বাইশ রশি জমিদার বাড়ি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাইশরশি জমিদার বাড়ি
রাজেন্দ্র বাবুর বাড়ি
বিকল্প নামরাজেন্দ্র বাবুর বাড়ি
সাধারণ তথ্য
ধরনবাসস্থান
অবস্থানসদরপুর উপজেলা
ঠিকানাবাইশরশি গ্রাম
শহরসদরপুর উপজেলা, ফরিদপুর জেলা
দেশবাংলাদেশ
খোলা হয়েছে১৮০০ শতকে
স্বত্বাধিকারীউদ্ধর চন্দ্র সাহা ও কিছুটা বাংলাদেশ সরকারের অধীনে
কারিগরী বিবরণ
উপাদানইট, সুরকি ও রড
তলার সংখ্যাদুই (০২)
তলার আয়তন৫০ একর

বাইশরশি জমিদার বাড়ি বা রাজেন্দ্র বাবুর বাড়ি বাংলাদেশ এর ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার বাইশরশি গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

রাজেন্দ্র বাবু বাড়ির মন্দির

প্রায় ১৮০০ শতকের দিকে এই বাইশরশি জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। লবণ ব্যবসায়ী উদ্ধর চন্দ্র সাহা বিপুল অর্থসম্পত্তির মালিক হয়ে বাইশরশিতে অনেক জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন। ১৮২৪ সালে লর্ড ক্লাইভের সময়ে জমিদার উদ্ধর চন্দ্র সাহা বরিশালে কালিয়াতে জমিদারি কেনেন। জমিদারী আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের ভিতরে এই জমিদার বংশধররা বিশার জমিদারী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। কেননা এই জমিদার বংশের জমিদারীর আওতায় স্থানীয় ফরিদপুর জেলা ছাড়াও বরিশাল জেলার বিভিন্ন অংশ মিলিয়ে মোট ২২টি পরগণা ছিল। তারা তাদের ক্ষুদ্র জমিদারীকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন পরগণা ক্রয় করার মাধ্যমে জমিদারীকে বিশাল করতে থাকে। জমিদারীর শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত বংশপরামপণায় জমিদাররা একের পর এক জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর ঐ সময়ের জমিদার ভারতে কলকাতায় বসে এখানের জমিদারী পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদার বংশের একজন ছাড়া বাকি সকলেই ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

উদ্ধর চন্দ্র সাহার পর তার পুত্র হরে কৃষ্ণ সাহা জমিদার হন। তিনি বরিশালে বাউফলে জমি কিনে সেখানে জমিদারি শুরু করেন। তার তিন পুত্র ছিল। তাদের মধ্যে রাম জয় সাহা এরপর জমিদারী করেন। এসময় ইংরেজদের থেকে রায় চৌধুরী উপাধি পান। রাম জয় রায় চৌধুরীর দুই পুত্র। বৈকুন্ঠ রায় ও নীল কন্ঠ রায়। তারা জমিদারী ভাগ করে নেয়। বৈকুণ্ঠ রায়ের অংশটি হল বড় তরফ। আর নীল কণ্ঠ রায়ের অংশ হল ছোট তরফ। বৈকুণ্ঠ রায়ের কোন সন্তান ছিল না। তিনি মহিম চন্দ্র রায়কে দত্তক নেন। মহিম চন্দ্র রায়েরও কোন সন্তান না হওয়ায় তিনি কলকাতার মহেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীকে দত্তক নেন। মহিম চন্দ্র রায় বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন। ১৯১৪ সালে তার পুত্র মহেন্দ্র নারায়ণ রায় বাহাদুর মাতা ও মহিম চন্দ্র রায় বাহাদুরের স্ত্রী শিব সুন্দরী চৌধুরাণীর নামে ‘‘বাইশরশি শিব সুন্দরী একাডেমী’’ তৈরি করেন। তার পুত্র নীল কণ্ঠ রায় বাহাদুর।তার রাজেন্দ্র চরণ মজুমদার বাবু ও দেবেন্দ্রবাবু নামে দুই পুত্র ছিল।[২]

রাজেন্দ্র চরণ মজুমদার বাবুর কোন সন্তান হয় নি। তিনি রমেশ বাবুকে দত্তক নেন। দেবেন্দ্র বাবুর দক্ষিণা রঞ্জন বাবু নামে এক পুত্র ছিল।দক্ষিণা বাবুরও সন্তান না হওয়ায় দিলীপ বাবুকে দত্তক নেন। উনিশ শতকের প্রথমে দুই তরফের মধ্যে জমি নিয়ে বিবাদ হয়। যা কোর্ট পর্যন্ত যায়। পরে ফরিদপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হস্তক্ষেপ করে বিবাদ মেটান। এরপর ফরিদপুরের অম্বিকা চরণ মজুমদার বাবুর থেকে সাহায্য নিয়ে দক্ষিণা রঞ্জন বাবু পিতৃব্য বা জেঠা রাজেন্দ্র চরণ মজুমদার বাবুর স্মৃতিতে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ তৈরি করেন।ফরিদপুরে পুরাতন সরকারী হাসপাতালে কিছু অংশও তাদের নামে রয়েছে। এই বংশের জমিদার মহেন্দ্র বাবু নগরকান্দাতে মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় তৈরি করেন।

এই বংশের জমিদার সুকুমার রায় বাহাদুর শুধু এখানে থেকে যান। তখন জমিদার বাড়ির অর্ধেক পাকিস্তান সরকারের হস্তক্ষেপে চলে যায়। আর বাকি অর্ধেকে জমিদার সুকুমার রায় বাহাদুর তার পরিবাররা বসবাস করতেন। তবে তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আত্মহত্যা করে মারা যান। সরকার বাড়ির যে অর্ধেক নিয়ে যায়। সেই অর্ধেক তখনকার সরকারী কর্মকর্তারা বসবাস করতেন।[৩]

অবকাঠামো[সম্পাদনা]

বাড়িটিতে প্রায় ৫০ একর জায়গা জুড়ে জমিদারদের বসবাসের জন্য ১৪টি অট্টালিকা তৈরি করা হয়। ৫টি সান বাঁধানো ঘাটলা তৈরি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন গাছগাছালি দিয়ে সুন্দর বাগানবাড়ি তৈরি করা হয়। এছাড়া এখানে পূজা মণ্ডপ, নাট মন্দির, মন্দির আছে।[৪]

বর্তমান অবস্থা[সম্পাদনা]

জমিদার বাড়ির অধিকাংশ স্থাপনাই এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে।[৫] তবে জমিদার বাড়ি একাংশ এখনো বাংলাদেশ সরকারের ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাইশরশি জমিদার বাড়িকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রের উজ্জল সম্ভাবনা!
  2. "সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে-ফরিদপুর জেলার সদরপুরের বাইশরশি জমিদার বাড়ি"sadarpurkhobor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০১ 
  3. "জমিদার রাজেন্দ্র বাবুর বাড়ি সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন"বাংলা ট্রিবিউন। ২০২১-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০১ 
  4. "সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে-ফরিদপুর জেলার সদরপুরের বাইশরশি জমিদার বাড়ি"sadarpurkhobor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০১ 
  5. "বিলুপ্তির মুখে বাইশ রশি জমিদার বাড়ি ও ইতিহাস"দৈনিক মানবকণ্ঠ। ২০২১-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০১