↑ প্রতিবেদন, নিজস্ব (২৬ জুলাই ২০১৯)। "কার্গিলে ৪ পাক সেনা মরেছিল ওঁর গুলিতে, তিনি আজ ট্রাফিক সামলান"। www.anandabazar.com।
- ↑ "Seven Hour Battle that won India, Tiger Hill"। Bharat Rakshak। ১৮ মে ২০০৫। ২১ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Bisht, Rachana (২০০৯)। The Brave: Param Vir Chakra Stories (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin Books। পৃষ্ঠা Yoginder singh Yadav Ghatak। আইএসবিএন 9789351188056।
- ↑ প্রতিবেদন, নিজস্ব (২৬ জুলাই ২০১৯)। "কার্গিলে ৪ পাক সেনা মরেছিল ওঁর গুলিতে, তিনি আজ ট্রাফিক সামলান"। www.anandabazar.com।
- ↑ "Kargil war: Eight Sikh played a pivotal role in the capture of Tiger Hill, says Brigadier MPS Bajwa"। The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ জুলাই ২০১৮।
- ↑ "ভারতের সুপারিশে বীর খেতাব পাওয়া পাকিস্তানি সৈনিক"। BBC News বাংলা। ২১ জুলাই ২০১৯।
বহিঃসংযোগ
- A Bloodbath foretold. The frontline.
- Clinton urges India-Pakistan talks. BBC News.
- Tiger Hill – how important is it? BBC News.