উপসর্গ (ব্যাকরণ): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬০৮ নং লাইন: ৬০৮ নং লাইন:
[[আরবি ভাষা|আরবি]], [[ফারসি ভাষা|ফারসি]], [[ইংরেজি ভাষা|ইংরেজি]] ও [[উর্দু ভাষা|উর্দু]]- [[হিন্দি ভাষা|হিন্দি]]— এইসব ভাষার উপসর্গ [[বাংলা ভাষা]]য় প্রচলিত রয়েছে।<ref>বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষ, [[জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড]], [[ঢাকা]], [[বাংলাদেশ]]</ref> যেমন—
[[আরবি ভাষা|আরবি]], [[ফারসি ভাষা|ফারসি]], [[ইংরেজি ভাষা|ইংরেজি]] ও [[উর্দু ভাষা|উর্দু]]- [[হিন্দি ভাষা|হিন্দি]]— এইসব ভাষার উপসর্গ [[বাংলা ভাষা]]য় প্রচলিত রয়েছে।<ref>বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষ, [[জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড]], [[ঢাকা]], [[বাংলাদেশ]]</ref> যেমন—


ফার্সি উপসর্গের উদাহরণ-
'''(ক) ফার্সি উপসর্গের''' উদাহরণ-
{|class="wikitable"
!
! উপসর্গ
!
! যে অর্থে প্রযুক্ত
!
! উদাহরণ
|-
| ১.
| কার্
| کار
| কাজ
| অর্থে
| কারখানা, কারসাজি, কারচুপি, কারবার, কারদানি
|-
| ২.
| দর্
| در
| মধ্যস্থ, অধীন
| "
| দরপত্তনী, দরপাট্টা, দরদালান, দরখাস্ত
|-
| ৩.
| না
| نا
| না
| "
| নাচার, নারাজ, নামঞ্জুর, নাখোশ, নালায়েক
|-
| ৪.
| নিম্
| نیم
| আধা
| "
| নিমরাজি, নিমখুন, নিমমোল্লা
|-
|}
কার্, সে (তিন), দর্, না, নিম্‌, ফি, বর, ব, বদ্‌, বে, কম্, দস্ত (নিজ) ইত্যাদি।
কার্, সে (তিন), দর্, না, নিম্‌, ফি, বর, ব, বদ্‌, বে, কম্, দস্ত (নিজ) ইত্যাদি।



০৪:৫৮, ১৬ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

‘উপসর্গ’ কথাটির মূল অর্থ ‘উপসৃষ্ট’। এর কাজ হলো নতুন শব্দ গঠন করা। উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই, তবে এগুলো অন্য শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে থাকে। মনে রাখতে হবে, উপসর্গ সব সময় মূল শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়।

‘তাপ’ (বিশেষ্য পদ) তৎসম পদ। ‘তাপ’ অর্থ উষ্ণতা বা উত্তাপ। এর পূর্বে ‘প্র’ বা ‘অনু’ যুক্ত হয়ে যথাক্রমে প্রতাপ (প্র+তাপ) যার অর্থ পরাক্রান্ত বা বীরত্ব। অনুতাপ (অনু+ তাপ) যার অর্থ অনুশোচনা বা আফসোস ইত্যাদি নতুন শব্দ গঠিত হয়েছে এবং ‘তাপ’ শব্দের অর্থের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আবার ‘প্র’ বা ‘অনু’ এর নিজস্ব কোন অর্থ নেই বা এগুলো স্বাধীনভাবে কোন বাক্যেও ব্যবহৃত হতে পারে না। তাই ভাষাবিদগণ এরূপ অব্যয়সূচক শব্দ বা শব্দাংশের নাম দিয়েছেন 'উপসর্গ'। যেমন- ‘হার’ একটি শব্দ। এর সাথে উপ, আ, প্র, বি উপসর্গ যুক্ত হয়ে যথাক্রমে উপহার, আহার, প্রহার, বিহার শব্দ গঠিত হয়েছে। এভাবে উপসর্গের সাহায্যে নতুন নতুন শব্দ গঠন করে বাংলা ভাষার শব্দ সম্ভার সমৃদ্ধি লাভ করেছে। অতএব, কতকগুলো অব্যয় নামবাচক বা কৃদান্ত শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে এবং অর্থের পরির্বতন সাধন করে, এগুলোকে উপসর্গ বলে।

