বিমলা ড্যাং
বিমলা ড্যাং | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১০ মে ২০০৯ চণ্ডীগড়, ভারত | (বয়স ৮২)
সমাধি | চণ্ডীগড় ৩০°৪৫′ উত্তর ৭৬°৪৭′ পশ্চিম / ৩০.৭৫° উত্তর ৭৬.৭৮° পশ্চিম |
অন্যান্য নাম | বিমলা বাকায়া |
পেশা | সমাজ সেবী রাজনীতিবিদ |
পরিচিতির কারণ | বামপন্থী আদর্শ ড্যাং স্কুল অফ পলিটিক্স পাঞ্জাব স্ত্রী সভা |
দাম্পত্য সঙ্গী | সত্যপাল ড্যাং |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী |
বিমলা ড্যাং (১৯২৬–২০০৯) ছিলেন ভারতীয় সমাজ সেবী ও রাজনীতিবিদ। তিনি, সততা এবং অখণ্ডতার মূল্য অনুসরণ করে তৈরী রাজনীতির একটি ধারা, ড্যাং স্কুল অফ পলিটিক্স উপস্থাপনা করার জন্য পরিচিত হয়ে আছেন। [১] তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির একজন নেতা এবং পাঞ্জাব বিধান সভা সদস্য ছিলেন, অমৃতসর পশ্চিম ছিল তার নির্বাচনী এলাকা।[২] তিনি যে সংস্থাগুলির সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তার মধ্যে দুটি হল, পাঞ্জাব স্ত্রী সভা এবং পাঞ্জাব স্ত্রী সভা ত্রাণ ট্রাস্ট। ১৯৭০ এবং ৮০র পাঞ্জাব বিদ্রোহের সময় মৃত পিতামাতার শিশুদের শিক্ষা প্রদান করত এই ট্রাস্ট।[২] ১৯৯১ সালে ভারত সরকার তাকে চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী প্রদান করেছিল।[৩]
জীবনী
[সম্পাদনা]বিমলা ড্যাং, বিবাহ-পূর্ব নাম বিমলা বাকায়া,১৯২৬ সালের ২৬শে ডিসেম্বর, ব্রিটিশ ভারতের লাহোর অঞ্চলে, একটি কাশ্মীরি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং স্থানীয় বিদ্যালয়ে তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয়।[২][৪] তিনি লাহোর ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হয়ে জীবনের প্রথম দিকেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। [৪] মুম্বাইয়ের উইলসন কলেজ থেকে তিনি স্নাতক হন, সে সময়েও ছাত্র রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণ অব্যাহত ছিল। সারা ভারত ছাত্র পরিষদের (এ আই এস এফ) একটি প্রতিনিধিদল, রাজ্য পরিদর্শন করেছিল এবং বাংলার পঞ্চাশের মন্বন্তরের এর ত্রাণ কাজে হাত লাগিয়েছিল, তিনি এই দলের অংশ ছিলেন। [৫] তিনি, ১৯৪৩ সালে, বোম্বেতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম পার্টি কংগ্রেসে যোগ দেন।[৬] পরে, তিনি পূর্বকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগ চলে যান এবং ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নে (আইএসইউ) যোগ দেন। তিনি কয়েক বছর সেখানে প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকেন।[২]
ভারতে ফিরে আসার আগেই, ১৯৪৬ সালে, পূর্বকালীন বোম্বেতে তার বড় ভাই, কবি শশী বাকায়ার মৃত্যু হয়।[২] ভারতে আসার পর, একজন সাংবাদিক হিসাবে, তিনি বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার জন্য কাজ করতে থাকেন। ১৯৫২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি সত্যপাল ড্যাংকে বিয়ে করেন, তার স্বামী কমিউনিস্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং তারা লাহোর থেকেই একে অপরের পরিচিতি ছিলেন।[২] তারা অমৃতসরের নিকটবর্তী ছেহরতা সাহিব নামক একটি ছোট শহরে বসবাস শুরু করেন। তারা এখানেও এলাকার উন্নয়নের জন্য তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজ চালিয়ে যান। দম্পতিটি বেশ কয়েকবার শহরটির পৌর পরিষদের প্রধান পদ অলংকৃত করেন, বিমলা ড্যাং ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত ছেহরতা পৌর কমিটির প্রধান ছিলেন। [৭][৮] এই ছোট শহরটিকে পাঞ্জাবের একটি আদর্শ শহরে রূপান্তরিত করার কৃতিত্ব তাকেই দেওয়া যায়। পৌরসভা কমিটির প্রধান হিসেবে, বিমলা ড্যাং এর সময়কালেই পাঞ্জাব রাজ্যের প্রথম ক্রেশটি (শিশুর তত্ত্বাবধান করার জন্য প্রতিষ্ঠান) ছেহরতায় তৈরী হয়।[২] ১৯৫৪ সালে তিনি পাঞ্জাব স্ত্রী সভা এবং সভার নিশ্চিত আশ্রয়ে একটি ত্রাণ ট্রাস্ট পাঞ্জাব স্ত্রী সভা ত্রাণ ট্রাস্ট এর সহপ্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধের শিকার শিশুদের শিক্ষার জন্য এই ট্রাস্টটি কাজ করত। ১৯৭০ এর দশকে পাঞ্জাব দাঙ্গার সময় এবং পরেও এই সভা ও ট্রাস্ট সক্রিয় ছিল। ১৯৯০ এর দশক অবধি, শিশুদের শিক্ষার জন্য এরা সাহায্য করত।[২]
