বিষয়বস্তুতে চলুন

বাহরাইনের শিক্ষাব্যবস্থা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
 বাহরাইন বিশ্ববিদ্যালয় এ শিক্ষার্থীরা

আরব উপদ্বীপ সমূহের মধ্যে বাহরাইনেই সরকারি শিক্ষার সর্বাপেক্ষা পুরাতন পদ্ধতি প্রচলিত। এই শিক্ষা কারিকুলাম পরিচালিত হয় ১৯৩০ সালে যখন বাহরাইনের সরকার পূর্ব বিদ্যমান ২টি ছেলেদের বিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ২০ শতকের মধ্যে পৃথক ছাত্রী-স্কুল ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের জরিপের তথ্য অনুযায়ী বাহরাইনের সাক্ষরতার হার ৯৪.৬% এ দাঁড়িয়েছে। ২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী বাহরাইন তাদের জিডিপির ২.৯% শিক্ষা খাতে ব্যয় করে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
আল-হাদিয়া আল-খালিফা ছেলেদের স্কুল

২০ শতাব্দীর আগে কুরআনি স্কুল গুলোই ছিল বাহরাইনের একমাত্র শিক্ষার উৎস,যারা প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র কুরআন শিক্ষা দিত।[] ১৮৯২ সালে প্রথম আধুনিক স্কুলটি স্থাপিত হয় মানামা তে আমেরিকান ডাচ রিফরমড চার্চ এর দ্বারা, যার নাম ছিল মিশনারি এলিমেন্টারি স্কুল। এর পাঠ্যক্রম ছিল ইংরেজি, গণিত এবং খ্রিস্টধর্ম এর সমন্বয়ে গঠিত। ১৯৩৩ সালে এটি অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত উচ্চ শ্রেণির ব্যাবসায়ীরা তাদের সন্তানদের এই স্কুলে পাঠাতো।#cite_note-FOOTNOTEShirawi198759-3 বিদ্যালয়টি আল রাজা স্কুল নামে আবার চালু করা হয় যা এখনো সচল আছে।

যে সকল অভিভাবক তাদের সন্তানদের জন্য যথেষ্ট অর্থ খরচ করার সামর্থ রাখে তারাই কেবল তাদের সন্তানদেরকে বোম্বে অথবা বাগদাদ এ শিক্ষা গ্রহণ এর জন্য পাঠায়। ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন পরিবার সমূহ তাদের সন্তানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করে যা মধ্যে শিয়া ছাত্রদের পাঠানো হয় আরবের মাদ্রাজ, মক্কা, আল-হাসা তে অন্যদিকে সুন্নিদের পাঠানো হয় নাজাফ এবং কারবালা তে। যার ফলে এই ঐতিহ্যগত লেখাপড়ার প্রথা আমেরিকান স্কুল গুলোর ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে শুধু মাত্র কিছু অবিভাবকই তাদের সন্তানদের এই স্কুল গুলোতে পাঠাত।#cite_note-FOOTNOTEShirawi198760-4 একটি সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত দেশের শিয়া ও সুন্নি ছাত্রদের লেখাপড়া ভিত্তিক কার্যক্রম ছিল সীমিত। এর জন্য তাদের শিক্ষার নানা রকম পরিবেশ কে দায়ী করা যেতে পারে; প্রতিষ্ঠানের বাহিরে শিয়া ছাত্ররা ইমামবাড়া হতে এবং সুন্নি ছাত্ররা মজলিশ হতে তাদের জ্ঞান পিপাসা মিটাত যেগুলি কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে পালিত হত না।#cite_note-FOOTNOTEShirawi198760-61-5

১৯৩১ সালের মানামাতে, জাফারিয়া স্কুল 

 প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর শেষ বাহরাইনে পশ্চিমা বিশ্বের চিন্তা ধারণা ছড়িয়ে পড়ে, বাহরাইনে ১ম সরকারি স্কুল হিসেবে ১৯১৯ সালে মুহাররাক এর দ্বীপ এ আল-হিহায়া আল-খালিফা বালক বিদ্যালয়।[] স্কুলটি বাহরাইনের সম্ভ্রান্ত কিছু পরিবার এর দ্বারা মুহাররাক এ প্রতিষ্ঠিত এবং বাহরাইনের রাজপরিবারের দ্বারা অনুমোদিত হয়। দেশের প্রথম শিক্ষা সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় কিছু বাহরাইনের বণিকদের দ্বারা।যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল শেখ আবদুল্লা বিন ইসা আল খলিফা, তৎকালীন বাহরাইনের শাসকের পুত্র ইসা ইবন আলি আল খালিফা যে বাহরাইন এর শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দ্বায়ীত্ব পালন করেন। আল হিদায়া বালক বিদ্যালয় এর পরিচালনা কার্যক্রম ও এই সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত হয়।[] স্কুলটি ছিল শেখ আবদুল্লার উদ্ভাবিত ফসল, তিনি ১ম বিশ্বযুদ্ধ হতে ফিরে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।#cite_note-FOOTNOTEShirawi198761-6

১৯২৬ সালে মানামাতে ছেলেদের ২য় সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।২ বছর পর ১৯২৮ সালে ১ম মেয়েদের জন্য সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা সংগঠন আর্থিক সংকটে পড়ে, যার ফলে বাহরাইনের সরকার ১৯৩০ সালে সকল স্কুল নিজেদের দায়িত্বে নিয়ে নেয়।[]

