বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে
বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে | |
---|---|
কাশীকা বাবা | |
জন্ম | শিরধন, পানবেল, রায়গড়, মহারাষ্ট্র | ৪ নভেম্বর ১৮৪৫
মৃত্যু | ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৩ | (বয়স ৩৮)
আন্দোলন | ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন |
দাম্পত্য সঙ্গী | সাইবাঈ ফাড়কে, গোপিকাবাঈ ফাড়কে |
সন্তান | মাথুতাই ফাড়কে |
বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে (৪ নভেম্বর ১৮৪৫ — ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৩)[১] ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক মহাকাব্যিক চরিত্র। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র বিপ্লবের জনক হিসেবে তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।[২]
সামসাময়িক ইংরেজশাসিত ভারতের কৃষকদের অবর্ণনীয় দুরবস্থায় বিধ্বস্ত বাসুদেব বিশ্বাস করতেন ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান না হওয়া অবধি ভারতের দুর্গতিমোচন সম্ভব নয়। তাই ভারতের স্বাধীনতাকে জীবনব্রত করে কোল, ভীল, মাহার, রামোশি, ধাঙড় প্রভৃতি তথাকথিত অন্ত্যজ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এক বিপ্লবী দল গঠন করেন।[৩] এই বিপ্লবী দল মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি খাজাঞ্চিখানায় ব্যাপক লুঠতরাজ চালিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁদের ঝটিতি গেরিলা আক্রমণে সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল মহারাষ্ট্রের সমকালীন ইংরেজ প্রশাসন।[৪] তিনি বিদ্রোহী জনসাধারণের কাছে কাশীকা বাবা নামে পরিচিত ছিলেন।[৫] জনৈক ভারতীয়ের বিশ্বাসঘাতকতায় বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়।[৬]
প্রথম জীবন
[সম্পাদনা]১৮৪৫ সালের ৪ ঠা নভেম্বর অধুনা মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার পানবেলের শিরধনে চিত্পাবন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হয় বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কের। তাঁর মায়ের নাম সরস্বতীবাঈ। বাবা বলবন্তরাও ফাড়কে ছিলেন শেষ পেশোয়া দ্বিতীয় শ্রীমন্ত বাজিরাওয়ের অধীনস্থ কার্নালা দুর্গের অধিপতি অনন্তরাও ফাড়কের পুত্র।[৭]
থানে জেলার কল্যাণে দশ বছর বয়সে বাসুদেব পাঠশালায় ভর্তি হন। সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি মুম্বই এবং পুণেতে বছর দুয়েক ইংরেজি ভাষাশিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মুম্বইয়ে গ্রেট ইন্ডিয়া পেনিন্সুলার রেলওয়েতে করণিক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন বাসুদেব। এরপর গ্রান্ট মেডিক্যাল কলেজে কিছুদিন চাকরি করার পর সেনাবাহিনীর অর্থ বিভাগের করণিক হিসেবে বদলি হয়ে পুণেতে আসেন তিনি। এই সময় তাঁর মাতৃবিয়োগ হয়। ছুটির আবেদন সময়মতো গ্রাহ্য হয়নি বলে বাসুদেব পুণে থেকে পানবেলে তাঁর মুমূর্ষু মাকে দেখতে যেতে পারেন নি। এই ঘটনা বাসুদেবের মনে এক হিমালয়ান্তিক অসন্তোষের জন্ম দেয়।[৬][৮]
পুণেতে থাকাকালীন বাসুদেব লহুজি রাঘোজি সাল্ভের সান্নিধ্যে আসেন। ওস্তাদ সাল্ভের আখড়ায় তিনি কুস্তির তালিম নেন। একই সঙ্গে বাসুদেব নিজের প্রচেষ্টাতে বন্দুকচালনা, অসিচালনা এবং ঘোড়ওসয়ারিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কেবল শরীর চর্চা নয়, সাল্ভে বাসুদেবের সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতার গুরুত্ব এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে অন্ত্যজ জনগোষ্ঠীর সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা করেন। একই সঙ্গে মহাদেব গোবিন্দ রানাডের জাতীয় অর্থনীতির অবক্ষয় সংক্রান্ত বক্তব্যগুলি বাসুদেবকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করে। তিনি অনুধাবন করেন- ভারতের স্বাধীনতাই জাতীয় অগ্রগতির একমাত্র পথ। আর কেবলমাত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব - এই ছিল তঁর দৃঢ় বিশ্বাস।[৬]