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “সংস্কৃতে কতগুলো অব্যয় শব্দ আছে, এগুলো ধাতুর পূর্বে বসে এবং ধাতুর মূল ক্রিয়ার গতি নির্দেশ করে এর অর্থের প্রসারণ, সঙ্কোচন বা অন্য পরিবর্তন আনয়ন করে দেয়। এরূপ অব্যয় শব্দকে উপসর্গ বলে।”

ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের মতে, “যেসব অব্যয় শব্দ কৃদান্ত বা নামপদের পূর্বে বসে শব্দগুলোর অর্থের সংকোচন, সম্প্রসারণ বা অন্য কোন পরিবর্তন সাধন করে, ঐ সব অব্যয় শব্দকে বাংলা ভাষায় উপসর্গ বলে।”

অশোক মুখোপাধ্যায়ের মতে, “বাংলা ভাষায় কিছু অব্যয় আছে যারা ধাতু বা শব্দের আগে যুক্ত হয়ে তাদের অর্থ বদল করে দেয়। এদেরই বলা হয় উপসর্গ।”

উপসর্গের প্রকারভেদ

উপসর্গ সাধারণত তিন প্রকার।

সংস্কৃত উপসর্গ

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত উপসর্গ বিশটি; যথা-[১]

উপসর্গ যে অর্থে ব্যবহৃত উদাহরণ
প্র প্রকৃষ্ট/ সম্যক অর্থে প্রভাব, প্রচলন, প্রস্ফুটিত
খ্যাতি " প্রসিদ্ধ, প্রতাপ, প্রভাব
আধিক্য " প্রগাঢ়, প্রচার, প্রবল, প্রসার
গতি " প্রবেশ, প্রস্থান
ধারা-পরম্পরা বা অনুগামিত " প্রপৌত্র, প্রশাখা, প্রশিষ্য
পরা আতিশয্য " পরাকাষ্ঠা, পরাক্রান্ত, পরায়ণ
বিপরীত " পরাজয়, পরাভব
অপ বিপরীত " অপমান, অপকার, অপচয়, অপবাদ
নিকৃষ্ট " অপসংস্কৃতি, অপকর্ম, অপসৃষ্টি, অপযশ, অপব্যয়
স্থানান্তর " অপসারণ, অপহরণ, অপনোদন
বিকৃতি " অপমৃত্যু
সম্ সম্যক রূপে " সম্পূর্ণ, সমৃদ্ধ, সমাদর
সম্মুখে " সমাগত, সম্মুখ
নি নিষেধ " নিবৃত্তি
নিশ্চয় " নিবারণ, নির্ণয়
আতিশয্য " নিদাঘ, নিদারুণ, নিগূঢ়
অভাব " নিষ্কলুষ, নিষ্কাম
অব হীনতা, প্রতিকূল " অবজ্ঞা, অবমাননা
সম্যকভাবে " অবরোধ, অবগাহন, অবগত
নিম্নে, অধোমুখিতা " অবতরণ, অবরোহণ, অবলম্বন
অল্পতা " অবশেষে, অবসান, অবেলা
অনু পশ্চাৎ " অনুশোচনা, অনুগামী, অনুজ, অনুচর, অনুতাপ, অনুকরণ
সাদৃশ্য " অনুবাদ, অনুরূপ, অনুকার
পৌনঃপুন " অনুক্ষণ, অনুদিন, অনুশীলন