সরকারি স্কুল

[সম্পাদনা]
একটি গ্রামের স্কুল, আনু ১৯৩৭। 

১৯৮৬ - ৮৭ সালে, ৮৮১৫২ জন শিক্ষার্থী সরকারি স্কুল এ ভর্তি হয়।সরকারি স্কুলে শিক্ষার ক্ষেত্রে ৬ বছর প্রথমিক, ৩ বছর মাধ্যমিক এবং ৩ বছর ধর্মনিরপেক্ষ স্কুলে বিনামূল্যে শিক্ষা দান করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের পোশাক, খাদ্য, যোগাযোগ সকল কিছুই বিনামূল্যে লাভ করে। ৬ থেকে ১১ বছরের প্রায় সকল শিশুই প্রাথমিক স্কুল গুলোতে যোগ দেয় এবং ১২ থেকে ১৪ বছরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্কুল গুলোতে ভর্তি হয়। যাইহোক, বাহরাইনের মাধ্যমিক স্কুল গুলোতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ও কম নয়, বিশেষ করে ছাত্রীদের। ১৯৮৬ - ৮৭ শিক্ষাবর্ষে ১৫ থেকে ১৭ বয়সের মধ্যে মাত্র ৪১% শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়।

২০০৮/২০০৯ শিক্ষাবর্ষে বাহরাইনে সরকারি ক্লাসের সংখা ৪৩২৬ টি (ধর্মীয় ক্লাস সহ) ছাত্র সংখা ৬২,৩৮১ এবং ছাত্রী সংখা ৬্‌২৩৩ জন।

বেসরকারী বিদ্যালয়

[সম্পাদনা]
ফার্সি স্কুলের ছাত্র, ১৯৩৯ সালে.

আমেরিকান মিশন স্কুল ছাড়াও, ১৯১০ সালে আরো একটি বেসরকারি স্কুল খোলা হয়। আল-ইত্তিহাদ স্কুল যা ফার্সি সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত হয়।[[#cite_note-FOOTNOTEShirawi198760-4,

সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াও এখানে আটচল্লিশটি ব্যক্তিগত এবং ধর্মীয় শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, ৫০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত এবং স্বীকৃত বাহরাইন, স্কুল, (পুরোনো স্কুল (Awali স্কুল) আবার নির্মিত হয় প্রবাসী শিশুদের জন্য যারা BAPCO তে কাজ করত। "বাহরাইন স্কুলে এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় ধরনের শিক্ষা প্রচলিত রয়েছে।যেখানে আওয়ালি স্কুল" কোন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদান করত না।এজন্য ১১ বছর বয়সে শিশুরা বোর্ডিং স্কুলে স্থানান্তরিত হত। ১৯৮৮ সালে বাহরাইনে ৫০০০ শিক্ষক ছিল যাদের মধ্যে ৬৫% ছিল স্থানীয়। মিশরীয়রা বিদেশী শিক্ষক এর একটি বড় দল গঠন করে।এছাড়াও বাহরাইনে সেন্ট ক্রিস্টোফার স্কুল রয়েছে যা বিশ্বের সর্বত্তম ৮ টি আন্তর্জাতিক স্কুলের একটি হিসেবে গন্য করা হয়।অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্কুল গুলো হল, আল নুর ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ব্রিটিশ স্কুল অব বাহরাইন, ভারতীয় স্কুল এবং সেক্রেড হার্ট স্কুল

উচ্চ শিক্ষা

[সম্পাদনা]

১৯২৭ সালে প্রথম বাহরাইনী দল উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষে লেবানন এর আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত এ ভর্তি হয়।১৯৬৮ সালে উচ্চ শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাহরাইনে উপসাগরীয় পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে কারিগরী বিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি কলেজ অব আর্ট, বিজ্ঞান ও শিক্ষা (ইউসিবি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি ব্যাচেলর অব আর্টস এবং ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৯১ - ৯২ শিক্ষাবর্ষে ৪০০০ শিক্ষার্থী যার মধ্যে অর্ধেকই ছিল নারী ইউসিবি/কারিগরী তে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

২০০৮ সালে বাহরাইন কারিগরী বিদ্যালয়  ইউনিভার্সিটি অব বাহরাইনের ইসা শহরে নতুন ক্যাম্পাস চালু করে।

১৯৯৩ সালে বাহরাইনে তিনটি উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিল।১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত The College of Health Science বিভিন্ন চিকিৎসা প্রযুক্তি ও নার্সদের' প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করে।হোটেল এবং ক্যাটারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে প্রাক মাধ্যমিক বৃত্তিমূলক কোর্স ব্যবস্থাপনা এবং রন্ধনশিল্প উপলব্ধ করা হয়।১৯৮৪ সালে রিফাতে নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরব উপসাগরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (AGU) প্রতিষ্ঠা হয়, এবং জিসিসি এর সদস্য দেশগুলোর অর্থায়নে পরিচালিত হয়। নির্মাণ AGU সুবিধা। ১৯৮৯ সালে চিকিৎসা শিক্ষা নামের নতুন এবং প্রথন অনুষদ চালু হয় যার জন্য আটান্ন জন চিকিৎসক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল।এজিইউ বিশ্ববিদ্যালয় বছরে ৫০০০ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করে।

এজিইউ বিশ্ববিদ্যালয় এ চিকিৎসা ও কৃষি অনুষদ রয়েছে। রাজকুমারী জাওহারা নামে সৌদি আরবের একটি দান সেন্টার আণবিক এবং উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত রোগের গবেষণার জন্য অর্থায়ন করে।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; MoE নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

 এই নিবন্ধটিতে Library of Congress Country Studies থেকে পাবলিক ডোমেইন কাজসমূহ অন্তর্ভুক্ত যা পাওয়া যাবে এখানে ।পাবলিক ডোমেইন উপাদান থেকে, লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস, দেশের গবেষণা, ওয়েবসাইট এর অন্তর্ভুক্ত।  http://lcweb2.loc.gov/frd/cs/

সংস্করণ