কেবল সশস্ত্র বিপ্লব নয়, ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে শিক্ষার অপরিমিত গুরুত্ব অনুধাবন করেছিলেন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম যুগের স্নাতক বাসুদেব। তাই তিনি লক্ষ্মণ নরহর ইন্দপুরকার এবং বমন প্রভাকর ভাবেকে সঙ্গে নিয়ে পুণা নেটিভ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থা বর্তমানে মহারাষ্ট্র এডুকেশন সোসাইটি নামে পরিচিত। নারীশিক্ষা সম্পর্কেও বাসুদেব ছিলেন প্রগতিশীল। নিজের স্ত্রীকে স্বাক্ষর করে তুলতে তিনি ছিলেন সদা সচেষ্ট। শুধু তাই নয়, বাসুদেব তাঁর স্ত্রীকে বন্দুকচালনা, অসিচালনা এবং ঘোড়ওসয়ারিতেও পারঙ্গমা করে তুলেছিলেন।[৬][৯]
সশস্ত্র সংগ্রাম
[সম্পাদনা]১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ বরোদা থেকে গায়কোয়াড় শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করলে বাসুদেব প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করেন। সেইসঙ্গে সামসাময়িক দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশবাসীর প্রতি ব্রিটিশ সরকারের অমানবিকতা এবং ঔদাসীন্যে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য জনগণের সাহায্য প্রার্থনা করেন তিনি। কিন্তু সমকালীন ভারতের তথাকথিত শিক্ষিত সম্প্রদায়ের থেকে কোনো রকম সাহায্য না পেয়ে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে পুণের আট মাইল উত্তরে লোনিতে বিষ্ণু গাদ্রে, গোপাল সাঠে, গণেশ দেওধর এবং গোপাল কার্ভের সহযোগিতায় রামোশি সম্প্রদায়ের ২০০ জন সদস্য নিয়ে বাসুদেব তাঁর বিপ্লবী দল গঠন করেন।[১০] সম্ভবত এটিই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সশস্ত্র বিপ্লবী দল।[১১] পরবর্তী সময়ে বাসুদেব তাঁর দলে কোল, ভিল, রোহিলা প্রভৃতি উপজাতির সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যুগপৎ সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনই ছিল বাসুদেবের এক এবং অদ্বিতীয় সাধনা।[৬][১২]
১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি রাতে বাসুদেবের বিপ্লবী দল প্রথমে পুণের শিরুর অঞ্চলের ধামারি গ্রামে রাজকর আদায়কারী ব্যবসায়ী বালচাঁদ ফজমাল শংক্লার বাড়িতে লুঠতরাজ চালিয়ে চারশো টাকা উদ্ধার করে। এই অর্থ দুর্ভিক্ষপীড়িত জনসাধারণের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। এরপর তাঁরা দাভি নিম্বগাঁও, পানমালা এবং জেজুরি অঞ্চল থেকে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেন। ৫ ই মার্চ বাসুদেব সদলবলে ভালহেতে এবং পরে ভোর অঞ্চলের হর্নাই, মঙ্গদরি, সবরগাঁও এবং চাঁদখেরে ব্রিটিশ সমর্থক ধনী ব্যবসায়ী এবং মহাজনদের অর্থশালা লুঠ করেন। ওই বছরই মে মাসে বাসুদেব তাঁর বিখ্যাত ঘোষণাপত্রে ইংরেজ সরকারকে চেতাবনি দিয়ে উল্লেখ করেন- নিরন্তর অর্থনৈতিক শোষণের অভিশাপ থেকে আপামর ভারতবাসীকে অবিলম্বে মুক্ত না করলে তার পরিনাম ব্রিটিশদের ভুগতে হবে। ৩ রা জুন লন্ডনের 'দ্য টাইমস' পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বাসুদেবকে নিয়ে এক দীর্ঘ আলোচনা প্রকাশিত হয়। এই নিবন্ধে সম্পাদক সরকারের কাছে ভারতে প্রযুক্ত শাসননীতিগুলির পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। বাসুদেবের এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফাড়কের মাথার দাম ধার্য হয় কয়েক হাজার টাকা। অবিচলিত বাসুদেব পাল্টা ঘোষণায় দাবি করেন- যিনি মুম্বইয়ের গভর্ণর রিচার্ড টেম্পলকে ধরিয়ে দিতে পারবেন, তাঁকে আরো অনেক বেশি আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে রিচার্ড টেম্পল মেজর হেনরি উইলিয়াম ড্যানিয়েলের ওপর বাসুদেবকে কয়েদ করার দায়িত্ব অর্পণ করেন।[৬][১২][১৩]
১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১০-১১ ই মে বাসুদেবের প্রধান সহচর রামোশি নেতা দৌলতরাও নায়েক কোঙ্কন উপকূলের পালাস্পে এবং চিখালিতে গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে ১.৫ লাখ টাকা লুঠ করে ফেরার পথে মেজর ড্যানিয়েলের সৈন্যদলের সম্মুখীন হন। সম্মুখসমরে দৌলতরাও নায়েক শহীদ হলে বাসুদেবের সৈন্যদল বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। বাসুদেব অনুধাবন করেন দৌলতরাওয়ের অবর্তমানে রামোশি সদস্যরা ভারতের স্বাধীনতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে কেবল ধনসম্পদ লুঠপাটেই বেশি আগ্রহী। তাই বাসুদেব রামোশিদের সঙ্গ ত্যাগ করে রোহিলা এবং অরব জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সাহায্যে নতুন করে বিপ্লব দল গঠনের আশায় নিজাম রাজ্যে যান। সেখানে ইস্মাইল খানের সাহায্যে ৫০০ জন রোহিলা যোদ্ধা নিয়ে বাসুদেব তাঁর নতুন বিপ্লবী দল তৈরি করেন।[১৩][১৪]