সঙ্গে " অনুকূল, অনুকম্পা
নির অভাব " নিরক্ষর, নিরব, নির্জীব, নিরহঙ্কার, নিরাশ্রয়, নির্ধন
নিশ্চয় " নির্ধারণ, নির্ণয়, নির্ভর
বাহির, বহির্মুখিতা " নির্গত, নিঃসরণ, নির্বাসন
দুর মন্দ " দুর্ভাগ্য, দুর্দশা, দুর্নাম
কষ্টসাধ্য " দুর্লভ, দুর্গম, দুরতিক্রম্য, দুর্মূল্য
১০ বি বিশেষ রূপে " বিধৃত, বিশুদ্ধ, বিজ্ঞান, বিবস্ত্র, বিশুষ্ক
অভাব " বিনিদ্র,বিবর্ণ, বিশৃঙ্খল, বিফল
গতি " বিচরণ, বিক্ষেপ
অপ্রকৃতস্থ " বিকার, বিপর্যয়
১১ সু উত্তম " সুকণ্ঠ, সুকৃতি, সুচরিত্র, সুপ্রিয়, সুনীল
সহজ " সুগম, সুসাধ্য, সুলভ
আতিশয্য " সুচতুর, সুকঠিন, সুধীর, সুনিপুণ, সুতীক্ষ্ণ
১২ উৎ ঊর্ধ্বমুখিতা " উদ্যম, উন্নতি, উৎক্ষিপ্ত, উদগ্রীব, উত্তোলন
আতিশয্য " উচ্ছেদ, উত্তপ্ত, উৎফুল্ল, উৎসুক, উৎপীড়ন
প্রস্তুতি " উৎপাদন, উচ্চারণ
অপকর্ষ " উৎকোচ, উচ্ছৃঙ্খল, উৎকট
১৩ অধি আধিপত্য " অধিকার, অধিপতি, অধিবাসী
উপরি " অধিরোহণ, অধিষ্ঠান
ব্যাপ্তি " অধিকার, অধিবাস, অধিগত
১৪ পরি বিশেষ রূপে " পরিপক্ব, পরিপূর্ণ, পরিবর্তন
শেষ " পরিশেষ, পরিসীমা
সম্যক রূপে " পরিশ্রান্ত, পরীক্ষা, পরিমাণ
চতুর্দিক " পরিভ্রমণ, পরিমণ্ডল, পরিক্রমণ
১৫ প্রতি সদৃশ " প্রতিমূর্তি, প্রতিধ্বনি
বিরোধ " প্রতিবাদ, প্রতিদ্বন্দ্বী
পৌনঃপুন " প্রতিদিন, প্রতিমাস
অনুরূপ কাজ " প্রতিঘাত, প্রতিদান, প্রত্যুপকার
১৬ উপ সামীপ্য অর্থে " উপকূল, উপকণ্ঠ
সদৃশ " উপদ্বীপ, উপবন
ক্ষুদ্র " উপগ্রহ, উপসাগর, উপনেতা
বিশেষ " উপনয়ন (পৈতা), উপভোগ
১৭ অভি সম্যক " অভিব্যক্তি, অভিজ্ঞ, অভিভূত
গমন " অভিযান, অভিসার
সম্মুখ বা দিক " অভিমুখ, অভিবাদন
১৮ অতি আতিশয্য " অতিকায়, অত্যাচার, অতিশয়
অতিক্রম " অতিমানব, অতিপ্রাকৃত
১৯ পর্যন্ত " আকণ্য, আমরণ, আসমুদ্র
ঈষৎ " আরক্ত, আভাস
বিপরীত " আদান, আগমন
২০ অপি যদি " অপিচ (যদিও) (প্রাচীন বাংলা)

খাঁটি বাংলা উপসর্গ

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত খাঁটি বাংলা উপসর্গ একুশটি; যথা-[২]