ভারত সরকার ১৯৯১ সালে, প্রজাতন্ত্র দিবস সম্মাননা তালিকায়, অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীর জন্য তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে।[৩] পরের বছর, তিনি ১৯৯২ পাঞ্জাব বিধান সভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, এবং অমৃতসর পশ্চিম নির্বাচনী এলাকা থেকে জেতেন।[২] তিনি ভারতীয় মহিলা জাতীয় ফেডারেশনের একজন কর্মী ছিলেন,[৮] এবং ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বয়স হয়ে যাবার কারণে কাউন্সিল থেকে তার স্বেচ্ছাবসর পর্যন্ত তিনি কাজ করে গেছেন।[২] অবশ্য, তিনি পাঞ্জাব স্ত্রী সভা এবং, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি এনজিও, ভারত রত্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত অরুণা আসফ আলীর নামে তৈরী অরুণা আসফ আলী স্মারক ট্রাস্টের সাথে যুক্ত থেকে সামাজিক কাজকর্ম চালিয়ে যান।[৯][১০]
বিমলা ও সত্যপাল ড্যাং পার্টি অফিসেই থাকতেন এবং তারা নিজেরা কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি।[১১] ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে দলের ছেহরতা অফিসে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর বিমলা ড্যাং অসুস্থ হয়ে পড়েন, এবং দশ দিন পর ১০ই মে ২০০৯ সালে ৮৩ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।[২] তার স্বামী আরও চার বছর বেঁচে ছিলেন।[৫] তার আত্মজীবনী, ফ্র্যাগমেন্টস অফ অ্যান অটোবায়োগ্রাফি,[১২] তার মৃত্যুর দু' বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি সম্পাদনা করেন তার বড় ভাই, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রুশ ভাষার প্রাক্তন অধ্যাপক রবি এম. বাকায়া। [৭]
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Communist legend"। Frontline। ১২ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট "Tribute: Vimla Dang"। Mainstream। XLVII (22)। মে ২০০৯।
- ↑ ক খ "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫।
- ↑ ক খ "Vimla Dang passes away"। The Hindu। ১১ মে ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ ক খ A. B. Bardhan (জুন ২০১৩)। "Satpal Dang: My Friend & Colleague, My Ideal"। Tehelka। ২৪ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ D N Gupta (২০০৮)। Communism and Nationalism in Colonial India, 1939-45। Sage Publications। পৃষ্ঠা 296। আইএসবিএন 9788132100089।
- ↑ ক খ Chaman Lal (আগস্ট ২০০৯)। "Tribute: Baba Bhagat Singh Bilga and Vimla Dang - Pride of Punjab"। Mainstream। XLVII (35)।
- ↑ ক খ "Tribute"। Academia। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "Pratiyogita Darpan"। Pratiyogita Darpan। জুলাই ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "Aruna Asaf Ali Memorial Trust"। Aruna Asaf Ali Memorial Trust। ২০১৫। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "Satpal Dang: The last of the true communists"। Times of India। ১৭ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ Vimla Dang (২০০৭)। Ravi M Bakaya Pritam; Singh Parwana, সম্পাদকগণ। Fragments of an Autobiography। Kuknas। পৃষ্ঠা 104। ওসিএলসি 650397688।