গ্রেফতারি এবং বিচার
[সম্পাদনা]ওদিকে মহারাষ্ট্রে মেজর ড্যানিয়েলের বাসুদেবকে কয়েদ করার সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। অবশেষে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই জুলাই ড্যানিয়েল নিজাম রাজ্যে পৌঁছান। ব্রিটিশদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু নিজাম ড্যানিয়েলকে সমস্ত রকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনদিন পর ২০ শে জুলাই রাত্রে বিজাপুর জেলার দেবর নাভাড়গির এক প্রাচীন মন্দিরে দুর্ধর্ষ লড়াইয়ের পর গ্রেফতার হন অকুতোভয় বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে। অর্থলোভে বাসুদেবের এক সহযোদ্ধা তাঁর গোপন আস্তানার খবর পৌঁছিয়ে দেয় পুলিশের কাছে। বাসুদেবের গ্রেফতারি অভিযানে মেজর ড্যানিয়েলকে সাহায্য করেছিলেন নিজাম প্রতিনিধি আব্দুল হক।[৬][১২][১৩]
ওই বছর ৩ রা নভেম্বর পুণেতে বাসুদেব ও তাঁর চৌদ্দজন সহযোদ্ধার বিচার শুরু হয়।[১৫] তাঁদের বিরুদ্ধে ডাকাতি এবং রাজদ্রোহের মামলা রুজু হয়। পুণা সার্বজনিক সভার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য স্বনামধন্য আইনজীবী গণেশ বাসুদেব যোশি বাসুদেবের পক্ষে মামলা লড়েছিলেন। কিন্তু বাজেয়াপ্ত হওয়া বাসুদেবের নিজের দিনলিপি, আত্মজীবনী এবং বাসুদেবের বিপক্ষের অগণিত সাক্ষ্যপ্রমাণকে ভ্রান্ত প্রতিপন্ন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। উপরন্তু আদালতে দাঁড়িয়ে বাসুদেব বললেন- "It is due to the British rule that India had become a prey to starvation deaths. Our industries are being destroyed. The goods from England are exempted from taxes so that we cannot run any industry in our country ... I could only think of one method to save these people from total destruction, i.e., the liberation from the British yoke. Day and night there is but one prayer in my heart; but one thought in my mind. Oh God, even if my life be lost, let my country be free, let my countrymen be happy. I have taken up arms, raised an army and rebelled against the British Government with this single aim. Today, this is the duty of every Indian. I could not succeed. But some day someone will succeed. Oh my countrymen, forgive me for my failure."
খুব তাড়াতাড়ি বিচারপর্ব শেষ হল। বিচারে বাসুদেব দোষী প্রমাণিত হলেন। কিন্তু আদালত তাঁকে ফাঁসির হুকুম শোনালো না। অতি জনপ্রিয় বাসুদেবের ফাঁসি দেশব্যাপী প্রবল অসন্তোষ তৈরি করতে পারে- এই আশঙ্কায় বিচারপতি নিউহ্যাম তাঁকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের সাজা দিলেন। সে সময় দ্বীপান্তরের সাজা ভুগতে কয়েদীদের আন্দামান যাওয়ার প্রথা ছিল। কিন্তু সন্ত্রস্ত ইংরেজ সরকার বাসুদেবকে আন্দমানে পাঠাতে প্রস্তুত ছিল না। আন্দামানে বন্দী মহাবিদ্রোহের সিপাহীদের সংগঠিত করে পুনরায় সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটানো বাসুদেবের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। তাই তাঁকে পাঠানো হল সুদূর আফ্রিকার বন্দর শহর এডেনের বন্দীশালায়।[৬][১৩]
এডেনের বন্দীশালাতে বসেও বাসুদেব ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন নিয়েই ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই অক্টোবর সুকৌশলে তিনি এডেনের কারাগার থেকে পলায়ন করেন। কিন্তু ভিনদেশে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে থাকা সহজ নয়। তাই বাসুদেব পুনরায় ধরা পড়েন। অবরুদ্ধ কারাগারে তাঁর উপর অত্যাচারের মাত্রা দ্বিগুণিত হয়। প্রবল শারীরিক নির্যাতন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে থাকতে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি তিনি যক্ষারোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু সেই অবস্থাতেও তিনি ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারের প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন। কারাগার কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করে। কিন্তু বাসুদেবের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। অবশেষে ১৮৮৩ সালের ১৭ ই ফেব্রুয়ারি বিকেলবেলা ভারতবর্ষ থেকে অনেক অনেক দূরে এডেনের দুর্গে অয়সকঠোর এই বিপ্লবী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।[৬][১৬]
