বাংলামতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলামতি এক প্রকার ধান যা থেকে সুগন্ধি চাল পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক পরিচয় ব্রি ধান ৫০[১] এটি দেখতে অনেকাংশে বাসমতী চালের মতো। বাংলাদেশে উৎপাদিত উৎকৃষ্ট মানের ও সুগন্ধ সম্পন্ন বাংলামতি চাল দিয়ে পোলাউ এবং বিরিয়ানী রান্না করা হয়। এ চালের ভাত আঠালো নয়। বাংলামতি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট[২] ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের বোরো মৌসুমে বাংলামতি ধানের প্রথম বাণিজ্যিক চাষ হয় বাংলাদেশে।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

বাংলামতি চাষের আদর্শ সময় বোরো মৌসুম। ধান গাছের উচ্চতা ৮২ সেমি। এর জীবনকাল ১৫৫ দিন। এ জাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য চাল লম্বা, চিকন, সুগন্ধি ও সাদা।[১] এ ধানের গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.০ টন। বাংলাদেশে উৎপন্ন অন্যান্য জাতের ধানের তুলনায় এ ধান দেখতে দীর্ঘতর ও সরু। ধানের পেছনের অংশ তরবারির ডগার মত বাঁকা। ধানের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে পাতা ও কাণ্ড সবুজ থাকা পর্যন্ত সুগন্ধ বেশি ছড়ায়। এমনকি ধান পাকা ও মাড়াই পর্যন্ত সবুজাভ থাকে। এটি কেবল আধুনিক জাতের ধান নয়, এটি উচ্চফলনশীলও বটে।[৩] দেশে সুগন্ধি ধান হিসেবে কালজিরা, চিনি কানাই, ব্রি উদ্ভাবিত দুলাভোগ বা অন্য যে পাঁচ-দশটি জাত চাষ হয় তার সবই আমন মৌসুমের। বাংলামতি বাংলাদেশে বোরো মৌসুমে চাষাবাদের উপযোগী প্রথম ও একমাত্র সুগন্ধি ধানের জাত।

বাসমতির সঙ্গে তুলনা[সম্পাদনা]

বাংলামতি পাকিস্তানভারতের বাসমতি সমমানের বলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন। এটি বাসমতির মতোই সুগন্ধ যুক্ত। অন্যদিকে বাসমতির চেয়ে বাংলামতির ফলন বেশি।[৩] ভারত ও পকিস্তানের বাসমতির সর্বোচ্চ ফলন একরপ্রতি ফলন ৩০-৪০ মণ। বাংলাদেশের বাংলামতির উৎপাদন একরে ৬০-৮০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যাবে।[৪]

প্রথম চাষ[সম্পাদনা]

বাংলামতি প্রথম অবমুক্ত করা হয় ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে।[৫] বাংলামতির প্রথম হয় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের বোরো মৌসুমে। এই চাষ হয় সীমিত পর্যায়ে। ৪-৫ জেলায় মাত্র ১-১২ জন কৃষক এ ধান চাষ করেছেন প্রথম বছরে। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার মেছাঘোনা গ্রামের এক কৃষক এস এম আতিয়ার রহমান এই ধান উৎপন্ন করে একরে ৭০ মন (প্রতি হেক্টরে ৭ মেট্রিক টন) পেয়েছেন। এ ধানের ফলন হাইব্রিড ধানের কাছাকাছি হয়েছে।[৬] বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৯-এর বোরো মৌসুমে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট যশোরে পরীক্ষামূলকভাবে এ ধানের চাষ করে সফল হয়েছিল।[৪]