উপসর্গ অর্থদ্যোতকতা উদাহরণ
নিন্দিত অর্থে অকেজো, অচেনা, অপয়া
অভাব " অচিন, অজানা, অথৈ
ক্রমাগত " অঝোর, অঝোরে
অঘা বোকা " অঘারাম, অঘাচণ্ডী
অজ নিতান্ত (মন্দ) " অজপাড়াগাঁ, অজমূর্খ, অজপুকুর
অনা অভাব " অনাবৃষ্টি, অনাদর
ছাড়া " অনাছিষ্টি, অনাচার
অশুভ " অনামুখো
অভাব " আকাঁড়া, আধোয়া, আলুনি
বাজে, নিকৃষ্ট " আকাঠা, আগাছা
আড় বক্র " আড়চোখে, আড়নয়নে
আধা, প্রায় " আড়ক্ষ্যাপা, আড়মোড়া, আড়পাগলা
বিশিষ্ট " আড়কোলা (পাথালিকোলা), আড়গড়া (আস্তাবর), আড়কাঠি
আন না " আনকোরা
বিক্ষিপ্ত " আনচান, আনমনা
আব অস্পষ্টতা " আবছায়া, আবডাল
ইতি এ বা এর " ইতিকর্তব্য, ইতিপূর্বে
পুরনো " ইতিকথা, ইতিহাস
১০ ঊন (ঊনু, ঊনা) কম " ঊনপাঁজুরে, উনিশ (উন+বিশ), ঊনাভাত
১১ কদ্ নিন্দিত " কদবেল, কদর্য, কদাকার
১২ কু কুৎসিত, অপকর্ষ " কুঅভ্যাস, কুকথা, কুনজর, কুসঙ্গ
১৩ নি নাই, নেতি " নিখুঁত, নিখোঁজ, নিলাজ, নিভাঁজ, নিরেট, নিনাইয়া
১৪ পাতি ক্ষুদ্র " পাতিহাঁস, পাতিশিয়াল, পাতিলেবু, পাতকুয়ো
১৫ বি ভিন্নতা, নাই বা নিন্দনীয় " বিভূঁই, বিফল, বিপথ
১৬ ভর পূর্ণতা " ভরপেট, ভরসাঁঝ, ভরপুর, ভরদুপুর, ভরসন্ধ্যে
১৭ রাম বড় বা উৎকৃষ্ট " রামছাগল, রামদা, রামশিঙ্গা, রামবোকা
১৮ সঙ্গে " সরাজ, সরব, সঠিক, সজোর, সপাট
১৯ সা উৎকৃষ্ট " সাজিরা, সাজোয়ান
২০ সু উত্তম " সুনজর, সুখবর, সুদিন, সুনাম, সুকাজ
২১ হা অভাব " হাপিত্যেশ, হাভাতে, হাঘরে

আ, সু, বি, নি— এই চারটি উপসর্গ সংস্কৃত ভাষায়ও পাওয়া যায়। ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে এই চারটি উপসর্গ বাংলা না সংস্কৃত তা নির্ধারণ করা হয়। বাংলা উপসর্গ সর্বদাই বাংলা শব্দের আগে এবং সংস্কৃত উপসর্গ সর্বদাই সংস্কৃত শব্দের আগে বসে।

বিদেশী উপসর্গ

আরবি, ফারসি, ইংরেজিউর্দু- হিন্দি— এইসব ভাষার উপসর্গ বাংলা ভাষায় প্রচলিত রয়েছে।[৩] যেমন—

(ক) ফার্সি উপসর্গের উদাহরণ-

উপসর্গ যে অর্থে প্রযুক্ত উদাহরণ
১. কার্ کار কাজ অর্থে কারখানা, কারসাজি, কারচুপি, কারবার, কারদানি
২. দর্ در মধ্যস্থ, অধীন " দরপত্তনী, দরপাট্টা, দরদালান, দরখাস্ত
৩. না نا না " নাচার, নারাজ, নামঞ্জুর, নাখোশ, নালায়েক
৪. নিম্ نیم আধা " নিমরাজি, নিমখুন, নিমমোল্লা

কার্, সে (তিন), দর্, না, নিম্‌, ফি, বর, ব, বদ্‌, বে, কম্, দস্ত (নিজ) ইত্যাদি।

আরবি উপসর্গের উদাহরণ- আম্, খাস, লা, গর্, বাজে, খয়ের (শাব্দিক অর্থ- ভালো; উদাহরণ- খয়ের খাঁ; শাব্দিক অর্থ- মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী; বাগধারায়- তোষামোদকারী) ইত্যাদি।

ইংরেজি উপসর্গের উদাহরণ- ফুল, সাব, হাফ, হেড।

উর্দু - হিন্দি উপসর্গ - হর।

তথ্যসূত্র

  1. বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, শিক্ষাবর্ষ ২০১৬, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ
  2. বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, শিক্ষাবর্ষ ২০১৬, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ
  3. বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