পরিচিতি
[সম্পাদনা]বিপ্লবী বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে ভারতের অগণিত সশস্ত্র বিপ্লবীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সন্দেহ নেই। তাঁর বর্ণময় জীবন বারংবার মারাঠি সাহিত্যকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর জীবন নিয়ে লেখা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে মহারাষ্ট্রের মঞ্চে মঞ্চে। কথিত আছে - সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'আনন্দমঠ' উপন্যাসের প্রেক্ষাপটের উপর বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কের রোমহর্ষক বিপ্লব জীবনের প্রভাব রয়েছে।[১৭] বাসুদেবের জীবনের প্রত্যক্ষ প্রভাব যে আনন্দমঠে রয়েছে, সেটা কানে গিয়েছিল ইংরেজদের। তাই লেখা পরিবর্তন করতে হয় সাহিত্য সম্রাটকে।[৫] ১৯৪০ সালে বাসুদেবের জন্মস্থান শিরধনে তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ডাকবিভাগ বাসুদেবের প্রতিকৃতি-অঙ্কিত ডাকটিকিট প্রকাশ করে। মারাঠি চিত্রপরিচালক গজেন্দ্র আহিরে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ফাড়কের জীবন নিয়ে, এক ক্রান্তীবীর, বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন।[১৮] সর্বোপরি প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনে বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র বিপ্লবের জনক বলে উল্লেখ করেছেন।[৬][১৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Bhattacherje, S. B. (২০০৯-০৫-০১)। Encyclopaedia of Indian Events & Dates (ইংরেজি ভাষায়)। Sterling Publishers Pvt. Ltd। আইএসবিএন 978-81-207-4074-7।
- ↑ রমেশচন্দ্র মজুমদার। History of Freedom Movement in India।
- ↑ Chattyopadhayay, Manoranjan (১৯৮০)। Jībanera sapakshe। Nabamana Prakāśana।
- ↑ Islam, Sirajul; Miẏā, Sājāhāna (২০০৭)। Bāṃlādeśera itihāsa, 1704-1971: Rājanaitika itihāsa। Eśiẏātika Sosāiti oba Bāṃlādeśa। আইএসবিএন 978-984-512-006-7।
- ↑ ক খ "পুনেকে 'ব্রিটিশ মুক্ত' করেছিলেন একাই, বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কেকেই দেখে বঙ্কিমের আনন্দমঠ!"। Zee24Ghanta.com। ২০২০-০৮-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ Loksabha Secreteriate, New Delhi। "Vasudev Balwant Phadke" (পিডিএফ)।
- ↑ Sankalit। Vasudev Balwant Phadke (হিন্দি ভাষায়)। Suruchi Prakashan। আইএসবিএন 978-93-88608-08-4।
- ↑ Khan, Mohammad Shabbir (১৯৯২)। Tilak and Gokhale: a comparative study of their socio-politico-economic programmes of reconstruction। Ashish Pub. House। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 9788170244783।
- ↑ "Vasudev Balwant Phadke was one of the earliest graduates from the Bombay University in 1862."। Indore(M.P.), India। ২৫ জানুয়ারি ২০২০। ২২ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ অনলাইন, খবর (২০১৯-০৮-১৫)। "স্বাধীনতা দিবসে স্মরণ করি বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কেকে"। KhaborOnline (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-১১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০৭।
- ↑ DelhiFebruary 17, India Today Web Desk New; November 4, 2016UPDATED:; Ist, 2017 13:08। "Remembering Vasudev Balwant Phadke, the man who gave rise to the Indian armed struggle"। India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০৭।
- ↑ ক খ গ Press Information Bureau, Govt. of India। "Vasudev Balwant Phadke"।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Wikipedia। "Vasudev Balwant Phadke"।
- ↑ Sahapedia। "Vasudev Balwant Phadke"।
- ↑ "Chalo, azaadi ki raah par chalte hain… - Times of India"। The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০৭।
- ↑ Sarakāra, Kālīpada (১৯৮০)। Itihāsa-purusha Netājī। Rūpā।
- ↑ Mukhopādhyāẏa, Jībana (১৯৮৩)। Ānandamaṭha o Bhāratīẏa jātīẏatābāda। Bhāsvatī।
- ↑ "Ek Krantiveer: Vasudev Balwant Phadke"। ২০০৭-১২-২৮।