বাংলামতি ধানের বিভিন্ন দিক[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ৫০তম জাত হল ব্রি-৫০, যা বাংলামতি নামেই অধিক পরিচিত। বাংলামতি ধানের চাল ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতি ধানের চালের সমকক্ষ । সুপার ফাইন এরোমেটিক রাইস হিসেবে বিশ্বব্যাপী ভারত/পাকিস্তানের বাসমতি চালের যে জনপ্রিয়তা, সুনাম ও উচ্চমূল্য রয়েছে ঠিক সে চালই পাওয়া যাবে বাংলাদেশের বাংলামতি ধান থেকে। পার্থক্য শুধু নামে, আন্তর্জাতিক পেটেন্ট আইনের কারণে একে বাসমতি বলা যাচ্ছে না। তবে বাসমতি ধানের চেয়ে বাংলামতি ধানের ফলন অনেক বেশি। পাকিস্তানের বাসমতি ধানের সর্ব্বোচ্চ একরপ্রতি ফলন যেখানে ৩০-৪০ মণ সেখানে বাংলাদেশের বাংলামতি ধানের একরপ্রতি ফলন ৭০-৮০ মণ। এখানে উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ব্যাপকভাবে চাষকৃত ব্রি -২৮ ধানের থেকেও এর ফলন বেশি, ব্রি -২৮ ধানের একরপ্রতি ফলন ৪৫-৫০মণ। বোরো মৌসুমে বাংলাদেশে সুগন্ধি ধানের জাত যেমন নেই, তেমনি চাষও হয় না বললেই চলে। বাংলদেশে সুগন্ধি ধান হিসেবে কালজিরা, চিনি কানাই, ব্রি উদ্ভাবিত দুলাভোগ বা অন্য দুই চারটি জাত যা চাষ হয় তার সবই আমন মৌসুমে। বাংলামতি ধান ( ব্রি-৫০) সে অভাব পূরণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের ধারণা। নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল এই বাংলামতি ধান দেখতে অন্য যে কোন ধানের তূলনায় লম্বা এবং চিকন। ধানের পিছনের অংশ তরবারির ডগার মতো বাঁকা। ধানের চারা অবস্থা থেকে পাতা ও কাণ্ড সবুজ থাকা পর্যন্ত সুগন্ধ ছড়ায়, এমনকি ধান পাকা এবং মাড়াই পর্যন্ত। ব্রি-৩০ ধানের সাথে ইরি থেকে প্রাপ্ত কৌলিক সারি অই আর ৬৭৬৮৯ বি এর সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে ব্রি - ৫০ ধানের গবেষণা শুরু হয়। পরে প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতিতে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা চালিয়ে একটি বিশুদ্ধ অগ্রবর্তী সারি নির্বাচন করা হয়, যার কৌলিক সারি নং – বি আর ৬৯০২-১৬-৫-১-১। বাংলাদেশের জাতীয় বীজ বোর্ড ২০০৮ সালে এই অগ্রবর্তী কৌলিক সারিটিকে বোরো মৌসুমে চাষযোগ্য দেশের প্রথম সুগন্ধি এবং রপ্তানীযোগ্য উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে ব্রি-৫০ এবং জনপ্রিয় বাংলামতি নামে অনুমোদন দেয়। বাংলামতি ধানের চাষ পদ্ধতি প্রচলিত ব্রি -২৮ ধানের মত। ধানের বীজতলায় চারার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে হলে জমিতে লাগাতে হবে। এক গোছায় ১ থেকে ৩ টি চারাই যথেষ্ট। সারি থেকে সারির দুরত্ব হবে ২০ সে মি এবং চারা থেকে চারার দুরত্ব হবে ১৫ সে মি। বাংলামতি ধান উচ্চ ফলনশীল জাত হওয়ায় এর প্রচুর শীকড় গজায় এবং ব্রি -২৮ বা ব্রি – ২৯ ধানের চেয়ে এর শীকড় লম্বা ও মাটির গভীরে প্রবেশ করে। সে কারণে এর পানি শোষণ ক্ষমতাও বেশি। লাগানোর পর ক্ষেতে যাতে ২ ইঞ্চি পরিমান পানি থাকে সে দিকে নজর রাখতে হবে। বাংলামতি ধান গাছের আকার ব্রি -২৮ ধান গাছের চেয়ে ছোট, পূর্ণবয়ষ্ক গাছের উচ্চতা ৮০-৮৫ সে মি। এ জাতের ধান গাছের জীবনকাল ১৫২-১৫৫ দিন। ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২১ গ্রাম। ব্রি – ৫০ ধান ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এর পরিপক্ব কাল শতভাগ ফুল আসার ১৫-২০ দিনের সম্পন্ন হয় যা অন্যান্য উফশী জাতে দেখা যায় না। এর চালের আকার ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতি চালের অনুরুপ। বেলে দোয়াঁশ, এটেল দোয়াঁশ এবং মাঝারি উঁচু জমি ব্রি -৫০ ধান বা বাংলামতি চাষের উপযোগী। অর্থাৎ যে সমস্ত জমিতে ব্রি -২৮ ধান চাষ করা হয় সে সমস্ত জমিতে বাংলামতি ধানের চাষ করা যাবে। বাংলামতি ধান লম্বা এবং সরু হওয়ায় প্রচলিত মিলে মিলিং করলে চাল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই ধান রাবার রোল হলার যুক্ত অটো রাইস মিলে মিরিং করতে হবে, এতে চালের সুগন্ধ বজায় থাকে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যতীর্থ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "সোনার ধান বাংলামতি"। ৭ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১০ 
  3. "স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে চান বাংলামতি ধান দিয়ে"। ২ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১০ 
  4. বাংলামতি ধানের আশাতীত ফলন[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যতীর্থ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "প্রথমবারবিচাষেই আশাতীত ফলন - ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে সুগন্ধি ধান বাংলামতি"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১০ 

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]